somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোহেকাফের সলতে

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোহেকাফের সলতে
রায়ান নূর
৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷
নানা জল্পনা কল্পনা আর মন্ত্রসিদ্ধির পর অবশেষে এক ফকীর-দরবেশের জোর-তদবীরে জুলফা বেগমের গর্ভের এক পু্ত্রসন্তান পৃথিবীর আলো দেখলো ৷
সে দরবেশ ছিল এক কোহেকাফ পরিব্রাজক ৷ তাই তার জ্ঞানের পরিধি সাধারণের তুলনায় ছিল অনেক বেশি ৷ তিনি দিন আর রাতের ব্যবধান স্বচক্ষে দেখতে পেতেন ৷ এমনকি একটি ফুলের প্রস্ফুটিত হওয়ার মুহূর্ত অবলীলায় অনুধাবন করতে পারতেন ৷
দরবেশ আর শয়তানের বিরোধ তখনও লেগে ছিল ৷ সেই একমাত্র মানুষ যিনি কোহেকাফের সকল বিষয়ে অবগত ও কিতাবে কোহেকাফের সাহায্যপুষ্ট ৷ তাই তার অনিষ্ট করা অতটা সহজ ছিলনা ৷
দরবেশ যুবক বয়স থেকে নৈতিকভাবে অনেক বলীয়ান তাই তাকে কোহেকাফের এক অশরীরী মদদ দিয়েছিলেন পৃথিবীর মানুষের জন্য তোহফা হিসেবে ৷ যাতে ভালোমন্দের তফাৎ করতে পারেন তিনি যখন পৃথিবীর বুকে নষ্ট অশরীরী জ্বীন-পরীদের সঙ্গমজাত জাহেলিয়াত বংশানুক্রমে ছড়িয়ে পড়েছে ৷
সেই থেকে শয়তান আর দরবেশের লুকোচুরি খেলা চলেই আসছে ৷ শয়তান তার জ্ঞানকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার জন্য কোন কসরত বাঁকী রাখেনি ৷
কিন্তু তিনি শয়তানকে দেখতে পান আর অশরীরীদেরও দেখতে পান তার চোখে ৷ তার এই ক্ষমতা কেবল অলৌকিক নয়, বিস্তর জ্ঞানের ফল ৷
যারা মহাজ্ঞানী তারা সময়কে পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারে, অলৌকিককে সজ্ঞা দিয়ে দেখতে পারে ৷ এমনকি একটা পিঁপড়ের গন্তব্যও জানতে পারে ৷
যে কোহেকাফ পরিব্রাজক তার অবশ্য সেই বিখ্যাত কিতাব ‘কিতাবে কোহেকাফ’ সম্বন্ধে জানা আছে কেননা সে সাধক যে অগোচরেই সেই বইয়ের সান্নিধ্য পায় বিপদে-আপদে ৷
কোহেকাফ নগরীর অতি উজ্জ্বল সভ্যতা সেই কবে ধ্বংসস্তূপ হয়ে গেছে পৃথিবীর মানুষের কাছে ৷ যখন বাগদাদ-পারস্যে রাজ-জৌলুস ছিল,জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ ছিল তখন কোহেকাফ নগরীও ভরপুর ছিল অশরীরীদের নিয়ে ৷ তাদের সভ্যতা ছিল আরো উন্নত ৷ পৃথিবীর সকল মূল্যবান জিনিসের উপর তাদের আধিপত্য ছিল ৷
এই উপমহাদেশেরই পাহাড়ী কিংবা পার্বত্য গুহার অন্তরালে মাটির তলদেশে অবস্থিত এই সেই বিখ্যাত কোহেকাফ নগর ৷ কোহেকাফবাসী রাজাদের যেমন খেলার পুতুল করে রাখতো তেমনি নিজের ক্ষমতা বিস্তারের জন্য রাজার গোলামীও করত ৷
এই অশরীরী জ্বীন-পরী সবসময় বহুরূপী ছিল ৷ তারা যেকোন সময় তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারতো ৷ তাদের একমাত্র স্থান ছিল কোহেকাফ ৷
শয়তানের মদদে তাদের ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসে মানুষকে বশে রেখে আধিপত্য কায়েম করার জন্য ৷ উল্লেখ্য সে শয়তান আজাজীল ছিল একজন জ্বীন ৷ তাই তার কসরত আর কাজে জ্বীন ছিল ভরসা, মানুষকে ভয় দেখিয়ে তাদের পূজনীয় হবার এক সঠিক পন্থা ছিল ৷
যাদের ক্ষমতার লোভ ছিল তারা পৃথিবীতে তাদের সক্ষমতা প্রয়োগ করে কোহেকাফ রাজাররাজা উপর প্রভাব বিস্তার করত ৷ সেকালে যে জ্বীনের গোলামী পাণিপ্রার্থী ছিল সম্রাটগন তারা কোহেকাফ রাজদের চাপে রাখত ৷
তাদের সে চাপ তাও বেশি সম্ভব ছিলনা কোহেকাফ রাজের কারণে ৷ কারণ কোহেকাফ রাজ নিজেও অন্য কোন সম্রাটের আনুগত্য করে সেই সম্রাটের পতন ঘটাতো যুদ্ধে ৷ ফলে এই ক্ষমতাবান অশরীরীর ক্ষমতা কমে যেত আর কোহেকাফ রাজার বিরুদ্ধে সকল শয়তানি ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজকিতাব ‘কিতাব-ই-কোহেকাফ’ তাদের আগলে রাখত ৷
কোহেকাফ রাজার সমর্থন সেইসব পৃথিবীর রাজাদের উপর পড়ত যারা অন্তত এক নীতিতে অটুট থাকতো ৷ যাদের নিজস্ব আইন ছিল প্রখর এবং অলঙ্ঘনীয় ৷ ফলে তাদের মায়া থমকে যেতো এবং অন্যভাবে তাদের উদ্দেশ্য সফল করার চেষ্টা করত ৷ তাদের সর্বশেষ একটি হাতিয়ার ছিল ‘চেরাগে কোহেকাফ ৷’ সে চেরাগের সান্নিধ্য সেই পায় যে সাধনা করে ভালো কাজ করার অঙ্গীকার করে ৷
কিন্তু তাতেও সুবিধা হাসিল করতে লাগল তারা ৷ নির্দিষ্ট সময় তারা সাধনা করে তার শক্তি হাসিল করে উদ্দেশ্য সফল হলে আবার পূর্বের সেই কাজ করতো ৷
চেরাগের কারণে কোহেকাফ রাজও বিব্রত ছিল ৷ যে রাজ-ওমরাহ কোহেকাফ রাজের অনেক অনুগত থাকতো এবং চেরাগের মদদ পাওয়ার সাধনা করত,যারা সফল হতো তারাই বিদ্রোহ করে তাদের অনুগত অশরীরীদের নিয়ে ভেগে পৃথিবীতে এসে ক্ষমতাবান হয়ে মানুষের অনিষ্ট করে ৷
ঠিক এই কারণে কোহেকাফরাজকে কোন সম্রাটের আনুগত্য করতেই হতো তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ৷ ফলে পৃথিবীর বুকে সবসময় কলহ ছড়িয়ে ছিল ৷ মানুষের উপর মানুষ বিশ্বাস হারাতে শুরু করে ৷
অশরীরীরা বহুরূপ ধারণ করে সম্রাটদের উত্থান-পতন ঘটালেও কোহেকাফ ঠিক আগের মতোই আছে কিন্তু তাদের আর সমর্থন নেই পৃথিবীতে ৷ কেননা মানুষ এখন তাদের ছাড়াই অহরহ রূপ পাল্টাতে পারে ৷ এদিক থেকে আজাজীল সফল ৷
কোহেকাফ নগরীর সেই চেরাগ যার সলতেই আগুন দিলে বহুরূপ ধারণ করতো ৷ চোখের পলকে সলতের আগুন খেলা করতো নানা রঙে ৷ আর সেই চেরাগ জ্বলত দ্রাক্ষামদে ৷ পারস্যের সবচেয়ে দামী মদ দ্রাক্ষা অর্থাৎ আঙ্গুর ফলের মদ ৷ এই মদ ছাড়া সে চেরাগ জ্বলত না ৷ আর এই সলতে থাকত সেই বিখ্যাত শাহিন হীরার মাঝে ৷ যার অলৌকিক ক্ষমতা যে কারোর রূপ পরিবর্তন করে দিতে পারতো অবলীলায় ৷
বহুশতাব্দী পার হয়ে হয়ে গেছে ৷ এই উপমহাদেশে সম্রাটদের শাসন নেই তাই কোন প্রয়োজন পড়েনা এই ক্ষমতাবান অশরীরীদের ৷ যার বিশাল রাজ্য থাকতো তার অধীনে কোহেকাফ নগরীর এক অংশ সম্রাটের আনুগত্য করত তার শাসন পরিচালনায় ৷ কোহেকাফরাজ আনুগত্য করত আর আজাজীল আনুগত্য পেত ৷
ফলে মানুষের মাঝে তাদের জাহির করা সহজ হয় এবং রাজাদের বিরুদ্ধে নয় মানুষের বিরুদ্ধেই তারা ব্যস্ত থাকে ৷ কেউ থাকে নীতির পক্ষে আর কেউ কলহে ৷ আর সেই চেরাগের মহিমায় রূপ বদল করে মানুষকে ধোঁকা দিত সেইসব জ্বীন-পরী ৷ আর সেসব আচরণ বংশানুক্রমে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর মানুষের কাছে ৷
সম্রাটরা কেবল নিজের রাজত্ব টিকে রাখার জন্য পাণিপ্রার্থী হলেও তার ফল পৃথিবীর মানুষ ভোগ করছে অথচ কোন সম্রাট ও রাজ্যও শেষপর্যন্ত টিকেনি ৷

বহু বছর অতিক্রম হয়ে গেছে,হয়েছে পৃথিবীর হাওয়া পরিবর্তন ৷ প্রযুক্তির কারণে সভ্যতা উন্নত হয়েছে, দেশের বুকে নানা রকমের চলেছে পরিবর্তন ৷ তেমনি মানুষেরও পরিবর্তন এসেছে ৷ পোশাক-আশাক,আচার-ব্যবহার এমনকি ভাষাতেও গণ্ডগোল বেধে গেছে চরমে ৷
কিন্তু সেই দরবেশ বদলে নি এতটুকু ৷ সে থাকতো এক নিবিড় ঘন-পল্লীতে,সেখানেই তার খানকাহ শরীফ,পাশে একটা নদী ৷ প্রত্যহ সে নদীতে তিনি দিনে দুইবার গোসল করতেন ৷
নদীতে গোসলের সময় প্রত্যহ সেই কোহেকাফের বিখ্যাত চেরাগের দর্শন পেতেন কিন্তু তাকে কখনোই লোভের বর্শবর্তী হয়ে আহবান করেননি ৷ সে চেরাগ আবার যার কাছে আসবে তার অপব্যবহার মানুষ করবে ৷ পৃথিবীর বুকে আবার অতীত এসে যাবে এবং মানুষ পশুতুল্য হয়ে যাবে চেহারা পরিবর্তন করতে করতে ৷
দরবেশ সবসময় আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে সময় পার করতেন,খানকাহ শরীফেই শিক্ষাদান করে তিনি কঠোর নৈতিক জীবন যাপন করতেন ৷ তার ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে কঠোর মনের মানুষও তার কাছে কেমন নরম হয়ে যেতো ! এর ভেদ বড়ই দুর্ভেদ্য ছিল মানুষরে কাছে ৷ এলাকার লোকজনেরা বলে ইনি পরম ধার্মিক এবং অনেক জ্ঞানের অধিকারী, তাই না যদি হবে তার কারামত থাকবে কেন?

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×