মশিয়ার রহমান, কেশবপুর: যশোরের কেশবপুরের মোমিনপুর গ্রামের শিক্ষক নাজমুল ইসলাম ইমাম। তার শিক্ষক পরিচয় অনেকটা ঢেকে গেছে। সবাই তাকে চেনেন আদর্শ পোলট্রি খামারি হিসেবে। ১৯৮৩ সালে মাত্র চারটি ডিম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠার ফলে এখন তিনি কোটি টাকার মালিক। মাসে লাভ হয় ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি উপজেলায় প্রায় সোয়া ৩০০ মুরগির খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোর ২৬৪টি তালিকাভুক্ত। তালিকার বাইরে রয়েছে বাকিগুলো। এসব খামারে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক মানুষ।
জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে মাদরাসা শিক্ষক নাজমুল ইসলাম ইমাম ঢাকায় গিয়ে পোলট্রি খামার করতে উদ্বুদ্ধ হন। তখন ব্রয়লারের ডিম বা বাচ্চা তেমন পাওয়া যেত না। তার মনে ইচ্ছা ছিল একদিন তিনি ব্রয়লার হ্যাচারির মালিক হবেন। এ মনোবল নিয়ে তিনি যশোরের ঝুমঝুমপুর সরকারি পোলট্রি খামার থেকে চারটি সোনালি জাতের মুরগির ডিম আনেন। পরে দেশি মুরগির সাহায্যে এ ডিম ফুটিয়ে তিনি বাচ্চা উৎপাদন করেন। পরবর্তী সময় তিনি ধীরে ধীরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পুঁজি বেড়ে গেলে ১৯৮৬ সালে তিনি ঢাকার এগস অ্যান্ড হেন্স লিমিটেডের কাছ থেকে এবং ভারত থেকে বাচ্চা এনে লেয়ার ও ব্রয়লার পালন করে ডিম এবং মাংস বাজারজাত করা শুরু করেন। পরবর্তী সময় দেশে ব্রয়লার, ব্রিডার ও ফাউমি জাতের বাচ্চা উৎপাদন শুরু হয়। সেখান থেকে তিনি বাচ্চা এনে খামারে লালনপালন ও বাজার জাত করতে থাকেন। শিক্ষক নাজমুল ইসলাম জানান, ২০০০ সালের দিকে তিনি সাতক্ষীরা থেকে ৫০০ ক্যাপাসিটির দুটি বাচ্চা উৎপাদনের মেশিন (ইনকিউবেটর) ক্রয় করে বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেন। ২০১৩ সালে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে ২০১৪ সালে তিনি নিজস্ব প্রযুক্তিতে আরও পাঁচটি বাচ্চা উৎপাদনের মেশিন তৈরি করেন। বর্তমানে তার সাতটি মেশিনে সপ্তাহে সাড়ে ৪ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হয়। ছয়টি সেটার ও দুটি হ্যাচারে তার খরচ হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে খামার মালিকরা এখানে ডিম নিয়ে আসেন বাচ্চা ফোটাতে। তিনি প্রতিটি বাচ্চা ১৭ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে তার প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। তিনি পোলট্রি শিল্পে সফলতা অর্জন করায় চলতি বছর লায়ন ফিড লিমিটেডের পক্ষ থেকে থাইল্যান্ড এবং এশিয়ান এনিম্যাল হেলথ মেলায় অংশগ্রহণ করেন। তার খামার ও হ্যাচারিতে ছয়জন কর্মচারী রয়েছেন। বাড়ির আঙিনায় আধাপাকা তিনটি দোতলা ঘর নির্মাণ করে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য মোরগ-মুরগি পালন করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজিজ আল মামুন বলেন, কেশবপুরে ২৬৪টি তালিকাভুক্ত পোলট্রি খামার রয়েছে।
তালিকার বাইরে আরও ৫০ থেকে ৫৫টি খামার রয়েছে। ছোট-বড় সব খামার রেজিস্ট্রির আওতায় আনা হচ্ছে। এসব খামারে ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির চাষ হয়। পোলট্রি খামার করে উপজেলার অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সূত্র:
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩৬