
গ্রাম থেকে দাদী বাসায় আসছে আর আমি দাদিকে খুব ফলো করছি। এটাই ছিল আমার রুটিন যখন প্রথম দাদিকে দেখেছি। দাদা সব সময় কাছে থাকেন বলে তিনি আমার খুব কাছের মানুষ। কিন্তু দাদী খুব দূরের কারন দাদিকে আমি খুব একটা কাছে পাইনি। আমি যে সময়ের কথা বলছি সেটা ছিল আমি যখন চার কিংবা পাঁচ বছরের মেয়ে। দাদিকে অনেকদিন পর দেখেছিলাম বলেই আমার কাজ ছিল দাদির সব কাজ খুব মন দিয়ে খেয়াল করা। দাদির সাথে সাথে সব সময় একটা সোনালি রঙের গোল ডিব্বা। খুব খেয়াল করতাম সেটা কে!

আর সারাদিন দাদী কি যেন মুখে পুরে খেতে থাকে। কিছুতেই শেষ হয়না। দাদি কি গিলতে ভুলে গেছে নাকি! কি আশ্চর্য! সারাদিন ধরে কি খাচ্ছে! চিন্তার কথা!

একদিন চোখে পরে গেল দাদি সেই সোনালি রঙের ডিব্বা থেকে কিছু একটা বের করছে। এক দৌড়ে কাছে বসে উকি দিলাম। দেখি সবুজ বড় কয়েকটা পাতা! আর গোল গোল ছোট্ট বলের মত একটা ফল। আর কিছু কৌটা। দাদি কালো একটা কিছু দিয়ে গোল বল গুলো কাটল কুচি কুচি করে। একটা পাতা হাতে নিয়েছে। একটা কৌটা থেকে সাদা কি যেন নিয়ে মাখলেন পাতায়। তারপর সুন্দর করে ভাজ করে মুখে পুরে দিলেন।
দাদি তাহলে সারাদিন পাতা খায়!

আমাকে দেখে দাদি বললেন "খাবি?"
আমি তো লাফ দিয়ে উঠি পারলে, "হ্যা"

একটা পাতা থেকে পিচ্চি একটা টুকরা নিলেন তাতে গোল বলের একটা টুকরা আর এক চিমটি সাদা কি যেন লাগিয়ে দিলেন। আমার কেমন লেগেছিল প্রথম খেতে তা মনে নেই তবে


সেই থেকে দাদি আসলে আমি খুশি হয়ে যেতাম খুব কারন সেই পান খাবার লোভে। :!> কি অদ্ভুত দেখতে আর খেতে। সব থেকে মজার যখন জিভ লাল রঙের হয়ে যায়।


দাদি বছরে একবার আসতেন বাসায়। তার মানে প্রতি বছরে একবার আমার পান খাওয়ার উৎসব হতো।

এবং তার পর আমার এত সাধের পান খাওয়া একে বারেই ইতি হয়ে গেল একটা ঘটনায়


মামার বৌ-ভাত ছিল সেদিন। নানু বাসার ছাদে প্যান্ডেল করা হয়েছে। খাবার পরে দেখলাম একটা টেবিলে পান সুপারি আরও অনেক লাল হলুদ রঙের মসলা সাজিয়ে রাখা। আমি পারলে লাফ দিয়ে যাই

নিলাম পান আর যত মসলা আছে সব দিলাম। নামও সব গুলোর জানি না। দাদি আমাকে চুন আর সুপারি কিছু দিতেন না। তাই এত বড় সুযোগ আমি ছাড়তে চাইলাম না। খয়ের, জর্দা, সাদা পাতা, আর যা যা ছিল সব নিলাম বেশি করে

খালা বললেন "নিও না জর্দা, খেতে পারবা না।"
আমি কি আর শুনি সেই কথা!

খুব মজা করে পান খাচ্ছি। এর মাঝে শুনি মামীর বাড়ি থেকে মেহমান চলে আসছে। আমি পান খেতে খেতে নীচে নামছি। ছাদ থেকে শুধু নীচের তলার পা দিয়েছি আর মাথা টা কেমন চক্কর মেরে উঠল! :-& সেটা যে কিরকম অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না! বুঝলাম পানে ধরেছে আমাকে। কাউকে বুঝতে দিলাম না। ধীরে ধীরে নেমে নানুর রুম খালি পেয়ে একদম ঠাস করে খাটে পরলাম। এর পর আর কিছুই মনে নেই আমার!


"তুই জর্দা দিয়ে পান খাইছিস তাই না?"

"হুম" :!> আমি আর কি বলব!
উঠে দেখি মামা, মামি চলে যাচ্ছে! তার মানে সব প্রোগ্রাম শেষ!




সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:১১