somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মাদকাসক্ত জীবন-৩(ফেনসিডিল পর্ব)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মাদকাসক্ত জীবন-৩(ফেনসিডিল পর্ব)
(এই লেখাটিকে কেউ মাদকাসক্তির পক্ষে দাঁড় করাবেন না অনুগ্রহ করে)

গাঁজা তো বাদ দিলাম। কিন্তু খাবোটা কি? যাদের সাথে নিত্য ওঠাবসা তারা নেশা ছাড়া কিছু বোঝে না। আমার কিছু বন্ধু গাঁজার পাশাপাশি ডাইল-ও খেতো। তো তাদেরই প্ররোচনায় একদিন ডাইল ধরলাম। তখন ৪০/৫০ টাকা বোতল। এক বোতল ২জন ভাগ করে খেতাম। বর্ডার এলাকায় বাড়ি। চাইলেই ডাইল পাওয়া যায়। নেশাটাও ভালো লাগল। চা খাও, আর সিগারেট খাও। বেশ ফুরফুরে লাগে। কাজে কর্মেও জোস পাই। রাত জেগে জেগে পড়ি, অংক কষি, গান শুনি। বাড়ির সবাই ভাবল, যাক ছেলের মতি ফিরেছে। কিন্তু হায় ক’দিন যেতে না যেতেই আবার উৎপাত। ওটা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। পড়তে গেলেও মন বসে না। শুধু উড়–উড়– করে। কি করলে যে শান্তি পাবো, তাও জানি না। সারা রাত জেগে থাকি, ঘরের মধ্যে খুটুর খাটুর করি, বাবা ক্ষেপে যান। কি করিস, রাত জেগে? আমি বলি, পড়ি। পড়িস তো শব্দ হয় কেন?
মা রক্ষা করে, অতক্ষণ কি টেবিল চেয়ারে পড়া যায়, একটু শোয়, একটু পড়ে। আমি কিছু বলি না। এসএসসি পরীক্ষা হলো। ৫টাতে লেটার মার্কস পেয়ে পাশ করলাম। সবাই খুব খুশি। মা বাবাকে বলল, দেখ তুমি যে ওকে শুধু গালমন্দ করতে, না পড়লে কি এরকম রেজাল্ট কেউ করে। বাবা চুপ থাকেন। আমার দিকে আড়ে আড়ে তাকান, বুঝতে চেষ্টা করেন। পাড়াতেই সরকারী কলেজ, ভর্তি হলাম। কলেজে গিয়ে শুধু তাস পিটানো, আর মেয়েদের সাথে মাখামাখির চেষ্টা সকলের। আমি শুধু ব্যতিক্রম। প্রেমের নাম বেদনা জানিয়ে চলে গেছে আমার প্রেমিকা। কাউকে আর ভালো লাগে না। ডাইল খাওয়া চলছে। কলেজের পাশেই একটা নার্সারি ছিল। আমরা বলতাম বাগানবাড়ি। একটা মাচা ছিল। সেখানেই বসে তাস, গাঁজা, ডাইল যে যার খুশি তাই করত। কলেজ জীবন মানেই হচ্ছে স্বাধীন। স্কুলে থাকতে মাসের ২০ দিন স্কুল পালাতাম। তবে ক্লাস নাইন, টেনে উঠে প্রথম বাংলা ক্লাসটা মিস করতাম না। যিনি বাংলা পড়াতেন সেই আইন স্যার-এর ক্লাস এত ভালো লাগত যে ওটা মিস করলে মনটা খারাপ হয়ে যেত। তিনি কখনো বই হাতে নিতেন না। গল্প করতে করতে পড়াতেন। অসাধারণ ছিল তার পাঠদান পদ্ধতি। তিনি বাংলাভাষা, সাহিত্যটাকে এমনভাবে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে, জীবনে আর কোনোদিন নোটবইয়ের দ্বারস্থ হতে হয় নি। বাংলার প্রতি ভালোবাসা তাঁরই অবদান। জানি না, আজ তিনি বেঁচে আছেন কিনা? আপনাকে হাজার সালাম, স্যার। তো, কলেজে এসে পেলাম কবীর স্যারকে, উনিও বাংলা সাহিত্য পড়ান। তিনিও অসাধারণ। এই দুই শিক্ষকই আমার ভালো জীবনটার অনেকখানি নির্মাণ করেছেন। যাই হোক, সেই মাচায় তাস পিটাতাম, হোটেল থেকে খাবার আসত সেখানেই। যা কিছু করতাম সব ওখানে বসেই। অদ্ভুত মায়াময় ছিল সেই বাগানটা। কত স্মৃতি। আজো অম্লান।
বই পড়ার নেশা ছিল ছোটবেলা থেকেই। যুদ্ধের সময় এক প্রাচীন লাইব্রেরীর লাইব্রেরিয়ান সমস্ত ভালো ভালো গ্রন্থ আমাদের বাসায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। যদি পাকিস্থানীরা পুড়িয়ে দেয়। তিনি হিন্দু ছিলেন। যুদ্ধ শেষে তাঁকে আর পাওয়া গেল না। আমাদের সংগী হয়ে গেল বইগুলো। বোনেরা পড়ত, বাবা পড়ত। তাদের দেখে দেখে আমিও পড়ি। দয়স্তভস্কি, চেখভ, টলস্টয়, গোর্কি, পুশকিন, মার্কস, লেলিন কত কি। আমি না বুঝেই পড়ি। পাশাপাশি পড়া চলে ঠাকুর মা ঝুলি, আরব্য রজনী। একদিন এক বন্ধু এনে দিল, দস্যু বনহুর। পড়ে তো ব্যাপক মজা পেলাম। তারপর থেকে, বনহুর, দস্যু পাঞ্জা, কুয়াশা, দস্যু মোহন, মাসুদরানা, ওয়ের্স্টান পড়া চলতে থাকল। কখনো হাতে কোনো নতুন বই না থাকলে বাধ্য হয়ে রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, আশুতোষ, বিমলকর, নিমাই, নীহার রঞ্জন এদের লেখা পড়তে হতো। তো নেশা করলেও হাতে একটা গল্পের বই থাকত। আমার সঙ্গি গল্পের নর-নারী, তাদের সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা। বন্ধুরা একারণে আমাকে কখনো কখনো ক্ষ্যাপাতো, পন্ডিত বলে। নেশার সাথে এসবের যায় ভালো। চরিত্রগুলোকে আমি মাথায় নিয়ে ঘুরতাম।
একদিন হঠাৎ করে আমাদের এক বন্ধু মারা গেল। কোনো অসুখ নেই, দিব্যি ভালো মানুষটা মারা গেল। জানা গেল, ওর লিভার সিরোসিস হয়েছিল। তখনো বুঝিনি, অসুখটা কি। শুধু জানলাম, ডাইল খেয়েই ও মারা গেল। একটা ভয় ঢুকে গেল। নাহ্, ডাইল রেগুলার খাওয়া যাবে না। বিকল্প বের করতে হবে। তখন কলেজে কেউ কেউ চোরশ খাওয়া শুরু করেছে। অনেকটা গাঁজার মতোই নেশা। শুরু হলো, চরোশ খাওয়া। (চলবে)
প্রথম পর্ব
View this link
দ্বিতীয় পর্ব
View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৪
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×