somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীত্ব ( প্রথম পর্ব) ১৮+

১০ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই গল্পটা হিমুর ছায়া অবলম্বনে লিখবো বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু লিখার পর দেখলাম কোনোভাবেই হিমু ছাড়া এটা কম্পলিট করা সম্ভব না। তাই হিমুর নামেই লিখলাম। জনাব হুমায়ুন আহমেদ স্যার , আমি আপনার অনেক বেশী বড় ভক্ত, আমি হিমুকে বিকৃত করার জন্য নয় , বরং ভাল্লবেসি লিখেছি। দয়া করে এই গল্প না পড়লেও, কেউ বললে বা স্বপ্নে দেখলেও ক্ষমা করে দিবেন।


১)

প্রচন্ড চটকানার চোটে হিমু উলটে পরলো। সারা ঘরে সেই চটকানার শব্দ প্রতিফলিত হতে থাকলো।

- তুই কি বলেছিস স্বতীকে ?
- বলেছি যে ওর চোখ একদম প্রভার মতো। কেনো?
- মেয়েটা সারারাত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেছে!
- কেনো? খুশীতে?
- আরেকটা চটকানা খাবি হারামজাদা! জানিস না, প্রভার স্ক্যান্ডালের খবর শুনিস নাই? সারা বাংলাদেশে সবার মোবাইলে ছড়িয়ে পরেছে!
- নাতো? তোমার মোবাইলে আছে খালা? প্রিন্ট ভালো না হলে কিন্তু আমি দেখবোনা !
- লাথি মেরে তোর নারি-ভুরি বের করে ফেলবো হারামজাদা! তোর সাহস বেশী হয়ে গেছে? ২দিন হলো হাজতের ডলা খেয়ে এলি, আবার তোর তেল বেড়ে গেছে?
- খালা, তুমি বুঝোনাই। তেল বাড়েনাই, তেল ওরা টিপে টিপে বের করেছে। শরীরের বাড়তি তেল বের হয়ে গেছে বলেই তো এতো ফাল পারছি! মৌসুমি যে সিঙ্গাপুরে গেলো চর্বি ফালাতে, কেনো? তেল ফালাতে! তবে, যতোটুকু জানি ওদেরটা কেটে বের করে, টিপে না!
- তোর কাছে আসাটাই ভুল হয়েছে! খবরদার আর যদি কখনো স্বতীকে খারাপ কিছু বলিস! মেয়েটা তোকে ভালোবাসে বলে যা মুখে আসবে বলবি নাকি!
- মুখে আসে বলেই তো বলি, মলদ্বারে আসেনা বলেই তো মলদ্বার দিয়ে বলিনা।

খালা চলে গেলেন। হিমু গালে হাত দিয়ে শুয়ে পরলো। গালটা এখনো গরম হয়ে আছে, ভাবছে একটা ডিম সিদ্ধ করে নিবে কিনা!

স্বতী হিমুর খালা’র চাচাতো বোনের মেয়ে। সামারে ঘুরতে এসেছে, থাকে কানাডায়। বেশী ঠান্ডার দেশে থাকার এই এক সমস্যা! গরম পেলেই কাপড়-চোপর খুলে ফেলে! যেনো গরম ১টা উসিলা মাত্র!

২)

অবাস্তব জিনিস-পত্র বরাবরের মতোই মানব সম্প্রদায়ের আরাধ্যবস্তু! এই যেমন –

“ মেঘের উপর আকাশ উড়ে,
নদীর ওপারে পাখির বাসা,
মনে বন্ধু বড় আশা।
যাও পাখি যারে উরে, তারে কয়ো আমার হয়ে,
চোখ জ্বলে যায় দেখবোতারে……………”

মেঘের উপর আকাশ কিভাবে উড়ে? না বুঝেই এইটা হলো হিট গান। একই অবস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। উনি গত সপ্তাহে ডিসিশান নিয়েছেন উনি এখন থেকে মানুষের উপকারে মন দিবেন, তাই তিনি সারা দেশে চিরুনি অভিযান শুরু করেছেন। তবে উনার চিরুনীতে শুধু দাড়িওয়ালা মানুষ ছাড়া কেউ আটকায়না। হতে পারে উনার দাড়ি উঠেনা বলে উনার বিশেষ ক্ষোভ! এ অভিজানে হিমু ধরা পরেছে, হিমু ভাবছে জামিন পেলে এফডিসি থেকে তার পরিচিত মইত্যাকে এনে মন্ত্রী মহোদয়ার মুখে গোফ-দাড়ি লাগিয়ে দিবে।

হাজতের ভেতর হিমু সাথে আরো ১১জন আছে।
- তোরে আনছে কি মনে কইরা? দেখলেই তো বুঝন যায় তুই ১টা ভাদাইম্যা!
- জ্বি, আজ্ঞে ঠিক বলেছেন।
- তোর নাম কি?
- হিমু। ভালো নাম হিমালয়, কেউ কেউ হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাসের সাথে মিল রেখে হাওয়া ডাকে। অধিক রসিক ব্যাক্তিরা “হাউয়া” বলেও ডাকে।
- এতো কথা জিগাইসি? পেটে পাকিস্তানী ডলা পরলে, তখন বুঝবা কথা কোন্দে বাইর হয়।

সেকেন্ড অফিসার এসে হিমুকে ওসির কাছে নিয়ে গেলো।

- হিমু, তুমি শিবির করতে গেলে কেনো? জানো না, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য দল নিষিদ্ধ?
- ওসি সাহেব, মহাপুরুষদের মাগনা খাওয়া মানা। ছাত্রলীগ করলে মাগনা খেতে হবে, না খেলে মাইর খেতে হবে যে কেনো খাইলাম না। ভাবলাম, তাবত দুনিয়ার সব মহাপুরুষই মাইর খেয়েছে। আমি কোন ছার? আর ছাইদী সাহেব বেহেস্তের টিকেট দিচ্ছেন, ভাবলাম একটা টিকেট বুকিং দিয়ে রাখলে খারাপ হয়না!
- ইউ আর মেকিং ওয়াটার ঘোলা। আই ডোন্ট লাইক ঘোলা পানি। তুমি কি আসলেই শিবিরের সাথে যুক্ত?
- না
- গুড! এইসব করবেনা। এখন সময় বড় খারাপ। চাকরী যায় যায় অবস্থা! সেই কোন আমলে ধানের শীষে ভোট দিয়ছি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাকি ২০ বছর আগের আলোক শক্তিকে কোন বালের শক্তিতে কনভার্ট করে সেই খবর পেয়েছে।চাকরী আমার যায় যায় অবস্থা!
- চাকরী যাবেনা। একটা ফোন করবো , করা যাবে?
- অবশ্যই।

হিমু খালাকে ফোন দিলো।

- খালা? কাহিনী খারাপ।
- কি হইলো? তুই কি স্বতির গায়ে হাত দিয়েছিস নাকি? দেখ হিমু, আমি কিন্তু সহ্য করবোনা!
- খালা, স্বতীর পেটে নাকি আমার বাচ্চা। ও তো বাচ্চা এবর্শান করাতে গেছে, একমাত্র আমি গেলেই নাকি ও এবর্শান করাবেনা!
- কি বলছিশ এইসব! তুই ওর এত্তো বড় ক্ষতি করলি ! তুই এত্তো খারাপ! তুই এখন কই?
- খালা আমি হাজতে, আমাকে বের করো, নাহলে স্বতির হবে অনেক বড় ক্ষতি!


৩)

স্বতী আর হিমু এখন তেজগাও থানার পাশেই “রেডবাটন” বারে। স্বতী লাল পানি দিয়ে গলা ভিজাচ্ছে নাকি কাপর বুঝা গেলোনা।

কিছুক্ষন পরে বারের মালিককে দেখা গেলো। সে টাল হয়ে কিচ্ছু উন্নত বক্ষা নারীর সাথে রসিকতা করছে। হিমু এগিয়ে গেলো।


- ভালো আছেন?
- হু আর ইউ ?
- হিমু, ডাকনাম হিমালয়। অনেকে আদর করে হাউয়া ডাকে।
- আমি কি ডাকবো? হাউয়ার নাতি?
- ডাকতে পারেন? আপনি হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির ভাস্তে। আপনি বরং আমাকে হাউয়া*দা ডাকেন! যার যত ক্ষমতা, তার ততো বেশী মুখ খারাপ!
- খবর তো ভালোই রাখিস, তো কি করবি জেনে? পেপারে জানাবি? ব্লগে লিখবি? তোর মতো হাজার হাজার হাউয়ার পো দের আমি ডেইলী *ন্দাই, এখুন সামনে থেকে ভাগ।
- জ্বি, আজ্ঞে যথার্থ বলেছেন। তবে আপনাকে ১টু বাইরে আসা লাগে যে, আঙ্গুল কাটা জগলু ওয়েট করছে আপনার জন্য।


মুহুর্তের মধ্যে তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে পরলো। দাত কিরমিরের শব্দ একন এর “ আই ওয়ানা *ক ইউ” গানের শব্দ ছেপে কানে আসতে লাগলো। হিমু তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

মেয়ে মানুষ সাথে, আর ঝামেলা হবেনা, ইম্পসিবল! একটু পরেই ধুপ করে ১টা শব্দ হলো, এবং হিমু দেখতে পেলো স্বতী টাল হয়ে পরে আছে।


৪)


প্রভুভক্তি তথা চাকরামী করার জন্য হিমুর বাবা কিছু উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন। বানানো নয়, সত্যি! এই লেখার নাম তিনি দিয়ে গিয়েছেন “ হিজ মাস্টার্স ভয়েস”। তিনি লিখেছেন –

“ সব মহাপুরুষদের কিছুদিন কুকুর জীবন পালন করা বাধ্যতামুলক। সে একজন প্রভুর অধীনে থাকবে, প্রভুর কথাই হবে তার কথা। প্রভুর ভাবনাই হবে তার ভাবনা। প্রভু মিত্থ্যা বললে, মিথ্যাকেই সত্য মেনে নিতে হবে।

কুকুর ট্রেনিং এর উপকার যা হবে তা নিম্নরুপ –

ক) জীবনে বিনয় আসবে।
খ) আনুগত্য কি তা শেখা যাবে।
গ) মানুষকে সেবা করার প্রথম পাঠের শুরু।

কুকুর ট্রেনিং তোমাকে সেবা নামে আরেকটি গুনের সংস্পর্শে আনবে।“


বাবার আদেশ বরই কঠিন বলেই জানতাম, তবে আমি মুগ্ধ! ছাত্রলীগ বর্তমানে বাবা’র প্রতিটি কথাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে! তারা জীবনবাজী রেখে কুকুর ট্রেনিং নিচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা আনুগত্যের সাথে মেনে নিচ্ছে, চাই সে সত্যি হোক কি মিত্থ্যা! দেশটা মহাপুরুষে ভরে যাচ্ছে, ভেবেই হিমুর চোখে পানি এসে গেলো!


- হ্যালো, হিমু ভাই?
- ভালো আছো বকর?
- জ্বি। ভাই, আমার রেজাল্ট দিয়েছে, ভালোই হয়েছে। সবার আগের মিষ্টি আপনাকে খাওয়াবো।
- অবশ্যই! আমাকে না খাওয়ালে খাওয়াবা কাকে?

পরদিন সকালে মিষ্টি খেতে গিয়ে হিমু জানাজা’র নামাজ পড়ে আসলো। শুধু শুনলো, টিভিতে কেউ বলছে – “এটা কোনো ব্যাপার না, এমন ঘটতেই পারে।“
২২টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×