somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ডলস হাউজের গল্প :D

২২ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট বেলায় পুতুল খেলতে খুব পছন্দ করতাম, অবশ্য সেটা করেনা এমন খুব কম মেয়েই বোধ হয় আছে। সেই সময় টিভিতে মুভি অব দ্যা উইক এ মাঝে মাঝে বিদেশী বাচ্চাদের পুতুলের ঘর দেখতাম বাচ্চাদের ঘরে, আর মনে মনে ভাবতাম ইশ আমার যদি এমন একটা ডলস হাউস থাকতো। কত ঘ্যান ঘ্যান করেছি মার কাছে, পাওয়া যায়নি কোথাও।

ডলস হাইজের প্রতি সেই সুপ্ত ভালবাসা এখনও আছে মনের মধ্যে, মার্কেটে গেলে প্রায়ই খুজি, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই রকম ডলস হাইজ পেলাম না, যেমন দেখেছি ছোট বেলায়। হবুহু সত্যই বাড়ির মতো বাড়ি, ছোট ছোট খাট, চেয়ার টেবিল, ডাইনিং, রান্নাঘর।
শেষ ভাবলাম নিজেরাই একটা বানিয়ে ফেলি, দেখি কেমন হয়।কিন্তু সময়ের অভাবে সেই এক্সপেরিমেন্টটা করতে পারছিলাম না, সেই সুযোগ করে দিল আমাদের অতি প্রিয় বিরোধী দল
তাদের ডাকা ঘনঘন দীর্ঘ হরতালে আমার বাৎসরিক ছুটি গুলো উৎসর্গ করে (দরকারের সময় হয়তো ছুটি আর পাবো না) ঘরে বসে ভেরান্ডা ভাজার সময় বানিয়ে ফেললাম এই ডলস হাইজ।


ঘরটা বানিয়েছি ফলের বাক্স কেটে। ঘরটা দ্বোতালা।



ফলের বাক্সের মধ্যে দুটো অংশ থাকে, একটা অংশ রেখে দিয়ে বাকি অংশটা বের করে নিয়ে ঘরের মধ্যে উল্টো ভাবে জুড়ে দিয়ে দ্বোতালা ভাব আনা হয়েছে।


দ্বোতালর অংশে বারান্দা করা হয়েছে সেই অশেরই বর্ধিত অংশ দিয়ে। এরপরে পুরো ঘরটাকে সাদা কাগজ দিয়ে মুড়ে দিয়েছি তার উপরে রং।

ইনি বিশিষ্ট পেইন্টার সোহামনি



এবার দেখা যাক ঘরের ফার্নিচার। বাজারে অবশ্য বাচ্চাদের ছোট ছোট চেয়ার, টেবিল, খাট এসব কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু নিজের হাতে বানিয়ে দেবার আনন্দটাই আলাদা, তাই এগুলোও বানিয়ে ফেললাম।

ও আর লোডশেডিং এর সময় কাজ চালানোর জন্য একটা হ্যারিকেনও আছে, এটা আবার জ্বলেও কিন্তু B-)
সোফাসেট গুলো বানিয়েছি স্টেপলার পিন রাখার বাক্স, তুলো আর কাপড় দিয়ে। প্রথমে স্টেপলার বাক্সটার একপাশ তুলা দিয়ে ঢেকে, কাপড় দিয়ে শক্ত করে সেলাই করে দিতে হবে এভাবে। ম্যাচের বাক্স দিয়েও এটা বানানো যায়। আমার মা আমার পিচ্চি বেলায় এমন ম্যাচের বাক্স দিয়ে সোফা বানিয়ে দিয়েছিলেন, এটা তার কাছেই শেখা।



এই রকম দুটো অংশ বানাবেন, এরপর একটা বক্সের কিনারার উপর খাড়া ভাবে আরেকটা বাক্স সুই-সুতো দিয়ে ভালো করে সেলাই করে দিতে হবে। ব্যাস হয়ে গেলো বসার আর হেলান দেবার জায়গা। হাতল গুলো ইচ্ছা মতো বানাতে পারেন, তারপর জুড়ে দেবেন দু'পাশে। আমি এখানে শক্ত বোর্ডের উপর কাপড় সেলাই করে হাতল বানিয়েছি।

এইটা হলো সোহামনির ড্রইং রুম :)


বিছানাটাও শক্ত বোর্গ কয়েক পরত কেটে একসাথে আঠা দিয়ে জোড়া দিয়ে বানিয়েছি।


পরে সাদা কাগজে মুড়ে রং করা হয়েছে। তুলোর তোষক বানিয়ে তার উপর বিছানা ও বালিশ :)


আলমাড়ি বানানো হয়েছে ঔষুদের কাগজের প্যাকেট দিয়ে। প্যাকেটের সামনের অংশটা উপরে নীচে কিছু অংশ বাদ রেখে এন্টিকাটার দিয়ে লম্বা ভাবে চিরে নিন, এর পর ভেতরে প্যাকেটের আয়তনের মাপে শক্ত বোর্ড কেটে, বোর্ডের নীচের দিকে আঠা লাগিয়ে আলমারির তাক বানানো হয়েছে।

পড়ার চেয়ার টেবিলও একই ভাবে শক্ত কাগজে বানানো। চেয়ারের বসার সিটটা গোল করে কেটে নিয়ে এর সাথে পায়া আর হেলান দেবার জায়গা আঠা দিয়ে জোড়া দেয়া হয়েছে।


টেবিলটাও ঔষুধের প্যাকেট কেটে সেটার সাথে শক্ত কাগজের বোর্ড লাগিয়ে বানানো।


ডাইনিং টেবিলের চেয়ার গুলো অবশ্য কেনা।


জানলার পর্দা বানানো হয়েছে নেট দিয়ে। প্রথমে কুচি করে সেলাই করে, আইকা দিয়ে সেট করা হয়েছে জানালায়।আর ঘরের ছাদা কিন্তু ফ্লেক্সবিল, ইচ্ছা করেলেই সরিয়ে রাখা যায়।


এই হলো পুরো ডলস হাউজ আর সাথে আমার নিজের ডলটা :)
তবে সমস্যা হলো এখন আমার এই ডলটা নিজেই এই ঘরের মধ্যে ঢুকতে চায়, তাই ভয়ে আছি যে কোন দিন এই বাড়ির ভবলীলা সাঙ্গ হতে পারে :(



পরিশিষ্ট:

বাড়ির নাম: সোহামনির পুতুল বাড়ি।

আর্কিটেক্ট প্লাস মিস্ত্রী সোহার বাবা।

সহযোগী ইঞ্জিনিয়ার, ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর, রং মিস্ত্রী, ফার্নিচার মিস্ত্রী, দর্জি সোহার মা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০৭
১২৩টি মন্তব্য ১২০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×