মানুশের ভাবনা-চেতনা, সবকিছুর যেমন পরিণতি থাকে না, তেমনি কিছু কিছু ঘটনা বা সম্পর্কের বেলাতে এরকমটা ঘটে ; যার কোন ব্যাখ্যা থাকে না, হয়তো প্রয়োজন পড়ে না হয়ত । এমন কিছু ঘটনার একটির স্বীকার রুদ্র ।
রুদ্র রাস্তার পাশ ধরে -দৌড়াচ্ছে । শরীর এর সমস্ত শক্তি দিয়ে এগিয়ে চলছে । মাথার ভেতর শুধু একটা চিন্তা , এট সত্যি হতে পারে না ; সত্যি হবার নয় এটা । ঠিক তুপা’র বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল , কলিং বেল দিতেই তুপা’র ছোট চাচা দরজা খুলে বেড়িয়ে এলেন।
- কি ব্যপার রুদ্র ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে যে ?
- কাকু, তুপা’র সাথে একটা জরুরি দরকার ছিল। সে কি আছে ?
- হা, ও আর কোথায় যাবে বল দেখি ? তুমি ছাদে গিয়ে বোস, আমি তুপা কে ডেকে দিচ্ছি ।
- আচ্ছা ! কাকু এক গ্লাস পানি খাবো
- আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ...
রুদ্র ছাদে বসে থাকতে ভাল লাগছে না। পানি টা ঢক ঢক করে গিলে চট করে ছাদের মেঝেতে শুয়ে পড়লো আকাশ দেখতে, এভাবে শুয়ে আকাশ দেখতে তার খুব ভাল লাগে । এক ঝাক সাদা কবুতর এক সাথে উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে । তাদের মধ্যে ২/১ টা মাঝে মাঝা আলাদা হয়ে যাচ্ছে । আবার পথ ফিরে ও পাচ্ছে । একটা ক্যামেরা থাকলে মন্দ হত না নিশ্চয়ই ।
তুপা ঠিক মুখের সামনে এসে দাড়াতে, উঠে বসলো রুদ্র । তুপা দেখতে পেলো, রুদ্র কে খুব অস্থির দেখাচ্ছে ।
- কি হয়েছে রুদ্র ? এত জরুরী তলব ?
- আমার কিছু প্রশ্নের জবাব চাই ।
- প্রশ্ন গুলো যদি উত্তর দেয়ার মত হয়, অবশ্যি দিবো ।
- মিথ্যা বলা যাবে না ।
- কেন ? মিত্থ্যা বললে কি হবে?
- তোমার শরীরের এক একটী অঙ্গ মাটির মত স্থির হতে থাকবে, এবং খসে পড়বে ।
- হা হা হা । তাই কি ? ঠিক আছে । আমি মিত্থ্যা বলবো না। তোমার প্রশ্ন গুলো করো ।
- তুমি কি আমাকে ভালবাসো ?
- হ্যা ।
- তোমার কি মনে হয় আমি ও তোমাকে ভালবাসি ?
- হ্যা । ... রুদ্র, আমার তো মাটির মত নিথর হয়ে যাবার কথা , কই হলাম না যে ? হা হা হা ...
- কারন তুমি সত্যি উত্তর দিচ্ছো । আমি কি আমার পরের প্রশ্ন গুলো করবো ?
- নিশ্চয়ই ...
- তুমি গত রাতে কবির এর সাথে ছিলে ?
- না ।
- তুমি কি আর কবির কে তোমার একান্ত কাছে আসার সুযোগ দিয়েছিলে, যেটা শুধু আমার হবার কথা ছিল ?
- না , রুদ্র ।
- তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছো ।
- না, রুদ্র , না ...
- তুমি কি আমার এবং আমারই হয়ে থাকবে ?
- হ্যা ... আমি তোমার ছিলাম, আর তোমার থাকবো , আমি তোমাকে ...
তুপা’র কথা থেমে গেল । রুদ্র খেয়াল করলো, তুপা’র সমস্ত শরীর নিষ্প্রাণ মাটিতে পরিণত হয়ে গেছে । রুদ্র, হাত দিইয়ে ছুয়ে দেখতে, তুপা’র নিথর দেহ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। রুদ্র’ঢ় কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে । তুপা যদি আগে থেকে বুঝতো, মিত্থ্যা’র পরিণতি এমন ভয়াবহ হবে , তবে নিশ্চয়ই সে বলতো না । তুপা কে হারাতে হত না ।
রুদ্র’র ঘুম ভেঙ্গে গেল, সারা শরীর জুড়ে ঘাম বয়ে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে, অনেক পরিশ্রম গেছে । কিন্তু এরকম অদ্ভুত একটা স্বপ্ন কেন দেখলো। বিছানা ছেড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো রুদ্র, পর্দা সরাতে দেখতে পেল ...
তুপা রাস্তার পাশ ধরে -দৌড়াচ্ছে । শরীর এর সমস্ত শক্তি দিয়ে এগিয়ে চলছে ।
বাসার নিচে এসে কলিং বেল দিতেই, রুদ্র’র মা দরজা খুলে দিল ।
- কি ব্যপার তুপা ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে যে ?
- খালা, রুদ্র’র সাথে একটা জরুরি দরকার ছিল। সে কি আছে ?
- হা, ও আর কোথায় যাবে বল দেখি ? তুমি ছাদে গিয়ে বোস, আমি রুদ্র কে ডেকে দিচ্ছি ।
- খালা ... এক গ্লাস পানি খাবো ।
- আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ...
রুদ্র’র গলা শুকিয়ে গেল । ঘড়ির ঠক ঠক শব্দটা কানে আসতে লাগলো ... ...
তুপা’র ছাদে যাবার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪