somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২য় বিশ্বযুদ্ধঃ সেরা ১০ টি ট্যাঙ্ক

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্যাঙ্ক এর নাম শুনলেই মনে পড়ে ঘড় ঘড় আওয়াজ করে তেড়ে আসা কোন যান্ত্রিক দৈত্য এর কথা। যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাঙ্ক এর সবথেকে বেশি ব্যবহার হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধে। এই সময় এসে প্রমানিত হয় ট্যাঙ্ক হল যুদ্ধক্ষেত্রের রাজা। চলুন দেখি যাওয়া যাক সেই রক্তে শিহরণ তোলা সময়ে আর জেনে নেই সেই সময়ের ভয়াবহ কিছু কিলিং মেশিনের কথা।

যোসেফ স্তালিন ট্যাঙ্কঃ
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা রাশিয়ার (সোভিয়েত রাশিয়া) তৈরি ট্যাঙ্ক। এটাকে আই-এস ট্যাঙ্ক নামে ডাকা হত। জার্মান আক্রমণে পর্যুদস্ত সোভিয়েত বাহিনী যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ট্যাঙ্ক বিপুল পরিমানে উৎপাদন শুরু করে। এর পুরু আর্মার ৮৮ মিমি কামানের গোলাও অনায়াসে হজম করে নিতে পারত। আর অন্যদিকে জার্মান টাইগার ট্যাঙ্ক ও দ্রুতগতির প্যান্থার ট্যাঙ্ক এর বিরুদ্ধে ছিল অত্যন্ত কার্যকর। বিশ্বযুদ্ধের শেষ অর্ধে সোভিয়েত অগ্রযাত্রার পুরোভাগে থাকত আই-এস ট্যাঙ্ক।



আপপ্যান্থার ট্যাঙ্কঃ
ফিল্ড মার্শাল রোমেল মনে করতেন ট্যাঙ্ক ই যুদ্ধের মাঠের মূল খেলোয়াড়। এই ভাবনা কে মাথায় রেখে জার্মানরা প্রথম যুদ্ধের ময়দানে ট্যাঙ্কের বিপুল ব্যবহার শুরু করে। তারা হালকা, ভারী অনেক রকম ট্যাঙ্ক এর সফল ব্যবহার করে যুদ্ধের ময়দানে আর এর মধ্যে আলাদা করে অবশ্যই বলতে হয় আপপ্যান্থারের কথা। কোন প্রতিরক্ষা বুহ্যের ক্ষমতা ছিল না এর ভয়াবহ ৮.৮ সেমি কামানের ধ্বংস ক্ষমতার সামনে টিকে থাকে।



এম-৪ শেরম্যানঃ
এটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি মাঝারি ট্যাঙ্ক। আমেরিকার তৈরি। পরে মিত্র বাহিনীও এটি ব্যবহার করে। এর প্রধান অস্ত্র ছিল 75 mm M3 L/40 কামান। এর সব থেকে বড় কার্যকরী দিক হল নিখুঁত নিশানা। এমনকি চলন্ত অবস্থায়ও নিশানা ভেদে অব্যর্থ ছিল এম-৪ শেরম্যান। আর এই বৈশিষ্ট্য একে মিত্র বাহিনীর মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয় করে তোলে। ঐতিহাসিকদের মতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৫০০০০ এর অধিক এম-৪ শেরম্যান ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছিল।



প্যান্থার ট্যাঙ্কঃ
মাঝারি এই ট্যাঙ্ক ১৯৪৩ সালে যুদ্ধে মোতায়েন করা হয় এবং যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ায়। রাশিয়ান টি-৩৪ ট্যাঙ্কের মুখোমুখি দাড় করাতে একে প্রস্তুত করা হয়। এর সাফল্য জার্মানদের অনুপ্রাণিত করে প্যাঞ্জার-৩ ও প্যাঞ্জার-৪ এর বদলে প্যান্থার কে মূল অ্যাসাল্ট ট্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করতে। প্যান্থার এর মূল শক্তি ছিল বিধ্বংসী ফায়ার পাওয়ার ও দ্রুত গতি। সেই সাথে এর শক্তিশালী বর্ম একে শত্রুর কাছে অজেয় করে তোলে। এর নিখুঁত ডিজাইন এর কারণে যুদ্ধের পরেও অনেক দেশ প্যান্থার এর মডেল অনুসরন করে ট্যাঙ্ক বানাতে। দ্রুত গতি, ভারী আর্মার আর বিধ্বংসী ক্ষমতার জন্য অনেকেই একে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সেরা ট্যাঙ্ক বলে একবাক্যে স্বীকার করেন।



প্যাঞ্জার-৪
২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে নাৎসি জার্মানির প্রধান ট্যাঙ্ক ছিল প্যাঞ্জার-৪। ১৯৩০ সাল থেকে এটি জার্মান সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি মাঝারি ট্যাঙ্ক। শুরুতে একে স্থল আর্মির সাপোর্ট পাওয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হত। পরে একে মূল যুদ্ধে প্রাথমিক আঘাত হানতে ব্যবহার করা হত। ফিল্ড মার্শাল রোমেলের ট্যাঙ্ক ডিভিশনের মূল শক্তি ছিল এই প্যাঞ্জার-৪। এটি যুদ্ধের সময় সবথেকে বেশি তৈরি করা জার্মান ট্যাঙ্ক।



শেরম্যান ফায়ারফ্লাইঃ
এটি আমেরিকান শেরম্যান ট্যাঙ্ক এর মডেলে তৈরি করা ব্রিটিশ ট্যাঙ্ক। ব্রিটিশরা তাদের ১৭ পাউন্ডের ভয়াবহ এন্টি ট্যাঙ্ক গান এতে যুক্ত করে। নতুন মডেলের ব্রিটিশ ট্যাঙ্ক আসার আগে ব্রিটিশরা একেই তাদের মূল ট্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে। শেরম্যান ফায়ারফ্লাই ছিল একমাত্র ব্রিটিশ ট্যাঙ্ক যা জার্মান টাইগার ও প্যান্থার উভয়ের বিপক্ষে কার্যকর ছিল। তাই জার্মান ডিভিশন গুলোর আর্টিলারি ইউনিট গুলোকে বলা থাকত ব্রিটিশ আর্মি এর সাথে যুদ্ধে যেন সবার আগে শেরম্যান ফায়ারফ্লাই কে অ্যাটাক করা হয়।



টি-৩৪ ট্যাঙ্কঃ
এটিও একটি মাঝারি ট্যাঙ্ক। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান ট্যাঙ্ক ছিল এটি। টি-৩৪ কে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম সফল ও বহুল ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক বলা হয়। সংখ্যার দিক দিয়ে এটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সর্বাধিক উতপাদিত ট্যাঙ্ক। যুদ্ধের পর রাশিয়া অনেক দেশে এই ট্যাঙ্ক রপ্তানি করে আর এখনো অনেক দেশেই টি-৩৪ অপারেশনাল আছে।



টি-৪৪ ট্যাঙ্কঃ
রাশিয়ার তৈরি মাঝারি এই ট্যাঙ্ক আসলে টি-৩৪ এর পরের প্রজন্ম। বিশ্বযুদ্ধে সফল ভাবে ব্যবহার হলে ও মাত্র ২০০০ এর মত তৈরি করা হয়েছিল এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর আর তৈরি করা হয়নি। যদিও এর ডিজাইন পরে ব্যবহার করা হয় বিশ্বের সব থেকে বেশি তৈরি করা টি-৫৪/৫৫ ট্যাঙ্ক তৈরিতে।



টাইগার-১ ট্যাঙ্কঃ
জার্মানদের বহুল ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক। সব গুলো যুদ্ধক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে এই ট্যাঙ্ক। ১৯৪২ সালে ডিজাইন করা এই ভারী ট্যাঙ্ক ছিল মিত্র বাহিনীর আতঙ্ক। ৮৮ মিমি মাউন্টেড কামান আকাশ ও মাটি উভয় জায়গার শত্রু নিধনে পারদর্শী ছিল।



টাইগার-২ ট্যাঙ্কঃ
এই ভারী ট্যাঙ্ক ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে যায়গা করে নিয়েছে এর ভয়াবহ ক্ষমতাশালী কামান আর অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা। সম্মুখ যুদ্ধে এটি প্রমাণ করেছিল যে মিত্র বাহিনীর যেকোন ট্যাঙ্ক এর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী টাইগার-২। যদিও ক্ষমতার তুলনায় দুর্বল ইঞ্জিন আর ফুয়েলের অতি ব্যবহার এর কারণে এর উৎপাদন বৃহৎ আকারের ছিলনা।



সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×