somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-১

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

****
আমি প্রথম যখন কথা বলতে শিখেছি তখন নাকি "মা" শব্দটি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেছিলাম! বিজাতীয় ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দিলে কেমন হত!!
ভাষা আন্দোলনের সকল লড়াকু সেনানী, আর আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। "আমরা তোমাদের ভুলবো না"।

****
একুশ আমার অহংকার! একুশ আমাদের দৃপ্ত চেতনা, স্বাধিকার, প্রতিরোধে ছিনিয়ে আনা এক গৌরব গাঁথার নাম। ৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে
আত্ম-উৎসর্গকারীরা বিশ্বের দরবারে আমাদের পরিচিত করেছে আত্ম-মর্যাদাবান, লড়াকু এক জাতি রূপে।
২১শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস, ভাষার জন্য আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই!

****
শহীদের আত্মত্যাগকে মর্যাদাবান করতে গোটা বাঙালি জাতি অকৃপণ, উদার ভাবে তাঁদের ভালবাসা ঢেলে দিয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে।
একুশের চেতনায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উজ্জীবিত হয়েছে।
ভাষার মাস এলে সাজ সাজ রব চারিদিকে। প্রাণের মিনার সাজে অপরূপ সাজে।
বর্ণিল দেয়াল লিখন, কালজয়ী কৃতি সন্তানদের অমর বাণী থেকে নির্বাচিত কথামালা বুকের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়।
চারুকলার ছাত্র-ছাত্রীরা গোটা মাস ধরে দেয়ালে দেয়ালে তুলির আঁচড়ে ছড়িয়ে দেয় আমাদের অনুচ্চারিত শ্লোগান।

অন্যদিকে একুশের ঐতিহ্যে লালিত বাংলা একাডেমী সাজে নতুন সাজে। শুরু হয় বাঙালীর প্রাণের মেলা। বই মেলা। একাডেমী চত্বরে গোটা মাস জুড়ে বটমূলে চলে অনুষ্ঠান মালা।
মেলায় আগত সারি সারি দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে থাকে ঠিক যেন কাঠের পুতুল।
মেলার অনেক আগে থেকেই লেখক-প্রকাশক ব্যস্ত; ভালো মানের লেখা চাই, ভালো মানের প্রচ্ছদ চাই, ভালো পরিবেশক চাই, শত ব্যস্ততার মাঝে ছুটে চলে লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার,আরামবাগ, আজিমপুর, নীলক্ষেতের প্রেসগুলোতে। কি-বোর্ডে ঝড় উঠে। নতুন লেখক বেশ রোমাঞ্চিত! ছাপার হরফে নিজের নাম! নাওয়া-খাওয়া নেই, চলে প্রুফ দেখা।
নতুন মলাটের ছবি চাই। ফ্লাশ জ্বলে উঠে! মলাট বুকে চেপে ধরে, ঠিক যেন সদ্য জন্ম নেয়া নতুন শিশু। অপেক্ষা ভালো লাগেনা।
ফোন বাজে ঘন ঘন। সদ্য বাঁধানো বই। এখনো ভেজা। ছুটে চলে স্টলে স্টলে। আবারও ফোন বাজে ঘন ঘন।

সবাই হাজির বই মেলায়। ছোট ছোট দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে আড্ডার ঝড় তুলে। নবীন, প্রবীণে আজ কোন প্রতিযোগিতা নেই, আজ কোনও বিদ্বেষ নেই,
সকলে পরিশ্রান্ত তবু ক্লান্তি বোধ নেই।
অটোগ্রাফ শিকারি, ফ্লাশ লাইটের আলোয় ঝলসে যায় মেলায় আগত কিশোর-কিশোরীর মুখ!
দুই-বাংলার বিখ্যাত লেখকদের কার কার বই এলো চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে ঘুরে মেলা ময়। ধুলায় ধুসর। নিরাপত্তা তল্লাশি....। বাহ!

****
একুশ তুমি আমার অহংকার।।

একুশের প্রথম প্রহরকে ঘিরে হাইকোর্ট চত্বর, শাহবাগে বসে ফুলের মেলা। সারারাত জেগে ফুলের ডালা সাজানো, কত বাগানের গাঁদা, ডালিয়া, গোলাপ ফুল উজাড় হয়ে যায় নিমিষেই!
মালীর মুখ অমলিন! "পাগল ছেলের দল"! মনে মনে বলে, নিয়ে যাও সব, বর্ণে-বর্ণে রঙিন হোক গোটা শহীদ মিনার"।

রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে স্কুল-কলেজ গুলোতে জড়ো হয় রাত জাগা এক-ঝাঁক তরুণ-তরুণী, প্রভাত ফেরিতে যাব, প্রভাত ফেরিতে!
প্রভাত ফেরির নিরাপত্তার কারণে ঢাকার অনেক রাস্তাই বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর গোরস্থানে।
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার শুয়ে আছে পরম শান্তিতে। ছোট, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী এই প্রথম শহীদের কবরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বড়দের সাথে !
নগ্ন পা। হাতে ফুলের তোড়া। ইতিহাসের পাতায় দেখা ছবিগুলো কাঁপা-কাঁপা চোখের সামনে ভেসে উঠে " রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই"!
শিশুটি এখন আর শিশু নেই। তার বুকে শানিত প্রতিজ্ঞা, ইস্পাত কঠিন! এদেশ আমার!

নগ্ন পায়ের লাইন এগিয়ে চলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীগুলো সাদা শাড়িতে একেকটি অপ্সরা যেন ! বুকে কালো-ব্যাজ, মলিন মুখ !
মুখে গান "আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি..আমি কি ভুলিতে পারি.."
বুকের ভেতর চেতনায় শানিত দৃপ্ত অঙ্গীকার। এদেশ আমার!

মিছিল এগিয়ে চলে মন্থর গতিতে। সামনেই শহীদ মিনার! পাঞ্জাবি-পাজামায় ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী সব শ্রেণী পেশার মানুষ অবাক তাকিয়ে দেখে 'শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে'!
তারা রাজপথে! বুকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার। রক্ত দিয়ে বর্নমালা, স্বাধীনতা এনেছি। রক্ত দিয়ে রুখে দিব দেশ-বিরোধী সকল অপ-শক্তি।

আজকের রাজপথ ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চের ভাষার দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ৬৫ জনের গ্রেফতার, আমতলায় গাজীউল হক সহ সকল ভাষা সৈনিকের গর্জন
---১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বন্দুকের গুলিতে লুটিয়ে পড়া লাশের সারি.. নীরব নিথর। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তে রঞ্জিত রাজপথের মত সাদা কালো মনে হয়!
(চলবে)

একটি আবেদন: বেশি বেশি বই কিনুন। বিশেষ করে নতুনদের, সহমত ব্লগারদের বই। প্রিয়জনদের বই উপহার দিন। আপনি-ই পারেন একটি সৃজনশীল, একটি সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×