somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবতা খুম

২৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুই পাহাড়ের মাঝের দীর্ঘ হ্রদের/ খাদের/ জলা ধারকে বান্দরবানের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় খুম। আগে আমিয়াখুম, নাফাখুম, সাতভাই খুম আমার দেখা হয়েছে। বাদ ছিল নব আবিস্কৃত দেবতাখুম। এবার সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে দেরী করলাম না। টিম টিম নামক একটা ভ্রমণ গ্রুপের সাথে বেড়িয়ে পড়লাম একদিনের ট্যুরে। আমিয়াখুম আর নাফাখুমের একপাশে যেমন জলপ্রপাত রয়েছে এখানে তেমনটি নাই। সাতভাই খুমের সাথে এই দেবতা খুমের ভালো সামঞ্জস্য রয়েছে।

বান্দরবানে যতগুলো খুম দেখেছি তার সবগুলোকেই আমার মনে হচ্ছে স্বর্গের পথ। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। চারদিকে সুনসান নীরবতা, দুই পাশে সুউচ্চ পাথুরে পাহাড়, পাহাড়ের উপরে সবুজ বনানী। নিচে নীল চলমান পানি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝের ফাটলে সিপ্পি পাহাড় থেকে পানি নেমে এসে এইখানে জমে তৈরি হয়েছে দেবতা খুমের। প্রায় ৬০-১০০ ফুট গভীর এই খুমের দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট। সব থেকে কাছের গ্রামটার নাম শীলবান্ধা পাড়া। ছবির মতোই সুন্দর মারমাদের গ্রাম। এখানকার মানুষের কাছে এই দেবতা খুম একটি পবিত্র স্থান।


(২) বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে চান্দের গাড়ি নিয়া এমন স্বর্পিল পথে এগিয়ে যেতে হয় দেবতাখুমের পথে।


(৩) ওয়াগই গ্রামে এসে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সামনের দিকে আগাতে হয়। এখানে এসে পেয়ে গেলাম দেবতাখুমের আবিস্কারক পলাশ তঞ্চঙ্গ্যা কে। তাই একটা ছবি উঠিয়ে নিতে ভুল করলাম না।


(৪) পাহাড়ের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা সুন্দর পাকা রাস্তা ধরে আমরা এগিয়ে চললাম কচ্ছপতলীর দিকে। লিরাগাঁও আর্মিক্যাম্প থেকে ২য় বার গাইড সহ গিয়ে অনুমতি নিতে হবে দেবতা খুমের দিকে যাওয়ার জন্য জন্য। রাস্তার দুই পাশে প্রচুর সবুজ তামাক ক্ষেত।


(৫) কচ্ছপতলী বাজারে এসে চান্দের গাড়ির যাত্রা শেষ। বাজারের উল্টো পাশেই সেনা ক্যাম্প। ওখান থেকে অনুমতি নিয়েই শুরু হয় পায়ে হেটে পাহাড় কিংবা ঝিরি পথের দেবতাখুম যাত্রা।


(৬/৭) ঝিরি পথের এমন যাত্রাটা বেশ রোমাঞ্চকর। কখনো পিচ্ছিল উঁচু নিচু পথে ঝুকিপূর্ণ হাটা, কখনো ঝিরিতে পা, হাটু বা কোমড় অবদি পানি পাড়ি দেওয়া। তবে আার মতে পিচ্ছিল পথের চেয়ে পানিতে হাটাই ভালো, যদিও পানি গতি কমিয়ে দেয় আর পানির নিচের সব কিছু দেখা যায় না। এই ঝিরি পথ মূলত তারাসা খাল, এই তারাসা খালের উৎপত্তি হচ্ছে সিপ্পি আরসুয়াং পাহাড়, যা দেবতা খুম হয়ে এইদিকে এসে কচ্ছপতলী পার হয়ে সামনে দিকে চলে গেছে।




(৮) ক্লান্তি এসে যখন ভর করে তখন এমন লাল সবুজের পাহাড়ি ফুলগুলো পথিকের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।


(৯) পাহাড়িদের মাছ ধরা, ওরা ব্যাটারির সাহায্যে মাছকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে হাতের ছোট জালে তুলে আনে।


(১০/১১) ঘন্টা দেড়েক হাটার পর দেবতাখুমের সব থেকে কাছের মারমাদের গ্রামে পৌছি। গ্রামটার নাম শীলবান্ধা পাড়া, এখানকার মানুষগুলো সত্যিই অত্যন্ত চমৎকার হাসিখুশি এবং হেল্পফুল। আর গ্রামটাও প্রাকৃতিক পরিবেশে ছবির মতোই সুন্দর।




(১২) শীলবান্ধা পাড়ার পুর্ব দিকের খাড়া ঢাল বেয়ে নেমে কিছু দূর এগোলেই পাওয়া যাবে লাইফ জ্যাকেট এবং পং সু আং খুমের নৌকা ভাড়া এবং বাঁশের ভেলায় চড়ার খরচ সহ যাবতীয় এখানে পরিশোধ করতে হয়। প্যাকেজে যাওয়ার কারণে কতো টাকা লাগে তা জানা হয়নি আমার। লাইফ জ্যাকেট পড়ে নৌকায় চড়ার আগের এমন পাতা ঝরা রাস্তাটা বেশ চমৎকার।


(১৩/১৪) পাথুরে পথের পরেই “পং সু আং খুম” এটুকু আমাদেরকে নৌকায় পাড়ি দিতে হবে।




(১৫) নৌকা থেকে নেমে আবার কিছুটা পাথুরে পথে হেটে পৌছতে হবে আমাদের মূল গন্তব্য দেবতা খুমে।


(১৬/১৭) এবার বাঁশের ভেলা নিয়ে কায়াকিং করে দেবতা খুম পাড়ি দেওয়ার পালা।




(১৯/২০) খুমের ভেতর কোথাও বড় বড় পাথরে ভেলা আটকে পড়ে আবার কোথাও শতফুট গভীরতা। কিছুটা গা ছমছমে পরিবেশ ও বটে। তবে বেশ রোমাঞ্চকর।




(২১) দেবতা খুমের শেষ প্রান্তটা ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে এসেছে।


(২২) সরু পথ এক সময় বা দিকে বেঁকে গেছে, দুদিকের খাড়া দেয়াল বেশ কাছাকাছি বলে এখানটায় বেশ কিছুটা ভয়ও লাগে পার হতে।


(২৩) এটা দেবতা খুমের শেষ প্রান্ত। সামনে আর ভেলা নিয়ে এগোনো যাবে না। তবে পাথুরে পানি পথে সামনে আরো অনেক দূর চলে গেছে। সম্ভবত সিপ্পীর পায়ের কাছটা পর্যন্ত।


(২৪) ভেলা নিয়ে যখন এগোচ্ছি হঠাৎ এই প্রাণীটা আমার প্যান্টের উপর এসে বসে পড়ে, আমিও ওকে কিছুই বলিনি তীরে এনে নামিয়ে দিয়েছি। ভাবলাম নিরিহ প্রাণী।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৭:১০
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×