নিপু আর অপু দুই ভাই-বোন। তাদের মধ্যে সর্বদা ঝগড়া লেগে থাকে। খুনসুটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। নিপু একটু শান্ত থাকার চেষ্টা করে কিন্তু অপু তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়না। নিপু এবার এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। আর অপু পড়ে ক্লাস এইটে। আব্বু আম্মু নিপুকে নিয়ে খুব চিন্তিত। নিপুর পরীক্ষা বিধায় দুই ভাই-বোনের ঝগড়া কিছুটা কমেছে।
যথাসময়ে নিপুর পরীক্ষা শুরু হয় এবং দেখতে দেখতে পরীক্ষাও শেষ হয়। এখন নিপুর হাতে অফুরন্ত সময় এবং মনে দারুন আনন্দ। তবে ফলাফলের আশায় মাঝে মধ্যে বুক দুরুদুরু করে। এরই মাঝে নিপুরা সপরিবারে তাদের মামাবাড়ি বেড়াতে যায়। তবে এখানে এসেও দু্ই ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া একেবারে বন্ধ হয়নি। মাঝে মধ্যেই যে কোন অযুহাতে দু'জনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। অপু এক সময় বলে, "আপু, তুই না আমাকে সবসময় বিরক্ত করিস।"। প্রত্যুত্তরে নিপু বলে, " আমি মরে গেলে তোকে আর কেউ বিরক্ত করবেনা।"
এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ বেড়ানোর পর তারা গাড়ি নিয়ে রওনা হল। পথে অত্যন্ত মারাত্নক সড়ক দূর্ঘটনায় সবাই বেঁচে গেলেও নিপুর অকালমৃত্যু হল। যেন একটি কুঁড়ি ফুটতে ফুটতেই ঝড়ে গেল।
নিপুর অকালমৃত্যু পুরো পরিবারটিতেই এক নিদারুন স্হবিরতা এনে দিল। বাবা, মা, অপু সবাই তাদের একান্ত আপনজনকে হারিয়ে শোকে, দুঃখে নির্বাক, নিথর ও হতবাক হয়ে গেছে। বিশেষ করে অপুর ছোট্ট হৃদয় এক কালবৈশাখীর প্রচন্ড ছোবলে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। সে এখন দারুনভাবে একা। কেউ আর তাকে বিরক্ত করেনা। প্রায়শই তার প্রাণপ্রিয় আপুর বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমি তার দেহমনে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। নিপুর সেই কথাটি তার মনে পড়ে এবং তপ্ত অশ্রু নিরবে দু'চোখ দিয়ে পড়তে থাকে। সে কখনোই বিশ্বাস করতে পারেনা যে তার প্রাণপ্রিয় বড়বোন তাকে এভাবে ছেড়ে চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবে। সে নির্বাক দৃষ্টিতে অনন্ত অসীম পানে চেয়ে ভাবে যে সে কি কোনদিন ঐ দুষ্টু চোখ, দুষ্টু হাসি ভূলতে পারবে? জবাবে আকাশ, বাতাস সবাই বলে, না! না! না!..............।