জরিমানা
রায়ান নূর
(1)
অবশেষে হক সাহেব মেম্বার হলেন ৷
তিনবার পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে আর প্রাক্তন মেম্বারের বিদেশ-যাত্রায় খুব সহজভাবেই তার পদটা দখল করতে পারলেন ৷
মন্ত্রণালয়-সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক অফিসের কার্যক্রমের অংশ অনুযায়ী তার এলাকার উন্নয়নে এবং কাঙালের উন্নতির জন্য বিশ বস্তা চাল বরাদ্দ হল ৷
চালখানা এখন বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সর্বশেষে এমপি মহাশয়ের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে ৷ তাই মেম্বারকে পকেট ভারি করে যেতে হলো ৷
নগদ হস্তান্তর-অযোগ্য পাঁচহাজার টাকা মেম্বার পরিশোধ করলে এমপির কাছ থেকে বিশবস্তা চাল চালান করা হল ৷
মেম্বার ভেবে দেখলেন যে ইতোমধ্যে তার পাঁচহাজার টাকা এমপির পকেটে বিনা নোটিশে, বিনা রশিদে পৌঁছে গিয়েছে কিন্তু তার পকেটটা তো এখন ভরাতে হবে ৷
মেম্বার চেয়ারে বসে চারপাশে তাকিয়ে তার ওয়ার্ডে তেমন কোন গরীব লোক খুঁজে পেলেন না ৷ অবশেষে অঙ্ক করে ভাবলেন দশ বস্তা চালেই তা চুকিয়ে যাবে ৷ তাই দশবস্তা চাল গায়েব হয়ে গেল ৷
কোন দুষ্কৃতকারীর কবলে পড়ে ইথারে সে খবর গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে উপস্থিত হলো ৷ তারা দেখল যে হিসাব নিকাশের সবই ঠিক কিন্তুমাত্র দশ বস্তা চাল অনুপস্থিত ৷
মেম্বারকে বলা হলে তিনি জানালেন এ চালের বিষয়ে তিনি অবগত নেই, তাই অগত্যা তাকে দশহাজার টাকা জরিমানা করা হলো ৷
মেম্বার এবার ভাবলেন,এমপিকে পাঁচ হাজার দিলেও জরিমানায় তার বিশেষ কোন লোকসান হয়নি ৷ এর একটা বিহিত করতে এবার তিনি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৷
(2)
হক সাহেব আজই ঢাকা যাবেন ৷
ট্রেনে উঠলেন খুব জম্পেশ পোশাক পড়ে কিন্তু ট্রেন বিলম্বে আসায় আর টিকিট পেলেন না ৷
ভদ্রলোকবেশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আরেক ভদ্রলোক তাকে নিজের সিটেই কোনরকমে বসে নিলেন ৷ তারপর দুজনের মধ্যে গল্পগুজব চলতেই থাকলো ৷
হক সাহেব ভাবলেন, যাক চারশ টাকা তাও বুদ্ধি করে বাঁচানো গেলো ৷ ‘আসন নাই’ সিটের টিকেট কেটে বেহুদা টাকা খরচের কোন মানে হয় ?
টাকা যখন বাচঁলোই তখন ট্রেনের খাবার বগীতে গিয়ে সেই উচ্চদামে রুইমাছের স্পেশাল দিয়ে তিনি ভাত খেলেন, আর খেলেন একটা কোক ৷ একটা সিগারেটের প্যাকেট কিনে তিনি আসনে গেলেন ৷ তাতে মোট খরচ পড়ল তিনশত টাকা ৷
দুর্ভাগ্যক্রমে ট্রেনটির মাঝখানে কোন চলাচলের রাস্তা নেই ৷ টিসি ওঠেছেন তার দলবল নিয়ে কিন্তু কোনক্রমেই অন্য অংশে আর যেতে পারছেন না ৷
একটা স্টেশনে ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য দাঁড়ালে সিটে বসা ভদ্রলোক বললেন, ‘এখানকার রসগোল্লা নাকি দেশের বিখ্যাত ৷’ হক সাহেবও জানেন সেকথা কিন্তু আসা হয়নি অনেকদিন ৷ তাই নিচে নেমে গেলেন এবং আধাকেজি কিনলেন দুশটাকা দিয়ে ৷
ভদ্রলোক যখন দয়া করে নিজের সিটে বসে নিয়েছে তাই তাকে না খাওয়ালে কি চলে? এতো দূরের জার্নি, ভালোভাবে যেতে হলে তাকে তো অন্তত তুষ্ট করতে হবে ৷ ট্রেন ছাড়লো ৷
টিসি এবার এই অংশে ঢুকলেন ৷ কিন্তু উল্টোদিক হয়ে বসায় আর রসগোল্লার আমেজে হক সাহেব মোটেও টের পেলেন না ৷
টিসি এসে হাত নাড়ল ৷ হকসাহেব কেবল একবার ভদ্রলোকের দিকে আর একবার টিসির দিকে তাকায় ৷ বুঝতে পেরে টিসি খুব সহজেই জরিমানাসহ চারশত ত্রিশ টাকার রশিদ হাতে ধরিয়ে দিল ৷
ভদ্রলোকের পোশাক পরে আছে তাছাড়া পাশের জন যখন বলছে, ‘দিন না ভাড়াটা মিটিয়ে না হলে যে বিড়ম্বনায় পড়বেন ৷’ তাই টাকাটা তাকে দিতেই হল ৷
হক সাহেবের ঢাকা দেখার স্বাদ যেন মিটে গেল ৷ তিনি ঢাকা গেলেন ঠিকই কিন্তু দেখলেন কেবল স্টেশন কারণ সামনের বার ট্রেন বন্ধ ছিল ৷
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৪