somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় নিম কোটেড ইউরিয়া: শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানায় উৎপাদন শুরু হচ্ছে

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফসফেট ও পটাশঘটিত সার বিনিয়ন্ত্রণের ফলে দাম হয়েছে আকাশ ছোঁওয়া। অন্য দিকে ইউরিয়া সার সরকারের ব্যাপক ভর্তুকির কল্যাণে নুনের থেকেও সস্তা। এই প্রেক্ষিতে কৃষক ফসলের ফলন বৃদ্ধির আশায় ফসফেট, পটাশ ও অন্যান্য গৌণ এবং অনুখাদ্যগুলির সঙ্গে কোনও সাযুজ্য বা ভারসাম্য না রেখে শুধু সস্তার ইউরিয়া সার ব্যবহারে মত্ত। যার জেরে মাটির উৎপাদনশীলতা কমছে, ভূগর্ভস্থ জলের দূষণ বাড়ছে, পরিবেশ ক্রমে উষ্ণ হচ্ছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে চাষে নিম কোটেড ইউরিয়ার ব্যবহার নিয়ে এসেছে নতুন আশার আলো।

ইউরিয়ার প্রয়োজন
বীজ থেকে ফসলের বেড়ে ওঠা ও জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ১৬টি খাদ্য উপাদান জরুরি। যার মধ্যে নাইট্রোজেন হল অন্যতম মুখ্য উপাদান। এটি উদ্ভিদের পাতা ও কাণ্ডের সবুজ অংশ—ক্লোরোফিল তৈরি করে শর্করা উৎপাদন করে এবং প্রোটিন সংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এক কথায় নাইট্রোজেন হল ফসলের বৃদ্ধি ও অধিক উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার। আর এই নাইট্রোজেন পোষক তত্ত্বের প্রধান ও সস্তা উৎস হল ইউরিয়া সার। শতকরা ৪৬% ভাগ নাইট্রোজেন সরবরাহের পাশাপাশি ইউরিয়ার বিশেষত্ব হল জলে সহজে গুলে যায় এবং ননপোলার বা মেরুহীন হওয়ায় অন্যান্য সার এমনকী কীটনাশকের সঙ্গেও মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।

প্রয়োগের পরে
ইউরিয়া মাটিতে উপস্থিত অসংখ্য উপকারী অনুজীব নিঃসৃত ইউরিয়েজ উৎসেচকের মাধ্যমে অ্যামোনিয়াতে ভাঙে। যা পরে নাইট্রোসোমোনাস ও নাইট্রোব্যাকটর জীবাণুর সহযোগিতায় নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। ফসল যেমন অ্যামোনিয়াম এবং নাইট্রেট আকারে নাইট্রোজেন নেয়, তেমনই বেশ খানিকটা অপচয় হয় উদ্বায়ী অ্যামোনিয়া গ্যাস আকারে। বাকিটা বিজারিত হয়ে নষ্ট হয় নাইট্রোজেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের গ্যাস আকারে।

অপচয়ে ক্ষতি
সহজে জলে গুলে যায বলে ইউরিয়া মাটিতে প্রয়োগ করার পর উঁচু ঢাল থেকে নিচু ঢাল বরাবর জলের সঙ্গে ধুয়ে চলে যায় বা মাটির উঁচু অংশ থেকে নীচে চুঁইয়ে পড়ে। এছাড়াও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বায়বীয় আকারে উবে দ্রুত নষ্ট হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে—স্থান, ফসল ও জলবায়ুর সাপেক্ষে ব্যবহৃত ইউরিয়ার মাত্র ৩০-৫০% গাছ নেয়। বাকিটা নষ্ট হয়। এই নষ্ট হওয়া ইউরিয়া কেবল কৃষকের আর্থিক ক্ষতি করে না— মাটি, ভূগর্ভস্থ জল ও বায়ুমণ্ডলের ক্ষতি করে। ভূগর্ভস্থ জলে নাইট্রেট মিশে পানীয় জল দূষিত হয় (মানুষ ও গবাদি পশুর লিভার, কিডনি সংক্রান্ত রোগ বাড়ার জন্য দায়ী)। আবার নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমণের জন্য ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা যেমন বাড়ে, তেমনই অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে।

নিম কোটেডে সুফল
সাধারণ ইউরিয়া সারের এই ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই এড়ানো যেতে পারে নিম কোটেড ইউরিয়ার প্রচলনে। নিম বীজ থেকে নিষ্কাশিত অ্যাজাডিরাকটিন সমৃদ্ধ ইমালশানের প্রলেপ ইউরিয়া দানায় সংযুক্ত করে তৈরি হওয়া নিম কোটেড ইউরিয়া মাটিতে প্রয়োগ করলে নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হয়। কারণ নাইট্রিফিকেশন ত্বরান্বিতকারী জীবাণুগুলো এতে হীনবল হয়ে পরে। ফলে ইউরিয়া দানা ধীরে ধীরে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। ভারতীয় কৃষি গবেষণা সংস্থা (IARI) পুষার বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন নিম কোটেড ইউরিয়া কমপক্ষে ১০-১৫ শতাংশ বেশী কার্যকরী এবং সাধারণ ইউরিয়ার তুলনায় গড়ে ৬-১২ শতাংশ বেশি ফলন দেয়। নাইট্রোজেন সাশ্রয়ের পাশাপাশি ফসলের রোগ পোকা প্রতিরোধেও নিম কোটেড ইউরিয়ার বিশেষ গুণ আছে।

ভর্তুকি কমে সাশ্রয়
ভারত সরকার সবথেকে বেশি ভর্তুকি দেয় সারের উপর। অথচ এই মুল্যবান ভর্তুকির বেশ খানিকটা নষ্ট হচ্ছে। কারণ ভর্তুকির টাকায় ইউরিয়া কিনে ব্যবহৃত হচ্ছে অন্য শিল্পে —পশু খাবার, প্লাস্টিক, প্লাইউড, কসমেটিক্স শিল্পে। নিম কোটেড ইউরিয়া কিন্তু এই অন্য শিল্পগুলিতে ব্যবহার করা যাবে না।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ ইউরিয়ার সরবরাহ বন্ধ করে শতকরা ১০০ শতাংশ নিম কোটেড ইউরিয়া ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চলেছে, যা হতে পারে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের হিসাব মতো প্রায় ৭০০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হবে এতে। নিম যুক্তকরণের জন্য কৃষককে কেবল মাত্র ৫ শতাংশ অতিরিক্ত দাম দিতে হবে যা অনায়াসে মেটানো যাবে ১০ শতাংশ কম ইউরিয়া ব্যবহার করে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

প্রেক্ষিত বাংলাদেশ: শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানায় পরীক্ষামূলকভাবে নিম কোটেড ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হচ্ছে
পরিবেশবান্ধব নিম কোটেড ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। শুরুতে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানায় পরীক্ষামূলকভাবে নিম কোটিং ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হবে। এরপর যমুনা ফার্টিলাইজারে এ ধরনের ইউরিয়া সারের উৎপাদন শুরু হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, নিম কোটেড ইউরিয়া সার সাধারণ ইউরিয়া সারের তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি কার্যকর। এছাড়া সাধারণ ইউরিয়ার তুলনায় গড়ে ৬-১২ শতাংশ বেশি ফলন দেয়।
ফসলে রোগ-পোকা প্রতিরোধেও নিম কোটেড ইউরিয়া সারের বিশেষ গুণ রয়েছে। বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে নিম কোটেড ইউরিয়া সার উৎপাদনে যাওয়ার কথা বলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পরই গুজরাটে নিম কোটেড ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন করা হয়। ওই কারখানাতেই এখন নিম কোটেড ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের নিম ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) গুজরাটের ওই কারখানার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। সম্প্রতি গুজরাটের ওই কারখানা দেখে এসেছেন সার উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কয়েক জন। বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, বিএনএফের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে নিমের তেল সরবরাহের বিষয়ে তাদের কথা হয়েছে। তারা জানতে পেরেছে বাংলাদেশে ২৫ বছর ধরে নিম ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। নিম আয়ুর্বেদী ও ইউনানি দুটিরই অংশ। এক কেজি নিমের পাতার মূল্য ৪৫ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশে নিমভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠেনি। এ জন্য নিম ফাউন্ডেশন আগামীতে পাঁচ কোটি নতুন গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিএনএফ এক হিসাবে দেখেছে প্রতি বছর তারা ১০০-২০০ টন নিম তেল উৎপাদন করতে পারে। আগামীতে তারা রেললাইনের দুই পাশে নিমের চারা লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এদিকে বিসিআইসি চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশবান্ধব এ ইউরিয়া সার উৎপাদনের প্রাথমিক ছক তৈরি করা হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (উৎপাদন) শাহীন কামাল। তিনি জানান, প্রথমে আমরা পাইলট প্রজেক্ট আকারে নিম কোটেড ইউরিয়া সার উৎপাদন করবো। এরপরই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হবে। বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ইউরিয়ার দানায় নিম তেল মাখানোর কারণে জমির শক্তি বাড়ছে। আগে যে জমিতে ১০ কেজি ইউরিয়া লাগতো সেই জমিতে এখন নিম কোটেড ইউরিয়া ৬-৭ কেজি মেশালেই আগের থেকে বেশি ফলন হবে বলে আশা করা যায়। এ কারণে কৃষকের তিন-চার কেজির মূল্য সাশ্রয় হবে। এ ধরনের সার উৎপাদন হলে চোরাকারবারি হবে না। পাশাপাশি নিম কোটিং দেয়া এক গ্রাম ইউরিয়াও কোনো রাসায়নিক কারখানার কাজে লাগে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ ইউরিয়া সারের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই এড়ানো যেতে পারে নিম কোটেড ইউরিয়ার প্রচলনে। নিম বীজ থেকে নিষ্কাশিত অ্যাজাডিরাকটিন সমৃদ্ধ ইমালশানের প্রলেপ ইউরিয়া দানায় সংযুক্ত করে তৈরি হওয়া নিম কোটেড ইউরিয়া মাটিতে প্রয়োগ করলে নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয়। কারণ নাইট্রিফিকেশন ত্বরান্বিতকারী জীবাণুগুলো এতে হীনবল হয়ে পড়ে। ফলে ইউরিয়া দানা ধীরে ধীরে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে।
সূত্র: দৈনিক মানবজমিন

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২৪
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×