somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন এবং গপ্ল গুচ্ছ

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






এত ডাকাডাকির পর ও ভাইয়েরা কেউই সাড়া দিচ্ছে না । ব্যপারটা মাসুমের মাথায় ঢুকছে না । দিব্বি সে বড় ভাইদের কথা শুনতে পারছে । হঠাৎ করে ভাইয়েরা এত স্বার্থপর হয়ে গেল কি ভাবে সেটা মাসুমের মাথায় ঢুকছে না ।
মেডিক্যাল আস্যিস্ট্যন্ট ট্রেনিং স্কুলে ( ম্যাটস্) থেকে ৩ বছরের কোর্স শেষ করার পর তার এখন ইর্ন্টান চলছে । অবশ্য মাসুমের ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়ার । এস এস সি তে ৪.৯৪ পাওয়াই তার আব্বু তাকে এক রকম জোর করেই ম্যাটস্ েভর্তি করিয়ে দেয় । ওনার ধারণা ২টাতেই এ+ না পেলে মেডিক্যালে চান্স পাওয়া যাই না । আর ওর যেহেতু একটাতে এ+ হই নি , পরের টা এ+ হলেও সে মেডিক্যালে চান্স পাবে না ।
ওর ইর্ন্টান শেষের পথে । হসপিটালের ডিউটি সেরে এসে বিকেলের সময়টা সে তার পছন্দের স্যারের চেম্বারে স্যারকে টুকিটাকি কাজে সাহায্য করত । স্যারের ৩ বছরের মেয়ে আছে । স্যার শহরের বাইরে গেলে তাকে বলে যেত , ম্যাডামের কোন প্রয়োজন হলে যেন সে বাসায় যায় ।
একদিন মেয়েটা ম্যডামকে জিঙ্গাসা করে উনি কে
-তোমার আঙ্কেল ।
-আঙ্কেল কে চলে যেতে বলো ।
এর পর বাসায় গেলেই মেয়েটা একই কথা রিপিট করত । তার মনে পড়ে এই গল্পটা সে ভাইয়াদের
কছে বেশ কয়েকবার করেছে । যখন সে তার স্যারের চেম্বারে থাকত বড় ভাইয়েরা যখন কেউ ঐ পাশ দিয়ে রুমে ফিরত , তার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা তার জন্য অপেক্ষা করত । কোথাও গেলে নিতে ভুলতো না । কিন্তু আজকে ভাইয়েরা তার কোন কথায় শুনছে না ।


মাসুম চারপাশটা ভালো করে দেখে নেয় । চারিদিকে অন্ধকার । তার মনে হই চোখের দুই পাতা বোধহয় একসাথে হয়ে আছে । এর এজন্যই বোধহয় চারপাশটা অন্ধকার লাগছে । দুই হাত দিয়ে চোখের পাতা ডলে নেয় । না তো, চোখতো খোলায় আছে । তা হলে চারপাশটা সত্যি অন্ধকার আচ্ছন্ন । প্রচন্ড জোরে তাকে আঘাত করা হচ্ছে । সে পালিয়ে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করে ওখান থেকে । কিন্তু আকার আকৃতিহীন কিছু একটা তার দুই পাশ থকে তাকে টেনে ধরে । এবং বলতে থাকে সে যদি আবারও বের হবার চেষ্টা করে তবে ফলাফল আরো কঠোর হবে । কণ্ঠস্বর শুনে তার মনে হচ্ছে এমন কণ্ঠস্বর সে আগে কখনো শোনে নি । ওদের কথা শোন বাবা । আর এখন থেকে তোমাকে এখনেই থাকতে হবে । কারন তুমি এখন কবরে । এই কণ্ঠস্বরটা তার পরিচিত মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে কোন মানুষের কণ্ঠস্বর । সে রীতিমত ভয় পায় । মাস খানেক আগে সে স্বপ্ন দেখেছিল , আজরাইল তার জান কবুজ করার জন্য এসেছে । সেই মূহুর্তে সে আল্লাহ্র কাছে আর কিছু সময়ের জন্য প্রান ভিক্ষা চাচ্ছে । কিন্তু সে সুযোগ তাকে দেওয়া হচ্ছে না । হঠাৎ সে খেয়াল করে সে স্বপ্নের ঘোরে ছিল । তাড়াতাড়ি গায়ে চিমটি কেটে দেখে । না বেঁচেই আছে ।
মাসুম ভাবে সে হইতো এখনো বোধহয় স্বপ্নের ঘোরেই আছে । মনে মনে ভাবে চিমটি কাটলেই বোধহয় সে আবার আগের সময়ে ফিরে যাবে । কিন্তু একি , চিমটি কাটার পরও সে অন্ধকারের মাঝেই রইল । এতে করে ভয়ের নতুন মাত্রা যোগ হল । মনে মনে ভাবে চিমটি না কাটাই বোধহয় ভালো ছিলো ।


আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে । কারন আরতো ফেরার কোন পথ নেই । এখন সে সময় পার কবরে কি ভাবে ।তাকে একটা বই দেওয়া হয় । ভালো করে নাড়াচাড়া করে সে দেখে এটা তো কুরআন । সে তো কুরআন পড়তে পারে না । ম্যাটস্ েপড়ার পরও সাহিত্য উপর ছিল তার প্রচন্ড আগ্রহ । রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, শরৎ, সমরেশ , হুমায়ন, সেক্সপিয়ার, চার্চ ডিকেন্স, ই এম ফোস্টার ইত্যাদি লেখকের অনেক বই তার অনেক আগেই পড়া । বাংলায় পড়ে এমন কেউ যদি মেসে নতুন বর্ডার হিসেবে আসতো, তবে সে সোনার খনি পাবার মত খুশি হত । কারন তার কাছ থেকে অনেক নতুন বই নিয়ে পড়তে পারবে । গত সপ্তাহে সে , রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছটার নতুন সংস্করণ কিনে এনেছে । বেশ খানিটা পড়াও হয়েছে । মাসুমের বুক ফেটে কান্না আসছে গত সপ্তাহে যখন জুম্মার নামাযে গিয়েছিল , কুরআন পড়তে না পারলে বা না শিখে কেউ মারা গেলে যে কি শাস্তি দেওয়া হবে সেই সম্পর্কে হুজুর বয়ান করেন । হুজুর এ কথাও বলেছিলেন , আগামী কাল ফজরের নামাযের পর থেকে মসজিদেই কোরাআন পড়ানো শেখানো হবে । ব্যস্ততার কারনে সে একথাটাও ভুলে গিয়েছিল । কিন্তু এখন তো আর কিছুই করার নেই । এখন আর বাইরে কারোর কথা শোনা যাচ্ছে না । অন্ধকারের সাথে তার চোখের জল মিশিয়ে যাচ্ছে ।
হঠাৎ মাসুম খেয়াল করল ফজরের আযানের সাথে তার মোবাইলের এলার্ম বেজে উঠল । তাড়াহুড়ো করে উঠে চোখ মেলে দেখে তার চোখের দুই পাশ দিয়ে এখন পানি গড়িয়ে পড়ছে । খেয়াল করে দেখে তার বালিশের পাশেই পড়ে আছে গল্পগুচ্ছ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×