somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুল চাষে কোটিপতি এক যুগেই

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ২০০৪ সাল। কিশোর দেলোয়ার বাবার কাছ থেকে জমানো ৪ হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে কিনে আনেন কিছু ফুলের চারা। পরিবারের সবাই অবাক হয়ে যায়। পাড়া-প্রতিবেশীরাসহ সবাই তাকে পাগল বলা শুরু করল। বাবার বকুনি উপেক্ষা করে নিরাশ না হয়ে দেলোয়ার তার লক্ষ্যের দিকে এগোতে লাগলেন। কারণ ৪ হাজার টাকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুনে ফেলেছেন তার স্বপ্নের বীজ। নিজের শ্রম, অধ্যবসায় ও মেধার সমন্বয়ে এগিয়ে চলা দেলোয়ারকে সফলতা ধরা দিয়েছে এক যুগেই। এক যুগ আগের ৪ হাজার টাকার পুঁজি, আজ দাঁড়িয়েছে কোটি টাকার ওপরে। বর্তমানে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে ফুল বাগান রয়েছে দেলোয়ারের।
২০১৭ সালের কৃষিতে সর্বোচ্চ ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ পেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে ১৪ জুলাই ক্রেস্ট ও ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। পড়ালেখার গন্ডি মাধ্যমিক না পেরোতেই কৃষিতে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। শুরুতে স্বল্প পরিসরে নিজের কৃষি জমিতে দেশীয় গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুলের চাষ শুরু করে উৎপাদিত ফুল ঢাকার শাহবাগে বাজারজাত শুরু করেন। সন্তোষজনক মূল্য আর ক্রমেই ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি তাকে ফুল চাষে আরও উদ্যোগী করে তোলে। শুরু হয় নতুন নতুন ফুল চাষের প্রচেষ্টা।
এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদনকারী দেশ নেদারল্যান্ড। এ দেশটি বিশ্বের ৫২ শতাংশ ফুলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ফুল উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত কেনিয়া, ইকুয়েডরসহ আফ্রিকার দেশগুলো ইসরাইলি বিজ্ঞানীদের সহায়তায় ফুল চাষে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পাশের দেশ ভারতেও ব্যাপক হারে ফুল চাষ হচ্ছে। তিনি হল্যান্ডের একজন ফুল চাষির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। তার পরামর্শে ২০০৫ সাল থেকে চায়না জার্বেরা ফুলের চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন দেলোয়ার। শুরুতে পাশের দেশ ভারত থেকে কিছু চারা এনে চাষ শুরু করেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ ফুলের জন্য অনুকূলে না থাকায় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত শেড তৈরি করে তার ভেতর চাষাবাদ শুরু হয়। প্রথম থেকেই ভালো ফলন পেলেন তিনি। কিছুদিন পর জার্বেরার সঙ্গে চায়না বড় জাতের গোলাপ চাষ শুরু করেন।
২০১২ সালের দিকে তিনটি বড় খামারে ১৮ বিঘা জমিতে বিশদ পরিসরে শুরু করেন জার্বেরা ও গোলাপ চাষ। ফুল চাষের বিভিন্ন কলাকৌশল আয়ত্ত করতে তিনি বেশ কয়েকবার বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। চীনের একটি ফুলবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, জার্বেরা ফুলের একটি চারা থেকে টানা ৩ বছর ফুল পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে ৩ বছরে প্রায় ১০০ ফুল উৎপাদিত হয়, যার প্রতিটির বাজার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে তার বাগানে ২ ২০০ জার্বেরা ফুল উৎপাদনক্ষম চারা রয়েছে। সঙ্গে চায়না বড় জাতের গোলাপের চারা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। সব মিলিয়ে তার বাগান থেকে বছরে অন্তত ১৮ লাখ টাকা আয় হয়।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষিতে এগিয়ে যাওয়া দেখে দেলোয়ারের স্বপ্ন আরও জেঁকে বসেছে। এবার তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন মডেল নার্সারি গড়ে তোলার। যেখানে কৃষিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে চান। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষককে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে তা নিতান্তই কম। এখনও কৃষিক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে বলে জানান।
কৃষির স্বপ্নদ্রষ্টা দেলোয়ারের খামারে বর্তমানে ৪ নারী ও ১৩ পুরুষ সার্বক্ষণিক কাজ করেন। খামারের পাশেই গড়ে তুলেছেন অফিস কক্ষ যেখানে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে দেশের বাইরের ফুল চাষিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন।
ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শিউলী আক্তার লেখাপড়া শেষ করে দেলোয়ারের কৃষি খামারের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেছেন ৫ বছর হলো। উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ শেষে কৃষি খামারে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম বন্ধু-বান্ধবীরা তাকে কটূক্তি করলেও ভালো বেতনে তিনি তার কাজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। কৃষি খামারে কাজ করে যে নিজের ক্যারিয়ার গড়া যায় এটাই তার প্রমাণ।
জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর দেলোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করবেন চিন্তাও করতে পারেননি। একজন কৃষক হিসেবে জাতীয় পুরস্কারের মধ্য দিয়ে তার কর্মস্পৃহা ও দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। প্রথম প্রথম সবাই তাকে পাগল অভিহিত করলেও এখন সবাই তাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন, এটাই তার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুয়িদুল হাসান বলেন, দেলোয়ার একজন সফল ফুল চাষি। ফুল চাষই তাকে এনে দিয়েছে কৃষিতে সর্বোচ্চ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক। তাকে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৮
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×