somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ বিশ্ব ধরিত্রি দিবস----আমাদের সামনে আশার প্রদীপ

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বিশ্ব ধরিত্রি দিবস। প্রতিবছর ২২ এপ্রিল এই দিবসটি পালন করা হয়। ২০০৯ সালে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মরোলেস-এর প্রস্তাবে এ দিনটিকে বিশ্ব ধরিত্রি দিবস হিসেবে পালনের ব্যাপারে সর্প্রিশম জাতিসংঘ অনুমোদন দেয়।

এবারের বিশ্ব ধরিত্রি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পৃথিবীর জন্য বৃক্ষ’। বৃক্ষের সাথে মানুষের জীবন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ফলজ বৃক্ষ আমাদেরকে বহুকাল জীবন ধারনের উপযোগিতা দান করে। সেই হিসাবে দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য যথার্থ হয়েছে বললে খুব একটা ভুল হবে না আশা করি।

শিল্প বিপ্লবের পর একে একে গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা। মানুষের নিত্য চাহিদা পুরনে এসব কলকারাখানা দিন দিন বেড়েই চলেছে, ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে কার্বন সহ নানা ক্ষতিকর গ্যাস। শুধু শিল্প কারখানাই নয়, মানুষের নিত্যকার ব্যবহার্য ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনারসহ বিলাসী সামগ্রী ও বিভিন্ন রকম প্রসাধনী থেকে নির্গত ক্লোরো-ফ্লোরো-কার্বন বা সিএফসি গ্যাস ক্ষতি করছে ওজোন স্তরের।



এক গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ৫০ বছরে আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ জেলা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো যে হারে এন্টাটিকার বরফ গলতে শুরু করেছে তাতে এই আশঙ্কা অমূলক নয়। কিন্তু সারা বিশ্বের নিঃসৃত কার্বনের মোট ০.১ শতাংশের জন্য দায়ী বাংলাদেশ। তাহলে প্রশ্ন আসে এতো কম কার্বন নিঃসন করে বাংলাদেশের উপর এমন বিপর্যয় কেনো নেমে আসবে! এর পেছনে মূল কারণ হলো উন্নত বিশ্বের শিল্পায়ন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীন এই উন্নত দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে। তাহলে এই সকল দেশের অবস্থা কি হবে? তাদের জন্য পরিস্থিতি আমাদের মতো এতোটা নাজুক নয়। এর কারণ হলো তাদের ভৌগলিক অবস্থান এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন।



শিল্প বিপ্লবের পর থেকে চলমান এই বিপর্যয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের শিল্প কারখানার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও বাড়িয়ে চলেছে। এই বিপর্যয় রোধের জন্য ১৯৭২ সালে শুরু হয় বিশ্বকে রক্ষার জন্য আন্দোলন। আর ১৯৯২ সালে এরই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ব ধরিত্রি সম্মেলন’। কিন্তু এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবইয়ত হয়নি আজও আমেরিকার মতো দেশের অনিহার কারণে। তারা তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে রাজি নয়। কারণ এতে তাদের উন্নয়নের অব্যহত ধারায় বিঘœ ঘটবে এবং তাদের এই আত্মঘাতি কর্মকান্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সিডোর বা আইলা তারই প্রমাণ। আর এই অপরিকল্পিত শিল্পোয়ন্নয়ণ যে আত্মঘাতি তা প্রমাণিত হয় গত কয়েক বছরে আমেরিকার উপর দিয়ে প্রবাহমান প্রাকৃতিক দূর্যোগ, চির শীতল রাশিয়ায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেরসিয়সের উপরে পৌছানো কিংবা জাপানে এবং ভারত উপসাগরে পার পর দুটি সিডোরের মাধ্যমে। সব মিলিয়ে আমরা বলতে পারি সারা বিশ্বের প্রকৃাত ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং প্রকৃতির পাগলামিতে মানুষের জীবন টালমাটাল হয়ে পড়ছে। একে প্রকৃতির পাগলামি না বলে মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলাই ভালো। কারণ বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন অপরিকল্পিত শিল্পোন্নয়নই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এর পশাপাশি পৃথিবীর ৬৫০ কোটির উপর মানুষের আবাসন এবং প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর তাগিদও কার্যকর।





প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিক চলমান ধারা থেকে সরিয়ে অপরিকল্পিত শিল্পেন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে মানুষকে অনাহারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার অজুহাতে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েন আগামী বিশ বছরে বিশ্বে খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানেও অবস্থা যে ভালত বলা যায় না, কারণ এক জরিপ অনুযায়ী এখনো বিশ্বের প্রায় একশ কোটি মানুষ তিন বেলা খেতে পায় না। তাহলে আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন চলে আসে- কোন দিকে চলেছে আমাদের বিশ্ব পরিস্থিতি?



এবার আসা যাক বাংলাদেশের পেক্ষাপটে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে। একটি হিসাব মতে আমাদের দেশে এখান থেকে ১০০ বছর আগে মোট জমির ৩০ শতাংশ ছিলো বনভূমি। কিন্তু বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১০ ভগে নেমে এসেছে। সুন্দরবনের আয়তন ৬০০০ বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি যা আমাদের দেশের মোট বনভূমির ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু বাংলাদেশের এই ‘প্রকৃতির ফুসফুস’ও আজ নিরাপদ নয়। প্রতিদিন হাজার হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বনভূমির উজাড়ীকরণ প্রক্রিয়া এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এই চির সবুজ বাংলা অচীরেই সাহারা মরুভূমিতে পরিণত হবে- একথা নিঃশংসয়ে বলা যায়। পরিবেশ বিপর্যয়ের এই ঝঁকি এবং ভবিষতের খারাপ পরিস্থিতির পেছনে বাংলাদেশের দায়ও একে বারে যে কম তা বলা যায়না। কারণ, বনভূমি উজাড়, শিল্প কারখানা নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনার অভাব, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা, নদীর নাব্যতা হ্রাস, কারখনার বর্জ্য পদার্থ নদীতে নিঃরণ- এই সব কারণের জন্য জন্যও পরিবেশ হুমকীর মুখে পড়ে। আর এই কাজগুলো তো আমরা নিজেরাই করে চলেছি! দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো চিংড়ি চাষ। কিন্তু এই চিংড়ি চাষ চলছে অপরিকল্পিতভাবে। এর ফলে যে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে সে শিক্ষা আমরা ভারতের ঊড়িষ্য থেকেই নিতে পারি। তারা সেখানে চিংড়ি চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের হাতে এখনে াসময় আছে। চাইলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করে আমরা যেমন আমাদের এই সম্পদকে রক্ষা করতে পারি তেমনি পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেেেকও বাঁচতে পারি। প্রতি দিন ঢাকা সারা দেশে ১২ লাখের উপরে যানবাহন চলাচল করে। এই যানবহনগুলোর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের সংখ্যাও কম নয়। আবার নিয়মানুযায়ী জন বসতির ৩ মাইলের মধ্যে কোন ইটের ভাটা স্থাপন বেআইনী হলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হয়না, উপরন্তু ইটের ভাটার চিমনীর যে উচ্চতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তাও মানা হচ্ছে না অকে ক্ষেত্রেই। দেশের সবগুলো শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে ঝুঁকছে। আর ঢাকা শহর তো বিশ্বের অনিরাপদ শহরেরতালিকায় দ্বিতীয় স্থন ধরে রেকেছে প্রায় স্থায়ীভাবে। এর পেছনে তো আর বিদেশী মিল্পোন্নয়নকে দায়ী করা চলে না। তাহলে সবার আগে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমরা পুরো শহরকেই ডাস্টবিন ভেবে বসি। এই ভাবধারা থেকে বেরিয়ে এসে পরিকল্পিতভবে জীবনযাপন করতে হবে। আর শিল্পদ্যোক্তাদেরকে লাভের পাশাপশি পরিবেশের দিকেও নজর দিতে হবে। তা না হলে এই বিপদসংকুল ভবিষৎ বাণীগুলো যদি বাস্তবে পরিণত হয় তাহলে পরে নিয়তি বলে মেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।




এতো হতাশার পরও আমাদের সামনে সম্ভাবনারও কমতি নেই। সম্প্রতি জার্মানী ঘোষণা দিয়েছে তারা তাদের সকল পারমাণবিক চুল্লি আগামী ২০২২ সালের মধ্যে করে দেবে। এর জন্য অন্যান্য অনেক দেশের মতোই তারা বিকল্প হিসেবে উইন্ড মিল, সোলার পাওয়ার এবং বায়োগ্যাসের কথা ভাবছে। আবার নাইরোবী, নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমিতে সবুজায়ন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এটি বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। আবার সারা পৃথিবীর মোট মিঠাপানির প্রায় অর্ধেকই প্রবাহিত হয় বাংলাদেশের উপর দিয়ে। সুতরাং আমাদের সামনে আশার প্রদীপ এখনো নিভে যায়নি। সুতরাং সব বাধাকে জয় করে বিশ্বের বাসযোগ্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এখানকার জনগণই পারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×