somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বিদেশে আসার গল্প ( সাথে নেশা করার গল্প একদম ফ্রি B-)

০২ রা নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বার পোস্ট করার পর অনেকেই আমার কাছ থেকে আরো বেশি ডিটেইলস জানতে চায় ইউরোপে আসার ব্যাপারে। তাই নতুন করে লিখতে বসে আরো বড় করে লিখলাম পুরো কাহিনিটা।


প্রবাস জীবন:

থাকি জার্মানি। অনেকদিন বিভিন্ন অড জব করার পর জার্মানির পাসপোর্ট পাবার পরপরই, কিছুদিন আগে ছোট খাটো একটা অফিস জবে পার্মানেন্ট হলাম। বেতন অড জবের থেকে সামান্য কম হলেও অন্তত হার ভাংগা খাটুনি থেকে মুক্তি পেলাম। ( তারপর থেকেই ব্লগিং করা শুরু করলাম, এর আগে শুধু পরতাম)। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম যে এখানে আমার কিছু কথা শেয়ার করবো। কিন্তু ট্রেনের ক্লিনিং জব যখন করতাম তখন বাসায় এসে অন্যের ব্লগ পরতে পরতেই ঘুম এসে পরতো। আর সব কথা কিভাবে গুছিয়ে বলবো বা কোথা থেকে শুরু করবো সেটা খুজে পেতাম না।
ফ্রান্কফুর্টে আরো ৩ জন বাংগালির সাথে একটা এপার্টমেন্ট শেয়ার করে থাকি। এখনো সিংগেল, দেশে তেমন একটা টাকা পয়সা পাঠানোর প্রয়োজন হয়না। বেতনের টাকা বেশিরভাগই সেইভ হয়। তাই অন্নান্য প্রবাসি বাংগালি ভাই দের তুলনায় আমার দিনকাল বেশ সাচ্ছল্লেই চলে যায়।

এ হলো আমার বর্তমান অবস্থা। তবে সবসময় এরকম ছিলো না আমার জীবন।

আমার এখন পচিশ বছর বয়স। এই পচিশ বছর বয়সে যা যা জীবনে দেখেছি বা করেছি তার কিন্চিৎমাত্র ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।

তিন বন্ধুর কথা:


শুরু করতে চাই একবারে স্কুল লাইফ থেকে। আজ থেকে আট/ দশ বছর আগের কথা। সব সময়ের সংগী আরো দুই বন্ধু। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে। তিন জনের মধ্যে কেউই তেমন ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। মেট্রিকে খারাপ রেজাল্ট করার জন্য পালিয়ে গিয়েছিলাম কক্সবাজারে। তারপর থেকে আমরা হয়ে গেলাম রক্তের বন্ধু।

জীবনের প্রথম এডভ্যান্চার:

পরতাম কাকরাইলের উলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। বাবা নেই, থাকি চাচার বাসায় মা আর বড় ভাইয়ের সাথে।আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় কোন কোচিং করতে পারি নাই। যার জন্য মেট্টিকের রেজাল্ট খুবই খারাপ হলো। আমার সাথে সাথে আমার বাকি দুই বন্ধুর রেজাল্ট ও খুব একটা সম্মানজনক হলো না ( এর জন্য অবশ্য দায়ি আমি নিজেই , কারন তাদের কোচিং ফাকি দিয়ে আমার সাথেই আড্ডা দিতো বেশি )। যেদিন রেজাল্ট পেলাম সেদিন গবেষনা করে চিন্তা করলাম যে এই রেজাল্ট সমাজকে বলে বেরানোর মতন না। তাই বাকি দুইজনকে বোঝালাম যে সামাজিক সম্মান রক্ষার কারনে বাসার কাউকে না বলেই ঢাকার বাইরে চলে যাবো কয়েক মাসের জন্য। কিছুদিন পর যখন ফেরত আসবো তখন সসম্মানে আসা যাবে। সেদিনই এক কাপড়ে চলে গেলাম কমলাপুর স্টেষন। প্রথমে ইচ্ছা ছিলো যাবো সিলেট। সেখানে আমার এক কাজিন গ্রামে থাকে। সো... থাকা খাওয়ার অসুবিধা হবে না। কিন্তু বাকি দুইজন বললো গেলে যাবো পার্বত্য চট্রগ্রাম আর নাহলে বাসায় ফেরত। বাকি দুইজনের এত সহজে রন ভংগ দেয়ার মানসিকতা দেখে আমি সাথে সাথে চিটাগাংয়ের টিকেট কিনে নিলাম। ট্রেনে একটা মহিলা আমাদের পরামর্শ করলো তোমরা এত ছোট মানুষ আর আনপ্রিপেয়ার্ড তাই পার্বত্য চট্রগ্রাম না গিয়ে কক্সবাজার যেয়ে ঘুরে আসো। কক্সবাজার যেয়ে দুইদিন থাকার পরই বোরিং লাগা শুরু করলো। খবর পেলাম যে সেন্ট মার্টিন যাওয়া যায় তবে এখন সিজেন তেমন সুবিধার না। তারপরেও ভাবলাম এই সদরঘাট থেকে ভালো হবে। পরেরদিন বাস দিয়ে টেকনাফ। টেকনাফের জেটি থেকে চরলাম সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ট্রলারে।
ট্রলার সমু্দ্রে আসার পরেই আমরা তিনজনই বোরিং জিনিশটাকে খুব মিস করতে লাগলাম প্রচন্ডভাবে। তবে সেন্ট মার্টিন জেটিতে পা দেবার পরেই মনে হলো যে এক ধাক্কায় অনেক বড় হয়ে গেছি। তখন অফ সিজন , হোটেল খুব কম দামে পেলাম। হিসাব করে দেখলাম যে পাক্কা দুই সপ্তাহ আয়েসে থাকা যাবে। দুই সপ্তাহ একটা ঘোরের মধ্যে দি্যে কাটালাম।সারাদিন পুরা দিপে হেটে দেখতাম, আর প্রতি রাতে বিচে মাঝিদের সাথে বসে আড্ডা দিতাম আর তাস খেলতাম। কিছু মাঝিদের সাথে ভালো খাতির হয়ে গেলো। তারা অফার দিলো যে দুইশো টাকা দিলে তাদের সাথে রাতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে নিয়ে যাবে। তিন জনের কেউ সাতার পারি না, তারপরেও আইডিয়াটা শুনে খারার মধ্যে রাজি হয়ে গেলাম। সেই রাতে সেন্ট মার্টিনের মাঝিদের ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে যেই মজা টা পাইলাম, সেটা ফ্রান্কফুর্টে বসে ডেল ল্যাপটপে, ফোনেটিকে টাইপ করে বোঝানো অসম্ভব ব্যাপার। পরের দিনেই সেন্ট মার্টিন ছারলাম। কারোন তখন মনে হলো যে এখন থেকে যেকোন বিপদের মুখোমুখি হতে পারবো। আর খারাপ রেজাল্টের জন্য বকা ঝকা তো পানি ভাত। ঢাকায় আমি মোটামোটি পার পেয়ে গেলাম আমার বাসায়। তবে বাকি দুইজনের উপর দোষ পরলো যে তারা আমার মতন বোকা সোকা ছেলেটাকে পটায়া নিয়া গেছে ওদের সাথে। ওদের বাপ মা আমার মার কাছে এসে ক্ষমা চাইলো যে ওদের ছেলের জন্য আমিও পালাইছিলাম। ঐ দুইজনের চেহারার অবস্থা খুবি করুন। তবে তারা আসল কথা ফাস করলো না।


ফিরে এসে ভর্তি হলাম ঢাকার এক সাদামাটা কলেজে। পরাশুনা ফার্সট ইয়ারে কেউই করে না। আমরাও না। সারা ঢাকা চরকির মতন ঘুরতাম। কিন্তু আসল ঘটনা শুরু হলো সেকেন্ড ইয়ার থেকে। কলেজ ফাকি দিয়ে আড্ডা, ঘুরাঘুরি তখন বোরিং লাগা শুরু করছে। পরাশুনায় মন দেয়া অসম্ভব। এবারো রেজাল্ট খারাপ হবে, ভবিষ্যতের কি হবে সেটা নিয়ে না ভেবে শুরু করলাম হালকা পাতলা নেশা করা। সিগারেট ক্লাস এইট থেকেই একসাথে ধরছিলাম। এবার তিনজন মিলে আবিস্কার করতে লাগলাম নেশার নতুন নতুন বন জংগল।

প্রাইভেসির কারনে বন্ধুদের নিক নেইম শুধু বলছি। ডিজেল: এমন কোন নেশার বস্তু নাই যে সে খেতে পারে না। শরীরে সব সয়, ডিজেল খেলেও যেন তার কিছু হবে না, তাই সেই থেকে ডিজেল। ডিজেল বাবার বড় বিজনেস, সভাবতই নেশার বেশিরভাগ টাকা আসত তার পকেট থেকে। বুলেট: সাইজে একটু ছোটখাটো, পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে নেশার বস্তু পাচার করার মধ্যে তার কোন জুরি নাই। তাই এই দুইয়ের কম্বিনেশনে নাম হয়ে গিয়েছিলো বুলেট। প্রথম নেশার রাস্তা দেখাই আমি মেকগাইভার। ( শয়তানি বা দুই নং বুদ্ধিতে আমার কোন জুরি ছিলোনা তাই আমার এই নাম টা হয়। )। আমি এক কাজিনের একটা ফার্মাসিতে পার্ট টাইম জব পাই সেখান থেকেই পরিচিত হই বিভিন্ন নেশা করার ঘুমের অষুধের সাথে। কিছু কিনে কিছু চুরি করে তিন জন এর সাথে ভাগ করে কিছুদিন নেশা করলাম। কিছুদিনের মধ্যেই ফেনসিডিল থেরাপি শুরু হয়ে গেল। দিন কাটে, সাথে সাথে এগুলাও বোরিং হয়ে উঠে। তারপর বুলেট কোথা থেকে যেন একটা খবর আনলো যে একটা নতুন জিনিশ এর খোজ পাইছে। একটা ছেলেকে ৩০০ টাকা দিলেই পাওয়া যাবে হিরোইনের সিরিন্জ। তখন তিনশো টাকা জোগার করতে দুই দিন লাগলো। সিরিন্জ পাবার পর গেলাম আমাদের নেশার আস্তানায়, একটা বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশন কাজ থেমে ছিলো সেটার সাত তালায়। ছেলেটা সাহায্য করলো পুশ করতে, তারপর যে কি একটা খিচুনি আসলো শরিরে, পরে ঘুম। তারপর দেখলাম ৩০০ টাকার একটা লম্বা জাগরিত সপ্ন।

ব্যাস সেখান থেকে নেশার সিরি লাফ দিয়ে উঠতে থাকলাম। টাকার জন্য ডিজেল শুরু করলো প্রথমে মার কাছ থেকে টাকা চাওয়া, পরে চুরি , পরে ঘরের জিনিশ বিক্রি করা। বুলেট শুরু করলো জিনিশ পাচার করার রমরমা ব্যবসা। আমার ভোলাভালা চেহারা জন্য এক বছরেই খুব সহজেই বানিয়ে ফেললাম চোরাই মাল আর নেশার মালের ছোটখাটো নেটওয়ার্ক। মুলধন দেয় ডিজেল, বুলেট আনে সাপ্লাই আর আমি নেটওয়ার্কিং। টাকা, নেটওয়ার্ক আর সহজ সাপ্লাইয়ের জন্য প্রচুর টাকা আসতে লাগলো পকেটে। আর তার সবই শেষ করতে লাগলাম নেশায়। হেরোইন তখন এক্কেবারে ডাইলভাত। ফেনসি, বিদেশি মদ, পেথেডিন ছিলো ফেভারেট। এমনকি শেষের দিকে কোকেইন এর মতন দামি নেশা হয়ে গেলো আমাদের নিয়মিত ড্রাগস।

কলেজের পরে শুরু হলো আসল সমস্যা। তিন জনই কিভাবে যেন ভালো রেজাল্ট করে ফেললাম। অবশ্য এটার জন্য একটা ড্রাগ ( রিটালিন ) ইউজ করছিলাম পরিক্ষা গুলোর আগ দিয়া। ভর্তি হলাম প্রাইভেটে। এক বছর না যেতেই আমি ছারা বাকি দুইজনই ধরা খেলো বাসায়। এক সময় হঠৎ পকেট খালি হয়ে ছিলো। তিন জন মিলে বুলেটের বাসায় বসে চিন্তা করছি কি করা যায়। নেশার নিড তখন তিব্র। বুলেটের বাবা সাধারন চাকরি করে। ঘরে দামি কিছু নাই যে বিক্রি করা যাবে। আমার হঠাৎ চোখ পরল বুলেটের ঘরের নতুন সিলিং ফ্যানের দিকে। সেটা আমি আর ডিজেল খুলে নিয়ে বিক্রি করে আসলাম। বুলেট আমতা আমতা করলেও তার নিজের প্রয়োজনেই তেমন একটা বাধা দিলো না। বাসায় ফিরে পরে বুলেট দেখে যে সে ধরা খাইছে। ডিজেলের বাসায় খবর চলে যায় সেই রাতেই। আমার বাসায় বাবা নাই, শুধু বড় ভাই অনেকদিন ধরেই অনুমান করতে পারলেও প্রমান না থাকায় মাকে কিছু বলে নাই। তার‌ উপর থাকি চাচার বাসায়। এই ঘটনা ফাস হলে আমার সাথে সাথে মা ভাইকেও বাসা ছারতে হতে পারে। কারন ইতিমধ্যে চাচার টিভি চুরি করেছে ডিজেল। চাচির মনে আগে থেকেই সন্দেহ যে এটা একটা ইনসাইড জব।

ডিজেল আর বুলেট এর মা বাবা আমাকে বাসায় ডেকে সব জানতে চাইলো। কারন তাদের ধারনা আমি ভদ্র ছেলে, আমার দারা এসব কোন মতেই সম্ভব নয়। আমি তাদের কাছে প্রমিজ করলাম যে এরপর থেকে যদি ওরা নেশা করে তাহলে আমি তাদের কে বলবো। আমি এই সুযোগে ডিজেলের বাবাকে বুঝালাম যে আমরা ব্যাবসা করতে চাই। একমাত্র আমারা দেয়া গেরান্টিতে টাকা দিতে রাজি হলো তবে এক সর্তে যে টাকা পয়সার হিসাব থাকবে আমার কাছে। পড়াশুনা ছেরে ডিজেলের বাবার সাহায্যে ছোটখাটো ইন্টেনডিংয়ের ব্যাবসায় ঢুকে পরলাম তিন বন্ধু। কিছুদিন খুব ভালো কাটলো। ব্যাবসায় ঢুকে বুঝতে পারলাম যে এখানে দুই নাম্বারি করা আসলে লিগ্যাল। ব্যাস খুব চটিয়ে ব্যাবসা করতে শুরু করলাম। তবে নেশা ছারলাম না। একটু লিমিট করলাম এই যা।

দুঃসপ্নের সেই বিকেল:

ঈদের ছুটির কারনে অফিস বন্ধ। অনেক দিন পর পুশ করবো প্লাস সকাল থেকেই একটু নেশার মধ্যে ছিলাম তাই খুব অসাবধান হয়ে পরলাম। ডিজেলের বাসার ছাদেই আয়োজন শুরু করলাম, ছাদের তালা মারার সময় বুলেট ভুল করে চাবি সেখানেই রেখে দিলো। ডিজেলের মা ছাদে হঠাৎ করে উঠে আসে চা-নাস্তা নিয়ে। সেই সময়ের সিন এখনো লিখতে গিয়ে আমার গা এখনো সিউরিয়ে উঠে। জিন্স আধা নামিয়ে পুশ করার সময় দেখি আন্টি !!!!!!! হাতের চা পরে পুরে যায় আন্টির ডান হাত সাথে সাথে।

সেই দিন সারদিন কিভাবে কেটেছিলো আমার ঠিক মনেও নাই। ডিজেল আর বুলেট তখনও শুরু করে নাই, তারা আমাকে ধরে পালিয়ে আসে আমার বাসায়। আমার বাসা তখন খালি। সবাই ঈদের ছুটিতে গেছে মফস্বলের দাদার বাসায়।

দরজা বাইরে থেকে লক করে ভিতরে থাকলাম ৩ দিন যাতে ডিজেল আর বুলেটের বাসার লোকজন এসে কাউকে না পেয়ে চলে যায়। ঠিক করলাম বাসার সবাই ফিরে আসার আগেই ১৪ দিনের মধ্যে দেশ ছারবো। ফ্যামিলিকে মুখ দেখাতো পারবো না কোন মতেই।

প্রবাসে আসার গল্প:

তিন জন মিলে ব্যবসার মুলধন থেকে জোগার করলাম মোট ৫ লাখ টাকা। ইন্টেনডিং ব্যাবসার সুযোগে কিছু পাসপোর্ট দালাল আর বিদেশে লোক পাঠানোর দালালের নেটওয়ার্ক খুব ভালো করেই পরিচয় ছিলো। কিন্তু ৫ লাখ টাকায় ইউরোপ, আমেরিকা ব জাপান কোথাও একজনের পক্ষেও যাওয়া যাবে না, তিনজন তো দুরের কথা। মালেশিয়া বা মিডেল ইস্টে যাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমার টার্গেট যে দেশে গিয়ে মাসে লাখ টাকা ইনকাম করা যাবে সেই দেশে যাবো। খবর পেলাম যে পাচ লাখ টাকায় ইমার্জেনসি নোটিশে অরিজিন্যাল টুরিস্ট ভিসায় যাওয়া যাবে তুরস্ক। সেখান থেকে নাকি বর্ডার পার হয়ে ই্উরোপে ঢোকা যায়। ম্যাপ স্টাডি করে বুঝে নিলাম ব্যাপারটা পসিবেল। ৩ দিনের মধ্যে ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট/ টিকেট বানালাম ( সবই আমার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে)। ভিসা হতে ঠিক দুই সপ্তাহ লাগবে আর বাসার লোকজন আসবে আরো এক সপ্তাহ পরে। বাসার লোক আসার আগেই বাসা ছারলাম। গিয়ে উঠলাম এক বস্তিতে, কারন হাতের সব টাকা দালালের কাছে, ৫০০ ডলার করে রেখেছি যেটাকে ভাংগানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে শুনতে পেলাম ডিজেলের বাবা আমার আর বুলেটের নামে অপহরনের কেস করার প্লেন করছে। বুলেটের বাপ তাকে অনেকটা তাজ্য পুত্র ঘোষনা করে ফেলেছে। আমার বাসার ঘটনা উল্লেখ করার মতন নয়। বড় ভাই মাকে নিয়ে আলাদা ফ্লাটে চলে যাবে বলে শুনলাম। দালাল আমাদের সিচুয়েশন আচ করতে পেরে আরো এক লাখ টাকা দাবি করলো ফ্লাইটের ৩ দিন আগে। বিজনেস পার্টনারদের কাছ থেকে সেই এক লাখ টাকাও লোন করলাম আমার সাদা সিদা চেহারার বদৌলতে।

টাকা এয়ারপোর্টে সেই টাকা দালালের কাছে দেবার পরই সে আমাদেরকে পাসপোর্ট দেয় যাতে উল্টা পাল্টা কিছু না করতে পারি। এয়ারপোর্টে ঢুকতে যাবার সময় দেখি ডিজেলের বাবার মাইক্রো দারিয়ে আছে। আমার ভাই, বুলেট আর ডিজেলের বাবা ভেতরে বসা। উদ্দেশ্য আমাদের আটকাবে। তবে আমাদের সন্দেহ যে মায়া করে ঘরে নিয়ে যাবার জন্য নয়, স্পট মার্ডার করার জন্যই তারা আসছে। পরে জানতে পারি যে দালাল তাদের কাছ থেকে এক্সট্রা টাকা হাতিয়ে নেবার জন্য তাদের কে খবর দিয়ে এয়ারপোর্টে আনে। আমরা যখন ইমিগ্রেশন পার করি তখন তদের কাছ থেকে আরো ৩০ হাজার টাকা দাবি করে, তবে সেই টাকা দেয়া তো দুরের কথা ডিজেলের বাপ সেই দালাল কে উল্টো পুলিশে ধরিয়ে দেয়।

ইউরোপে ঢুকলাম যেভাবে:

তুরস্ক আসার পর একে বারেই গভির পানির মাঝখানে যেয়ে পরি। আমার নেটওয়ার্কের লোক যে তুরস্ক থাকে তার বাসায় যেয়ে দেখি সে সেখানে আসলে থাকে না। আমার নেটওয়ার্কের দৌর এই পর্যন্তই। সেখানকার বাংগালিদের কাছ থেকে অড জবের সুযোগ পেলাম ইস্তানবুলের এক কাচা বাজারে। এমনেতেই ইলিগ্যাল জব তাই যা বেতন দেয় সেটা মিডেল ইস্টের লেবার থেকেও কম। আগে থেকেই জানতাম এবং এখনে এসে বুঝলাম যে ইস্তানবুল হলো ই্উরোপের বর্ডার পার হবার পথ। ট্রাকে লুকিয়ে বা বোটে করে পার হওয়া যায় গ্রিসের বর্ডার। এক মাস পরেই প্রথম সুযোগ এলো। ট্রাকে করে পার করে নিয়ে যাবে গ্রিস। চার্জ ৫০০ ডলার পার পার্সন। প্রথম মাসের বেতন প্লাস গ্রিসে ঢুকে বাকি টাকা দিবো এই ডিল করে রাজি হলো দালাল। গভির রাতে ট্রাকের সামনে যেয়ে দেখি দুই ট্রাকে যাওয়ার জন্য দারিয়ে আছে ৪০ জন মানূষ। বেশি ভাগই চাইনিজ ইরানিয়ান আর পাকিস্তানি। বাংগালি আছে আরো দুইজন, ইদ্রিস আর পিন্টু দুই ভাই। আমি, ডিজেল এক ট্রাকে আর বুলেট, ইদ্রিস, পিন্টু উঠলো আরেক ট্রাকে। ভোর রাতে ট্রাক রওনা দিলো। সারাদিন ট্রাকের ভিতরে বসে সবার নাভিশ্বাস উঠার মতন অবস্থা। তার পরের দিন রাতে হঠাৎ ট্রাক থেমে গেলো। ড্রাইভার ট্রাকের পেছনের দর্জা বন্ধ করেই পালিয়ে গেলো। ট্রাক তখন গ্রিসের বর্ডার পার হয়ে গেছে অলরেডি।

কিন্তু ট্রাকের গেট বন্ধ থাকার কারনে কেউ বের হতে পারলাম না। আধা ঘন্টা আতংকিত বসে থাকার পর দরজা খুলে দিলো গ্রিসের পুলিশ। নেমে দেখি গভির রাত। অনেক গুলো পুলিশের গাড়ি আর ট্রাক পেছনে। সামনে দেখি বুলেটের ট্রাক পথের পাশে এক্সিডেন্ট করে পারে আছে, ভেতর থেকে এক ডজন লাশ বের করছে পুলিশ। আমাদের রক্ত হিম হয়ে গেল সেই দৃশ্য দেখে। ডিজেল দৌরে ছুটে যেতে চাইলো কিন্তু পুলিশ ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো তাকে। ডিজেলের হাটুতে আগে থেকেই একটু সমস্যা ছিলো সেই ধাক্কা খেয়ে সেভাবেই পরে রইলো হাটু চেপে ধরে। পুলিশ আমাদের সবাইকে পুলিশের ট্রাকে উঠাতে শুরু করলো। উঠে দেখি সেখানে বুলেট বসে কানতাছে। পিন্টু আর ইদ্রিস বসে আছে কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নাই। পরে তাদের মুখে শুনি যে এক্সিডেন্ট হবার পর কি এক ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়েছিলো ট্রাকের ভেতরে। আমাদের পরিচিত এক পাকিস্তানি যার মাধ্যমে আমরা দালালের খবর পাই মারা যায় সেই ট্রাকে।

পুলিশ আমদেরকে ট্রাকে করে আবার তুরস্ক বর্ডারে পুশ ইন করে, কিন্তু ডিজেলকে নিয়ে যায় বাকি আহতদের সাথে গ্রিসের হাসপাতালে। সেখান থেকে ডিজেল পালিয়ে চলে যায় এথেন্স।

এই ঘটনার পর বুলেট পুরোপুরি ভেংগে পরে মানসিক ভাবে। এমনেতেই হাতে টাকা নাই, তাই ঠিক করে দেশে ফিরে যাবার। ডিজেল এক মাস পর এথেন্স থেকে জানায় যে গ্রিসে অবৌধ বসবাসকারিদের কে পেপারস দিচ্ছে, কিন্তু পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে আর দুই মাসের মধ্যে স্বশরিরে হাজির হতে হবে গ্রিসের পুলিশের কাছে। আমি তুরস্ক থেকেই আমার পাসপোর্ট পাঠিয়ে দেই ডিজেলের কাছে। পিন্টু আর ইদ্রিস খোজ পায় এক স্মাগলার চক্রের তারা ড্রাগস আর ইলিগ্যাল দের বোটে করে তুরস্কের এক ফিশার ভিলেজ থেকে গ্রিসের একটি টুরিস্ট আই ল্যান্ডে নিয়ে যায়। । কিন্তু টাকা যা দরকার সেটা নেই হাতে কারন আমি এই মাসে কোন জব করতে পারি নাই। বুলেট আমাকে তার বেতনের টাকা থেকে ৫০০ ডলার দিয়ে দেয়। সে ফাইনাল ডিসিশেন নিয়ে নিছে যে দেশে চলে যাবে। কিছুতেই ওকে আর রাজি করাতে পারলাম না।

আমি একাই রওনা দিলাম বোটে করে গ্রিসের উদ্দেশ্যে। সাথে ইদ্রিস আর পিন্টু। তিন টা ছোট রাবারের বোটে করে মোট তিরিশ জন রওনা দিলাম রাতে।বোটের মাঝখানে কয়েকটা পোটলার মতন করে রাখা প্লাসটিকের ব্যাগ। তার ভেতরে কি আছে সেটা আমার অনুমান করে নিতে কষ্ট হলো না।

গ্রিসের আইল্যান্ডের কাছা কাছি আসতেই আমাদের দেখে ফেলে গ্রিসের কোস্ট গার্ডের স্পিড বোট। দুইটা স্পিড বোট করে গ্রিসের পুলিশ যখন আমাদের রাবার বোটের কাছে আসে তখন আমাদের বোটের কিছু চাইনিজ প্যানিক করে উঠে। কয়েকজন লাফ দেয় পানিতে। হুরো হুরি আর পুলিশের স্পিড বোটের ধাক্কায় ইদ্রিস আর আর পিন্টু সহ আরো কয়েকজন পানিতে পরে যায়। দুইভাই একসাথে আমার নাম ধরে " বাচান ভাই আমারে বাচান" বলতে বলতে চোখের নিমিষে তলিয়ে যায় ঠান্ডা সাগরের পানির অতলে। আমি নিজেও সাতার পারি না। তাই অসহায়ের মতন তাকিয়ে থাকা ছারা আমার আর কোন উপায় ছিলো না। আমাদের রাবার বোটের আরো পাচ জন মারা যায় তখন। বাকি তিন জন কে পুলিশের বোটে উঠিয়ে নেয়। আমি সহ বাকি দুইজন কে গ্রিসের মেইন ল্যান্ডে নাওয়ার পর পুলিশ স্টেষন না নিয়ে নিরব একটি রাস্তায় ছেরে দেয়। আমার এখনো সন্দেহ যে পুলিশের সাথে সেই স্মাগলারদের কারসাজি ছিলো।

ছারা পাওয়ার পর সাথে সাথে ডিজেলকে ফোন করি। রাত তখন দুইটা কি তিনটা, ফোন রাখার পরেই সে রওনা দেয়। সারা রাত একটা বাস স্ট্যান্ড এ বসে ছিলাম। অনেক কষ্টের পর শেষ পর্যন্ত ইউরোপের বর্ডারে ঢুকলাম সেটা রিয়েলাইজ করতে পারলেও আমি সারা রাত ধরে চিন্তা করছিলাম ইদ্রিস আর পিন্টুর কথা। কিভাবে আমি তাদের খবর তাদের ফ্যামিলিকে যানাবো ? ওরা দুই জন বাংলাদেশের একটা পরিচিত এবং সম্মানিত ফ্যামিলির ছেলে ছিলো। দেশে কিছু করতে পারছিলোনা তাই ইউরোপে আসার চেষ্টা। দুই ছেলের একসাথে মৃত্যুর খবর আমি কিভাবে তাদের বাপ মাকে জানাবো? ফোন ধরে কি বলবো? আমিও বা কে? আমাকে তো তারা কেউ চেনেও না। সম্পূর্ন অপরিচিত মানূষের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করবে কিভাবে? কোন অফিসিয়াল ডকুমেন্টস ও নাই। লাশের দেখাও কখনো পাবে না।

পরের দিন বিকালে ডিজেল আসলো আমাকে নিতে। ওকে দেখার সাথে সাথে মন থেকে সব ডিপ্রেসিভ চিন্তা ভাবনা চলে গেলো। মনের মধ্যে জোর ফোরে আসলো যে আমরা লাইফে সাক্সেস হবার জন্য যে যুদ্ধে নামছি সেটাতে জিতবই।

( টিপস: এখনো এইভাবে তুরস্ক থেকে গ্রিসে ঢোকা সম্ভব। তবে বোট থেকে নাকি ট্রাকে আসাটাই সবচাইতে বেশি গ্যারান্টি থাকে। তবে তুরস্কের কিছু মানূষ আসে বন জংগল দিয়ে বর্ডার পার হয়ে। তবে সেটার জন্য মাফিয়া ধরনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আসতে হয়। ছিটখাটো স্মাগলারদের সেই কানেকশনটা নেই। )

ইউরোপে কাগজ যেভাবে করলাম:

গ্রিসে পেপারস হতে তেমন একটা অসুবিধা হলো না। দরকারি কাগজপত্র সব বুলেট দেশ থেকে পাঠিয়ে দিলো। তবে গ্রিসের কাগজ হবার পর বুঝলাম যে এটা আসলে কামলা খাটার কন্ট্রাক্ট। ইউরোপের কয়েকটা দেশে যেমন ইটালি, গ্রিস, স্পেইন আর পর্তুগালে কিছু দিন পর পরই এখানকার ইলিগ্যালদেরকে সাময়িক একটা কার্ড দেয় যাতে তারা লিগ্যালি কাজ করতে পারে। এসব দেশে অড জব অর্থাৎ কামলা খাটার জন্য লেবার পাওয়ারের দরকার। বলা বাহুল্য গ্রিসের বার্থ রেইট মাত্র ১,৩। যার অর্থ এ্ চলতে থাকে তাহলে এই দেশের জনসংখ্যা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।

( টিপস: আপাতত এরকম কার্ড/ থাকার পেপারের সুজোগ শুধুমাত্র পর্তুগালে দেয়া হচ্ছে। কম খরচে লিগ্যালি কার্ড করার পথ এখন নাকি শুধু সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে। )

তিনমাস গ্রিসে থাকার পর বুঝলাম যে এখানে পাসপোর্ট বা গ্রিন কার্ড করতে আরো পাচ থেকে দশ বছর লেগে যাবে। সবচাইতে বড় কথা হলো যে এখানে মাসিক বেতন যা পাওয়া যায় সেটাতে থাকা খাওয়া বাদ দিয়ে হাতে ২০০-৩০০ ইউরো থাকে। এই বেতনের আশা করে আমি দেশ ছারি নাই। বুলেট আর আমি টার্গেট করলাম ইংল্যান্ড যাবো। তবে এটাও বুঝতে পারলাম যে সেই চেষ্টা করলে গ্রিসের পেপারসের মায়া ছারতে হবে, অনেকের জন্যে এটাই আকাশের চাদের মতন। আপাতত যেই পেপার গ্রিস সরকার আমাদের দিছে সেটা দিয়ে গ্রিসের বাইরে যাওয়া যাবে না। যদি লুকানো পথে গ্রিসের ববাইরে যাবার পর ধরা পরি তাহলে দেশে ফেরত পাঠানোর রিস্ক আছে। আর ইংল্যান্ড এ যেয়ে পেপারস করা নাকি আরো কঠিন ব্যাপার।

( টিপস : বর্তমানে গ্রিসে কোন পেপার দেয়া হয়না। গ্রিসের নিজস্ব লোকদেরই এখন অনেকটা ফকিরের মতন অবস্থা। এজাইল সিকার দের ক্যাম্পে নাকি এখন গ্রিসের গরিবদেরকে শেল্টার দেয়া হচ্ছে। গ্রিসের যত বাংগালি আছে তারা হয় দেশে ফেরত যাচ্ছে বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। যারা এখনো গ্রিসে আছে তারা তারা কোনমতে কাজ করে নিজের থাকা আর খাওয়ার খরচ করে বেচে আছে। দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। )

তারপরেও দুইজন মিলে ঠিক করলাম যে দেশ যখন ছারছি তখন এর শেষ দেখে নিতে চাই। দেশে যোগাযোগ করে চেষ্টা করলাম টাকা যোগার করার কিন্তু লাভ হলো না। আমাদের ওপর থেকে সবার বিশ্বাস পুরোদমেই উঠে গেছে। চার মাসে গ্রিসে কাজ করে দুইজনের জমানো ২০০০ হাজার ইউরো। এই টাকা দিয়ে কোনমতে ইংল্যান্ড যাওয়া সম্ভব। কিভাবে যাবো সেটার তথ্য যোগার করলাম। গ্রিসের সাথে যেসব দেশের বর্ডার আছে সেসব দেশ ই, ইউ এর অন্তরগুক্ত নয় ( সেই সময় ) । সুতরাং বর্ডার চেক আছে। ফেরিতে ইটালি যাওয়া যায় তবে বিদেশি চেহারা দেখলে প্রায়ই পেপারস চেক করে পুলিশ। ইটালি থেক ফ্রান্সে কোন বর্ডার চেক নাই। ফ্রান্সের ক্যালে থেকে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ইংল্যান্ড এর ডোভারে যাওয়া যায়। যেতে হয় লরির ভেতরে লুকিয়ে। সেখানেও দালাল চক্র আছে। ইটালি চলে যেতে কষ্ট হলো না। ফেরিতে চেক হলো না কোন তবে ইটালির ফেরি ঘাটে নামার পর চেক পোস্ট বাই পাস করে পার হবার জন্য ঘুষ দিতেই চলে গেল ২০০ ইউরো। ফ্রান্সের প্যারিসে আসতে আসতেই সব টাকা শেষ হয়ে গেল। এখানে খবর পেলাম যে ক্যালে থেকে ডোভার পার হতে দুইজনের মিনিমাম ১০০০ ইউরো লাগবে। তবে কিছু বাংগালি এডভাইস করলো যে প্যারিসেই থেকে যেতে। এখানে পলিটিক্যাল এজাইল হিসাবে থেকে ইলিগ্যাল কাজ করে যা টাকা পাওয়া যাবে সেটা ইংল্যান্ড থেকে বেশি।আর কাজ করে ৪-৫ হাজার ইউরো যোগার করতে পারলে বিভিন্ন উপায়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স এর কার্ড বানানো সম্ভব। অনেকেই পেপার মেরেজ করে বা বাংগালি রেস্টুরেন্ট এ কুক এর কন্ট্রানক্ট দেখিয়ে রেসিডেন্ট পারমিট করে। পলিটিক্যাল এজাইলে খুব বেশি হলে দুই তিন বছর থাকা যায় কিন্তু এই প্রসেসে আজকাল নাকি কেউ রেসিডেন্ট পারমিট পায় না। তো ঠিক করলাম পলিটিক্যাল এজাইল করে ফ্রান্সেই চেষ্টা করবো। বুলেট বাংলাদেশ থেকে দরকারি কগজ পাঠালো। আওয়ামি লীগের কর্মি আমরা, আর তাই দেশে সরকার আমাদের উপর রাজনৌতিক অত্যাচার করে তাই পালিয়ে এসেছি। এরকম একটা গল্প বানিয়ে কেস রেডিও করে ফেললাম। প্যারিসে দুইমাস থাকার পর জানতে পারলাম যে ঠিক এরকম পদ্ধতিতে জার্মানিতে চেষ্টা করলে সবচাইতে ভালো হবে কারন জার্মানিতে বেতন ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আর জব পাওয়া যায় সহজেই।

( টিপস: ইউরোপের যেকোন দেশে গেলেই বাংগালি সোসাইটি পাওয়া যাবে এবং বেশিরভাগ বাংগালিরাই ভালো বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে অনেক চিটার লোক ও আছে। এর জন্য উচিৎ একজনের কাছ থেকে বুদ্ধি না নিয়ে দশ জনের কাছ থেকে ইনফরমেশন নেওয়া। )

তাই শেষ পর্যন্ত জার্মানিতে চলে গেলাম ফ্রান্সে তিন মাস থাকার পর। এখানে এসে প্ল্যান মত এজাইল এপ্লাই করলাম। জার্মানিতে দুই বছর একটা বাংগালি রেস্টুরেন্টে কাজ করে সেই রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে কন্ট্রাক্ট করলাম যে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সে আমাদেরকে কাজের কন্ট্রাক্ট দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স করে দিবে। আমি আর বুলেট টোটাল ২০ হাজার ইউরো মালিকের হাতে তুলে দিলাম। মালিক আমাদের সাথে ঠকবাজি করার চেষ্টা করেছিলো একটু কিন্তু সেটা সময় মত ধরতে পারলাম বলে সে আর উল্টা পাল্টা কিছু করলো না। ৬ মাসের মধ্যে জার্মানির রেসিডেন্ট পারমিট হাতে এসে গেলো।

( টিপস: এরকম কাজের মাধ্যমে ইউরোপের সব দেশেই পার্মানেন্ট পেপার রেডি করা সম্ভব তবে এখানেও অনেক চিটার মালিক আছে। এরজন্য উচিৎ যখন নাকি মালিকের সাথে মৈখিক ডিল করবেন তখন গোপনে মোবাইলের মাধ্যমে কথা বা ভিডিও রেকর্ড করে রাখা বা অন্যান্য বাংগালি কে উয়িটনেস হুসাবে রাখা। যদি মালিক পরে চিট করার ট্রাই করে তখন এই রেকর্ড পুলিশ কে দেখালে মালিকের সমস্যা হবে বেশি।



বুলেট কে যেভাবে জার্মানিতে নিয়ে আসলাম:

কিছুদিন আগে আমার পাসপোর্ট বানানোর সময় আমার ছবির বদলে দেই বুলেটের ছবি, যেখানে আমাকে আর ওকে প্রায় একি রকম দেখতে লাগে এরকম করে চুল, চোখের লেন্স আর মেক আপ করে। তারপর সেই পাসপোর্ট নিয়ে ডিজেল যায় বাংলাদেশে। সেখানে সেই পাসপোর্টে এয়ারপোর্টের এরাইভাল আর ডিপার্চার সিল নকল করে মারে দালালের মাধ্যমে।
আসার সময় ডিজেল বুলেট কে সাথে করে নিয়ে আসে। যেহেতু পাসপোর্ট অরিজিন্যাল আর পাসপোর্টে বুলেটের ছবি তাই তাকে কোথাও কোন প্রশ্নের মুখো মুখি হতে হয়না।

এখানে আসার পর আমার পাসপোর্ট লস্ট রিপোর্ট করি আর নতুন পাসপোর্ট এপ্লাই করার সময় আমার নিজের ছবি দেই। ( ডিজেল টা্উন হল অফিসের এক মেয়েকে পটানোর ফলে কাজটা আরো সহজ হয় ) কিন্তু তারপরেও পুরো ব্যাপারটা চরম রিস্কের। তবে ধরা পরলে খুব বেশি হলে আমার জরিমানা হত। জার্মানি ছেরে চলে যেতে হত না। আর আমার রক্তের বন্ধু জন্য এই সামান্য কাজটা কোন ব্যাপারই ছিলোনা।


বুলাট কে প্রথমে পলিটিক্যাল কেসের মাধ্যমে টেম্পরারি কাগজ করার পর কিছুদিন পরে আমাদের মেয়ে কলিগ প্লাস বন্ধুর সাথে তার খাতির করিয়ে দেই। আপাতত তাদের মধ্যে খুব দহরম মহরম ভাবে সংসার চলতাছে।

( টিপস: ইউরোপের যেকোন দেশের মেয়ে ( বা ছেলেকে ) বিয়ে করলে সে দেশের পাসপোর্ট পাওয়া যায় ৩- ৫ বছর পরে। ৫-৬ বছর আগে বেশিরভাগ পেপারস মেরেজ হত অর্থাৎ......... মেয়ের সাথে ডিল থাকতো যে শুধু পেপারে বিয়ে হবে বাট বাস্তবে কোন রিলেশন থাকবে না। এর বদলে মেয়েটাকে ১০ - ১৫ হাজার ইউরো দিতে হবে। এখন এটা খুব কম হয় কারন বিয়ের আগে আর পরে পুলিশ কন্ট্রোল হয় যেটাতে ধরা পরলে অনেক সমস্যা হয় দুই জনেরই। বর্তমানে বেশিরভাগ বাংগালিরা অরিজিনাল রিলেশন করে বিয়ে করে। তবে আমার এক্সপেরিয়েন্সে দেখেছি যে কোন একটা কারোনে এসব বিয়ে ১০ বচরের বেশি টিকে না। অনেকে আবার চিট করে বিয়ে করে অর্থাৎ মেয়েকে বলে যে সে তাকে ভালোবাসে কিন্তু পাসপোর্ট হবার পরপরই তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় যা নাকি অনেক ঘৃনিত এবং জঘন্য একটি ব্যাপার। তবে আমরা তিন বন্ধুর কারোরই দেশে ফিরে জাবার প্ল্যান নেই তাই বুলেটের মতন আমরাও এই দেশেই বিয়ে করবো বলে চিন্তা ভাবনা আছে। )
--------------------------------------





সর্বশেষ:

বাই দা ওয়ে ডিজেলের ছাদে সেই দুঃসপ্নের বিকেলটাই ছিলো আমাদের তিনজনের ড্রাগস নেয়ার শেষ দিন।

পরে বিদেশে এসেও কোন দিন ড্রাগ্স ছুয়ে দেখেনাই এই ডিজেল, বুলেট আর মেকগাইভার।

এক্স এডিক্টেড হিসেবে ড্রাগ্স এডিক্টেডদের কে বলবো আপনারা জীবন যুদ্ধে নেমে পরেন।
আসলে জীবন যুদ্ধ ড্রাগস থেকে অনেক বেশি এক্সাইটিং।

সমাপ্তি


( ছবিতে গ্রিসের কোস্ট গার্ড ইলিগ্যাল বর্ডার ক্রসারদের কে আটক করছে । ঠিক অনেকটা এভাবেই আমরাও ধরা পরি, তবে বোট টা ছিলো আরো ছোট এবং সেটা ছিলো রাতের বেলা)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৮:১৮
১০১টি মন্তব্য ৬৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×