দৃশ্যপট:১৩
তারিখ:-১০ জৈষ্ঠ্য ১৪২৬ বাংলা।
আজ আমার শৈশব থেকে একটি গল্প বলবো আপনাদের।
ক্লাস টু তে পড়ি সম্ভবত
তখন সবে গুনতি আর যোগ-বিয়োগ শিখেছি। একদিন সকালে মাদরাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। সুয়েটারের পকেটে হাত দিতেই হাতে ঠাণ্ডা কিছুর স্পর্শ পেলাম। বের করে এনে দেখি একটা কয়েন। ছোট্ট করে লেখা "২৫ পয়সা"। মনে মনে বেশ খুশি হলাম- বাহ! পঁচিশ পয়সাআ! খুশি মনে কয়েনটা আবার পকেটে রেখে তৈরি হয়ে মাদরাসার পথ ধরলাম।
বাসা থেকে বের হয়ে গলির মুখেই দোকান। দোকানে গিয়ে বললাম, "আঙ্কেল একটা কোকোলা বিস্কুট দেন"। বিস্কুটের প্যাকেট হাতে নিয়ে, পকেট থেকে কয়েনটা দোকানির হাতে দিয়ে বললাম- বাকি টাকা দেন।
দোকানি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। উনি বোধহয় হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারছিলেন না। কোনোরকমে আমাকে বললেন, "বাবু এটা তো পয়সা, টাকা না।"
আমাকে বুঝানোর সাধ্য কার! আমিও দ্বিগুন উৎসাহের সাথে বললাম, "হ্যাঁ, ২৫ টাকার পয়সা। এখন আমার বাকি টাকা দেন।"
দোকানি আমার কথায় হেসেই খুন। "আরে বাবু পয়সা আর টাকা তো এক না!"
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, "এক হবে না কেন? ৫ টাকার পয়সা নিতে পারলে ২৫ টাকার পয়সা নিবেন না?"
কি মনে করছেন নিজেকে? নিজেকে খুব চালাক ভাবেন? আমি হিসেব বুঝি,পড়ালেখা করি,কাজেই কোন ভাবেই আমাকে ঠোকাতে পারবেন না। ছোট মানুষ দেখে মনে করছেন ঠকিয়ে জিতে যাবেন?? এতো সোজা না! দোকানীর সাথে আমার কঠিন তর্ক যুদ্ধ। এক পর্যায়ে ওনি আমাকে বললেন ঠিক আছে তোমার কথা। তুমি একটু ঠান্ডা মাথায় বুঝার চেষ্টা কর আমার বাপ।
উনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন, " এটাকে ২৫ টাকার পয়সা বলে না, বলে কয়েন। এইটা ২৫ পয়সার কয়েন, টাকার না। এইরকম চারটা কয়েন হইলে এক টাকা হবে। মানে ১০০ পয়সায় এক টাকা। এইবার বুঝছো?"
আমি ভ্রু কুচকে আবার বললাম দোকানীকে,দেখেন গোলকধাঁধায় ফেলবেন না। আর কি সব আজে-বাজে পাগলের মত কথা বলছেন? দোকানী তখন দোকানের কাঠের বাক্সের সিন্দুক থেকে ২৫ টাকা আর ২৫ পয়সার চারটা কয়েন বের করে আমাকে বুঝালেন। টাকা আর পয়সা দুইটাই অর্থ,তবে টাকার মূল্য বেশি,আর পয়সার মূল্য কম,টাকার পরে পয়সার স্হান। তুমি যদি ২৫ পয়সার চারটা কয়েন এক কর তাহলে হবে এক টাকা,আর যদি ৫ টাকার ৫ টা নোট এক কর তখন হবে ২৫ টাকা। বুঝছো???
আমি মাথা নাড়লাম। এত বিশাল প্যাঁচ আমার বাবু মস্তিকে ঢুকেনি। এইটুকু বুঝলাম যে বিস্কুট কেনা হবে না। আমি নিরাশ হয়ে বিস্কুটের প্যাকেট ফেরত দিলাম। দোকানি সম্ভবত আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। বিস্কুটের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, "টাকা লাগবে না। এই প্যাকেট তোমার"
আমি দু'কদম পিছিয়ে গিয়ে বললাম, "নাহ। থাক। আব্বু কিনে দিবে কালকে।"
উনি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, "আচ্ছা তুমি এখন এই প্যাকেট নাও, আমি এই যে লিখে রাখছি। তোমার আব্বু টাকা দিয়ে দিবে।"
কিন্তু আমার মাথায় তখনো পয়সা আর টাকার "ফারাক" ঘুরছিলো। কি মনে করে বিস্কুটের প্যাকেট না নিয়েই মাদরাসার দিকে ভোঁ দৌড় দিলাম। বহুপরে পয়সা আর টাকার সেই প্যাঁচ মাথায় ঢুকেছিলো।
আমার শৈশব।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:১০