somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(মুভি রিভিউ) Khuda kay Liye - গল্পটা হিপোক্রিসির

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Khuda kay Liye (In the name of God) মুভিটা ২০০৭ সালে রিলিজ হলেও এর সম্পর্কে জানতে পারি কয়েকদিন আগে, ইউটিউবে Naseeruddin Shah এর একটা ভিডিও দেখে (লিঙ্ক-১)। পরিচালক Shoaib mansoor এর কাজের সাথে আগেই পরিচয় ছিল, ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া নারীস্বাধীনতা নিয়ে তৈরি Bol মুভি দেখে। ছয়টি ভাষায় মুক্তি পাওয়া Geo TV এর প্রযোজনার তারকাবহুল বিতর্কিত এই ছবিটির IMDB রেটিং 8.4 । ১৭০ মিনিটের (লিঙ্ক-২)এই ছবিটি সম্পর্কে গুগল সার্চ দিলে প্রথমেই যে তথ্যটি পাওয়া গেল তা ছিল “Muslims and Pakistanis experience difficulties after Sept. 11, 2001”

টুইন টাওয়ার হামলার পর কেটে গেছে চৌদ্দ বছর। পক্ষে বিপক্ষে অসংখ্য মুভি, ডকুমেন্টারি দেখে শুনে তাই অনেকটাই ক্লিশে হয়ে গেছে অনুভুতি। এক নির্দোষ মুসলিম পাকিস্তানি গায়ক, যে আমেরিকায় মিউজিকের উপর পড়তে যায়, আটকে যায় সন্দেহের ফাঁদে, নিজেও জানেনা, পুলিস কেন তাকে নির্যাতন করছে, খুব নতুন মনে হয়না। এত বছর পর এই ছবি দেখতে গিয়ে তাই অন্য এক দৃশ্য চোখে পড়ে, আমাদের হিপোক্রিসির।

ছবির গল্প শুরু হয় লন্ডনে। এক বাবার হিপোক্রিসি দিয়ে। যিনি বহুবছর বিদেশে আছেন, দেশের সাথে কোন যোগাযোগ নেই, বিয়ে করেছিলেন এক শ্বেতাঙ্গীনিকে, ডিভোর্সের পর থাকছেন আরেক শ্বেতাঙ্গীনির সাথে, কিন্তু মেয়ের বিয়ে তিনি একজন শ্বেতাঙ্গের সাথে মেনে নিতে পারেন না, এতদিন পর তার মনে হয় নিজের বংশ তাহলে ক্রিশ্চিয়ান হয়ে যাবে!

মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে আসলে দেখা যায় পুরো সমাজের হিপোক্রিট চেহারা। আধুনিক মা ছেলের নামাজ-টুপি-দাঁড়ি কিংবা গান ছাড়ার প্রশ্নে চুপ থাকলেও বেঁকে বসেন যখন ছেলে তাকে হিজাব করতে বলে। বাবা সরব হন ছেলে তালেবানে যোগ দিলে। আর সবচাইতে উদারপন্থী ছেলে যে ভাইকে যুক্তি দেয়, চাচাকে জানায় সে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিয়ে করে পাপ করতে পারবেনা, সেও ধাঁধায় পড়ে যায়, আমেরিকান ক্রিশ্চিয়ান মেয়েকে বিয়ে করা উচিত কিনা, কালচার আর ধর্মের চিন্তায় তখন তাকে চাচার চেয়ে আলাদা করা যায়না।

গতানুগতিক ভিলেন এখানে কেউ নয়। মাওলানা তাহিরি (Rasheed Naz) কে ভিলেন মনে করা গেলেও তার যুক্তিগুলোও ফেলে দেয়ার মত নয়। এমনকি তখনকার প্রেক্ষিতে তিনি যখন বলেন, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে CNN আমাদের মুজাহিদীন বলত, আমেরিকার সাথে যুদ্ধে বলে টেররিস্ট...তাঁকে ভুল বলা যায়না। পশ্চিমা মিডিয়ার হিপোক্রিসি টের পাওয়া যায়, ব্রিটিশরা যুদ্ধ করেছিল চীনে আফিমের ব্যবসার জন্য- এই তথ্যের দৃশ্যটুকু কেটে দেয়ার মাঝে।

হিপোক্রিসির এই সিলসিলা থেকে আমরা কেউই দূরে নই। তাই পরিচালক যখন কাহিনীর সমাপ্তি টানটে মাওলানা ওয়ালির (Naseeruddin Shah) আবির্ভাব ঘটান, তিনি যুক্তি তো দেন, কিন্তু যুক্তিতে ফাঁক থেকে যায়। পরিচালক নিজ দেশ সম্পর্কে গর্ব প্রকাশ করতে গায়ক মানসুরের (Shaan Shahid) মুখে শাহজাহানের গল্প বলান, তখন ভারত-পাকিস্তান-মুঘল-মুসলিম সব মিলিয়ে এক জগাখিচুরি তৈরি হয়, মনে হয় পুরো উপমহাদেশে একটাই মুসলিম দেশ, পাকিস্তান! সে-ই আবার দেশের গান গায় ভারতীয়। সাংস্কৃতিক জাতি আর জাতীয়তার বিতর্কে পরিচালক ও তাই বিভক্ত হয়ে যান।

কিন্তু পরিচালকের এই বিভক্তিবোধ ক্ষমা করে দেয়া যায় কিছু দৃশ্যে তাঁর মুনশিয়ানায়। নির্যাতনের সমাপ্তি টানতে মানসুর নিজের হাতে লেখা USA কে USAMA করে দেয়, আর তাঁর রক্তাক্ত মাথা ঠোকা হয় LOVE শব্দের ওপর। নায়ক সারমাদ (Fawad Afjal khan) আযানের সুরেও গানের তাল খুঁজে ফেরে নিজের অজান্তেই, আফগানিস্তানে জোর করে আটকে রাখা মেরি (Iman Ali) আর নিজ জীবনে ফিরে যাওয়ার মানসিকতা রাখতে পারেনা, বেণী বাঁধতে থাকে আফগান কায়দায়। কিন্ত যেমন দেখা যায় পরের ছবি Bol এ, নারী হেরে যায়না, বিচার চায়; পরিবারে ফেরেনা, ফেরে আফগানিস্তানে, মেয়েদের শিক্ষা দিতে।


শেষপর্যন্ত মুভিটা তাই আর পাকিস্তানের থাকেনা, আমাদের সবার হিপোক্রিসির হয়ে যায়। শিয়া-সুন্নি, আসল-নকল, এসব তর্ক তো বহু পুরোনো। এখন কট্টরপন্থী-উদারপন্থী, প্র্যাক্টিসিং-ননপ্র্যাক্টিসিং কত ধরনের মুসলিম। বৃদ্ধা দাদী তাই পুরো মুভিতে ডায়ালগ দেন একটাই, সত্তর বছর আগে প্রশ্ন উঠেছিল, বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে স্কুলে যেতে চায়, পর্দা করবে কি করবেনা, সত্তর বছর পর প্রশ্ন উঠেছে মা পর্দা করবে কি করবে না! Khuda ke liye মুভিটা তাই উত্তরের না, প্রশ্নের। গল্পটা তাই হিপোক্রিসির, আমার-আপনার-তার, সবার!

লিঙ্ক-১ লিঙ্ক-২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×