কক্সবাজার যে হোটেলে ছিলাম সেটি ছিল একদম সাগরের কোল ঘেষে। ওখান থেকে হিমছড়ির দূরত্ব 12 কিলোমিটার। যাবার উপায় অনেক। হিমছড়ির রাস্তা দারুণ ঝকঝকে, তকতকে। বাস, টেম্পু, মোটরসাইকেল ইত্যাদি যেকোন কিছুতে চড়েই আপনি ওখানে যেতে পারেন। আমরা চারজন মিলে একটা বেবিট্যাক্সি নিলাম। যাওয়া আসা এবং ওখানে ঘন্টাখানেক থাকা বাবদ ভাড়া ঠিক হল 200 টাকা। দিনটি ছিল 9 সেপ্টেম্বর, শনিবার। আমরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হিমছড়ির পথে যাত্রা শুরু করলাম।
হিমছড়ির রাস্তাটা অদ্ভুত সুন্দর। একপাশে উচুঁ পাহাড়, অন্যপাশে দিগন্তপ্রসারি উত্তাল সমুদ্র। মাঝখানে অাঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ। পাহাড়ের গায়ে সবুজ চাদরের মত নানান গাছগাছালি জড়িয়ে আছে। দূর সমুদ্রে যত দূর দৃষ্টি যায় আকাশের নীলের বুকে সাগরের উত্তালতা যেন বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তায় দেখলাম সেনাবাহিনী কাজ করছে। হঠাৎ মাঝপথে একটা বড় ঝরনা চোখে পড়ল _ পাহাড়ের বুক চিরে অবিরত বয়ে চলা। ইচ্ছে হল ওখানে গোসল করি। কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হল না।
হিমছড়ির মূল আকর্ষণ হচ্ছে ঝরনা। প্রায়ই দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক এখানে আসেন। ওখানে পেঁৗছে জানলাম ভিতরে ঢুকতে হলে প্রতিজন দশ টাকা করে লাগবে। কি আর করা! এত দূর এসেছি, ঝরনা দেখতেই হবে। টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। এখানে টিলার একদম উপরে ওঠার ব্যবস্থা আছে। নিচ থেকে উপর পর্যন্ত পাকা সিড়ি। 243 ধাপের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যেয়ে দেখলাম মাঝপথে বসে অনেকেই হাঁপাচ্ছে। সত্যি বলতে কি কিছু দূর উঠার পর আমিও হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম। এত ধাপের সিড়ি একবারে উঠা_একটু কঠিনই ছিল। টিলার উপরে উঠে মনে হচ্ছিল আমি যেন এভারেস্টের শীর্ষে উঠে গেছি! নিচের মানুষ, ঘরবাড়ি, যানবাহন_ সবকিছু কেমন যেন বিন্দু বিন্দু মনে হচ্ছিল। সবচেয়ে ভাল লাগছিল দূরে সাগর আর আকাশের মিলনে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের অম্লান হাসি। একদিকে টিলার গায়ে গায়ে সবুজের সমারোহ, অন্যদিকে প্রকৃতির নীলের বিশালতা_মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
এবার সেই কাঙ্খিত ঝরনা দেখার পালা। ঝরনা দেখার জন্য আমাদের টিলা থেকে নেমে বাদিকে যেত হল। একটু দূর যেতেই পানির চিকন ধারা চোখে পড়ল। বুঝলাম ওটা ঝরনা থেকেই এসেছে। ঝরনার কাছাকাছি যেয়ে দেখলাম ওখানকার রাস্তা খুবই সরু, একসাথে তিন-চারজনের বেশি যাওয়া যায় না। আমরাও এর বেশি যেতে পারলাম না। পাহাড়ের শরীর ছুয়ে চলা অনবরত সে পানির ধারায় গিয়ে অনেকেই যেন আনন্দে পাগল হয়ে উঠে। আসলেই ঝরনার পানিতে লাফালাফি, মাতামাতি করার লোভ সামলে আছে_এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল। আমাদের কেউ কেউ গোসল করল। পাশাপাশি পানি ছোড়াছুড়ি, কাদা মারামারি তো ছিলই।
আধা ঘন্টার মত আমরা ওখানে ছিলাম। তারপর ফেরার পথ ধরলাম। ফেরার পথে জেমসের একটা গান কেন যেন বার বার মনে হচ্ছিল- 'ঐ দূর পাহাড়ে লোকালয় ছেড়ে দূরে হিমছড়ির বাঁকে, মন কেড়েছিল এক দূরন্ত মেয়ে'...মন তো সে সেই কবে কেড়ে নিয়েছে। আজ কাছে থাকলে আনন্দটা হয়ত আরও বেশি হত। সাথের সবাইকে দেখলাম কেমন যেন চুপচাপ...কি যেন ভাবছে। তাহলে তখন সবাই কি আমার মতই দূরন্ত মেয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



