somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টির গুষ্টিগিলানো ম্যাচে বাংলাদেশের জয় (বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ ক্রিকেট রম্য)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যাচপোড়া ক্রিকেটফ্যান সিদুড়ে মেঘ দেখিলেই ভয় পায়। বৃষ্টির সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে দুখানা টেস্ট ম্যাচেই নিউজিল্যাণ্ডকে সুবিধামতো পাইয়াও বাংলাদেশকে ড্র গুনিতে হইয়াছিলো। ওয়ানডে ম্যাচেও কিনা বৃষ্টি আসিয়া বাগড়া লাগাইয়া দেয় এই আশঙ্কায় ম্যাচের আগে অনলাইনে আবহাওয়া রিপোর্টে ঢু মারিলাম।কোথাও কোন আবহাওয়া রিপোর্টের সন্ধান পাইলাম না, সর্বত্র দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়ার নিরস চিত্র।রাজনৈতিক আবহাওয়ার চিত্র পত্রিকাওয়ালারা আবহাওয়ার ন্যায় লিখিলে হয়তো অধিক মজা হইতোঃ

রাজনৈতিক সংকটসাগরে সৃষ্ট ফোন আলাপীয় লঘু চাপের প্রভাবে গত দুই দিন ধরিয়া দেশের সর্বত্র হরতালী বায়ু প্রবাহিত হইতেছে। আজকের দিনেও এই বায়ু প্রবাহিত হইবে। হরতালী বায়ুর প্রভাবে সারা দেশে গুড়ি গুড়ি ককটেল বৃষ্টি এবং সেই সাথে দমকা মিছিল ও ঘন ঘন টিয়ারশেলপাত হইতে পারে।প্রধান রাস্তাবর্তী যানবাহনকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত প্রদর্শ করিতে বলা হইতেছে।

এদিকে যে সিদুড়ের মেঘের ভয়ে ধুকিতেছিলাম উহা আসিলো মশার প্রতিমূর্তি ধারণ করিয়া।যে সাকিব আল হাসান বিশ্বের বাঘা বাঘা প্লেয়ারগনকে কুপোকাত করিয়াছেন সেই সাকিব কিনা মশার কামড়ে ডেঙ্গু বাধাইয়া সিরিজে অনিশ্চিত!সাকিবের পরিবর্তে একাদশে আসিয়াছে “ছক্কা নাইম” খ্যাত নাইম ইসলাম। তবে ব্যাটিং-এ নামিয়া টেস্ট ম্যাচ না খেলিবার ঝাল মিটাইতে যে হারে ঠক ঠকা ঠক ঠ্যাকাইতে লাগিলো উহা দেখিয়া নাইমকে ঠক্কা নাইম বলা যাইতে পারে।

অবশ্য নাইমেরই বা কি দুষ!নাইম যখন মুশফিকের সহিত ক্রিজে তখন ২৫ রানেই প্যাভিলিয়নে পলায়ন করিয়াছে নাইমের তিন সর্তীর্থ।ম্যানস ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে তামিমকে দেখা যায় মেয়েছেলে-ব্যাটাছেলে সকলকে পটাইয়া বেড়াইতেছে।সেই তামিম ব্যাক্তিগত ৫ রানেই সাউদির চেহারায় পটিয়া গিয়া এল্বিডব্লিউ।হরতালের পিকেটরগন পুলিশের তাড়া খাইলে যেমনে দৌড় মারে ঠিক সেইরাম একখানা দৌড় লাগাইলো মমিনুল,আনামুলের শিত ভুল বুঝাবুঝি হইয়া যাওয়ায় টেস্ট সিরিজের সেঞ্চুরিয়ান রান আউট। মমিনুলকে রান আউট করিবার অনুশোচনায় দগ্ধ হইয়াই কিনা একটু পরেই এনামুল উঠাইয়া দিলো স্লিপে ক্যাচ!টেস্ট সিরিজ হইতেই দেখিয়া আসিয়াছি উক্ত বালক আউট অফ ফর্ম, ফর্ম ফিল আপ করিয়া কোথায় জমা দিয়াছে খোদাই মালুম।এনামুল ফেরত চলিবার পর নাইম মুশফিকের ১৫৪ রানের জুটি জুটি।সম্প্রতি রিয়াদের শ্যালিকা মন্ডির সহিত মুশফিকের বাগদান ঠিক হইয়াছে।সেই খুশীতেই কিনা নিউজিল্যান্ডের বোলারগনের বলগুলোকে মন্ড বানাইয়া মুশফিক মারিতে শুরু করিলো।ব্যাচেলর জীবনের শেষাংশ চুটাইয়া উপভোগ করিতে করিতেই মুশফিক ব্যাক্তিগত ৯০ রানে আউট, এরপর নাসির আসিতে না আসিতেই ফেরত চলিয়া গেলো।ওদিকে নাইমের ব্যাট ক্রমেই টুজি স্লো ইন্টারনেট হইতে থ্রিজিতে রুপান্তরিত হইবার পথে।তবে থ্রি ফিগারে (১০০তে) নাইমও পৌছাইতে পারিলো না, ৮৪ রানে নাইমের বিদায়।অতঃপর রিয়াদ ও রাজ্জাকের ছোটখাটো কন্ট্রিবিউশনে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে টার্গেট প্রদান করিলো ২৬৫ রান।

ম্যাচ চলাকালীন সময় হইতেই আমার মাতা বলিয়া যাইতেছেন, আমাকে বাজারে গিয়া দুগ্ধ আর পিয়াজ খরিদ করিতে হইবে।ক্রিকেট কোচের মতো নিদের্শনাও প্রদান করিলেন, যেহেতু দুগ্ধ এর দোকান উলটা রাস্তায় তাই আগে পিয়াজ খরিদ করিয়া পরে দুগ্ধ খরিদ করিতে হইবে।বাংলাদেশের ব্যাটিং শেষ হইবার পর থেকেই আমার মাথায় ঘুরিতেছে ক্রিকেট ম্যাচের হিসেব নিকাশ।খালি মনে হইতেছে ডিউ ফ্যাক্টরের কল্যানে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করিয়া ধরা না খায়।এইসব ভাবিতে ভাবিতেই আগে দুগ্ধ ক্রয় করিতে গেলুম।আমাদের দেশে দুগ্ধই নাকি পানি মিশ্রিত দুগ্ধ!খাটি দুগ্ধের জন্য প্রসিদ্ধ হইলো নিউজিল্যান্ড।এই পানি মিশ্রিত দুগ্ধ পান করিয়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা কি খাটি দুগ্ধ পান করিয়া আসা নিউজিল্যাণ্ডকে হারাইতে সফল হইবে?দুগ্ধ লইয়া এইসমস্ত ভাবনায় দগ্ধ হইতে হইতেই খেয়াল হইলো আমার আগে পিয়াজ কিইবার কথা। রাস্তা ঘুরিয়া চলিলাম পেয়াজ ক্রয় করিতে।বাজার সাদাই কম করিবার কারণে জিনিষপত্রের দামের হ্রাস-বৃদ্ধির খবরাখবরে জ্ঞাত নাই।পেয়াজ ক্রয় করিতে আসিয়া যখন শুনিলাম পেয়াজের কেজি ৯৫ টাকা তখন বুঝিলাম নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হইতে মুশফিকের কেমন অনুভূতি হইয়াছিলো।

পেয়াজের জন্য রাস্তায় উলটা ঘুরান দিতে হইয়াছিলো বলিয়া বাসায় ফিরিতে দেরী হইলো।ঘরে ঢুকিয়া দেখি নিউজিল্যাণ্ডের ব্যাটিং শুরু হইয়া গিয়াছে এবং সোহাগ স্পিনে উল্টাঘুরান দিয়া রাদারফোর্ডকে উল্টাইয়া দিয়াছে।এরপর উল্টাইয়া গেলো নিউজিল্যাণ্ডের আরো দুই ব্যাটসম্যান।নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়িতেছে, উইকেট পড়িলে মহল্লায় উল্লাস আর ফেসবুকে উদযাপনমুখরিত স্ট্যাটাস, অনেকদিন পর এইসব উপভোগ করিতেছি।এমন সময়েই বৃষ্টি!যে মেঘের শক্ষায় খেলা দেখা শুরু করিয়াছিলাম সেই মেঘ চুপি চুপি আসিয়া বৃষ্টি ঝড়াইয়া খেলা বন্ধ করিয়া দিলো। ডাকওয়ার্থ লুইচ্ছার হিসাব মিলাই, বৃষ্টির গুষ্টিগিলাই।খেলার কি হইবে সেই চিন্তা করিতে করিতে যখন শুকাইয়া কাষ্ঠ হইবার দশা, তখন মাঠ শুকাইয়া ঘোষনা করা হইলো নিউজিল্যাণ্ডকে জয়লাভ করিতে হইলে ৩৩ ওভারে ২০৬ রান করিতে হইবে।ড্রেসিংরুম হইতে এন্ডারসন আর ইলিয়ট কি খাইয়া আসিয়াছে কে জানে, ক্রিজে নামিয়াই উভয়ে শূরু করিলো চার ছয়ের বৃষ্টি। কিন্তু বাংলাদেশের রুবেল হোসেনও পর্যাপ্ত বৃষ্টি মজুদ করিয়া নামিয়াছে, শুরু হইলো রুবেলের অগ্নিগোলা বর্ষন, পরপর তিন বলে এন্ডারসন, ম্যাককালাম ও নিশামের বিদায়, রুবেলের হ্যাটট্রিক।এরপরে ন্যাথাম ম্যাককালাম নিজেকে নাদান ম্যাককালাম প্রমান করিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে ১৪৩-এ রাখিয়া রুবেলের পঞ্চম শিকারে পরিণত হইলো।কিছুক্ষন পর রাজ্জজাক ফিরাইয়া দিলো সাউদিকে।সাউদি গেলেই বা কি হইবে, অন্য প্রান্তে ইডিয়ট(ইলিয়ট) বলখানা পিটাইয়া সৌদি ইরাক পাঠাইতে শুরু করিলো।তবে দলীয় ১৬২ এবং ব্যাক্তিগত ৭১ রানের সময়ে ক্যাচ তুলিয়া দিলো ইডিয়ট লুফিয়া নিলো মাশরাফি মহাশয়।ফিল্ডীং-এর সময় কেন উইলিয়ামসনের বুড়ো আঙ্গুলি ফাটিয়া গিয়াছিলো, তাই নবম উইকেট পড়িতেই নিউজিল্যাণ্ডের ফাটিয়া গেলো, বাংলাদেশ ম্যাচ জিতিয়া গেলো।

বৃষ্টি না নামিলে ম্যাচের ফলাফল কি হইতো বলা মুশকিল, তবে এটুকু বলা যায় বৃষ্টি বরং বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ে সহায়ক হইলো।সিদুড়ে মেঘ দেখিয়া যখন ভয়খানা পাইয়াছিলাম তকন ঘুনাক্ষরেও ভাবি নাই এই সিদুড়ের মেঘের বৃষ্টিতেই পুড়িয়া ছারখার হইয়া যাইবে নিউজিল্যাণ্ড।“মেঘ দেখে তোরা করিসনে ভয়, আড়ালে তার রুবেল হোসেন হাসে”।

লেখালিখি ভালো লাগিয়া গেলে মোদের পেইজে এক খানা লাইক প্রদান করিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:১৯
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×