চিরকুট
তারিখঃ ২১শে চৈত্র ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
প্রিয় Delonix Regia
পত্রারম্ভে পহেলা বসন্তের কোন পড়ন্ত বিকেলে নির্জীব প্রান্তরে শুকনো ডালের ফোঁকরে ফুটে থাকা লাল টগবগে Delonix Regia ফুলের একরাশ দৃষ্টিনন্দন শুভেচ্ছা । কেমন আছো আমার প্রিয় Delonix regia? আমি ভাল আছি বা ভাল নেই তা জেনে নিও পত্রপড়ে। জানো আমি ছুটছি এক Delonix Regia এর পিছু পিছু।
বসন্তের নির্জীব পাতাঝরা দিনের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে, বসন্তও প্রায় বিদায়ের পথে। Red Delonix regia কেন জানি মনে হয় তোমার প্রেমের ফাঁদ পাতা আছে আমার শহরে। অতি নীরব রক্তস্নানে, তুমি ধুয়ে মুছে স্মৃতিগুলো আবার রক্তরাঙা করে দাও।যান্ত্রিকতার এই জীবনের ছক ভেঙে ইচ্ছে করে আবার কাগজের চিঠি পাঠায় তোমার ঠিকানায়। কিন্তু তোমার ঠিকানায় ডাকপিয়ন গেলে সব জানাজানি হয়ে যাবে, তাই তো ভয় হয়। তপ্ত দুপুরে তোমার গলার স্বর ভেসে আসলো আজ আমার সেল ফোনে, কি যেন বলতে চেয়েও বললেনা। ছোট ছোট এই অণুগল্পের নাম দেবো কি ভাবছি!
মাঝে মাঝে আমিও দ্বিধাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি, তোমার অদ্ভুদ কান্ড-বান্ড দেখে। বিষন্নতায় বিষন্নিত আমার শহরে যতটা আলো আসে, তার চেয়ে অন্ধকারের দাপট। কেবলি তোমার অভিনয়ের নরম রোদে আকাঁ স্মৃতিগুলো দিয়ে আমি পকেট ভরি। বহু রাত্রির পর রাত্রি লিখেছি দুর্বোধ্য কবিতার চরণ, তোমাকে তর্জমা করে শোনাবো বলে। আমার ফেরারি মন জড়িয়েছিল তোমারই প্রেমে, আমি যে তোমারেই ভালবেসেছিলাম। অবেলার এ অবৈরী সমীরণে তোমার সালাম করেছি সাদরে গ্রহণ।
পৈচাসিক মস্তিষ্ক হতে নিঙড়ে নামা শত সহস্র কবিতার লাইন, কত কথা বলে কিছু তার মিথ্যে আর কিছু নিরেট সত্যি। কবিতাগুলো কি মনে করো মরিচীকা বিভ্রম, সেগুলোর কি কোন অর্থ নেই? ভেতরের রুদ্ধকক্ষে বাতাস গোঙিয়ে গোঙিয়ে ওঠে, রহস্য নিবারণ স্পষ্টতায় আমি বরাবরই ভুল প্রমাণিত। অনাবৃত মলিন বদনে দিগন্তের ধূসর আবছায়া, চোখে জ্বালা ধরায় অনুরাগের নীলবিষ।যেন অবিশ্রান্ত করুণা হয়ে গেছে ধূলিসাৎ, আথালি পাথালি চিন্তায় মাথা যেন ক্রমশ ভারী থেকে ভারী হচ্ছে।
গগণবিদারী চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাও দিতে পারছিনা এই নগরের মানুষগুলোর জন্য! ঘুমও ঘোরের আড়ালে নিস্তব্ধ ইচ্ছের ঘুম ভাঙবে কবে? কবে আবার হাসবো প্রাণ খুলে, কবে নেব একটু স্বস্তির নিশ্বাস! জানিনা, আমি কিচ্ছুই জানিনা। ভবিষ্যৎ চিন্তার নিগড়ে বাস্তবতায় আমি পরাজিত হতে চাইনা, আমি জিততে চাই।
ধূলোর আস্তরণে ডুবে ক্লান্ত আমিও ভীষণ ঘুমে নিমগ্ন হয়েছিলাম, এখন ঘুরে দাড়ানোর সময় এসেছে।ল্যাম্পপোস্টের মত আমিও আধাঁরে দাড়িয়ে প্রার্থনায়রত ছিলাম তোমার জন্য, তুমি রাখনি আমার প্রতি আস্থা।কিছু সর্পগন্ধী আবেশে তুমি নিজেকে বিলীন করেছো দিনে দিনে। সেই দিনগুলোর ইতিহাস যেন বিস্ফোরণের নদী হয়ে বয়ে যায় অন্তরে।
তোমার মনের কাছ দিয়ে বহমান আমার ছোট সবুজ নদীতে, ভীষণ বৈশাখী ঝড় ওঠো। সে ঝড়ে স্বপ্ন ভাঙার ভয়ে এখন আর চোখে আসেনা শতরাঙা স্বপ্ন।
তোমার বিরুদ্ধাচারণে ছাই হয়ে গেলে আমার ভালবাসা, আমি নামক বিরক্তির থেকে তোমার মুক্তি মিলে গেছে। অভিশাপ হয়েছে ঝাপসা চোখ, এখনো নাতিদীর্ঘ মনের ক্যাম্পাসে তোমার ছবি ভাসে। অসহায়ের মত আমি আজও তোমার অপেক্ষায়। এই জলরাঙা চশমায় লেগে আছে তোমার চোখের ছাপ। মনের এ আন্তঃনগর ট্রেনে কে আগে যাবে কে পরে তা স্টেশন মাষ্টারও ভালো জানেনা। তোমার এই আসা যাওয়ার মিছিল কোন একদিন থেমে যাবে, সেদিন আমাকে ভুলে যাবে এমন করে যেন কোনদিন তুমি আমাকে দেখনি।
আজ আর নয়। মগজের ঘাম গলে গলে নামা শব্দগুলো ক্রমশ ঝাপসা হচ্ছে, আঙুলগুলো অসাড় হয়ে আসছে আজকের মত ইতি টানছি। তোমার নিগূঢ় মনের অন্দরে আমার জন্য একটু প্রার্থনায় চোখে অশ্রু নামিও। বিদায়....
ইতি
তোমার অদ্ভত প্রেমিক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ২:৪৪