somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েকজনকে মন থেকে মুছে দিয়েছি ওদের ছোটলোকির কারণে

১০ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিরপুর-১৪ এলাকায় স্বাধীনতা চত্বরের এক পাশে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোকের সাথে গল্প করছিলাম। এ সময় একটা ফুটবল ছুটে এলো আমার সামনে। যেদিক দিয়ে এসেছিল, লাথি দিয়ে সেদিকে বলটা দিলাম। হঠাৎ এক লোক এসে আমার সাথে ঝগড়া জুড়ে দিল। আমি কেন বলে লাথি দিলাম, এ নিয়ে রীতিমতো জেরা শুরু করল। আমি তো থ। বললাম, ‘আপনার সামনে বল পড়লে ছুড়ে দিতেন না?’

সে কোনো কথাই শুনছে না। গায়ে লেগে যাচ্ছে এমন অবস্থা।

আমার পাশের জন সেনাসদস্য, যদিও অনানুষ্ঠানিক পোশাকে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘সমস্যা কী আপনার?’ তার সাথেও ঝামেলা শুরু করল লোকটা। তাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। আমি চূড়ান্ত ধৈর্য ধারণ করছি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ছি।

অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে অন্য পাশে চলে এলাম আমরা। আমার সাথের ভদ্রলোকের সাথে আলাপ চলল বটে, তবে দু’জনই জমে থাকা রাগ-ক্ষোভ কমাতে পারছিলাম না। আমার অফিস পাশেই। লোকজন নিয়ে এসে ওই বদমাশটাকে সাইজ করা যেত। সামান্য বিষয় বলে এড়িয়ে গেলাম। যদিও বুঝতে পারলাম, মারামারি তো এমনি এমনি বাঁধে না। এক কথায় দুই কথ‍ায় লেগে যায়। লোকটার যে অঙ্গভঙ্গি, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে রক্তারক্তি হয়ে যেত। ঝামেলা এড়ানোর জন্য আর এগোইনি। কম বয়সেই মারামারি করিনি; এই বুড়ো বয়সে এসে হাঙ্গামা করার রুচি নেই।

দুই

আমার ডে-অফ সোমবার। সহকর্মীদের আগেই জানিয়ে রেখেছি এদিন বাড়ি যাব। এতে অন্যদের কোনো সমস্যা নেই। দু’দিন পর হঠাৎ এক সহকর্মী দরখাস্ত নিয়ে এসে বললে, ‘আপনি বৃহস্পতিবার ডে-অফ নেন।’

মামাবাড়ির আবদার নাকি! এর আগে বহুবার আমার দিন মাইর গেছে। সাপ্তাহিক ডে-অফ বৃহস্পতিবার ছিল। সেটা বদল করে সোমবার নিয়েছি। এখনও দেখি শান্তি নেই।

আমি বললাম, ‘আমার সোমবারই লাগবে।’ এ নিয়ে বিরাট কাহিনী। তিনি ছুটি নেবেনই। আমি কীভাবে এই অফিসে চাকরি করি তিনি দেখে নেবেন।

আমি বললাম, ‘যা খুশি করুন।’ কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি নিয়ে তার কথা হলে আমি সাফ জানিয়ে দিলাম, আমার সোমবারই লাগবে। তার ছুটি মঞ্জুর হলো না।

পরদিন অফিসে এসে শুনি উনি এক সপ্তাহের ছুটিতে চলে গেছেন। কর্তৃপক্ষের সাথে খাতিরের সুফল পেলেন। আট বছর ধরে এই অফিসে আছেন। কিন্তু আমি তো সোমবার ছাড়ব না।

আজিমপুর গেলাম এক কাজে। বাড়িতে কথা হলে জানাল, বৃহস্পতিবার এলেই হবে। কী মুসিবত! এত কাহিনী তাহলে কেন করলাম!

সোমবার অফিসে গেলে তো ইজ্জত থাকে না। গেলামও না। অফিস থেকে মেসেজ করে আনসেন্ট করে দিল। বুঝলাম, আমি কেন আসিনি সে সম্পর্কে হয়তো লিখেছিল।

তিন

সাবেক এক সহকর্মীর সাথে অনেকদিন পর দেখা। বললাম, ‘মেসেজে পাওয়া যায় না। বড়লোক মানুষ।’

তিনি মেসেজ খুঁজে বের করলেন। আমি বললাম, ‘দেখুন, লিখছেন কী দরকার? মানুষ কি শুধু দরকারেই ফোন দেয়? এমনিতে খোঁজ নিতে পারে না?’

তিনি বললেন, ‘আমি মেসেজের রিপ্লাই দেই না বলে আমার সম্মানহানি করছেন। আপনাকে ডেকেছিলাম চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য। আপনি এখনও দুধের শিশু।’

প্রসঙ্গত, এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যোগদানের কথা আমার। এই সহকর্মী সেখানকার চেয়ে দুই হাজার কম অফার করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি রাজি হব না। যেহেতু তার ওখানে গিয়েছি, উনি মনে করেছেন আমি চাকরির জন্য গিয়েছি। অথচ আমি তার ওখানে গিয়েছি আগের পরিচয়ের খাতিরে। এবং সে মতোই তার সাথে কথা বলছিলাম। উনি যে আমাকে চাকরিপ্রার্থী, বড়জোর সাবেক সহকর্মী হিসেবে দেখেছেন, আপন লোক ভাবেননি, সেটা তো বুঝিনি। মনে করেছি উনিও আমাকে মিস করেন, যেহেতু একসাথে চাকরি করার শুরুতে তিনি আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আসলে মানুষ চেনা মুশকিল।

যাহোক, আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘সবকিছু আপনিই বোঝেন। আর আমি কিছুই বুঝি না।’ “ফালতু কোথাকার” বলে অফিসের দিকে হাঁটা ধরলাম। পরে দেখি “পাগল” ব্লা ব্লা ব্লা বলছিলেন।

আসতে আসতে ভাবছিলাম আরও কথা শুনিয়ে আসা উচিত ছিল। আমি যে উনার ওখানে চাকরির জন্য যাইনি, সেটা অবগত করা উচিত ছিল। তিনি যখন বলছিলেন, কী দরকার- এতে বিব্রত হয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম। যেমন বেতন ঠিকমতো দেয় কি না, পরিবেশ কেমন এসব। আমি তো তার সম্মানহানির মতো কিছু বলিনি। তাছাড়া ততদিনে আমি অন্য চাকরিতে যোগদানও করে ফেলেছি। তার প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আবার তিনি আমাকে তার ওখানে যাওয়ার জন্য জোর করেছেন, আমি যাইনি ব্যাপারটা এমনও না।

পরে মনে হলো কিছু কিছু মানুষ অন্যকে ছোট করে তৃপ্তি পায়। তাই অন্যের কথা শোনার তাগিদ অনুভব করে না। উনিও শুনতেন না। এরা মানুষকে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠা দিয়ে, মন-মানসিকতা দিয়ে নয়।

মনটাকে প্রবোদ দিলাম এই ভেবে যে, এ রকম ফালতু মানুষের জন্য এতদিন মিছে দরদ অনুভব করতাম। এখন থেকে আর করব না। সবাই সবকিছু পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এর আগেও কয়েকজনকে চিরদিনের জন্য মন থেকে মুছে দিয়েছি ওদের ছোটলোকির কারণে। এটা করতেই হয়। না করলে নিজেরই ভোগান্তি। সংখ্যা আরেকটা বাড়ল। এদের জন্য এক সেকেন্ডের জন্যও মন পোড়ে না। 
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:০৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×