somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"প্রিয় পাহাড়..."(পঞ্চম পর্ব)

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'ওই টুকু নিয়েই তুমি বড় হও,
বড় হতে হতে কিছু নত হও,
নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে,পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ'-ঘুম ভাঙার পর হেলাল হাফিজ এর 'পৃথক পাহাড়' কবিতা টা মাথায় আসলো।।আজ আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিলো যে জায়গায় যাচ্ছি সেই জায়গার মানুষ,সেই জায়গার মাটি,সেই জায়গার আকাশ,এবং সর্বোপরি সেই জায়গার কালচার কেমন তা বুঝতে হবে,না হলে ঘুরে বেড়ানো টায় বৃথা।।তাই আজ সবার প্রথম যাবো মাদারিহাট,ওই খানে মানুষ জন এর সাথে মিশব কিছুখন,দুপুরের খাবার ওই খানে খাবার পর আমরা যাবো জলদাপাড়া।।ঘুম থেকে উঠে চা এর অর্ডার দিলাম,কৃশানু দা আজ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেছে,কিছুক্ষন আলোচনা হলো আজকের প্ল্যান নিয়ে কারণ আজকের পুরো প্ল্যান টা আমার করা।।চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে গেলাম,আসতে আসতে সবাইকে ঘুম থেকে তোলা হলো,ড্রাইভার কে ফোন করা হলো গাড়ি নিয়ে আসার জন্য।।সবাই ফ্রেশ হয়ে হোটেলের নিচে গেলাম,পাশেই কচুরি ভাজছে একটা দোকানে,কচুরি সাটিয়ে গাড়িতে উঠা হলো।।গাড়িতে কিছুক্ষন যাওয়ার পর দেখলাম গান চলছে উড়িয়া গান,হিরক দা খিস্তি মেরে গান বন্ধ করে নিজের মেমোরি কার্ড দিয়ে দিলো।।কিছুক্ষন পর দেখলাম বেজে উঠলো জন ডেনভার এর গান 'sunshine on my shoulder,makes me happy'।।


গাড়ি এসে পৌছালো মাদারিহাট,লক্ষণ কাকু কে ফোন করলাম,স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি,আসার আগে ফোন করে ছিলাম,ওই জলদাপাড়া তে ঢোকার পাসের ব্যবস্থা করবেন কথা দিয়েছিলেন,আর উনার বাড়িতে দুপুরের খাবার ব্যবস্থা উনিই করেছিলেন।।লক্ষণ কাকুর সাথে দেখা হলো,সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর উনি সবাইকে নিয়ে এলাকায় ঘুরতে নিয়ে গেলেন।।ঘন্টাখানেক ঘোরার পর সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন উনার বাড়ি,দুপুরে খাওয়া হলো উনার বাড়িতেই দেশি মুরগি সহযোগে।।খেতে খেতে এই এলাকার আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলো।।এরপর জঙ্গল সাফারি তে বেরোনা হবে আলাদা গাড়ির বন্দোব্যস্ত হয়েই আছে,কিন্তু শুরুতেই হলো বিপত্তি।।পাসে যে গাড়ির নাম্বার লেখা আছে,সেই নম্বর এর গাড়ির কোনো পাত্তায় নেই।।এদিকে বাকি গাড়ি গুলো বোঝাই হয়ে গেছে,এখুনি রহনা হবে।।খোঁজ নাও খোঁজ নাও,শেষে দেখা গেলো যেই গাড়িটায় কোনো নাম্বার প্লেট নেই,সেটাই আমাদের জন্য বরাদ্দ।।
'বাহ,ভিইপি!'
'হ্যাঁ,কিন্তু এখানকার গাড়ি গুলোর ছিবড়ের মতো অবস্থা।।গরুমারার সাফারি গুলো অনেক ভালো'-কৃশানু দা জ্ঞান দিলো।।সাফারি ঢুকে পড়ছে জঙ্গলে,সবাই যে যার পসিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে,গাইডের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে চারিদিকে,এদিকে ধুলো খেয়ে সবার ভুরুর চুল সাদা,আমি আবার টুপি খুঁজে পাচ্ছি না,ঠান্ডার হাত থেকে কান জোড়াকে বাঁচাতে মাফলার টা দিয়েই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি।।
'ঐ যে ঐ যে একটা হাতি'-কুমু দার কথায় সবাই সেদিকে তাকালাম,জঙ্গল থেকে একটা ছোট হাতি বেরিয়ে আসছে,পিঠে মাহুত।।
'তোমার আবার হাতি দেখে কি হবে!! তোমার তো চাই সিংহ,হাতি তো তুমি প্রচুর দেখেছো'-আমি বলে উঠলাম।।
'টু বি মোর একুরেট,বাচ্ছা সিংহ'
'কাকা এই খানে বাচ্ছা সিংহ আছে? আমাদের দাদার সেটা না হলে চলে না'।
গাইড কাকা কি বুঝলেন কে জানে,গুটখা-চর্চিত দাঁত বের করে একটা লালচে হাসি ছুঁড়ে দিলেন।।
গাড়ি এগোচ্ছে ধূলিধূসর রাস্তা দিয়ে,পাশে কখনো বড় গাছের জঙ্গল,কখনো বা বাদাবন,মাঝে মাঝে একটা ভাঙাচোরা ব্রিজ আসছে,নিচ দিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে জল।।


এখনো অবধি কয়েকটা বাঁদর,হরিণ আর ময়ূর ছাড়া বিশেষ কিছুই চোখে পড়ে নি,এদিকে সূর্য্যমামা অস্ত যাবো যাবো করছে।।
'এহহ,আলো কমে আসছে,এরপর গণ্ডার দেখতে পেলেও ভালো ছবি আসবে না'।।সামনেই একটা ওয়াচ টাওয়ার,কিন্তু তার কিছু আগেই সব গাড়ি গুলোর জটলা,কি ব্যাপার!!গাইড আঙ্গুল তুলে দেখালেন,কিছুটা দূরে জঙ্গলের সবুজের ভেতর একটা কালো ছোপ এবং সেটা নড়ছে।।গাড়ি টা একটু এগোতেই দেখতে পেলাম একটা গণ্ডার,বড্ড আফসোস হতে থাকলো-'একটা দূরবীন আনা হয় নি'।।পরের ওয়াচ টাওয়ার এর নিচে পৌঁছেছি,হঠাৎই দেখি বাকি গাড়ির লোকজন হৈ হৈ হুটোপাটি করে গাড়িতে উঠছে,কি ব্যাপার ! বাঘ পড়েছে না কি!!অনেক কষ্টে উদ্ধার করা গেলো,হলং এর বনবাংলোর পাশে বাইসনের পাল দেখা গেছে।।গাইড কাকু নিচু স্বরে গালি দিচ্ছিলেন হৈ হৈ পার্টি দের 'জঙ্গলে এসে চেঁচামেচি করছে।চেঁচামেচি করবি তো পিকনিকে গিয়ে কর,সাফারি তে এসেছিস কেনো?'আমিও সুরে সুর মেলালাম,আর বহুদিন পুরানো ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা থেকে জঙ্গলে এসে কি কোড অফ কন্ডাক্ট ফলো করা উচিত,তা নিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করলাম।।হলং এর বনবাংলোর পাশে একটা ছোটো নালা রয়েছে,তার উপরে লবন ডাই করে রাখা,ঐখানেই সূর্যাস্তের সময় জন্তু-জানোয়াররা জল খেতে আসে।।পৌঁছে শুনি হৈ হৈ পার্টির কেরামতি দেখে বাইসন বাবাজিরা কেটে পড়েছেন,কি আর করা যাবে।।এদিকে পম দা একটা মেয়েকে দেখে নিয়েছে এবং হিরক দার ক্যামেরা তে আপ্রাণ জুম করে তার ছবি তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।।আমি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি,পাশেই একটা ক্যালকেশিয়ান গ্রুপ দাঁড়িয়ে এবং তাদের একজন ডুয়ার্স নিয়ে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন।।জ্ঞান দেওয়ার অভ্যাসবশত আমিও সেইখানে ঢুকে পড়লাম,সেই সুবাদে পম দার নজরে পড়া মেয়েটার সাথে কথা হয়ে গেলো।।ওদের বালিগঞ্জে বাড়ি,চার-পাঁচ দিন হলো এই এলাকায়।।ডাক নাম মামন,অন্তত তার মা তো তাকে সেই নামেই ডাকছিলেন।।ওই পাশে আর একটা দল,কি ভাগ্য করেই এসেছেন,হলং এর বনবাংলোতে 2 দিন এর জন্য আস্তানা গাড়ার সুযোগ পেয়েছেন,গত সন্ধ্যায় জানলার পাশে বসে কি কি জন্তু দেখেছেন,তার গপ্পো শোনাছেন,হেব্বি হিংসে হলো,নাহ ও গল্প শুনবো না।।


আবার একটা হৈ চৈ,তবে এবার খুব তাড়াতাড়ি সেটা বদলে গেলো ফিসফিসানিতে,একটা বাইসন দেখা যাচ্ছে দূরে,দর্শক দের সবাইকে বলা হলো মাটিতে বসে পড়তে,ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বন্ধ করতে।।মুহূর্তে পুরো পিকনিক এর মেজাজ উধাও,সবার নিঃশ্বাসের শব্দই শুধু শোনা যাচ্ছে,আর মাঝে মাঝে ক্যামেরার সাটারের আওয়াজ।।জঙ্গলের থেকে উঁকি মারছে আরও বাইসন- একটা,দুটো,তিনটে,চারটে...কে আবার ফ্ল্যাশ মেরে দিলো একটা,ব্যস বাইসন এর দল সেইখানেই দাঁড়িয়ে পড়েছে।।ফিসফিস করেই যতটা গালি দেওয়া যায়,দেওয়া গেলো সেই ভোগাস-ভণ্ডুলি কে।।যায় হোক,মিনিট দুয়েকের মধ্যেই বাইসনেরা ভয় কাটিয়ে এগিয়ে এলো,ছবি-তোলন-প্রয়াসী দেরও মুখে হাসি ফুটলো।।জঙ্গল যাত্রা আজকের মত শেষ।।সূর্য অস্ত গেছে,চারিদিকে ঝিঁঝিঁ ডাকা শুরু হয়েছে,চারিদিকের সবুজ রঙে কালো কালো ছোপ ধরেছে,ধীরে ধীরে সেই ছোপ গুলো গাঢ় হবে,শেষে পুরো জঙ্গলটায় চলে যাবে অন্ধকারের চাদরের তলায়।।এদিকে আমাদেরও ডাক দিচ্ছে আলিপুরদুয়ারের হোটেল,কাবাব এর গন্ধ,মাঝে শুধু একবার থেমে সন্ধ্যের জ্বালানি তুলে নেওয়া বাকি....
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×