তারিখ:৬ জোষ্ঠ ১৪২৬ বাংলা
প্রিয় অনান্মী নগুরে অশ্রুমতি
পত্রের শুরতেই জানাই মধুর মাসে দূরের কোন মগডালে বসা কোকিলের শ্রুতি-মধুর কুহু কুহু ডাকে মুখরিত আবেশের শুভেচ্ছা। কুহু কুহু সুরেলা ডাকের জন্য বিখ্যাত বিদঘুটে, বিচ্ছিরী কালো এই পাখিটার ডাক শুনতেই মাতোয়ারা মানবকূল। জীবন চলার বাঁকে বাঁকে অজানা হাজার কত কাজের ভিড়ে সামান্য সময় চুরি করেছি তোমায় লিখবো বলে।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপে ক্ষনিক সময়ের জন্য আমার রণতরী নোঙর ফেলেছে। সমুদ্র পথের এই যাত্রা বিরতিতে আমার অক্ষিদ্বয়ের কল্পনায় আঁকা-বাঁকা তোমার পোট্রেটের দিকে চেয়ে শেষ বিকেলে তোমায় লিখছি। কেমন আছো? রহস্যময়ী চন্দ্রমুখী। তোমার নামের মত তুমিও কেমন যেন দারুণ দুর্বোধ্য। আমার সাদাকালো হৃদয়কুলে ঝড়ঝাপটার পরশ বুলিয়ে কোথায় নিখোঁজ হয়ে যাও? নিশুতি রাতের অর্ধচন্দ্রিমায় এখন আলো সমুদ্র জলে চোখ রাখা হয়না। নিরাশার স্বপ্নাচ্ছন্ন ঘুম,ঘুমের গভীরতা স্পর্শ করার আগেই কেন জানি ভেঙেচুরে যায়।তোমার হাতের চুড়ির শব্দে আমি বাধঁনহারা হয়ে জোছনার মত হেসে গড়াগড়ি দিতে চাই তোমার নব নগরে। তোমার শাড়ির আঁচলে আমার মুখের ঘাম মুছে দেয়া হিম শীতল আলতো ছোঁয়াতে বিভোর হতে চাই কোন উষ্ণ রোদ্রময় দিনে। ঝুম বর্ষায় এক ছাতার নিচে তোমার সাথে কাদামাখা রাস্তায় নগ্নপায়ে হাটতে চাই,ভিজতে চায় তোমার আঙুলের শিহরণাবৃত স্পর্শে। ইট-পাথরে শহরে চার দেয়ালে বন্দী জীবনের বেড়ি ভেঙে বিচরণ করো আমার শহরের খোলা আকাশে। আমার আঁধার গিলে নাও তোমার আলোর নির্বাসন দিয়ে।
ঝিনুক শামুকে ভরা বালুচরে তোমার ভালবাসার ফাঁদে পা দিতে আমি সদা প্রস্তত নির্ভয়ে।
তোমার শহরের স্বপ্নবিলাসী আমি একবার নয়,বহুবার হোঁচট খেয়েছি। তোমার ঐ গ্রীবার কাঁটাতারে থমকে গেছে আমার সব কথার কলকাঠি,আমি যেন নীরব নিস্তব্ধ স্বপ্নমানব।
তুমি হলে সমুদের তীরে উপড়ে পড়া ঢেউ, মাঝ সমুদ্রে রাতের সূর্যাস্ত লাল আকাশ,নাবিকের আনন্দ, মানবতার একটি স্পর্শ তুমি। অসীম আর দিগন্ত, বাতাস এবং নৌকার শব্দ আনন্দ দিতে ব্যর্থ তোমার অনুপস্হিতিতে।
প্রিয়দর্শনী,
প্রিয়দের নাম অপ্রিয় হলেও সুন্দর। তুমি আমার মনটাকে বাঁধো শক্ত করে তোমার চোখের আলোকবর্ষী কবিতার শব্দাক্ষরে। আবাঁধা আমার ইচ্ছের দৌড়ঝাঁপ চলছে তোমার চোখের আড়ালে। শৃঙ্খলিত শব্দবিন্যাসে আমি আমার মনের শব্দগুলো সাজাতে বারবারই ব্যর্থ,আমি যেন মোমের পুতুল। সে মোমের পুতুল গলিত হতে চায় তোমার ভালবাসার আগুনে। আন-তাবড়ি, উদ্দেশ্যহীন আমার শহরে তোমার কবরীভূষণময় খোঁপা হতে রজনীগন্ধার ঘ্রাণ উত্তরের হিমবায়ুতে আছঁড়ে পড়েছে আমার নাসিকায়। তোমার হাসির শব্দ শ্রাবণধারার মত ঝংকার তোলে আমার কর্ণকুহরে। তোমার নুপূরের উন্মাতাল রিনঝিন শব্দ যেন ডামাডোল বাজায় আমার মনের চোরাগলিতে। অবহেলার দরুনে তোমার অধর হতে ছোড়া অদৃশ্য পাট-কেলের আঘাত খেতে ভাল লাগে। পাপ-পূন্যের হিসেবে আমার হয়তো পাপের পাল্লাটাই ভারী। ভাবাবেগের অগোছালো বিন্যাসে আমার শহরের বেসবাস যেন লব-ডঙ্কা অবস্হা। কি করে পারো তুমি সমুদ্রের পানিতে ভাসমান নিশাচর নাবিকের মনে জল আনতে? আমার ভেজা প্রান্ত অধরের দিকে,তন্দ্রাঘোরের মাঝেও কাঁদে। গণ্ডদেশে আমার অশ্রুবহমান। বুকের গহীনে তৈরী হয় আফসোসের এক অশ্রুনদী। তুমিহীনা এই পৃথিবীতে আমার রোদন এক মুহুর্তের জন্যও আর বন্ধ হয়না। তোমার অনুপস্হিতিতে রোজ দীপ জ্বালি,তারপরেও মনে হয় সারাঘর আমার অন্ধকার,নিকষ আঁধার নামে আমার বুকের অলিন্দে,কান্নার প্রসবন বয় হৃদয়ের প্রতিটি হৃদকোষে। বিষণ্ন হৃদয়ে দুঃখের বার্তা জাগিয়ে এক হরিয়াল প্রান্তরের দিকে তুমি আনমনে হেঁটে গেলে। অসীম উন্মেষে আমি অবাক অপেক্ষার দৃষ্টিতে চেয়ে অাছি তোমার দিকে।
কবে তুমি প্রকাশ হবে,সে অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতেই চায়না। আজ আর নয়। এখানেই শেষ টানতে চাই। বিদায়ের এ বেলাতে আমায় ভরে দিলে বেদনার নীলে। সময় হলে লিখিও আমায়, হলুদ চিরকুটের খামে।
ইতি:- চারপয়সার চিরকুট ওয়ালা
ছবি:নেট থেকে সংগ্রহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৮