somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাস তাকে,যার কারনে পৃথিবি দেখেছো!

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দৃশ্যপট:-(১১)
আমাদের মা আমাদেরকে কতটুকু ভালবাসেন,বলতে গেলে আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলি।
কোনটা রেখে কোনটা বলবো,দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই।
আসলে মায়ের অন্তরে আল্লাহ এমন কি জিনিস স্হাপন করেছেন,আমার জানা নেই।
একজন মা, প্রসবকালে কতটুকু যন্ত্রণা সহ্য করে জানতে চান?১০০০ বিষধর সাপ আপনাকে প্রতিটা সেকেন্ডে
এক সাথে ছোবল দিলে কতটুকু ব্যাথা অনুভব করবেন আপনি?একবার ভাবুন,তারচেয়েও হাজারগুন ব্যাথা অনুভব করে একজন মা যখন তার কোন ছেলে বা মেয়েকে প্রসব করে।
এরপর তো সারারাত আপনাকে নিয়ে ভাবা নিজে না ঘুমিয়ে,এই আমার সন্তানের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে না তো?
প্রশ্রাব করলো কিনা,টয়লেট করলো কিনা?কাথা টা পরিবর্তন করতে হবে কিনা?
ধীরে ধীরে আপনি বসতে শিখলেন নিজ মায়ের কাছ থেকে,তারপর বলতে শিখলেন, তারপর হাটতে শিখলেন।
এভাবে আপনার বেড়ে উঠা,এক পর্যায়ে আপনি একজন টগবগে যুবকে অংকিত হলেন,আপনার বিয়ে হলো,এখন ২ দিনের কোন এক মেয়ের জন্য আপনি আপনার মায়ের সাথে খারাপ আচরন, রাগ করা,অবশেষে এক পর্যায়ে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা!
এতকিছু করার পরেও মা কোনদিন এ কথা আপনাকে বলেনি,বাবা তুমি কি কখনো আমাকে নিয়ে ভেবেছো?
আমি তোমার আরামের ঘুমের জন্য কত রাত নিজে না ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছি?
তোমার বুঝ হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাকে ২৪ ঘন্টা আমার চোখের আড়াল হতে দেইনি।
তুমি চোখের আড়াল হওয়ার আগেই তোমাকে খুজে নিয়েছি,কারন কোনটা তোমার জন্য ভালো, মন্দ ,ক্ষতি করবে,সে বুঝ হয়নি তোমার! যদি তুমি আগুনে হাত দেও,তোমার হাত পুড়ার আগে আমার কলিজা পুড়বে!
তুমি আঘাত পেলে,আমার হৃদয়ে আঘাত লাগে।
তোমাকে বড় করার জন্য নিজেকে তিলে তিলে শেষ করেছি,আর তুমি আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলে?
তোমার কাছে আমি কি এখন এত ভারী বোঝা যা তুমি বহন করতে পারছোনা?
এসব কথা বলার অধিকার থাকা সত্বেও নিজের সন্তানের মন খারাপ হবে বলে আর বলেনা।
মা দুইদিক নিয়ে ভাবে,এক সন্তানের জন্য,দুই নিজের জন্য,আর এ ভাবনাতে তুমি নামক সন্তানকে নিয়ে ভাবনার জয় হয়।

এখন বলবো মাকে নিয়ে একটি সত্য ঘটনা।
আমি যখন ক্লাস ফাইভ এ পড়ি,তখন আমার বাবা আমাদের জন্য কিছু কবুতর নিয়ে আসে দুপুরে খাবারের জন্য।
আম্মুু সকাল ১০ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত কবুতর কাটাকাটি করে পরিস্কার করে রান্না শেষ করলো।
আমরা ২ ভাই ১ বোন,বোন আমার থেকে ৩ বছরের বড়,আর ঘরে সবার ছোট আমি।
নানা বিষয় নিয়া শুধু বোনের সাথেই ঝগড়া হত,ঝগড়া করতাম আমিই বেশি।
কারণ আমি ভাবতাম,আমি ছোট বলে আমাকে সবাই ঠোকায়,আমাকে এটা কম দিলো কেন?বোনকে বেশি দিছে!
আমাকে ঈদের সালামি কেন কম দিলো?বোনকে বেশি টাকা দিছে?
এগুলা নিয়া আমি হিংসা করতাম,আর আম্মু আব্বু আমার রাগ আর কান্না দেখে হাসত।
আর বাবা বলত,তোর বোন ত একদিন চলে যাবে,তখন এসবি ত তোর!
দিনশেষে আমি কিন্তুু আম্মুর পাশেই ঘুমাতাম।
তো আম্মু কবুতরের তরকারী নিয়ে যেন দুই ভাই বোন কোন ঝগড়া না করি সে জন্য আগেই প্ল্যান করে রাখছে।
গোসল শেষে যখন সবাই খাবার খেতে বসলাম তখন আম্মু আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলতেছে শোন,
তোরে কিন্তুু কবুতরের মাথা+ঠেং+কলিজা+আর রানের পিছটা দিছি,তোর বোনকে কিন্তুু বলিছ না।তুই চুপ করে খেয়ে উঠ।।।
কিছুক্ষণ পর আম্মু আমার বোনের কানে কানে ফিসফিস করে কি যেন বললো?
এদিকে আমি ত খুব খুশি।যে আজকে জিতে গেছি বোনের সাথে।
খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার মত।
সন্ধ্যায় পড়তে বসে আমার খেয়াল হল,আম্মু কি যেন বলছে বোনের কানে?
বিষয়টা জানা দরকার!
আমি বোনকে ডাক দিলাম,বোইনা???
বোন বললো?কি? অন্যসময় ত নাম ছাড়া আমারে ডাকছ না!
আজকে হঠাৎ বোইনা???কি বলবি,বল?
আমি বললাম,আরে তুই তো আমার বোইন,,এমন করে বলোছ কেন??
শোন,আম্মু তোকে আজ দুপুরে খাবারের সময় কানে কানে কি কইছে রে,,,,???
বলনা আমায়??
আরে না,,,,আম্মু না করছে তোকে বলতে?বললে নাকি সমস্যা হবে!!
আমি বললাম,শোন আমি কাউকেই বলবোনা,তুই ক,,,,,,কি কইছে মায় তোরে?
বোইনা না ভালা ক?তুই তোরটা ক মায় কানে কানে কি কইছে তোরে,,?তুই তোরটা বললে আমিও আমারটা বলবো,মায় আমারে কানে কানে কি কইছে?
অনেক কষ্ট আর নানা বাহানা করে যা জানতে পারলাম সেটা হলো,আম্মু নাকি ওরে (বোনকে) কানে কানে বলছে যে ওরে নাকি কবুতরের গিলা+কলিজা+ঠেং+গলা+আর বুকের পিছটা দিছে আর বলছে আমারে না কইতে???
শুনে আবারও মন খারাপ হলো আমার,কি আর করার,ভাবছিলাম আজ দুপুরে আমি বিজয়ী হয়েছি, কিন্তুু এসব শোনার পর বিজয়ের আনন্দ মন শোকে পরিণত হয়েছে।।।
আর আমারটা শুনে বোইনা ত হাসতে হাসতে শেষ।।
পরেরদিন দুপুরে সবাই যখন খেতে বসলাম,আম্মুু আমারে রুুই মাছের মাথা টা আমার প্লেটে দিছে,আমি আম্মুরে বললাম,হইছে,,,আমারে মাছের মাথা দিতে হবেনা,তোমার মাইয়ারে দেও,বড় মাছের মাথাটা দেও।
আম্মুর বুঝার আর বাকী রইলো না,,,,,কিসের জন্য কথাটা বলেছি।
বাবা মা দুজনেই হাসতে হাসতে শেষ,আম্মু শেষমেষ কপালে চুমু দিয়ে বললো,,,বাবা সবার থেকে তোকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
তারপরেও তোর মন ভরে না! তোর এত হিংসা কেন?তোর বোনের প্রতি??
তোর বোন ত একদিন চলে যাবে আরেকজনের বাড়ীতে,ততদিন পর্যন্ত একটু হিংসাটা কমা!
চলে গেলে পরে ত তুই ও কান্না করবি বোনের জন্য।।।।
এতো হিংসা করতে নেই বাবা।
আজ ২২ বছর বয়সে যখন কবুতরের ভুনা তরকারী দেখি,ঘটনাটা মনে পড়ে,আর নিজে নিজে একা একাই হাসি।
আমার মা,আমাদেরকে কিভাবে ভালবাসতেন।
আম্মুকে এ ঘটনা বললেই হাসে।
সৌদি আরব আসার পরেও আমি কিন্তুু আমার মার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি।
সব ছেলেরা কিন্তুু আমার মত মায়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারেনা।
সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মিনিট কথা বলে।
নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি নিজের মায়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার চেষ্টা করুুন,মনের সব কথা খুলে বলুন।
দেখবেন মনটা ভালো থাকবে.একাকীত্ব কখনোই অনুভব হবেনা।
আমি এখনো কোন মেয়ের প্রেমিক হতে পারিনি,কারন আমার মত ঘন্টার পর ঘন্টা মার সাথে কথা সবাই বলতে পারেনা,,,,,
আমার মত মা পাগল ছেলেরা এমনি হয়।
আগামী বছরে আল্লাহ তাওফিক দিলে আম্মুকে নিয়ে এক সাথে হজ্জ আদায় করবো ইনশাআল্লাহ।




সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×