somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাতারের সাতকাহন (সুইমার’স রম্য)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ যেন আমায় কড়াইতে রেখে-
খৈ-এর মতো ভাজছে।
ট্যাপের পানির ন্যায় ঘাম বেরিয়ে
টগবগ টগবগ করে ফুটছে।
গলার কলসিতে রাখা তেষ্টাগুলো-
পানির জগের কথা ভাবছে।
যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো-
আমার খুব গরম লাগছে

জুন মাসের গরম আমায় খুন করে ফেলছিলো।কিছুদিন পরেই শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সামার ভ্যাকেশন কিন্তু আমার জন্য তা হবে ঘামার ভ্যাকেশন।ভ্যাকেশনের ছুটির আগের ক্লাসগুলো করছি ঘামতে ঘামতে এমন সময় ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে যাবার সময় আমার দুই বুয়েট পড়ুয়া বন্ধুকে আমার জন্য থামতে হলো। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিং পুলে ভর্তি হতে চায়, আমাকে অনুরোধ করলো খোজ খবর করতে।দৈনন্দিন ব্যাস্ততার সুই-সুতোয় বোনা সময়ের ফাক গলে খোজ খবর নেয়া শুরু করলাম।ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের খরচ ১০০ টাকায় ৮ দিন আর ঢাবির বহিরাগতরা ২২০০ টাকায় ১৬ দিন।দুই বন্ধুকে এসব জানালাম, কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং-এর যন্ত্রপাতি ততক্ষনে তাদের মাথার উপর নতুন করে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে, কল কব্জার সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের সুইংমিং পুলে সাতড়াবার ইচ্ছা আউট সুইং করে বেরিয়ে গিয়েছে।

সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই ভর্তি হয়ে যাবো। পরিচিত যারা চুবানি খেয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম চুবানি খেতে কেমন লাগে? একজন জানালো পুলের পানি নীল রাখার জন্য পানিতে ক্লোরিন মেশানো হয়, সেই পানিতে সাতার কাটলে গায়ের রঙ কালো হয়ে যায় তবে আরেক বন্ধু যেটা বললো সেটা শুনে ঘাবড়ে গেলাম।গম্ভীর কন্ঠে সে জানালো, “সুইমিং পুলে আমরা মুতি, এইটা ওইটা ফালাই।আরে ব্যাটা, হেই কারণেই ক্লোরিন দিয়া পানি নীল রাখে, নইলে কবেই মুইতা হলুদ বানায় দিতাম। আবার পজিটিভ ফিডব্যাকও পেলাম, ফার্মেসীর এক বন্ধু জানালো সে এই সুইংমিংপুলেই সাতার শিখেছে, এখন গভীর পানিতেও সাতার কাটতে পারে।কিন্তু সমস্যা হলো সে ফার্মাসির ছাত্র, কেমিক্যাল নিয়েই তাদের কাজ কারবার, ক্লোরিন বা ইউরিন দুটোই তাদের কাছে সমান।

ক্লাসের আরেক বন্ধু মেহরাবকে নিয়ে একদিন নিজেই হাজির হলাম পুলে।গিয়েই সকল ধরণের ভয় কেটে গেলো। ট্রেইনাররা বেশ যত্ন নিয়ে প্রশিক্ষন দিচ্ছেন, যারা সাতরাতে পারে তাদের জন্য রয়েছে গভীর পানির পুল আর যারা সাতার শিখে নাই তাদের জন্য আলাদা পুলে সাতার শেখানো হয় যেখানে পানি কোমর পর্যন্ত।ক্লোরিণের পানিতে কালো হয়ে যাবার চিন্তা মাথা থেকে চলে গেলো, সাতার শেখাটাই আসল কথা।সাতার শিখেও যদি ফর্সা থেকে যাই তাহলে নিজেকে দাবী করবো মাইকেল ফেলেপস আর যদি কালো হয়ে যাই, তাহলে আমি হবো সুইমিং পুলের উসাইন বোল্ট।পুলের দিকে তাকিয়ে ক্লোরিনের ভয় কাটলো, আর পুলের পেছনে তাকাতেই কেটে গেলো ইউরিনের ভয়।চেঞ্জিং রুম সংলগ্ন টয়লেটগুলো খুবই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়, দেখলেই টয়লেট চেপে বসে, ঐ জায়গা বাদ দিয়ে কেউ পুলে অকম্ম করতে যাবে সেটা বিশ্বাস হয় না।

ছবি, আইডি কার্ডের ফটোকপি আর ১০০ টাকা দিয়ে কার্ড করিয়ে ফেললাম।তবে এখানেই খরচ শেষ হলো না বরং শুরু হলো ৪০০ টাকা দিয়ে একটা হাফপ্যান্ট কেনা লাগলো, আরো ৩০০ টাকা যোগ করে চোখের জন্য গগলস আর মাথার টুপি। রীতিমতো রণাঙ্গনের সমরসজ্জা।আদুল গায়ে পানিতে নামতে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগে তাই ২০০ টাকা দিয়ে একটা সুইমিং জার্সিও কিনে ফেললাম। জার্সি দিলো তো দিলো এমন ছোট দিলো যে এটা কেউ ব্লাউজ হিসেবেও পড়তে পারবে না।কিছুদিন ঘ্যান ঘ্যান করার পর বদলে দিলো।এবার দিলো তো দিলো এতই বড় দিলো যে ওটাকে একটু টেনেটুনে পড়লে সুইমিং আলখাল্লা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে।ওটা গায়ে দিলে হাটু পর্যন্ত চলে যায় এবং হাফ প্যান্টও ঢেকে যায়।পুলে নামার সময় তলায় হাফপ্যান্ট আছে নাকি নাই এটা নিয়ে নিজেই কনফিউজড থাকি!!

ঢাবি-এর সুইমিং পুলের ট্রেনাররা সাতার শিক্ষনের ব্যাপারে খুবই গ্রামাটিকাল।রিং ধরে তারা সাতার শিখতে দিবে না, তাহলে সাতার শেখা হলেও নাকি ভাসাটা শেখা হবে না।আগে পানিতে ভেসে থাকতে শিখতে হবে, সেই জন্য পানির জড়তা কাটাতে হবে।জড়তা কাটাতে হলে ডুব প্র্যাকটিস করতে হবে।শুরু হলো ডুব প্র্যাকটিস, পানির উপরে নাক দিয়ে বাতাস নিয়ে ডুব দিয়ে পানির নিচে বাতাস ছেড়ে আসতে হবে।আগেই সাতার শেখা এক বন্ধু আমাকে এ ব্যাপারে সাবধান করে রেখেছে।তার ভাষায় সাতারে নামার আগে ক্যাম্পাসের হাবিজাবি ভাজাপোড়া খাওয়া যাবে না।সে হাবিজাবি ভাজাপোড়া খেয়ে প্যাটে গ্যাস বাধিয়ে পানিতে নামতো, তারপর ডুব দেবার আগে নাক দিয়ে বাতাস টেনে নিতো ঠিকই,কিন্তু ডুব দিয়ে পানির ভেতর গিয়ে বাতাস ছাড়ার সময় নাকি নাকের বদলে পেছন দিক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যেতো।

প্রথম দুই তিন দিন চললো ডুব প্র্যাকটিস।শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা আস্তে আস্তে বাড়লো।এই ক্ষমতা শুধু পানির ভেতরেই নয়, পানির বাইরেও সুযোগমতো প্রয়োগ করলাম। একদিন সকাল ৭টার সিংগেল ডেকার ভার্সিটির বাসে চড়ে ক্যাম্পাস যাচ্ছি।প্রচন্ড ভীড়, সিট না পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।আমি দাড়িয়েছি ছেলেদের সারির সবার শেষে এবং আমার পাশ থেকেই মেয়েদের সারি শুরু হয়েছে।শাহজাহানপুরে সিগন্যাল পড়লো, বাস গিয়ে থামলো বিশাল এক ডাস্টবিনের মধ্যে।ওদিকে সিগন্যাল আর উঠে না, এদিকে ডাস্টবিনের ভয়ানক বিভৎস গন্ধ বাসের ভেতর ম ম করছে।বাসের মেয়েরা ওড়না নিয়ে নাক মুখ ঢেকে ফেললো। ছেলেদের যাদের কাছে রুমাল ছিলো, তারা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে নতুন জামাই সাজলো কিন্তু আমার মতো যে সকল ভুলোমনের ছেলেরা রুমাল আনে নাই তাদের তীব্র গন্ধের কাছে অসহায় আত্নসমর্পণ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।ভাগ্যিস সাতারের প্রশিক্ষন নিয়েছিলাম, তাই মুখ দিয়ে একবার শ্বাস নিয়ে অনেকক্ষন ধরে রাখতে পারি।সেই টেকনিক এপ্লাই করে এ যাত্রা বাচা গেলো।সাতার না শিখলে হয়তো সেদিন পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির গায়ে হরহর করে বমি করে দিতাম।সুতরাং বলা যেতে পারে, সাতার শুধু জীবনই রক্ষা করে না, ইজ্জতও রক্ষা করে।

পানির উপর ভাসা শিখতে পারলাম ৬ষ্ঠ কি ৭ম দিনে এসে।এই ভাসাভাসি আর ডুবাডুবির ভেতর একটা জিনিষ খেয়াল করেছি।আগেই বলেছি চেঞ্জিং রুমের পাশ ঘেষেই কয়েকটা টয়লেট।চেঞ্জিং রুমে ঢোকার জন্য ছেলেদের লাইন পড়ে গেলেও আমি নিজেকে ছাড়া কাউকেই টয়লেটে যেতে দেখলাম না। দামড়া দামড়া ছেলেদের সাথে বাচ্চারাও সাতার শিখতে আসে। কারোরই কি কখনো টয়লেট চাপে না?তাহলে সুইমিং পুল নিয়ে লোকে যা বলে সেটাই কি সত্যি? কে জানে, আমার অবজারভেশন ভুলও হতে পারে।

সাতার শিখতে গিয়ে একটা মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষীও হয়েছি।ক্লোরিন মেশানো পানিতে সেদিন মিশেছিলো রক্ত। আমরা কোমর পানির যে পুলে সাতার শিখি তার পাশের ২০ ফুট গভীর পুলটিতে ডাইভ দিয়ে পানিতে পরে ভেসে উঠতে পারে নি একজন।উদ্ধার করার পর দেখা গেলো মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে এসেছে, সম্ভবত পানির উপর বেকায়দাভাবে পড়ে যাবার কারণে এটা ঘটেছিলো।।তাকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে।বাসায়া এসে টিভির খবরে দেখলাম, মারা গেছে সে এখানে ক্লিক করুন

দুর্ঘটনাটির কথা শুনে সাতার শেখায় আগ্রহীদের ভয় পাবার কিছু নেই।আপনার শরীরের ওজন থেকে পুলের পানির ওজন বেশি।সে হিসেবে পানিতে কোনভাবেই ডুবে যাবার কথা না, বরং ভেসে থাকার কথা।পানিতে ব্যালেন্স রাখা শিখে গেলেই আপনি ভেসে থাকতে পারবেন। ডুবে যাবেন তখনই, যখন আপনার নাক-মুখ দিয়ে পানি ঢুকে আপনার ওজন বাড়িয়ে দেবে।সেই জন্যই সাতারের নিয়ম কানুন না শিখে গভীর পানিতে নামা উচিত নয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরো অনেক জায়গায় সাতার শেখানো সে সপর্কে জানতে এখানে দেখুন ।সাতারের উপকারিতা সম্বন্ধে জানুন এখান থেকে

আমার পুরনো একটি রম্য লেখার লিঙ্ক রইলোআমার দৈনন্দিন এভারেস্ট বিজয় (এ্যাডভেঞ্চার রম্য) লাইক দিতে পারেন আমার পেইজে
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×