somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"প্রিয় পাহাড়..."(তৃতীয় পর্ব)

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'মেঘ বলল যাবি?
অনেক দূরে গেরুয়া নদী
অনেক দূরের একলা পাহাড়
অনেক দূরের গহন সে বন
গেলেই দেখতে পাবি,যাবি?'-সকাল ৬ টায় এলার্ম বেজে উঠলো,বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিলো না,জানি পম দা আর কুমু দা এখন ডাকলেও উঠবে না।।হিরক দা উঠে বসলো,একটু চা হলে ভালো হতো বুঝলি! চা অর্ডার করা হলো আমি আর হিরক দা টুকটাক গল্প করতে করতে চা ও এসে হাজির।।আমি চা খেয়ে স্নান করতে সোজা বাথরুমে,ঘড়ির কাঁটা বেজে তখন সকাল ৬.৩০ টা।।এতো সকালে স্নান করা টা খুব চাপের,একে পুজোর পরেই আমাদের দক্ষিনবঙ্গে ঠান্ডা পড়তে শুরু করে,উত্তরবঙ্গে ভালো ঠান্ডা পড়ে যায়,কিন্তু সারাদিন স্নান হবে না বলে করতে হলো বাধ্য হয়ে।।স্নান করতে করতে শুনতে পেলাম ওরা দুজন ঘুম থেকে উঠেছে,উঠেই ৩ জন মিলে কেনো এতো বেশি ঠান্ডা পড়ে সেটা নিয়ে যুদ্ধ করছে।।আমি স্নান করে বেরিয়ে এসে তাড়া লাগালাম,৮ টার মধ্যে সব ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম 'মিরিক' এর উদ্যেশে।।ওই খান অটো ধরে এলাম যে খান থেকে মিরিক এর ট্যাক্সি গুলো ছাড়ে,আমরা চাইলেও বাসে যেতে পারতাম কিন্তু তাহলে ভালো করে সব কিছু দেখা হবে না বলে শেয়ার ট্যাক্সি নিলাম।।ট্যাক্সি ছাড়বে সকাল ৯ টায়,এইদিকে খিদে পাচ্ছে,কে কি খাবে সেটা নিয়ে আর এক প্রকার আলোচনা হলো।।আমি পম দা হিরক দা কচুরি খেতে গেলাম,আর কুমু দা ওই সব খাবে না বলে আখের রস খেতে গেলো।।সব খেয়ে ট্যাক্সি তে উঠা হলো,আমি আর হিরক দা পাশাপাশি,কুমু দা পম দা পেছনে,আমি অবশ্যই জানলার ধারে।।দার্জিলিং মোড় থেকে ট্যাক্সি চললো ধীর গতিতে,হিরক দা উৎফুল্ল হয়ে আছে,সামনে ওর কলেজ 'শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'।।কলেজ চলে এলো,দেখলাম ৩ দিক চা বাগান দিয়ে ঘেরা কলেজ,আমার দেখা পশ্চিমবঙ্গের সেরা কলেজ।।দেখলাম হিরক দার মন টা একটু ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো,আসলে হয়তো পুরোনো স্মৃতি সব মনে আসছিলো,হয়তো ভাবছিলো নতুন করে পুরোনো ঘরেই ফিরছে হয়তো।।


পাহাড়ের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে উঠতে শুরু করলো আমাদের গাড়ি,পাহাড়ি রাস্তা তে এই এক সমস্যা অনেকের মাথা ঘোরে,বমি চলে আসে,কুমু দার সেই অবস্থায় হলো।।ওষুধ দিলাম কুমু দা কে,ওষুধ খেয়ে কিছুক্ষন ঘুমোনার চেষ্টা করলো।।হিরক দা একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে,আর আমি প্রশ্ন করে যাচ্ছি পাহাড় নিয়ে,সেই গুলোর উত্তর দিয়েই চলছে।।কিছুখন পর ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিলো আমাদের অনুরোধে,সবার চা খেতে ইচ্ছে করছে,গাড়ি থেকে নেমে চা য়ের অর্ডার দিলাম,কুমু দাও নেমে এসেছে,অসাধারন লাগছে জায়গা টা।।
'আমার একটা ছবি তুলে দে না ভাই।'অনুযোগ করলো পম দা
'হ্যাঁ রে ! ছবি তোলাতেই তো তুই এসেছিস !' হিরক দা বললো
'আর কি?'
বুঝলাম সকালে হোটেলে শুরু হওয়া বিতর্কের রেশ তখনো শেষ হয় নি।
চা,সিগারেট খেয়ে শুরু হলো আমাদের যাত্রা,কুমু দা চা খেয়ে পুরোপুরি ফ্রেশ একদম।।গাড়ি পৌঁছে গেলো মিরিক।।


মিরিক পৌঁছে যেটা উপলব্ধি করলাম,বৃষ্টি পড়ছে হালকা।।প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আমি আর পম দা ছুটে পাবলিক টয়লেট গেলাম।।বেরিয়ে এসে দেখি আমার মাথার উপর মেঘ ভাসছে,আমি যেনো মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটছি,মনে পড়ে গেলো একটা গান 'মেঘপিয়নের ব্যাগের ভেতর..'।।গুনগুন করতে করতে এগিয়ে গেলাম সুমেন্দু লেক এর দিকে,দারুন লেক,প্রচুর লোক বোটিং করছে আমরা কিছুখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই গুলো উপভোগ করলাম,ছবি তোলা তামাচ্ছে না হিরক দা,তুলেই যাচ্ছে।।যায় হোক ছবি তোলা শেষ হতে হিরক দা বললো উপরে চলো একটা ভালো প্যাগোডা আছে দেখে আসি,সেটা দেখতেই উপরে উঠতে লাগলাম,সিঁড়ি ভেঙে উঠতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু উপরে উঠে এক শান্তির জায়গা খুঁজে পেলাম।।কিছুখন সেই খানে বসে আরো চারপাশের জায়গা গুলো ঘুরলাম।।এইদিকে পম দা খবর দিলো আরো উপরে উঠলে ওই খান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে।।কুমু দা উঠতে চাইছিলো না,আমরা জোর করতে আর পেরে না উঠে বললো 'Come On Follow Me'।।দুর্ছায়,উপরে উঠা লাভ হলো না,কাঞ্চন তো দূর কিছুই দেখা গেলো না মেঘের জন্য।।নিচে নেমে আসা হলো,এদিকে দুপুর হয়ে গেছে খেতে হবে।।কি খাওয়া যায়,ভাবতে ভাবতে পম দার অনুরোধে আমরা সবাই মোমো খেলাম।।খেতে মন্দ না,কিন্তু মন ভরলো না,সেটা পম দা কে বলতে বললো ফেরার সময় হংকং মার্কেট শিলিগুড়ি থেকে আমায় বেস্ট মোমো খাওয়াবে।।আরো কিছুক্ষন মিরিক এর সৌন্দর্যের ভাগ নিয়ে ফেরার গাড়ি তে উঠলাম,এই বারেও জানলা ধারের সিট আমার জন্য।।


ফেরার সময়,ঝড়ের গতিতে ট্যাক্সি নেমে আসলো প্রায় ৪৫ মিনিটে।।আমাদের হংকং মার্কেটের সামনে নামিয়ে দিলো,ঘড়িতে তখন ৪.৩০।।আমাদের আজ আলিপুরদুয়ার যেতে হবে,কিছুক্ষন পর ৫.৩০ টার দিকে কৃশানু দা চলে আসবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে,ওই ট্রেনে করেই আমরা চলে যাবো আলিপুরদুয়ার,ওই খানে আগে থেকে পম দা ফোন করে হোটেল ঠিক করে দিলো।।হাতে 1 ঘন্টা সময়,তার মধ্যে মোমো খেয়ে স্টেশন যেতে হবে,টিকিট কাটতে হবে।।মার্কেটের ভেতর ঢুকে মোমো অর্ডার দিলাম,গরম গরম মোমো চলে এলো,সেই গুলো সাবাড় করে দিয়ে কুমু দা বললো আমি এক জোড়া জুতো কিনবো,৫ মিনিট লাগবে।।৫ মিনিট এর জায়গায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে দিলো কুমু দা।।সব শেষ করে দৌড়ে এসে একটা অটো রিজার্ভ করে নিলাম,ঘড়ি তে দেখলাম তখন ট্রেন ঢুকতে আর ১২ মিনিট বাকি।।এই দিকে কৃশানু দা ফোন করে যাচ্ছে,স্টেশন পৌঁছে দৌড়ে টিকিট কাউন্টারে যেয়ে টিকিট কেটে যখন ওভার ব্রিজ থেকে নামছি দেখছি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে,যখন প্লাটফর্ম এ পৌঁছালাম তখন দেখি ট্রেন আমাদের বাই বাই করতে করতে চলে গেলো,দূর থেকে দেখি কৃশানু দা চেঁচাতে চেঁচাতে আসছে 'বামপন্থীরা সময়ে কোনও কাজ করে উঠতে পারে না!',সত্যিই কি করে উঠতে পারে না??
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×