somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুকনগর, সবচেয়ে ভয়াবহ হত্তাযজ্ঞ হয়েছিলো ১৯৭১ সালে…

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীদের হত্যা শুরু করেছিলো।আর এই হত্যাযজ্ঞকে পরিকল্পিত ও সুগঠিত করেছিলো রাজাকার ও শান্তিকমিটি।
এদেশীয় রাজাকার এবং বিহাড়ি অভিবাসীরা পাকিস্তানিদের কে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত দুর্গম সব এলাকায় এবং পরোক্ষভাবে হত্যা করতো যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা সাহায্য করতো।
চুকনগর, খুলনা জেলার অন্তর্গত ডুমুরিয়া থানার একটি ছোট বানিজ্যিক শহর।এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি।বর্তমানে খুলনা এবং চুকনগরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো।কিন্তু ১৯৭১ সালে এত সহজ ছিল না।চুকনগর একটি নিম্নভূমি এবং এর অধিকাংশ জায়গা জলাভূমি ছিল।এমন স্বাপদসংকুল পরিবেশ থাকা স্বত্তেও,সেখানে একটি দুর্গম রাস্তা ছিলো সাতক্ষীরার মধ্য দিয়ে,যেখান দিয়ে উদ্বাস্তু এবং প্রানভয়ে পলায়মান নিরীহ লোকজন কলকাতা যেতে পারতো রাজনৈতিক আশ্রয় নেবার জন্যে।১৯৭১ এর এপ্রিলের শুরুর দিকে,শত শত হিন্দু বাঙ্গালী উদ্বাস্তু,যারা কলকাতা জাবার জন্যে জমায়েত হয়েছিলো তারা স্থানীয় শান্তি কমিটি,রাজাকার,আল বদর,আল শামস বাহিনীদ্বারা খুন,ধর্ষণের শিকার হয় ।এই হত্যা আবার ছড়িয়ে দেয়া হয় শ্রেণী-বৈষম্য নামে।এতে পরিস্থিতি আরোও ঘোলাটে হয়।এতে করে বাটিয়াঘাটা,দাকোপা এবং স্বাতক্ষীরা থেকে দলে দলে বামপন্থী,চরম্পন্থীরা এসে জমায়েত হতে থাকে।এরপর মধ্য এপ্রিল থেকে আরও মানুষ বাড়তে থাকে।প্রথম অংশ পার হয়ে গেলে পরের অংশ পার হবার প্রস্তুতি নিতে থাকে।আগুনের মত পাক বাহিনীর ছড়িয়ে পরার খবরে মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে একটি বিশাল অংশ এসে জড় হয় চুকনগর সীমান্তে।তত্ত্ববধায়ক সমীক্ষা মতে,প্রায় ১০ হাজারেরও বেশী মানুষ চুকনগর এসে সীমান্ত পার হবার জন্যে অপেক্ষা করছিলো।এদের মধ্যে নারী,শিশু,বৃদ্ধ,প্রতিবন্ধী সকল শ্রেনীর মানুষ ছিল।কিন্ত এতেও তাদের শেষ রক্ষা হয় নি। একটি সূত্র বলে,বিহাড়ি খান এই হত্যাজজ্ঞ ঘটনার মূলে ছিলো।বিহাড়ি খান উদ্বাস্তুদের ভাদ্রা নদী পার হবার জন্যে যার যা কিছু ছিলো ছিনিয়ে নিত।যখন কেউ দিতে অস্বীকার করত তখন তাদেরকে পাক বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিত।রাজাকার,শান্তিবাহিনীর সদস্যরাও এতে যোগ দিয়েছিলো।তাদের দুটি উদ্দেশ্য ছিলো।১-মালাউনদের(হিন্দু) পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করা।২-তাদের অর্থ ও গহনা লুন্ঠন করা।
১৯৭১ সালের ১০ই মে,যেদিন ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ঘটে,সেদিন সকালে উদ্বাস্ত বাঙ্গালীরা সীমান্ত পার হবার জন্যে গোছগাছ করছিলো।সবার একটা পরিকল্পনা ছিলো সকালের নাস্তা খেয়ে ১০-১১টার দিকে তারা বের হবে।সকাল আনুমানিক ১০টায়,দুই ট্রাক ভর্তি পাক হানাদার বাহিনী এসে পৌছায় কাউতলায়(তখন নাম ছিল পাটখোলা)।পাক আর্মির সংখ্যা খুব বেশি ছিলো না,আনুমানিক এক প্লাটুন।বর্বর সেই বাহিনী পৌছানো মাত্রই ট্রাক থেকে নেমে হাল্কা মেশিন গান,সেমি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি শুরু করে দেয়।কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি জীবন্ত নগরী থেকে তা পরিণত হয় মৃত্যু-পুরীতে।এতোক্ষন যে তাজা প্রাণ গুলো এখানে সেখানে ভয়ে ছুটোছুটি করছিল পাক হানাদার বাহিনী তাদেরকে তা থেকে মুক্তি দিয়ে দিলো।সেখানে ছিলো শুধু মৃত শরীরের স্তুপ।মৃত শিশু,মৃত মায়ের কোলে ।স্ত্রী তার স্বামীর বুকে,তার ভালবাসার স্বামীকে ঘাতক বুলেট থেকে বাচাতে।বাবার বুকে তার মেয়ে,যেনো সে পশুদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।চোখের নিমেষেই সবাই মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পরেছে।হত্যাযজ্ঞের মধ্যে পশুগুলো যুবতী নারীদের ধর্ষণ করে।এছাড়াও অনেককে নিকতবর্তী মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে পরে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।।এছাড়া যারা আহত হয়েছিলো তাদের পাক হানাদাররা বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে অত্যাচার করে মেরেছে।পাক হানাদার বাহিনী চলে যাবার পর সেখানে জ্যান্ত প্রান বলতে ছিলো চিল-শকুনের দল।চুকনগর হত্যা্যজ্ঞে কত লোক মারা গিয়েছিলো তার প্রকৃত সংখ্যা না জানা গেলেও ধারনা করা হয় একসাথে সবচেয়ে বেশী লোক হত্যা করা হয়েছিল চুকনগরে।প্রায় ১০,০০০হাজার লোক হত্যা করা হয় সেই ভয়াল দিনে।তার একটি ছবি পাওয়া যায় যেখানে শুধু হাড় আর মাথার খুলি গুলো দেখা যায়।

চুকনগর হত্তাযজ্ঞ

তথ্যসুত্রঃ মুন্তাসির মামুন,
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা পরিষদ
ছবিসূত্রঃগোগল

এছাড়াও পাক বাহিনীর কিছু বর্বতার ছবিঃ






সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:১৬
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×