'আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি
দেখা যায় তোমাদের বাড়ি
তার নীল দেওয়াল যেনো স্বপ্ন বেলোয়ারী..'আজ যাবো মেঘের দেশে,হ্যাঁ আজ যাবো লেপচাখা,লেপচাখা কে উত্তরবঙ্গের রানী বলা হয়।।সকাল ৬.১০ এ বাস ছাড়বে আলিপুরদুয়ার বাসস্ট্যান্ড থেকে,এদিকে কাল রাত্রে জ্বালানি খেয়ে সমানে জোর গলায় ব্যান্ড এর গান গেয়েছি সবাই মিলে,এত জোরে গান গেয়েছি যে পাশের ঘরে হয়তো হানিমুন করতে আসা এক দম্পতি হোটেল এর ম্যানেজার এর কাছে যেয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।।তাই ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠা এবং তৈরি হওয়া নিয়ে গুঁতোগুঁতির পুনরাবৃত্তি।।
'আমার দেরি হবে,তোরা বেরিয়ে যা,আমি পরে বাস-ট্রেন যা হোক ধরে চলে যাচ্ছি' কুমুদা বলে উঠলো।
'আরে আজ যেই জায়গায় যাচ্ছ সেই খানে এই একটি বাস যায়,তুমি আসবে তো এসো না হলে এই খানে ২দিন রেস্ট নাও আমরা ঘুরে আসি!'
ওদিকে বাস এর সময় হয়ে আসছে,কুমুদা গড়িমসি করেই যাচ্ছে।এই প্রসঙ্গে বলে রাখি আলিপুরদুয়ার থেকে লেপচাখা ডিরেক্ট কোনো কিছুই যায় না,সান্থালা বাড়ি র আগে এক বনবাংলো আছে সেটা পর্যন্ত বাস যায় তাও আবার দিনে ওই একটি বাস ই,না হলে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে।।যাই হোক বেরোলাম আস্তানা ছেড়ে,হোটেল এর নিচে নেমে চা খেতে খেতে বাস চলে এলো,ব্যাগ কাঁধে চা নিয়েই বাস এ উঠে পড়লাম,পথে এবার নামো সাথী।।
কাল পরশু রোদের দেখা মেলেনি,কিন্তু আজকে মেঘের আড়াল থেকে সূর্য্যমামার মুচকি হাসি দেখা যাচ্ছে,তার সঙ্গেই নিজেদের সব মনোমালিন্য উধাও।।বাস তে দুটো জায়গার ট্যুরিস্ট যাচ্ছে কিছুজন জয়ন্তী বেড়াতে যাচ্ছে আর আমরা শুধু লেপচাখা যাচ্ছি,আমরা ফেরার পথে জয়ন্তী যাবো,কলকাতা থেকে দুজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা আমাদের সামনের সিটে বসে আছেন,বন এর মাঝ খান দিয়ে বাস চলেছে ধীরগতিতে,আমি আর কুমু দা একই সিটে বসে আছি।।পম দা বলছে আমায় 'দেখ চারপাশে বন,ভালো করে তাকিয়ে থাকিস হাতিও দেখতে পেতে পারিস'।।সেটা শুনে কুমু দা বলে উঠলো 'সিল্টু তো বন এর মাঝে বাড়ি করে থাকে,আর দিন রাত হাতির লেজ ধরে ঘুরে বেড়ায়',বাস এর সবাই তখন আমার দিকে তাকিয়েছে।।হটাৎ করে হিরক দা চাপ কাটানোর জন্য বলে উঠলো 'ওই দেখো হরিণ',সবাই বলে উঠলো 'কই কই কোথায়?' সারা রাস্তা এই ভাবেই মস্তি করে চলে এলাম বনবাংলো এই খানেই আমাদের বাস নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে জয়ন্তীর দিকে।।
বাস চলে যাওয়ার পর সবাই হাঁটার জন্য রেডি হচ্ছি এখনো মূল ট্রেক শুরু হয় নি,আসলে মূল ট্রেক শুরু হবে সান্থালা বাড়ি থেকে,আর বন বাংলো থেকে সান্থালা বাড়ি আরো ৬ কিলোমিটার যেতে হবে,এবং সেটা পায়ে হেঁটে অথবা বন বিভাগ এর যদি কোনো গাড়ি আসে তাহলে লিফট নিয়ে যেতে পারেন।।কুমু দা এদিকে নাটক শুরু করেছে বলছে '১0 মিনিট দাঁড়িয়ে যা,আমার মন বলছে একটি গাড়ি আসবে', সত্যিই সেটা হলো,৫0 টাকার বিনিময়ে চলে এলাম সান্থালা বাড়ি ঘড়িতে তখন ৮ টা।।
এরপর শুরু হবে মূল ট্রেক,পথ অনেকটা ঠিক মত হাঁটতে না পারলে সন্ধ্যে হয়ে যেতে পারে,আর পাহাড়ের রাস্তায় সন্ধ্যে খুব তাড়াতাড়ি নামে।।কৃশানু দা আর আমি সিগারেটের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম,অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেলো আর তাছাড়া পাথেয় হিসাবে নিলাম জল,বিস্কুট,চিপস,চুইং গাম,আর বাতাসা,ফিরে এসে দেখলাম এরা এক ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে আছে।।আসলে লেপচাখা ট্রেক করতে গেলে রাজাভাতখাওয়া থেকে পারমিশন করিয়ে আনতে হয়,সেটা আমাদের নেই আর একজন কে গাইড হিসাবে নিতে হয়,ঝামেলা টা হলো আমরা চাইছিলাম না গাইড নিতে,কিন্তু এরা ছাড়বে না অতয়েব নিতেই হলো গাইড,আর আমি আমাদের ব্যাগ বওয়ার জন্য পোর্টার এর কথা বলতেই কুমু দা বললো যে যার ব্যাগ সে বইবে।।এবার কিছু খাওয়ার পালা,খাওয়ার তো কিছুই নেই একমাত্র মোমো ছাড়া,সেটাই খাওয়া হলো।।কুমু দা বাতাসা কিনেছি শুনে বললো 'বাতাসা কি করবি?' আমি বললাম 'ওই খানে একটা মহাকালীর মন্দির আছে,পুজো দেবো!'।।
[এরপর চলা শুরু,চলতে চলতে দুজন মৃত্যুর মুখ থেকে কিভাবে ফিরে এসেছিলো সেই ঘটনা পরের পর্বে] [চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৪