somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুর্শিদাবাদের কাঠগোলা বাগান

২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তারা ছিলেন চার ভাই, লক্ষীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ ও ধনপৎ। কোথাও কোথাও পাওয়া যায়, তারা বর্গি-দস্যু ছিলেন, আবার কোনো বর্ণনা মতে তারা ছিলেন ব্যবসায়ী। যাই হোক, এই চার ভাই জগৎশেঠের সহযোগিতায় তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে ১২শ টাকায় ৩২ বিঘার এই বাগানটি কিনে নেন মন্দির নির্মাণের জন্য।
জানা যায়, এই চার ভাই কাঠ ও বহু মূল্যবান মণি-মুক্তার ব্যবসা করতেন। আবার কেউ বলে, তাদের কাঠের গোলা বা গুদাম ছিলো— সেই থেকে কাঠগোলা নাম হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, চারপাশে যে কাঠগোলাপের বাগান রয়েছে, সেখান থেকেই কাঠগোলা নামকরণ হয়েছে। তবে, এখানকার গোলাপের জুড়ি মেলা ভার। তবে আমি ওখানে গোলাপ বাগান পেলেও কোন কাঠ গোলাপ দেখিনি।


(২) এটা কাঠগোলা বাগানের প্রধান ফটক।


(৩) প্রধান ফটক দিয়ে কাঠগোলা বাগানের পথে ঢুকলেই চোখে পড়বে দুইপাশে সারিবদ্ধ দেবদারু তার পরই সুপ্রশস্ত এবং পরিচ্ছন্ন আম বাগান। এ আম বাগানকে পেছনে ফেলে বেশ খানিকটা পথ এগুলেই আরেকটি গেট। ও ই গেইট পেরোতে হলে ২০ টাকার টিকেট লাগে।


(৪) টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়েই ঢুকে গেলাম এই প্রাচীন কাঠগোলা বাগান বা কাঠগোলা প্রাসাদে।


(৫) বিশাল প্রাসাদ ছাড়াও এখানে বাগান, প্রাচীন সংগ্রহশালা, চিড়িয়াখানা, গোপন সুরঙ্গপথ, আদিনাথ মন্দির, শ্বেত পাথরে বাঁধানো পুকুর, জলসাঘর ইত্যাদি থাকায় কাঠগোলা বাগান পর্যটকদের কাছে সত্যিই অনন্য।


(৬) প্রাসাদের কাছে যেতেই চমৎকার একটা পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। এতো চমৎকার এবং নানা রকম ডাক একটা পাখি ডাকতে পারে সেটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বাম দিকে হাটতে থাকলাম পাখির ডাক অনুসরণ করে, এক সময় ওকে পেলাম একটা গাছের পাতার ভেতরে। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের কমলা বউ পাখির মতো। কমলা বউ পাখির ডাক অবশ্য আমি কখনো শুনিনি। এই পাখির ডাক শুনার জন্য আরো অনেক বার ওখানে যেতেও আমার আপত্তি নাই।


(৭) ভেতরে আরো একটা চমৎকার গেইট রয়েছে। এই গেইটের ভেতরে রয়েছে একটা প্রাচীন ইদারা আর গুপ্ত পথ। আমার ভ্রমণ সঙ্গী মনা ভাই, সেই গেইটে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে।


(৮) এই সেই ইদারা, উপর থেকে ইদারায় ঝুলছে একটা শেকল আর মোটা রশি। ওগুলো মাথায় কি বাধা আছে জানা হয়নি।


(৯) আর এটা হলো গুপ্ত পথ। কথিত আছে এই গুপ্তপথ ভাগীরথী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এই প্রাসাদ থেকে দুই কিলোমিটার দূরেই জগৎশেঠের বাড়ি। জানা যায়, প্রাসাদের এ গুপ্ত পথ দিয়ে নাকি জগৎশেঠের বাড়িতেও যাওয়া যেতো। ইংরেজ বণিকরাও আসা যাওয়া করতেন জগৎশেঠের বাড়িতে। জগৎশেঠের সঙ্গে এই পরিবারের ছিলো দহরম-মহরম। পলাশী পরবর্তী অনেক হটকারী ঘটনারই সাক্ষী এ প্রাসাদ ও বাগানবাড়ি।


(১০/১১) পাখ পাখালিও এখানে দেখলাম ভালোই আছে।





(১২) এই বাগানের মাঝখানে রয়েছে একটি উচু মঞ্চ। এটি নাচঘর বা জলসাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মঞ্চটির চারদিকেই খোলা। চারদিকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখান থেকে বাগান ও প্রাসাদটিকে আরও ভালোভাবে দেখা যায়। কলকাতা, লখনৌ, দিল্লি থেকে নামকরা নর্তকীরা এখানে এসে শেঠজিদের মনোরঞ্জন করে নিজেদের ধন্য মনে করতেন। চারদিকে বাগান আর মাঝখানে জলসাঘর, নাচগান-আভিজাত্য ও রুচিবোধের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।


(১৩) ফুলে ফলে সাজছে করমচা গাছটি।


(১৪) জলসাঘর পার হয়ে একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে বিশাল গোলাপ বাগানের শেষে আদিনাথ মন্দির। কিছু সংস্কার কাজ চলছে এখন।


(১৫) মূল মন্দিরে যাওয়ার আগে রাস্তার ধারে রয়েছে আরো কিছু স্থাপনা আর দেব দেবীর মুর্তি।


(১৬) মন্দিরের প্রবেশ পথ।


(১৭) মন্দিরের দরজায় দাঁড়িয়ে আমি।


(১৮) একটা কাঠ বেড়ালী উঁকিঝুঁকি মেরে দেখছিল আমাদের।


(১৯/২০) কাঠগোলা প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে তোলা দুটি ছবি।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৬
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×