স্বর্গের শিশু। সিনেমার নামের সাথে বিষয় বস্তুর সুন্দর মিল খুঁজে পাবেন এখানে। ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালবাসা আর বোনের প্রতি ভাই এর স্নেহের স্বর্গীয় মেলবন্ধন যেন ক্যানভাসে তুলির আচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। একটা সাধারণ বিষয়কে অত্যন্ত মানবিক করে উপস্থাপনের সমস্ত কৃতিত্ব পরিচালকের। সাথে আছে আলী আর জাহরা চরিত্রে দুইটি ফুটফুটে শিশুর অনবদ্য অভিনয়।
শুরুতেই দেখা যায় আলী তার ছোট বোনের ছিড়ে যাওয়া জুতা সেলাই করাচ্ছে মুচি কে দিয়ে। কিছুক্ষণ পরেই আলি হারিয়ে ফেলে বোন জাহরা এর জুতা জোড়া। পাগলের মত খুঁজেও কোনো হদিস পায়না। সে জানে খুঁজে না পেলে বিপদ। বাবার সাধ্য নেই নতুন জুতা কিনে দেবার। আর আদরের ছোট বোনের ওই এক জোড়াই জুতা। জুতা হারাবার কথা শুনে জাহরা এর চোখে পানি ছলছল করে ওঠে। দুই ভাই বোন ঠিক করে আলি এর ছেড়া জুতা জোড়াই ভাগ করে পরবে। তবু বাবা মা কে জুতার কথা বলে তাদের বিব্রত করবেনা। আলীর জুতা জাহরা এর পায়ে অনেক বড় হয়ে যায়। তবু এই পরেই সে সকালে স্কুলে যায় আবার ছুটি হলেই এক দৌড়ে বাসায় আসে কারণ ওই জুতা পরেই তার ভাই স্কুলে যাবে। কিন্তু বোন এর জুতা এর জন্য সব সময় মর্ম পীড়ায় ভোগে আলী।
স্কুলে পুরস্কার পাওয়া কলম সে অকাতরে দিয়ে দেয় বোন কে যাতে সে একটু খুশি হয়। একদিন জাহরা তার স্কুলেই একটি মেয়ের পায়ে দেখতে পায় তার হারিয়ে যাওয়া জুতা। পিছু নিয়ে বাড়ি চিনে আসে আর পরে ভাই কে নিয়ে যায় জুতা উদ্ধারে। দুজনে চোখ মুখ শক্ত করে বুক ফুলিয়ে গটগট করে জুতা উদ্ধারে যাবার দৃশ্যটি অনেক সুন্দর। কিন্তু যখন তারা আবিস্কার করে ওই মেয়েটি তাদেরই মত এক পরিবারের সন্তান আর তার বাবা অন্ধ তখন তারা পারেনা জুতার দাবি নিয়ে সেই অন্ধ বাবার সামনে দাড়াতে। আবার দুজন চুপ করে মাথা নিচু করে ফিরে আসে।
বোনের কষ্ট অনেক পীড়া দেয় আলীকে। খেলাধুলাও ভালো লাগেনা। বোনের চোখের পানি দেখে তার বুকের ভিতরে দুমড়ে ওঠে। ওদের বাবাও বোঝে তার অপারগতার কথা। এক ছুটির দিনে মালির কাজ করে কিছু টাকা পায় আলীর বাবা। আশা থেকে বেশি টাকা পেয়ে অনেক কিছু কেনার প্লান করে সে। এর মধ্যে ছিল আলীর জন্য নতুন জুতা। আলী শুনে বাবাকে জানায় সবার আগে জাহরা এর জন্য জুতা কিনতে হবে। বাবা রাজি হয়।
এর মধ্যে একদিন স্কুলে আলী দেখতে পায় শহরে স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা হবে। প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে তার চোখে পড়ে তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে একজোড়া নতুন জুতা দেয়া হবে। তার বোনটা স্কুল থেকে এক ছুটে কোথাও না থেমে তার কাছে আসে যাতে আলীর স্কুলে দেরী না হয়ে যায়। আর সে তার বোনটার জন্য এই টুকু করতে পারবেনা? সে প্রতিগ্জ্ঞা করে যেকোনো ভাবে তাকে তৃতীয় হতে হবে তাহলে সে আয়োজকদের অনুরোধ করে ওই জুতা বদলে একজোড়া মেয়েদের জুতা নিয়ে জাহরা কে দেবে। তার বোনের মুখে হাসি ফুটাবে। আলী কি পেরেছিল জাহরা কে খুশি করে তার মুখে হাসি ফোটাতে ?
পরিচালক মজিদ মাজিদি এর এই মাস্টারপিস সম্ভবত সবারই দেখা। তারপর ও কেউ যদি না দেখে থাকেন তাহলে দেখে ফেলুন আজ ই। টরেন্ট লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো। না দেখলে পস্তাইবেন।
টরেন্ট লিঙ্ক:
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭