'If you missed the train i'm on
you will know that i am gone
you can hear the whistle blow a hundred miles'
দূর থেকে শুনতে পেলাম কৃশানু দা চেল্লাতে চেল্লাতে আসছে,কাছে যেতেই বললো 'তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই,আর 5 মিনিট আগে বেরোলে কি হতো?'।।দেখ যা হবার হয়ে গেছে,আর বেড়াতে এসে ট্রেন মিস করার মজা টায় আলাদা কুমু দা বললো।।আমি এই ফাঁকে নেট থেকে দেখে নিলাম পরবর্তী ট্রেন আর আধা ঘন্টা বাদে।।কৃশানু দার খিদে পেয়েছিলো,তাই সবাই মিলে কফি আর বিস্কুট খাওয়া হলো।।দেখতে দেখতে ট্রেন এসে হাজির,কম্পার্টমেনটে উঠে পড়লাম,সিট পাওয়া গেলো ভিড় না থাকায়।।তাস খেলা হবে,তাস বের করা হলো আমরা আছি 5 জন কিন্তু খেলবে 4 জন যাকে হোক একজনকে বসতে হবে,যেহেতু আমি ছোটো তাই আমিই বলির বাগড়া হলাম,কিন্তু বাঁচিয়ে দিলো হিরক দার ফোন,ফোন আসাতে ও উঠে আমায় হাত ছেড়ে দিলো।।ট্রেন চলছে,মাঝে মাঝে চা,ঝাল মুড়ি,ঘুগনি এই সব খাওয়া চলছে আর সাথে তাস রমরমিয়ে চলছে।।আলিপুরদুয়ার চলে এলো দেখতে দেখতে,ঘড়িতে তখন রাত 10 টা,নেমেই বুজতে পারলাম ঠান্ডা কি মারাত্মক শিলিগুড়ির থেকেও বেশি।।স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে একটা অটো রিজার্ভ করে চললাম হোটেল,আগে থেকেই হোটেল বুক করা ছিলো,তাই চাপ ছিল না।।রুমে ঢুকে আমি আগে ফ্রেশ হতে ঢুকলাম,ওরা খাবার অর্ডার দিলো।।বেরিয়ে এসে খেতে বসে দেখি ভাত আর চিকেন এর ঝোল সাথে এক টুকরো স্যালাড।।ওই খেয়ে নিয়ে আমি কিছুখন আড্ডা মেরে শুতে চলে গেলাম,ওরা তখনও আড্ডা মারতে ব্যস্ত।।
'ঘরে যত লোভী ছিল লুচি-মন্ডা'র
কাজিরাঙা গিয়ে তারা দেখে গণ্ডার'
কাজিরাঙা নয়,কাছেই জয়গাঁ,সেই খানেই যাওয়ার কথা আজকে।।সকাল 9 টায় গাড়ি আসতে বলা হয়েছে,এদিকে ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে সর্বজনীন ল্যাদ।।
'এই সালা, ওঠো রেডি হও'
'সবাই রেডি হোক,আমি সবার শেষে উঠবো,আমি অনেক রাত্রে ঘুমিয়েছি'
'রাত তিনটে অবধি ফোনে কে ভাটাতে বলেছিলো?'
'আমি ছুটি কাটাতে এসেছি,আমি যতরাত অবধি কথা বলবো,তুই বলার কে?' ইত্যাদি ইত্যাদি
পাঠককুল কে জানিয়ে রাখা ভালো যে ঘুম থেকে উঠা নিয়ে এই নাটক রোজ সকালে এমনকি রাতেও হয়েছে।।কাজেই সেটার বিবরণ দিয়ে পাঠককুল কে বিব্রত করার কোনো অধিকার আমার নেই।।
আপাতত প্রথম গন্ত্যব ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ,সেখান থেকে একটু ভুটান ছুঁয়ে আসা।।
জয়গাঁ মোটামুটি বর্ধিষ্ণু শহর।।রাস্তায় গাড়ি এবং মানুষের ভিড়,চারিদিকে দোকানপাট।।গত সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো একে পুরসভায় উন্নীত করার,এখনো কোনো ঝামেলায় ঝুলে আছে সে সিদ্ধান্ত।।কদিন আগেই জলপাইগুড়িতে একটা বিস্ফোরন হয়ে গেছে,তাই ভুটান সীমান্ত সীল হয়ে যাওয়ার ভয় ছিলো,তবে এসে দেখি তেমন কোনো সমস্যা নেই।।জয়গাঁ পেরিয়ে গাড়ি বর্ডার টপকে টুপ করে ঢুকে পড়লো ব্রজবিদ্যুতের দেশ ভুটানে।।
'সে কি ! পাসপোর্ট ভিসা কিসসু লাগলো না?? গাড়ি তো চেক ও করলো না'
আবেগ ভেজা গলায় আমিও বলে উঠলাম 'বিশ্বের সমস্ত বর্ডার ই এরকম হওয়া উচিত'।
ভুটান ঢুকতেই কেমন কেমন একটা বিদেশ ফীল আসা শুরু হলো।।একটু দূরেই নোংরা,ঘিঞ্জি,ভিড়ে ঠাসা জয়গাঁ,আর বর্ডার পেরোতেই ছিমছাম,ছবির মত সাজানো ফুন্টসোলিং।।ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট,দোকানপাট,জামাকাপড় সবেতেই এদের এসথেটিকস সেন্সের ছাপ স্পষ্ট।।
'মেয়েগুলো দেখতে কি দুর্দান্ত রে ! ভাবছি কথা বলে আসি'
আমি আর কৃশানু দা গিয়েছিলাম কুমির - ঘড়িয়াল দেখতে।।বাকি তিনজন তখন সামনের পাহাড়,তার পাশের খরস্রোতা নদী,আর নদীর ধারে ঝলমলে পোশাক পরা ভুটানি মেয়ে দেখছে।।
কাল রাতে নেট এ দেখছিলাম কাছাকাছি একটা মনেস্ট্রি থাকার কথা,ড্রাইভার রামকুমার দা জানালো আমাদের পরবর্তী গন্ত্যব সেই খানেই।।
একসময় ভারতের এক বিরাট অংশে হইহই করে ছড়িয়ে পড়া বৌদ্ধধর্ম কালক্রমে কিছু নিজের দোষে এবং বাইরেই কিছু আক্রমণে মোটামুটি লোপ পেয়ে গিয়েছিলো উপমহাদেশের সমতল এলাকায়।।এই অঞ্চলের বৌদ্ধধর্ম তিব্বতি ব্রজযান বৌদ্ধধর্মকে অনুসরণ করে।।এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে গেলাম মনেস্ট্রি তে।।দূর থেকেই রঙ বেরঙের ঝান্ডা দেখা যাচ্ছিলো,তাতে অপরিচিত লিপি তে মন্ত্রতন্ত্র লেখা,যতদূর জানি দুষ্ট আত্মা কে দূরে রাখার জন্য এই গুলো টাঙানো হয়।।মনেস্ট্রির একপাশে খাড়াই খাদ,নিচে ফুন্টসোলিং শহর টাকে মনে হচ্ছে কে যেন ঝুলন সাজিয়েছে,কুয়াশার জন্য ভালো ছবি এলো না।।
'হ্যাঁ হ্যাঁ ওই খানে দাঁড়িয়ে থাক ,ছবি তুলবো,ধুর সরে গেলো'
কি ব্যাপার ! পেছনে তাকিয়ে বুজতে পারলাম, আসল টার্গেট ছিল আমার একটু পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ফেমিনিন জেন্ডার।এখানকার নয়,ট্যুরিস্ট,কলকাতার ও হতে পারে।।জুতো খুলে মনেস্ট্রি তে ঢুকলাম।।চাতালের উপর বেশ ভিড় হয়ে গেছে ট্যুরিস্ট দের,বাঙালি,তামিল,জার্মানি;অনেকেই হাত দিয়ে গোল ড্রাম এর মত যন্ত্রটা ঘোরাচ্ছে,টুংটাং আওয়াজ ভেসে আসছে ঘন্টার,হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় শরীরে শিরশিরে ভাব,ভেতরে কমবয়সী সন্ন্যাসী দের সুর গলায় উঠছে-'ওম মনি পদ্মে হুঁ'।।আস্তে আস্তে বেরোচ্ছি,পাশ থেকে ডাক এলো,দেখি বাকিরা গিয়ে উঠেছে পাশেই একটা উঁচু ঘাস জমির পাল্টফর্মে।।
'ঐদিকটায় উঠার জায়গা আছে'
'হুঁ,অতোটা ঘুরবে কে?' নিজের ফিটনেস দেখানোর জন্য উঠে গেলাম এদিক দিয়েই হাঁছোড় পাচর করে।।
তারপর একটু সুখটান, এদিক ওদিক পোজ দিয়ে ফটোসেশন।।
বেরিয়ে আসছি,পথে দেখা যাদবপুরের কিছু কমরেড দের সাথে,উনিভার্সিটির ছেলে ওরা আমায় চেনে,তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি আলিপুরদুয়ার আবার,ওর বাড়ি বেস করে ওরা ঘুরছে।।
'এই যা নদীটার নাম তো জানা হলো না' আমি বলে উঠলাম।।
'তোকে পৃথিবীর সব কিছু জানতে হবে' পম দা বললো।।
গাড়ি ছুটিয়ে নিয়ে চলে এলো আলিপুরদুয়ার,দুপুরের খাবার তখনো পেটে পড়ে নি,ঘড়িতে তখন 5 টা ছুঁয়ে গেছে।।ততক্ষনে পেটে ড্রাগন গর্জন করা শুরু হয়ে গেছে,গাড়ি এসে একটা নামকরা রেস্তোরাঁ তে নিয়ে গেলো পম দা,তার বিল মেটাতে এসে এটিম এ কতক্ষন লাইনে দাঁড়াতে হলো সেইসব বলে গল্পের বহর বাড়াবো না,বুঝে নিন।।পুরো সন্ধ্যে বেলা তাস খেলে কেটে গেলো,কাল আমাদের যাওয়ার কথা জলদাপাড়া।।সকাল বেলা তাড়াতাড়ি উঠতে হবে,তাই বেশি দেরি না করে শুতে চলে গেলাম।।
[চলবে]