somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়া

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"স্যার গাজা খেলে কেমন লাগে?"
আমার চিন্তায় ছেদ পড়ল।মাত্রই আর্কিমিডিস এর চৌবাচ্চার গল্পটি বলে শেষ করেছি।এখন সুত্রে যাব।এই সময় আমরা সাধারনত স্টুডেন্টদদের কাছে আশা করি,স্যার আর্কিমিডিস কখন কাপড় পড়ে ছিলো? বাট পুরো ডিফরেন্ট একটা সাবজেক্ট খুবই কম পাওয়া যায়।আর আজ এমন একটা প্রশ্নের মুখমুখি হয়েছি,একদম সিলেবাসের বাইরে।ছেলেগুলো গাজা সেবনের ব্যাপারে প্রাথমিক ডিসিশন নিয়েছে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।ক্লাশ নাইন টেন এর ছেলে গুলো ভয়াবহ হয়ে থাকে।এদের কেয়ার ফুলি হ্যান্ডেল করতে হয়।

"কখনও তো এ ব্যাপারে ডিটেলস কোথায় কিছু দেখি নাই,তবে বই পত্রে পড়েছি গাজা ব্রেইনের স্নায়ুকোষ দূর্বল করে দেয়"

"স্যার স্নায়ুকোষ কি?"

"এটা ব্রেইন গঠনের কোষ"

"স্যার স্নায়ু কোষ দূর্বল করে দিলে ফিলিংস টা কেমন হতে পারে"

আমি বই বন্ধ করে দিলাম।আমি প্রথাগত শিক্ষক নই।আমি আমার ছাত্রদের প্রথার বাইরে শিক্ষাদান করতে পছন্দ করি।সরকারি স্কুল বলেই হয়ত চাকুরিটা কোনমতে আছে।প্রতি মাসে প্রিন্সিপ্যালেরর কাছে কথা শুনতে হয়।অনান্য স্যার ম্যাডামদের টিটকারি তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।আমি মুটামুটি সফলতার সহিত এগুলো পাশ কাটিয়ে ছাত্রদের সঠিক গুনগত শিক্ষাদানের চেষ্টা করি।তারই ধারাবাহিকতা "স্যার গাজার ফিলিংসটা কি?"

আমি প্রথমে মাথা ঠান্ডা করলাম।বড় বড় কয়েকটি নিশ্বাস নিলাম।ব্রেইনে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌছালাম।পরবর্তী সময়টা খুবই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পার করতে হবে।এখন আমার প্রতিটা কথা রেকর্ড হবে।কিছু কিছু ছাত্র তাদের গার্ডিয়ান এবং স্যার দের বলবে।গার্ডিয়ান এবং স্যাররা একযোগে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কছে কমপ্লিন করবে সন্দেহ নেই।এবং আবারো প্রিন্সিপাল স্যারের ঝাড়ি শুনতে হবে।পড়ার মাঝে এইসব উল্টাপাল্টা প্রশ্নকারী অছাত্রদের বেতিয়ে সোজা করলে খুব সহজেই আমি একজন ভাল টিচার হিসেবে স্কুলে সুনাম করতে পারতাম,এবং প্রাইভেটে রুম উপচানো ছাত্রও পেতাম।কিন্তু আমি ঠিক কিসের মায়ায় সুনাম আর কাঁচা টাকার মোহ ত্যাগ করেছি জানিনা,বাট আমার ক্লাশে এই ধরনের প্রশ্ন খুবই কমন।এই ক্লাশের অনেক ছেলে সিগরেট খায়,এটা সবাই জানে গার্ডিয়ান প্রিন্সিপাল এমনকি সব স্যারেরা।কিন্তু ব্যাপারটা এমনই এক ট্যাবু বানিয়ে রাখা,অনেক অনেক ছাত্র প্রতিনিয়ত উৎসাহিত হয় সিগরেটের প্রতি।

"আমাকে তোমারা একটু সময় দাও,আমি কাল ইন্টারনেট সার্চ দিয়ে ডিটেইলস জেনে এসে তোমাদের জানাব।আমার আসলে ডিটেইলস জানা নেই।তবে পার্সোনালি,শুধু যারা জানতে ইচ্ছুক শুধু তাদেরই জানাব।একটু হাত উঠাওতো কে কে জানতে ইচ্ছুক" আমাকে অবাক করে দিয়ে ক্লাশের সবাই হাত উঠিয়ে ফেলল। আমি হাত নামতে বলে ভাবতে বসলাম কিভাবে এই ছাত্র গুলিকে এই বয়সে গাজা সেবন থেকে বিরত রাখা যায়।এটাই আমার কাছে এখন মেইন চ্যালেঞ্জ।

"স্যার আপনি কি কখনও গাজা খেয়েছেন?" প্রশ্নটি শেষ করার সাথে সাথেই ক্লাশে হাসির রোল পড়ে গেল।আমার শরীর ঝাকি দিয়ে উঠল।আমিও ছাত্রদের সাথে হেসে অঙ্কুরিত ক্রোধ কে বিনষ্ট করলাম।ছাত্রদের কোন প্রশ্নই সিরিয়াসলি নিয়ে রেগে যাওয়া যাবে না।ওরা ছাত্র,এটা স্কুল ওরা শিখতে এসেছে।

"ধরো আমি খেয়েছি,কিন্তু তেমাদের বল্লাম খাই নি,তাহলে কি হবে? একজন টিচার হিসেবে তোমাদের মিথ্যে বলা হবে।এক সময় তোমরা বড়ো হবে।আমার সম্বন্ধে অনেক কিছু হয়ত কারো মাধ্যমে জানবে,তখন হয়ত শুনবে আমি কোন এক সময় হয়ত সামান্য হলেও খেয়েছিলাম।তখন কি হবে জান? আমার সম্বন্ধে তোমার একটা খারাপ ধারনা হবে।তুমি তখন বলবে স্যার মিথ্যেবাদি।আবার ধরো আমি কখনই গাজা স্পর্শ করি নাই।তোমরা তখন হয়ত মনে মনে ভাববে তোমরা ছোট বলে হয়ত আমি এভোয়েড করছি।আবার ধরো আমি স্বীকার করেনিলাম হ্যা আমি গাজা খেয়েছি,তখন কি হবে? আমার চাকরি যাবে।তেমরা বলবে আমাদের স্যার গাজাখোর। সবদিকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি হবে।এখন বলো কোন এ্যান্সারটা পেলে তোমরা খুশি হবে?"

পিনপতন নিরবতায় প্রশ্নকর্তা ছেলেটি উঠে দাড়ালো।"স্যার আমি ভূল বুঝতে পেরেছি।আমি স্যরি আপনাকে এই প্রশ্ন করার জন্য"

আমি ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেলাম।পিঠে হাত রেখে বল্লাম"তুমি স্যরি বলছ কেন?তোমরা ভূল না করলে কে ভূল করবে?আর তোমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা কে দিবে বল?"

সবাই চুপ। আসলে আমি যে কোশ্চেনটা তাদের করেছি তারা বুঝতে পারে নাই।তারা ভাবছে আমি এ্যান্সার দিয়ে দিব।

"কে দিবে বল?"

এবার সমস্বরে জবাব এলো" স্যার আপনি"

"ভেরি গুড।সব কিছুরই একটা বয়স আছে।যেমন ধরো তোমাদের যদি এখন মেডিকেলে ভর্তি করে দেই তোমরা কি এমবিবিএস পড়তে পারবে? বল পারবে??"

সবাই মিলে জবাব দিলো "না"
"কেন পারবে না?"
সবাই চুপ।
"বল কেন পারবে না?"
আবারো সবাই চুপ।আমাকে প্রশ্ন করা ছাত্রটিকে জিজ্ঞেস করলাম "লিটন তুমি বল কেন পারবে না"
লিটন দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে বলল "জানি না স্যার"
ক্লাশের ঘন্টা পড়ল।আমার কথা শেষ হয় নাই।এই মুহুর্তে কথা শেষ না করে বের হওয়া যাবে না।
"তোমরা পারবে না,কারন এমবিবিএস এর জন্য তোমরা এখনও পরিনত নও।তোমরা মাত্র ক্লাশ নাইনে।তোমাদের এসএসসি পাশ করতে হবে,এরপর আরো দুবছর পড়ে আরো অনেককিছু জানবে,আরো বড় হবে,তোমাদের মস্তিকের ধারন ক্ষমতা বাড়বে,ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে।তখন তোমরা এমবিবিএস পড়ার যোগত্যা অর্জন করবে।তোমাদের নিজের কাছে মনে হচ্ছে তোমরা অনেক বড় হয়ে গিয়েছ।বাট তোমরা এখনও অনেক ছোট।জানতে বাধা নেই।বাট প্রাকটিস থেকে তোমাদের দূরে থাকার পরামর্শ দিব।আর অল্প কিছুদিন অপেক্ষা কর,আঠারো বছর হলে তখন তোমরা বুঝতে পারবে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।এখন যদি তোমরা ঝোকের মাথায় কিছু কর,কেই হয়ত দেখবে,বাবা মা খুব কষ্ট পাবেন।তোমাদের চোখে।চোখে রাখবে।এখন তোমরা যে স্বাধিনতা ভোগ করছ সেটা হারাবে।আরো অনেক খারাপ কাজও করে ফেলতে পারো কারন সব নেশাই খারাপ।কোন নেশা করলেই মাথা ঠিক থাকে না।সো এখন যেমন আছ সেটাই ভালো।এই জীবনটা কত সুন্দর। কিছুদিন পড় স্কুল ছাড়বে,তারপর স্কুল জীবনে ফিরে আসার জন্য সারাজীবন মন কাদবে।এই জীবনটা অনেক সুন্দর এটাকে উপভোগ কর।আমার কথা সবাই বুঝেছ??

"জ্বী বুঝেছি স্যার"

আমি বিদায় নিয়ে ক্লাশ থেকে একটা আত্বতৃপ্তি নিয়ে বের হলাম।আমার অতুল স্যারের কথা মনে পড়ল।অতুলস্যারের কাছ থেকেই আমার এই শিক্ষা পাওয়া।স্যার যেখানেই থাকবেন আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখে।আর আপনার ছাত্র জীবন দিয়ে চেষ্টা করে যাবে,কিছু মানুষ তৈরীর......


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৫:২৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×