somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নট-নটীদের সেকাল, একাল...

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় এরকম ছিলো, খুব প্রতাপশালী কিংবা শক্তিশালী অত্যাচারী শাসক কোন দেশ বা এলাকা দখল করলে সেই দেশের সকল দামী দামি জিনিস এবং যুবক যুবতীদের বেঁধে নিয়ে আসতেন। যুবকদের দাস হিসেবে আর মেয়েদের দাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কঠিন পরিশ্রমের কাজ করানো হতো যুবক বা তরুন ছেলেদের দিয়ে, নারীরা ব্যবহৃত হতো যৌনদাসী হিসেবে । নিপীড়ন আর অত্যাচারের সীমা বলে কিছু ছিলো না। তাদের যে সন্তান হতো সেই সন্তানের মালিকও হতে পারতোনা নারীরা। এক কথায় পশু আর আর দাস দাসীদের সাথে কোন পার্থক্যই ছিলো না সে সমময়। কখনো দস্যু ডাকাতরাও বিভিন্ন কাফেলা বা জাহাজ একইভাবে লুট করে অন্যান্য মালামালের সাথে নারী-পুরুষদের বেঁধে নিয়ে আসতো। সেই সব ডাকাতেরা বাজারের মধ্যে নিলাম ডেকে সেই দাস ও দাসীদের প্রকাশ্যে বিক্রি করতো। আইনগত ভাবে তৎকালীন সময়ে সেগুলো বৈধ ছিলো। সেই সব দাস দাসীদের দিনের পর দিন অনাহারে অর্ধাহারে খুবই সল্প কাপড় পড়িয়ে বেঁধে রাখা হতো। এমনও অনেক ইতিহাস আছে মাসের পর মাস তাদের কে একই ভাবে জাহাজে বেঁধে রাখা হয়েছে। একই জায়গায় খাওয়া একই জায়গায় পশ্রাব পায়খানা। কলম্বাসের ভ্রমন কাহিনীতে পড়েছিলাম, তিনি একবার এক জাহাজ ভর্তি মানুষের বিনিময়ে এক পাল শুকর কিনেছিলেন।

আজকের যে বিষয় নিয়ে লিখছি তা উপরের ভুমিকার সাথে কিঞ্চিৎ সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেই এই দীর্ঘ উপক্রমনিকা। সেকালে পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের কে জোড়ে বেঁধে নিয়ে এসে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো । অর্থাৎ পুরুষের মনোরঞ্জন করতে হতো। মেয়েরা নেচে গেয়ে মদের পেয়ালায় মদ ঢেলে দিতো আর তারপর বিছানা। সবশেষে পুরানো মেয়েদের ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুনের আগমন ঘটতো। এভাবেই চক্রাকারে চলতো সেই অভাগা মেয়েদের জীবন। সেইসব মেয়েরাই কিন্তু বিভিন্ন নাট্যশালার মঞ্চে অভিনয় করতো, নাচ গানও থাকতো। প্রচন্ড গরমে হল ভর্তি দর্শকরা যখন হাশ ফাস করতো তখন মেয়েদের অর্ধ-উলঙ্গ করে নাচানো হতো যাতে করে পুরুষরা কিছু সময়ের জন্য গরম ভুলে নাটক দেখতে মন দিতে পারে। মেয়েদের অবধারিত ভাবে টাকার বিনিময়ে বাধ্যতামুলকভাবে প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জন (সম্ভোগ) করা লাগতো। নতুবা ঠাই হতো না সে জায়গায়। প্রতিটা মেয়েদেরই নিজস্ব বাঁধাবাবু থাকতো। ঐ বাবুরা যখন খুশি এসে তাদেরকে ভোগ করতে পারতো। সেই কালে সামাজিক ভাবে পুরো ব্যাপারটাই ছিলো Accepted. বাবুদের স্ত্রীরাও আঁচ করতে পারতেন অথবা বলা যায় জানতেন তাদের স্বামীর কীর্তিকলাপ, কিন্তু কেবল সংসার বাঁচিয়ে রাখতে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতেন। মঞ্চ নাটকের সেই সব কুশিলবদের ডাকা হত নট-নটী নামে। বর্তমান সময়ের এক বহুল প্রচলিত গালি “নটির পোলা” কিন্তু সেই নটি থেকেই এসেছে।

এখন আসি বর্তমান সময়ে, জোর করে কাউকে দাস বানানো প্রায় বিলুপ্ত বলা চলে। সভ্য কোন দেশেই তা আর নেই। কেউ তা করতে চাইলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই বলে নারীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা কিন্তু থেমে নেই। সেকালে নারীরা সেচ্ছায় এসবে আসতোনা। কিন্তু এখন স্ব-ইচ্ছায় কারো কোন প্ররোচনা ব্যাতিরেকে পালে পালে আসছে পুরুষদের শরীর ও মনে আনন্দ দিতে। কত শত তরিকা বের হয়েছে তাদের এসবে নিয়ে আসতে, কত রকমের পুরস্কার আর প্রতিযোগিতার নামে সল্প বসনে নেচে গেয়ে হেটে ঐ পুরুষেরই মনোরঞ্জন। বিনিময়ে কেবলই টাকা। মেয়েরা এখন হেসে হেসে বিছানায় যায়। লং ড্রাইভে আর বিদেশ ট্যুর তো ওয়ার্মআপ হিসেবে ধরলেও চলে। আগেরকালে মেয়েরা কেবল রাতের বেলাতেই একজন পেয়াদার (বডিগার্ড) সাথে বদ্ধ গাড়িতে করে বাবুর ঘরে যেতো, এখন এতো হ্যাপা নেই বর্তমান বাবুরা তাদের একটা গাড়ি গিফট করে দেন আর ফোন দিলেই বান্দি হাজির। আগে নারীরা প্রতিনিয়তই নিজেদের অপরাধী ভাবতো আর মনে করতো তাদের স্থান না জানি নরকের কোন অতল গহীনে। এজন্য তারা সাধু সন্যাসিদের ডেকে এনে আপ্যায়ন করাতো, বিভিন্ন জনহিতকর কাজে লুকিয়ে সহায়তা করতো। আর এসব কাজকে ভাগ্যের দোষ বলে মনে করে নিরবে চোখের পানি ফেলতো । একালের নট-নটি’রা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন চ্যারেটি কনসার্টে অংশগ্রহন করে, আর নিজে এই অবস্থানে থাকায় ভাগ্যের চরম গুণ ভেবে রীতিমতো উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দেয়। সেসময় ও নট-নটিদের পোষ্টার বের হতো, হাতে আঁকা তাদের ছবি মানুষের ঘরে, ছোট ছোট রেস্তোরায় শোভা পেতো।মানুষজন তাদের নিয়ে রঙ্গরসের কথা বলতো। একালেও আলোচনা হয়, তবে নাম পরিবর্তন হয়েছে শুধু, স্ক্যান্ডাল নামেই বেশী পরিচিত তা। যত বড় তারকা তত বেশী স্ক্যান্ডাল। সেকালে চোঙ্গার মত মাইক ব্যবহার করে প্রচারনা চালাতো থিয়েটার কতৃপক্ষ। সাধারন মানুষ অভিনেতা আর অভিনেত্রীদের রাস্তায় দেখলে ভীড় করতো। একালেও একই ব্যপার, শুধু মাধ্যমটাই আধুনিক হয়েছে। বাকি সব আগের মতই আছে। বদলায়নি কিছুই।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×