somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যাকগাইভার সমাচার

২০ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদা এই বঙ্গ দেশে টিভি চ্যানেল বলিতে একটি মাত্র চ্যানেল ছিল। যেহেতু অন্যকোন টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব ছিল না, সেহেতু দেশের জনগনের ভাল লাগুক আর না লাগুক, ঐ একটি চ্যানেলই দেখিতে হৈত। তৎকালীন সেই সর্বময় চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি নিশ্চয় ছিল যাহারা দর্শকদের ভাল লাগা মন্দ লাগা লইয়া একটু হৈলেও চিন্তা করিত। উক্ত কারনে তাহারা কোন মহিলার অন্তর্মহলে বিশেষ ধরনের পুথি পত্রের সন্ধানের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দেবার চিন্তা হইতে নিজেদের বিরত রাখিয়া হাতে গোনা কয়েকটি ভাল অনুষ্ঠান প্রচার করিত।B-) সেই অল্প কয়েকটি অনুষ্ঠান দেশের আপামর জনসাধারন গোগ্রাসে গিলিত। সেই সব অনুষ্ঠানের কুশীলবেরা স্থান করিয়া লৈয়াছিল এই দেশের মানুষের হৃদয়ে। তেমনি একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল “ম্যাকগাইভার সিরিয়াল” টি।ম্যাকগাইভার দেখিয়াছে, অথচ একবারও বিজ্ঞানী হইতে চাহে নাই, সেই যুগে এমন ছোট ছেলেপুলে পাওয়া সত্যই দুষ্কর ছিল। এই ম্যাকগাইভার নামক চরিত্রটি সকলের কাছেই প্রিয় ছিল।

ইহা হৈল সেই কিংবদন্তি ম্যাকগাইভার এর ছবি

কিন্তু এই ব্যক্তিটি এই দেশে বেশিদিন টিকিতে পারে নাই অসংখ্য দেশীবিদেশি দূরদর্শন চ্যানেল এবং উহাতে প্রদর্শীত বিভিন্ন সিরিয়ালের তোড়ে। হিন্দি সিরিয়ালের শাশুরী-বৌ ক্যাচাল, অবৈধ প্রেমের কাহিনীতে জনাব ম্যাকগাইভার নিজেকে আর নিরাপদ ভাবেন নাই, বিদায় লইয়াছেন এই দেশের মানুষের মন হইতে।/:)

দীর্ঘকাল তিনি গা ঢাকা দিয়া ছিলেন এই দেশের জনগনের চক্ষুর অন্তরালে। কিন্তু তিনি তো তার সেই পুরাতন ভক্তদের কথা ভুলিতে পারেন না। তিনি চাইছিলেন পুরানো ভক্তদের আবার আমোদিত করিতে। এরই মাঝে তাঁহার কাছে খবর পৌঁছাইল যে বাংলাদেশের কিছু মানুষ দূরদর্শনে সিরিয়াল দেখা বাদ দিয়া নতুন এক নেশায় মাতিয়াছে। ইহাকে নাকি ব্লগিং বলে। জনাব ম্যাকগাইভার এই বার আর সুযোগ হাতছাড়া করিতে চাহিলেন না। তিনি তাহার নাম ঈষৎ পরিবর্তিত করিয়া মেকগাইভার নাম লৈয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্লগ সাইটে একখানা একাউন্ট খুলিয়া বসিলেন!!! এরপরেই তিনি তার সেই পুরানো রোমাঞ্চকর সিরিয়ালের মত একের পর এক ব্লগ লিখিয়া চলিলেন। দূর্দান্ত সব তথ্য আমাদের সামনে আসিতে লাগিল। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি লেখার লিংক দেওয়া যাইতে পারে।

** অনৈতিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় প্রেমিক ও কিশোরি গ্রেফতার:P:P:P ( ভ্রেকিং নিউজ ১৪ )

** হোটেল থেকে নষ্টা রমণীসহ যুবক গ্রেফতার (ভ্রেকিং নিউজ ১৩)

** গোসলরত মহিলার কাপড় নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মহিলাসহ আহত ২০ (ভ্রেকিং নিউজ ১২)

** সিলেটে পাজেরো দিয়ে ছাগল চুরি করতে গিয়ে ধরা পরল চার তরুন তরুনী:D:D:D:D:D। ( ভ্রেকিং নিউজ ১৫ )

এই সব লেখায় তিনি চৌম্বক অংশ বোল্ড করন পূর্বক অসাধারন সব তথ্য দিয়া আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করিয়াছেন। এই সব সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র তিনি যদি তুলে না ধরিতেন, তবে আমাদের সারাজীবন অন্ধকারেই থাকিতে হৈত।

অতঃপর তিনি তার কালজয়ী লেখা “আমার প্রবাস পারি দেবার গল্প ( সাথে নেশা করার গল্প ফ্রি:))” প্রসব করেন ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৫ তে। সাথে সাথেই সেই লেখায় শুরু হয়ে যায় সমঝদার ব্লগারদের প্লাস দেবার মহোৎসব। সকলেই লেখাটির জন্য অভিনন্দন জানান। অসাধারন সাফল্যের সহিত সেই লেখাটি কোন এক উজবুকের ১ টি মাইনাস সহ ২৪ টি প্লাস পাইতে সক্ষম হয়। লেখাটির এই সাফল্যের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া এবং তাহার ভক্তকুলকে তাহার রোমাঞ্চকর জীবনের কথা জানাইতে তিনি এই একই লেখা আবার ০২ রা নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯ টা ৩৪ মিনিটে আবার রিপোস্ট করেন “আমার বিদেশে আসার গল্প ( সাথে নেশা করার গল্প ফ্রি :)----- এডিটেড রিপোস্ট” নামে। এইখানেও পোস্টটি বাজিমাত করে। লেখাটি মাইনাস বিহীন ভাবে ২৯ টি প্লাস পায়।

কি?

জানিতে ইচ্ছে করিতেছে যে সেই পোস্টে তিনি কি লিখিয়াছেন?

কেন এত হিট হইল সেই পোস্ট?

তবে শুনুন—

এই লেখায় তিনি জানিয়েছেন তার নিজের এবং আরও ২ বন্ধুর কথা। তাহার ভাষায় তাহারা হইলেন “রক্তের বন্ধু”। শুরুতেই বাড়ি থেকে এসএসসি পরীক্ষার পর কেমন করে তারা পালিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন, তার বর্ণনা দিলেন। অসাধারন বর্ণনা, পড়েই মনে হয় যেন নিজের চোখে সব দেখতে পাচ্ছি। যদিও তারা কিভাবে টাকা পয়সা ম্যানেজ করেছিলেন সেটার কোন কথা বলা নাই। তাহারপরেও সেই বর্ণনা সত্যর চেয়েও বেশি সত্য বলিয়া আমার কাছে মনে হৈয়াছে।;)
অতঃপর তিনি তাহাদের জীবনের কালো অধ্যায় মাদকাসক্ত জীবনের বর্ণনা দিয়াছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। বন্ধুদের নাম করন বিষয়ে তাহার নিজের ভাষ্য হইল—
ডিজেল: এমন কোন নেশার বস্তু নাই যে সে খেতে পারে না। শরীরে সব সয়, ডিজেল খেলেও যেন তার কিছু হবে না, তাই সেই থেকে ডিজেল।
বুলেট: সাইজে একটু ছোটখাটো, পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে নেশার বস্তু পাচার করার মধ্যে তার কোন জুরি নাই। তাই এই দুইয়ের কম্বিনেশনে নাম হয়ে গিয়েছিলো বুলেট।

নামকরনের পারদর্শীতা পাঠক কে আরও লেখাটির প্রতি আগ্রহী করিয়া তোলে। নেশার নিখুঁত বর্ণনা লেখার সত্যতা বিষয়ে সকল সন্দেহ দূর করিয়া দেয়। ;) তাহারপর লেখক বলিলেন--

কলেজের পরে শুরু হলো আসল সমস্যা। তিন জনই কিভাবে যেন ভালো রেজাল্ট করে ফেললাম।

এই একটি লাইন পড়েই শ্রদ্ধায় লেখকের প্রতি মাথা নত হয়ে আসে। ইসসস... কি প্রতিভা।B)

অতঃপর লেখক আমাদেরকে জানান কিভাবে তিনি এবং তার বন্ধু বাড়িতে নেশা করার কারনে ধরা পড়েন এবং মাত্র ১৪ দিনের ভেতর জার্মানীতে চলিয়া যাইবার দুঃসাহসীক পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে তার কর্মকান্ড মার্কিন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ে এর কোন এজেন্ট কে ও হার মানায়।;) তিনি অত্যন্ত সহজ, সরল, সুন্দর এবং প্রাঞ্জল ভাষায় পুরো যাত্রটাকে বর্ণনা করিয়াছেন, যাহাতে মনে হয়েছে সেটি কমলাপুর থেকে গুলশান যাবার থেকেও সহজ একটি কাজ।:P এক্ষেত্রে লেখককে কৃতিত্ব দিতেই হইবে। আলোচ্য লেখায় নিম্নে বর্নিত কয়েকটি শিরোনামের নিচে লেখাগুলো পড়িলেই সমগ্র যাত্রা বিষয়ে আপনার ধারনা পরিপক্ব হইবে।

ইউরোপে ঢুকলাম যেভাবে:

ইউরোপে কাগজ যেভাবে করলাম:

বুলেট কে যেভাবে জার্মানিতে নিয়ে আসলাম:

মনে হতেই পরে যে জার্মানীতে যাওয়া এবং সেখানে কাজ কর্ম করে খাওয়া খুবই সহজ একটি কাজ। এবং সেখানকার পুলিশ বলিয়া কিছুই নাই এবং উহারা গলাকাটা পাসপোর্ট বিষয়ে কিছুই জানে না। সুতরাং আপনিও এই লাইনে একবার চেষ্টা করিয়া দেখতে পারেন। মানুষের জীবনে অসম্ভব বলিয়া তো কিছুই নাই, তাইনা? তবে যাহাই করিবেন, করিবেন নিজ দায়িত্বে। বর্তমান লেখক এবং জনাব মেকগাইভারকে কোন ভাবেই এইসবে জড়ানো যাইবে না। তবে বিশাল হৃদয়ের অধিকারী জনাব মেকগাইভারকে অনুরোধ করিয়া দেখিতে পারেন, তিনি হয়তো দয়াপরবশ হইয়া নিজের পাসপোর্টের গলা কাটিয়া আপনার মাথা বসাইয়া আপনাকেও জর্মন দেশে লৈয়া যাইতে পারেন। ;)

আমার এই মহান ব্লগারের বিষয়ে সাধারন ব্লগারদের অবহিত করার কারন হইল আমি বেকুবের মত সেই কালজয়ী পোস্টে জিজ্ঞেসা করিয়াছিলাম এমন আজগুবি লেখা ব্লগাররা প্রশ্নহীন ভাবে খাইল কেমনে? অতঃপর তিনি তাঁর উত্তর দিলেন তাহার রাস্তায়। আমার কমেন্ট মুছিলেন এবং আমাকে ব্লক করিলেন। অর্থাৎ এই ব্লগের সত্যতা নিয়ে যেসব ব্লগার মন্তব্য করিয়াছেন, তাহাদের কমেন্ট উনি মুছিয়াছেন এবং সেই বেত্তমিজকে উনি ব্লক করিয়াছেন। সেই জন্যই ভিন্ন কোন মত এই পোস্টে দেখা যায়নি।B-)

আমি তাহার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি এবং ভবিষ্যতে ব্লগে তার অসামান্য অবদান অব্যাহত রাখিতে অনুরোধ করিতেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০১
৩২টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×