somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম লাইন ২

২৮ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথা শুনে জলিলের ভুঁরুটুরু কুঁচকে গেল। খলিল আবারো ঠাঠা করে হেসে দিয়ে বলল, এইটা কি বাই, কপালে ভাঁজ দিলা ক্যান? ভাইয়ে ভাইয়ে জমি বিকিকিনি করা যাইবো না? এই জন্যে?
জলিল কথা বলতে পারে নি। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার এ জমিটিই হলো শেষ জমি। এর পর থাকল একটি মাত্র থাকার ঘর। সেই ঘরটি ও তার বাপজানে বানিয়ে দিয়েছিলেন। তা না হলে আজ এই জমি বিক্রির পর তাকে বউ নিয়ে চলে যেতে হতো রেল স্টেশনে। সেখানে রাত কাটাতে হতো। রেল স্টেশনে রাত কাটানো টা একটা ভয়াবহ ব্যপার। গায়ে চাদর টাদর কিছু একটা দিয়ে শুয়ে পড়া। মশাসহ হাজারো কীট পতঙ্গ একত্রে এসে ভিড় করবে কানের ফুটোর কাছাকাছি। জলিল নিজে কখনো থাকে নি স্টেশনে তবে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছে এসব।
জমি শেষ পর্যন্ত খলিলকেই দিয়েছে জলিল। তার টাকাটা না পেলে আর চলছে না। টাকাটার দরকার চরম মাত্রা অতিক্রম করে যাচ্ছিলো। পাসপোর্ট কবে থেকেই রেডি হয়ে আছে। ভিসাটাও আর দেরি কিছু নয়। দুএকদিনের ব্যপার মাত্র। এই অবস্থায় জমির চেয়েও টাকাটাই বেশি কাজের। জমি বিক্রির সময় খলিল বলেছিলো, বাই, আপনে কোন খানে জন্মাইছেন কন দেখি? আমার মা জননীর পেটে না? আরে, আপনের টাকা তো ধরেন আমার হাতেই আছে।যদিওবা আপনার চাইতে দেরি হইবো আমার কিন্তুক দিতে এক সেকেন্ড ও লাগবো না। হা হা হা, টাকা পয়সা আমি কাউকেই দেরিতে দ্ই না। আরে কন দেখি, দিতেই তো হইবো। না দিলে তো পরকালে আমার নেক নিয়া পড়বো কাড়াকাড়ি। ধরেন জীবনে একপোডা সওয়াব পাইলাম আল্লা বলল, দিয়া দে এইটা তোর জলিল ভাইয়ে রে। তহন আমি আর কী করুম, কান্দুম। বাই আমার বাচান আমারে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই অইবো না। আমার পুরা নেক তোমারে দেওনই লাগবো।
জলিল কিছু একটা বলতে চাইতেই খলিল আবারো ঠাঠা করে হেসে দিয়ে বলল, তয় বাইজান, এখন এই একলাখ লন, আপনের আগর বাগর কাজ মাজ সারেন। বাকিটা তো ধরেন আপনার চোখের কিনারেই আছে।নিজের ভাই হইলে এইখানে চিন্তা করনের কিছুই থাকে না।
মেনে গিয়েছিলো জলিল। তার ভাই বলে কথা। টাকা তো হলো নরমাল একটা জিনিস। ভাই হচ্ছে আসল। কিন্তু এবার আর মন মানছে না এসব কথা। টাকার দরকার। ভিসা আটকে আছে টাকার জন্যে। মজনু মিয়ার হাতে একবারে সিটিজেন ভিসা। ম্যারেজটার্মে এই ভিসা হয়। একবার লন্ডন গেলেই বিয়ে করা বউয়ের ঠুকে দেয়া মামলার এজাহার-শুনানি যায়
শুরু হয়ে- কেন জমিলার স্বামি জলিল যুক্তরাজ্যের নাগরিক হতে পারবে না এই মর্মে আলোচনা শুরু করা যাক(যেহেতু জমিলা এখানের নাগরিক)।
সবকিছু এরকমই ঠিকঠাক। মজনু মিয়া ডেইলি একবার এইদিকে এসে জলিলের ঘরে এক খিলি পান খেতে খেতে এরকম কথাগূলো মুখস্তের মতো বলে যায়।
জলিলের আজ মাথাটা সত্যি সত্যি গরম। ক্লান্তি তার সারা দেহে কিলবিলিয়ে যাচ্ছে যেন। সুর্যের আলোতে চোখে যেভাবে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে আজো রাস্তার উপর ধপাস করে পড়ে যেতে পারে। খলিল তো জমির দখল নিয়ে নিয়েছে অথচ বাকি টাকাটা দেবার নাম পর্যন্ত নিচ্ছে না। ও ছেলে হিসেবে একটু স্ৎ টাইপ হয়েও এরকম?

মেইন রোডে উঠার সাথে সাথে মজনু মিয়া হাঁক ছাড়লো, জলিল যাও কোনাই?
জলিল হঠাৎ মজনু মিয়াকে চিনতে পারলো না।সে চোখটাকে একটু কচলে নিয়ে আবারো তাকালো। নাহঃ চেনা যাচ্ছে না তো! উপায়ান্তর না পেয়ে বলল, আপনে কে কথা কন? আমারে চিনেন?
মজনু পান চিবোচ্ছিলো। পানের পিক কোঁৎ করে গিলে ফেলে বলল, তোমারে না চিননের কি আছে? তোমরা দুই ভাই, জলিল আর খলিল। কি ঠিক কইলাম?
জ্বে হাঁছা কইলেন। কিন্তুক আমি যে আমনেরে কি জানি ঠিক......
মজনু বলল, চিনো নাই এইতো? তোমার চক্ষে দিশা নাই। তাই ঠাহর করতে পারো নাই । আমি মজনু। তা তোমার টাকার কি খবর? বাইটা কি টাকা দিলো?
না মজনু বাই এখনো দেয় নি।
দিবো তো?
না দিবার তো কিচ্ছু দেখি না। আমার বাই তো চোর না। হয়তো কোনো জায়-ঝামেলায় পড়ছে, আমি তারে তো এ যাব্ৎ বইলতেই পারি নাই। ও দিবো কেমনে?
তাও তো কথা!
মজনু একটু থামল। তারপর আবার বলল, জলিল তোমার বিদাশ যাওয়া বাদ দিলে কি অয়না? টাকা নাই বিদাশ ও নাই। অত দামি ভিসাও দরকার কি?
জলিল কাতর হয়ে বলল, মজনু বাই আমার জইন্য এই ভিসাটা রাখেন নারে বাই। টাকা তো আমি দিমু কইলাম এই দু'এক দিনের মইধ্যে।
তাই যেনো হয়রে বাই , আমার তো এই করেই খাইতে অয়।
মজনু বড় বড় পা ফেলে চলে গেল। টাকার কথাটা মনে করতেই জলিলের গা পুড়ে যায়। খলিল একটা অমানুষ। হারামি টাকা না দেওনের চিন্তায় এখন বাড়ির পথ ভুলে গেছে।রাত কাটায় পোষ্টাফিসের বারান্দায়। তার বউ ছালেহা তার সাথে সেখানে দেখা করতে যায়। কিছুক্ষন থাকে তারপর চলে আসে। জলিলের সামনে ওরা দু'জনের একজনও পড়তে চায় না। এটা কি ভালো? কোনমতেই ভালো না। আজ এর একটা এদিক ওদিক করতে হবে। হয় টাকা না হয় জমি ফেরত নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করতে হবে। রোকেয়া আজ একটু আগে তাকে একথাই শিখিয়ে দিয়েছে।
রোকেয়া জলিলের স্ত্রী। মাথাটা যতটা চিকন তারচে' বেশি সহজসরল। গ্রাম্য এলাকায় এজাতীয় মহিলারা শুধু দু্ঃখ কষ্ট ভোগ করে। সুখ পায় না। যদিও পায় সেটা একবছরও স্থায়ি হয়না।
রোকেয়া তার এ জীবনে সুখ ব্যপারটা কী জিনিস তা এখনো বোঝে না। তার পরনে কখনো নতুন শাড়ি ওঠেনি। পুরনো ছেঁড়া কিংবা ছালেহার দেয়া একটা দুইটা কিছুটা ভালো শাড়ি সে পেয়েছে।এক সময় যখন তার বাবার কাছে থাকতো তখন একটা নতুন ফ্রক পেয়েছিলো। তার ঐ নতুন ফ্রকের কাহিনীটি খুবই মর্মান্তিক। মনে পড়লে গায়ের লোম কাঁটা দিয়ে ওঠে।





চলবে..................


পার্ট এক








সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×