somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মাদকাসক্ত জীবন-৪(চোরশ পর্ব)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মাদকাসক্ত জীবন-৪(চোরশ পর্ব)
(এই লেখাটিকে কেউ মাদকাসক্তির পক্ষে দাঁড় করাবেন না অনুগ্রহ করে)

চোরশ দেখতে অনেকটা কয়লার মতো। প্রথমে তো জানতাম না, ওটা কিভাবে তৈরি হয়। পরে জানলাম যে, হিরোইন তৈরির আগের ধাপ ওটা, গাদ বলা যেতে পারে। অনেক পরে বার্মা থেকে এক বন্ধুর আনা পুরো চটি হস্তগত হয়েছিল। ওটা থেকে ভেঙে ভেঙে খেতাম। যাই হোক, চোরশ খাওয়ার আগে ওটাকে পুড়িয়ে নিতে হয়। তারপর সিগারেটের মশলার সাথে মিশিয়ে টানতে হয়। নেশা অনেকটা গাঁজারই মতোন। তো চোরশ খাচ্ছি, আর বোম ভোলানাথ হয়ে ঘুরছি। কিসের ক্লাস। মনে আছে একদিন সব বন্ধুরা তাদের প্রেমিকাদের নিয়ে কলেজের একটা রুমে ঢুকে গেল। চুটিয়ে প্রেম করবে। আমার তো শালা কোনো প্রেমিকা নেই। বিরহী মন। ভেতর থেকে তারা দরজা আঁটকিয়ে দিয়েছে। বারান্দায় আমি পাহারাদার। আমি গল্পের বইয়ের ভেতর ঢুকে গেছি। শ্রীকান্ত বলছে, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও সরিয়ে দেয়। হঠাৎ দেখি, ডিগ্রী ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রীরা গুড়মুড় করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে, সাথে স্যারও। তারা এসে ঐ রুমেই দরজা বন্ধ পেয়ে হাকাহাকি, ডাকাডাকি, এই কে ভেতরে, কে দরজা আঁটকিয়েছে? আমাকে ধরল স্যার, এই ছেলে বলো, কে ভেতরে? আমি বললাম, জানি না। সটকে পড়লাম। পরে জেনেছি, প্রিন্সিপাল স্যার এসে তাদের বলে কয়ে দরজা খুলিয়েছিল। কোনো শাস্তি তাদের পেতে হয় নি। কারণ, আমরা তখন উঠতি টেরর গ্র“প। যাই হোক, লাজ-লজ্জার বালাই ছিল না। নেশা করলে সে-সব থাকেও না। স্যাররা ভয়ে কিছু বলত না। কিন্তু ফল পেলাম, এইচএসসি-তে। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় আমাদের প্রাপ্ত নম্বর ২২/২৩। কিছুই করার নেই। অথচ কত রঙিন স্বপ্ন দেখতাম। ডাক্তার হবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো। কিছুই হলো না। একে তো পড়াশুনায় ফাঁকিবাজি, দুই নেশা। মনে আছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেছি। সাথে চোরশ নয়ত গাঁজা। কিসের পড়াশুনা। নেশা করে টুইটুম্বুর থাকতাম। পরীক্ষার খাতায় ছবি আঁকতাম, গান লিখে আসতাম, প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় বাঁশরিয়া বাঁশি বাজায় ধর্মতলায়...। হা সময়, নেশা। কেউ কিছুই হতে পারিনি। চলে আসলাম ঢাকায়। জগা বাবুর পাঠশালায় ভর্তি হলাম। পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে। ঐ বিষয়টা আমার ভালোও লাগত। ২ বছর পড়লাম। এরশাদ পতন আন্দোলন শুরু হলো। ঢাকা, নওগাঁ করছি। মিছিল, মিটিং, পিকেটিং চলছে। ঢাকায় মিরপুরে থাকতাম। তো সেখানকান মাস্তানদের সাথে অল্প দিনেই সখ্যতা গড়ে উঠল। তারা রুমে এসে আমাদের সাথে নেশা করত। চোরশের চটি আসত। বিক্রি করতাম, নেশা করতাম। টাকা ফুরিয়ে গেলে বাড়ি যেতাম। হঠাৎ করে জড়িয়ে গেলাম, আরো খারাপ গ্র“পের সাথে। অস্ত্র আসত, যশোর, খুলনা থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ছাত্রনেতারা সব আসত অস্ত্র নিতে, ভাড়া খাটাতে। তখনই দেখেছি কি আশ্চর্য মিল পরস্পর বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের মাঝে। ফ্রিডম, আ,লীগ, বি,এন,পি, জাতীয় ছাত্রসমাজ তারা সবাই মিলেমিশে অস্ত্র নিচ্ছে। পরস্পর আলাপ করছে, কাল কিন্তু ক্যাম্পাসে ১১টায় শোডাউন। তোরা ১টায় করবি। হায়রে কপাল। কিসের আদর্শ। অথচ ছাত্ররাজনীতি করি, স্কুল জীবন থেকে বলতে গেলে। তখন থেকেই পার্টিকে চাঁদা দিতাম। বুঝলাম, আমাকে দিয়ে হবে না। বারবার ভেঙে পড়েছি। ভেবেছি, তবে কি আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমার বাবা, মা যারা এদেশের জন্য তাদের দুটি ছেলেকে উৎসর্গ করেছেন, তাদের এই শেষ প্রদীপটুকুও কি অন্ধকারের নীচে চাপা পড়ে যাবে? শুধু মনে ভাসত, মার কান্না। বড় ভাইদের কাপড় ট্রাঙ্ক থেকে বের করে মুখে গুজে সেই চাপা কান্না। মা আমি ভালো হয়ে যাবো, ঠিক দেখে নিও। এইসব ভাবতাম। একদিন সব ছেড়েছুড়ে পালালাম, মায়ের কোলে। আবার নিজেকে ঠিক করে নেবার পালা। জঠরে ঢোকার পালা, পুর্নজন্ম নেবার দীক্ষা। কিন্তু চাইলেই কি সব হয়? নেশা তো আমাকে ছাড়ে না। শুধু পালিয়ে বেড়াই। আবার ঢাকা ফিরি। ততদিনে চক্রটা ভেঙে গেছে। কেউ কেউ জেলে। নতুন সরকার। মেসে থাকি। ভাবি, পড়াশুনাটা আবার চালিয়ে নেব। পাড়ার বন্ধুরা তখনো নেশা করে তবে হিরোইন। আমি ভাবলাম, দেখিনা জিনিসটা কেমন? (চলবে)

প্রথম পর্ব
View this link
দ্বিতীয় পর্ব
View this link
তৃতীয় পর্ব
View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:১৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×