somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ ও ভালবাসার গল্প// হিমেল, তোমার জন্য...

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[বেশ কিছুদিন পর একটা গল্প লিখলাম। আশা করছি ব্লগাররা গল্পটা পড়বেন। মাঝে মাঝে মনে হয় গল্প কেন কেবল নিছক গল্প হয়! কিছু কিছু সত্য আছে যা হয়ত গল্প, যা শুধুই ভাবনা...যেগুলো সত্য হলে ভাল হত...কিন্তু আসলে সত্য নয়...যা কোনদিন পাবারও নয়...কেননা সে তো হারিয়ে গেছে.....আজ সে যে অন্যের....আসলে গল্প কেবলই গল্প মাত্র....কেন যে......আসলে এটাই কষ্ট!]
ঘড়িতে এখন দুপুর দুইটা বাজে। আর মাত্র ত্রিশ মিনিট পর অফিস ছুটি হবে। তিনদিনের টানা ছুটি-ঈদের ছুটি। সবাই একটু পর পরই ঘড়ি দেখছে। ত্রিশ মিনিট যেন বড় দীর্ঘ সময়-কাটতেই চাচ্ছে না। মতিন সাহেব তো বলেই বসলেন, 'কি ব্যাপার আজ ছুটির সময় হবে না নাকি? কতদিন পর বাড়ি যাব জানেন? ছোট বাবুটা হয়েছে সে-ই কবে আজও কোলে নিতে পারিনি।' সদ্যবিবাহিত নিতাই বাবু বললেন, 'বুঝছেন দাদারা চারটার বাসে যাচ্ছি। পূজোয় তো যেতে পারিনি। তাই এবার যাচ্ছি। মা যে আমার কেমন আছে?' রসিক ভদ্রলোক ইসমাইল সাহেব। তিনি মজা করতে ছাড়লেন না-'বুঝি রে নিতাই সবই বুঝি। নতুন বউকে দূরে রেখে মায়ের নাম নিয়ে বাড়ি যাওয়া! লজ্জার কি আছে আহা বল না বউটারে কতদিন দেখি না...!'

আমার কোন তাড়া নেই। অফিস যখন ছুটি হবার হোক। আমাকে দৌড়ে দেশের বাড়ির বাস ধরতে হবে না। মনে পড়ে এই তো গতবছরও কি কষ্ট করে বাঁদুড়ঝোলা হয়ে রাজশাহী গিয়েছিলাম। কষ্ট হচ্ছিল তবুও ভাল লাগছিল নিজের দেশে যাচ্ছি। যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে বাবার স্নেহ, মায়ের ভালবাসা আর বুবুর আদর। অথচ আজ...মাত্র একবছরের ব্যবধানে সবাই কেমন যেন বদলে গেল। একদম ভুলে গেল? আমি কি খুব বড় ধরনের অপরাধ করেছি? যাকে ভালবেসেছি তাকে বিয়ে করেছি। তোমরা কেন যে রাজি হচ্ছিলে না? ভালমেয়ে হিসেবে হিমেল কোন অংশে কম ছিল?

শুধু নিজের কথাই বলে যাচ্ছি। আমার বাবা-মা তো অনেক দূরে থাকেন। কিন্তু ওর বাবা-মা এ শহরেই থাকেন। মাঝে মধ্যে রাস্তাঘাটে দেখাও হয়ে যায়। তারা মুখ ফিরিয়ে নেন। প্রথম প্রথম হিমেল এ বিষয়টা নিয়ে ভীষণ মন খারাপ করত। খুব কাঁদত। আমরা যে দুপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করিনি তা কিন্তু নয়। যতবার তাদের কাছে গিয়েছি ততবারই উনারা তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের পৃথিবীতে কেবল আমরা দুজন-আমি আর হিমেল।

আমার বউটা নামেও হিমেল, আচরণেও হিমেল। একদম ঠান্ডা মেজাজের চুপচাপ। শুনেছি ছোটবেলায় শান্ত স্বভাবের জন্য ওর খালা ওর নাম রেখেছিল হিমেল। পৃথিবীতে কেবল এই মানুষটিই আমাকে বোঝে। আমার পাখির বাসার মত বাসায় জানি ওর খুব কষ্ট হয়। আমি ওর কোন চাওয়াই পূরণ করতে পারিনি। দিতে পারিনি একটা ভাল শাড়ি। তবুও ওর মুখে আজ পর্যন্ত আমি কোন হতাশা শুনিনি, আফসোস দেখিনি। আসলে বিধাতা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ও যদি পাশে না থাকত সত্যিই এতদিনে আমি মরে যেতাম!

কখন যে সন্ধা গড়িয়ে বেশ রাত হয়ে গেছে-হাঁটতে হাঁটতে টেরই পাইনি। ঢাকা শহর এখন প্রচন্ড ব্যস্ত। লোকজন শুধু ছুটছে আর ছুটছে। মার্কেটগুলোতে উপচে ভরা মানুষের ভিড়। লোকজন শুধু কিনছে আর কিনছে। একজনকে দেখলাম এত বেশি কিনে ফেলেছে যে জিনিসের ভারে হাঁটতে পারছে না। অদ্ভুত নগর এ ঢাকা। কারো কারো পকেটে এত বেশি টাকা...আবার কারো বা একদম পকেট ফাঁকা।

এটা আমার সংসার জীবনের প্রথম ঈদ। আমার খুব ইচ্ছে করছে সোনাদানা, দামি শাড়িতে হিমেলকে মুড়িয়ে ফেলি। কিন্তু কিছুই করতে পারি না। আমার মত মানুষের কেবল স্বপ্নই থাকে। সাধ আছে অথচ সাধ্য নেই। নিজেকে এত তুচ্ছ মনে হচ্ছে!

-কি ব্যাপার আজ এত দেরি করলে? দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করে হিমেল।

-না এমনিই।

-ও আচ্ছা। হাতমুখ ধুয়ে নাও খেতে দিচ্ছি।

-হিমেল আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।

-জানি তো। কিন্তু হঠাৎ এভাবে বলছ?

-আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি তোমার এমনই অথর্ব হাজবেন্ড যে তোমাকে ঈদে কিছুই দিতে পারছি না। অথচ এটা আমাদের সংসারের প্রথম ঈদ।

-আরে বাবা সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এবার পারছ না পরেরবার পারবে। তাছাড়া আমিও তো তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। তুমি এভাবে বললে তো আমারও মন খারাপ হয়।

-হিমেল তুমি এত ভাল কেন? আমি তোমাকে খুব খুব ভালবাসি।

আজ রাতের আকাশের চাঁদটা একটু আগেও বিষণ্ন মনে হচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে এ বিষণ্নতার মাঝেও আনন্দ আছে...কেবল খুঁজে নিলেই হয়।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×