somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা - পান সুপারি আর চুন!

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রূপকথা বা উপকথার গল্প গুলো সব সময় বলে গ্রাম বাংলার সাধারন মানুষ বা কৃষকদের দুঃখ কষ্টের কথা। পান সুপারি নিয়ে অনেক রূপকথা বা উপকথা বা গল্প গ্রাম বাংলায় প্রচলিত আছে। তার থেকে দুটো গল্প পাওয়া গেছে।

* প্রথমটি, খাসিয়াদের মাঝে প্রচলিত একটা রূপকথা।

দুই ছোট বেলার বন্ধু। একজন কাজের জন্যে চলে গেছে অন্য দেশে। অনেক দিন পর সে দেশে আসলো বেড়াতে এবং বন্ধুর বাড়িতে গেল। কিন্তু সে জানতো না বন্ধু ছিল অনেক গরিব কৃষক। বউ আর বন্ধু ২ জনের কষ্টের সংসার। নুন আনতে পানতা ফুরায়। বন্ধু বেড়াতে আসায় অনেকদিন পর বন্ধুকে পেয়ে কৃষক বন্ধু খুব খুশি হলো, কিন্তু ভেবে পেল না কি দিয়ে আপ্যায়ন করাবে এত দিন পরে আসা বন্ধু কে। সে বন্ধুকে বসিয়ে বউয়ের কাছে গেল আর জানালো তার বন্ধু এসেছে দূর দেশ থেকে। তার জন্যে কিছু রান্না করো। বলে বন্ধুর কাছে সুখ-দুঃখের গল্প করতে বসল।
বউ তো মাথায় হাত দিল! কি খাওয়াবে? ঘরে যে কিছুই নেই! কিভাবে দেখাবে এই মুখ যে তাড়া এত গরীব? লজ্জায়, দুঃখে বউটি মরে গেল।
অনেক্ষণ গল্প করে বন্ধুর মনে পরল অনেক সময় পার হয়েছে। রান্না হলো কিনা দেখি। দুপুর গড়িয়েছে, খাবার সময় হয়েছে।
কৃষক বন্ধুটি রান্না ঘরে যেয়ে দেখে বউ মারা গিয়েছে। রান্না ঘরে কোন খাবার নেই। বউ কে রান্না ঘরের পাশে কবর দিয়ে কবরের পাশে বসে কাঁদতে শুরু করল। বউ মরার দুঃখে আর বন্ধু কি জবাব দিবে ভেবে বন্ধু কে কি খাওয়াবে না বুঝতে পেরে সেও কষ্টে লজ্জায় কাঁদতে কাঁদতে মরে গেল।
এদিকে বন্ধু অপেক্ষা করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। কারও কোন সারা নেই ঘরে। বন্ধু আর ফিরে আসছে না। খিদেয় পেট চো চো করছে। কিছু বলতেও পারছে না সে। শেষ মেশ, অনেক চিন্তা ভাবনা করে সে ঘরের ভিতর গেল। দেখে কোথাও কন সারা শব্দ নেই। সব চুপ চাপ। ঘুরতে ঘুরতে রান্না ঘরের পাশে যেয়ে দেখে বন্ধু একটা কবরের উপর পরে রয়েছে মাটিতে, মারা গিয়েছে।
মৃত বন্ধুকে সে কবর দিয়ে বন্ধু হারানোর দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে নিজেও মারা গেল।
এই সময় ঐ পথ দিয়ে এক চোর যাচ্ছিল। চোর দেখল দুইটা কবর আর তার পাশে বেড়াতে আসা মৃত বন্ধুটি পরে রয়েছে। ঘরে কিছুই নেই চুরি করার মত। তার অনেক মায়া হলো। চোর বন্ধুকে কবর দিল। কিন্তু তার নিজের পেটেও খিদে। তার নিজের ঘরেও কোন খাবার নেই। বউ বাচ্চারা বসে আছে ঘরে তার ফেরার অপেক্ষায়! কিন্তু সারাদিন ঘুরেই চুরি করার মত কিছু খুঁজে পায়নি সে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। সারাদিন না খাওয়া খালি পেটে খিদায়, দুঃখে কষ্টে চোর টাও কাঁদতে কাঁদতে মারা গেল।

অনেকদিন পর দরিদ্র কৃষক বন্ধুটির বউয়ের সমাধির উপর জন্মাল পানগাছ, তার স্বামীর সমাধির ওপর জন্মাল সুপারি গাছ, বেড়াতে আসা বন্ধুটির সমাধির ওপর খয়ের এবং চোরটির সমাধির ওপর পাওয়া যায় চুনা পাথর।

যেহেতু দরিদ্র কৃষক বন্ধুটি ও তার স্ত্রী আপ্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তাই এই ধারণা জন্মাল যে, এমন একটি খাবার জিনিস থাকা দরকার, যা থেকে অল্পতেই কোনও অতিথিদের আপ্যায়ন করা যায়। সেদিন থেকেই ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের মধ্যে এই পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রথা শুরু হল।

{এই রূপকথা মে ঘ দূ ত ভাইয়ার বলা। আমি গল্পটা ঠিক রেখে একটু সাজিয়ে দিয়েছি মাত্র }




* এই গল্পটি এশিয়ার লোককথা বা শ্রীলংকার লোককথা।

নাম না জানা কোন দেশে থাকত দুই ভাই। খুব মিল দুই ভাইয়ের মাঝে। দুই ভাই একই মেয়েকে পছন্দ করে, তবে মেয়েটা পছন্দ করে বড় ভাইকে। সেটা কে তা দুজনের কেউই জানে না। বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের জন্য আত্মত্যাগ দেখিয়ে দূরে চলে যায়, তবে এক নদীর ধারে বাস করা শুরু করে এবং কিছু দিন পর মারা যায়। তার সমাধিতে জন্মে এক গাছ যে গাছে সুপারি হয়।

এই খবর জানতে পারে মেয়েটা, সে বড় ভাইটিকে খুঁজতে খুঁজতে চলতে শুরু করে দিক হারা, একসময় মেয়েটা সেই সুপারি গাছের নীচে পৌছে এবং জানতে পারে ছেলেটার কথা যে সে এখানেই মারা গিয়েছে। সমাধির পাশে বসে সে প্রশান্তি পায় মনের, একসময় সে পান লতা হয়ে সুপারি গাছকে বেষ্টন করে উঠে যায়।

ওদের নিখোঁজ হবার খবর ছোট ভাই পায় অনেকদিন পর, সে বুঝতে পারে সবই, সে তখন খুঁজতে যায় ওদের। কোথাও পায় না, হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে সে সেই নদীর পাড়ে দেখে একটা নাম না জানা গাছ, আর বেষ্টন করে ওঠা সেই পান লতা। সেখানে গিয়ে বসে সে ও, অস্থির মন শান্ত হয় তারও, সেখানে সে চুনাপাথর হয়ে যায় এক সময়।

সেই থেকেই পান পাতা, সুপারি আর চুন এক সাথে খাওয়ার প্রচলন হয়।

{এই গল্পটি রাতমজুর ভাইয়ার দেয়া। আমি এখানে একটু এডিট করেছি}
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:২০
৪১টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেভাবে কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ পরবর্তী নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করতে পারবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:৪৩

আমি ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছু কিছু সাপোর্ট করি। যদিও জানি, ইমাম মাহদী (আঃ) আসার আগে পর্যন্ত কোন ইসলামী দলই পরিপূর্ন সমাধান হিসেবে আবিভূর্ত হতে পারবে না। তবে, আহলে বায়াত... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচিত দেবদূত

লিখেছেন সাজিদ উল হক আবির, ১৬ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৫৩

ব্লগের শিরোনামে যে শব্দগুচ্ছ দেখলেন, সেটা আমার ১০ম বই (৫ম ছোটগল্পের সংকলন) এর নাম। অনুবাদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আমার এই বইটি এ বছর মর্যাদাপূর্ণ কালি ও কলম তরুণ কথাসাহিত্যিক এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

গোপালগঞ্জের ঘটনায় জাতি আরেকদফা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১৭ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:২০

জুলাই গনঅভ্যূত্থানের বর্ষপুর্তিতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈ্তিক দল এনসিপি জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসাবে গতকাল গোপালগঞ্জ যায়। গতকাল গোপালগঞ্জে দিনব্যপী সংঘর্ষের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের বক্তব্য দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

গোপালগঞ্জে এটা দরকার ছিল!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫৪


দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশনে উত্তপ্ত গোপালগঞ্জ। হামলা-সংঘর্ষের সময় অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অনেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে জেলা শহরে ১৪৪ ধারা ও পরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

NCP'র গাড়ি বহর নিয়ে গোপালগঞ্জ পদ যাত্রা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:০৪

NCP'র গাড়ি বহর নিয়ে গোপালগঞ্জ পদ যাত্রা....

সার্বিক অর্থে NCP তাদের পূর্ব ঘোষিত জেলায় জেলায় পদযাত্রা সফর হিসেবে (NCP নেতা সার্জিসের ভাষায় রোড মার্চ টু গোপালগঞ্জ) গোপালগঞ্জে সফল হতে পারেনি স্থানীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×