somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যাকপ্যাক হট্টগোল

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অপিষ ডিউটি আওয়ারটা বেশী, সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা, মাঝে নামাজ বিরতি এবং এক ঘন্টা লাঞ্চ আওয়ার। সন্ধ্যা ছয়টার ঠিক আগ মুহুর্তে মেসেঞ্জারে শব্দ করে উঠল। কন্যা লিখেছে, " আব্বু জাপানের রাজনৈতিক ব্যাবস্থা নিয়ে পাঁচটা লাইন লিখে দাও খুব তাড়াতাড়ি"। বুঝতে কষ্ট হলোনা স্কুলের বাড়ির কাজ। অবাক হলাম আর ভালই লাগল। সপ্তম শ্রেণীতে জাপানের রাজনীতির পাঠ এটা বিশ্বমুখি চিন্তা। আমাদের সময়কাল ছাড়িয়ে এই প্রজন্ম অনেকদূর এগিয়ে যাবে।

ইদানিং জাতীয় পাঠ্যক্রম নিয়ে নানান ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা ও পাঠদান প্রকৃতির আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে সিলেভাস, পাঠদান পদ্ধতি, পাঠ্য সূচি এবং মান নির্ণয় প্রকৃয়া সর্বত পরিবর্তন করা হয়েছে। তায় ভাবলাম পাঠ্য সূচির বইগুলো কেমন একটু দেখা যাক। বাংলা বইটা নিলাম সপ্তম শ্রেণীর। দেখে ভালই লাগল। আমাদের সময়ে বাংলা প্রথম পত্র এবং দ্বিতিয় পত্র হিসেবে দুইটা সাবজেক্ট ছিল, বর্তমানে দুইটা মিলে একটাতে করে দেয়া হয়েছে, শুধু তায় নয়, সাহিত্য ইতিহাস সব মিলে আধুনিক ও বর্তমানকে ধারণ করে এমন করে সাজানো হয়েছে। আমাদের সময় এবং বর্তমান সময় এর দুইটা পার্থক্য আছে এবং এটা স্বাভাবিক।

আমাদের সময়ে বাংলা পাঠ্যক্রমের অন্যতম মূল আয়োজন ছিল নৈতিকতা। সব পড়া শেষে একটা নৈতিকতা বোধ কাজ করতো মনে, সাথে এটা চরিত্র গঠনেও দারুণ প্রভাব ফেলে। মুখস্থ্য বিদ্যায় জোর দেবার ফলে দেখা যেত বড় হয়েও ছো্ট বেলায় শেখা অনেক বড়বড় কবিতা আবৃতি করা যায় যেগুলো ছোট বেলায় শেখা হয়েছে এবং পরের জীবনে তার প্রতিফল হচ্ছে। মানুষ কী পরিমাণ মনে রাখতে পারে এবং সম্ভব তার একটা মান ঠিক হয়ে যেত ছোট বেলায়। শুনেছি ছোটদের ব্রেইনটাই এমন, ছোট থাকতে যত ঢুকানো যায় সেটা ধারণ হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে সে অনেক কিছু বুঝে কিন্তু হুবুহু মুখস্থ করতে পারেনা, কিন্তু ছোট বেলায় সেটা সম্ভব। বড় হয়ে বুঝা সম্ভব কিন্তু মুখস্থ সম্ভব হয়না।

আমাদের সময়ে সাহিত্য ক্ষেত্রে যেটা সমস্যা ছিল সেটা হল, কবিতা, ছড়া সাহিত্য যেসব পড়ানো হতো তার সাথে বর্তমান সময় এর সাথে কোন সেতু ছিলনা, আমরা বুঝতে পারতামনা যেটা পড়ছি তার সাথে বর্তমান সময় এর তুলনা। সেতু বন্ধন না থাকাতে আমাদের কাছে পড়াটা শুধু বই এর জন্য সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমান সময়কে ধারণ করে এমন লেখা ও সাহিত্যিক আমরা জানতামনা। তায় বর্তমান সময় এর কোন পাঠ পড়ে আমরা বুঝতামনা এবং মেলাতে পারতামনা। নতুন শিক্ষাক্রমে এই দূরবস্থা দূর হবে।

শুধু বাংলা সাবজেক্ট এর পাঠ্যক্রম দেখেই বুঝা যায় অন্যন্য সাবজেক্ট এর বেলায় একই ব্যাবস্থা হবার সম্ভবনা আছে, যেখানে প্রতিটা পাঠ হাতে কলমে শেখার একটা ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। একটা সুবিধা হল স্বচ্ছল পরিবারের জন্য, তারা যদি মনে করে স্কুলে সঠিক পাঠ হচ্ছেনা তাহলে যে বইটা আছে সেটাও যদি ঘরে পরে কিংবা প্রাইভেট দিয়ে পড়ায় তাহলে এই শিক্ষার্থী পিছিয়ে থাকবেনা রবঞ্চ অনেক এগিয়ে থাকবে। শংকাটা গ্রাম এবং অসচ্ছল পরিবারদের জন্য। সেখানে না আছে পর্যাপ্ত স্কুল ও মান সম্মত শিক্ষক। সুতরাং যাদের অর্থিক সামর্থ নেই তারা টিকে থাকতে অনেক কষ্ট হবে। আগে এমনটা বৈষম্য কম ছিল, গ্রামে খেতে না পারা একজন ভাল ছাত্র শিক্ষকের আদর স্নেহে জীবনে সাফল্য হয়েছে এমন ভুরিভুরি উদাহরণ দেয়া গেলেও বর্তমানে সেই সম্ভবনা কমে এসেছে।

অতিরিক্ত ডিভাইসমুখি পাঠ এর কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে এবং নিজেও দেখতে পাচ্ছি সেটা পরিবর্তন আসা প্রয়োজন। কিছু কিছু ছবি ও ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে স্কুলেই বাইরে রান্নাবান্না ও নাচগান সম্পর্কিত, এসব একটু কমিয়ে আনতে হবে, এমন টাইপ সব আয়োজন মিলে একটা সাবজেক্ট হতে পারে, বছরে এক দুইবার হতে পারে, এটা যেন সব সাবজেক্ট এবং প্রতিদিন বা সপ্তাহের কার্যক্রম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রায়োগিক দিক নিয়ে একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। সওদি আরবের প্রাইমারী লেভেল এর ইংরেজী বই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সেখানে দেখা গেল ব্রিটিশ কারিকুলাম মান এর বই এরাবিক কালচারের সাথে সমম্বয় করে পড়ানো হচ্ছে। দারুণ একটা ব্যাপার। বাইটা ব্রিটিশ কারিকুলাম এর বইটা হুবুহু রেখে শুধু পাত্র-পাত্রী পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন ধরুণ দুই বন্ধুর কথোপকথন হচ্ছে একজনের নাম ডেভিড আরেকজনের নাম এলেক্স। সেখানে নামটা পরিবর্তন করে শাহেদ ও করিম করে দেয়ার মতো ব্যাপার। এভাবে স্থানের নাম আসলে সেটাও এভাবে চেন্জ করে বাকীটা সব ঠিক থাকছে।

এখন কথা হলো এমন দারুণ বইটা কী পড়াচ্ছে? না পড়াচ্ছেনা। আমি অনেক ষ্টুডেন্ট এর পড়া দেখেছি, ওরা এমন দারুণ বইটা রিডিংও পড়তে পারেনা, তবুও পাশ মার্ক পাচ্ছে। পা্ঠ্য বইতেই শুণ্যস্থানের জায়গা আছে, সেটা বাড়ি থেকে করে নিয়ে দেখাতে বলছে এবং ছাত্ররা সেটা করে নিয়ে যাচ্ছে এবং পরীক্ষার সময় বইটাই জমা দিচ্ছে সেই বই থেকে পাশ মার্ক পেয়ে যাচ্ছে। অথচ বি ও ও কে বুক এই শব্দটা উচ্চারণ করতে পারেনা, যেখানে ইংরেজীতে বুক লেখা আছে, সেখানে সে পেনসিল দিয়ে আরবীতে লিখে রাখছে উচ্চারণটা, আরবীতে লিখে না রাখলে সে বি ও ও কে বুক এটাই পড়তে পারছেনা।

তায় বলছি, পাঠ্য সূচি আধুনিক ও মানসম্মত বলে আমার ধারণা এখন প্রায়োগিক দিক দেখতে হবে, মান সম্মত স্কুল ও শিক্ষক এবং তাদের টেইনিং এর ব্যাবস্থা করতে হবে, শিক্ষক পেশাটাকে সম্মান করতে হবে, তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে, তাদের ন্যুনতম সুবিধা না দিলে ভাল স্টুডেন্টরা এই পেশায় আসবেনা।

বি.দ্র : ধারণা নিতে হলে পাঠ্য বই এর লিংক দেয়া হল, নিজেরাই দেখে নিন: link

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাস্থানের বিছিস্ট এনছিপি নেতা হাবদাল্লা।ভারতের সিস্টার না হলেও নিজেদের সিস্টারদের ..।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১০



আপাতত সেভেন সিস্টার পৃথক না করতে পারলেও । সিক্স সিস্টার অত্যন্ত সফলতার সাথে সার্জারি করে পৃথক করে ফেলেছেন । এই কারণে আপনারা সবাই রাজুতে চলে আসুন। উনি অজাতিদের উদ্দেশ্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×