কবির ভাবনায় কেনো যুক্তিভিত্তিক দায় নেই। আর এ ধারণাও প্রচলিত আছে যে কবি যুক্তিমনষ্ক হয়ে উঠলে কবিতা তার থেকে সরে যাবে। হৃদয় খুঁড়েই আকরিক কবিতাকে বিশেষ সময় সচেতন মগজে ছেঁকে দুর্লভ খনিজ কবিতাকে লিখবেন কবি। কবিকে নিশ্চিতভাবেই সত্যপথে শব্দের গভীরতায় প্রবেশ করতে হয়। শব্দের মূল তার ও মৌলিক ইতিহাসও বিবেচ্য। কবির শব্দপ্রয়োগে কমিউনিকেশনের ধার দেখে তার দৌড় মেপে নেয়া যায়। বহু পাঠকের বহুরৈখিক স্বাদে কবিতাকে উপভোগ করতে হয়। আপনিও বহুরৈখিক। বিজ্ঞাপনের তান্ডবে লাক্স বা মেরিলে ধুয়ে নিচ্ছেন আপনার শরীরে লেগে থাকা নাগরিক ময়লাগুলো। আপনার বিবর্তনে যারা উচ্ছেদ হচ্ছে সমূলে, তাদের কি আপনি মনে রেখেছেন? কবিকে তার নৃ-তত্ত্বে যেতে হয়, ফিরে যেতে হয় সেই আদিস্বরে। কবি ডিএনএ তো চরিত্র বহন করে। চরিত্রের কাঠগড়ার কবিকে দাঁড়াতেই হয়। আর এটাই নিয়তি। সমকালে যখন অকবিতার ভিড়ে সত্যিকারের কবিকে হারিয়ে ফেলছি, তখন হতাশার কিছু নেই। কালস্রোত নিজস্ব চাহিদায় সাক্ষী খুঁজে নেয়। কোন্ বিদ্যা প্রকৃত কবিকে উপেক্ষা করবে। সব বিদ্যাই সময়ের ঘোরে বুঁদ হয়ে আছে। আর কবি তো সেই সময়কেই জয় করেছেন। চিনেছেনও। কবি আকারে-সাকারে সময়কে ধারণ করে; অস্তিত্বেও। কেবল জৈবিক মৃত্যু ঘটনা তার দৈহিক মৃত্যু ঘটায়। তবে কবি বেঁচে থাকেন কবিতায়। কবির জ্ঞানে বা ধ্যানে, চেতনায় মিথ-ভূগোল-ইতিহাস-সমাজপাঠ-রাজনীতি-বিজ্ঞান একাকার হয়ে আছে।
আকারগত পরিস্থিতি মহাকালে নিক্তিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। কবির চোখ পরিস্থিতির দেয়ালে আবদ্ধ নয়। তারও একক বিস্ময়কর পৃথিবী আছে। সে যখন আপনার পৃথিবীর মনোজগতের আকারগত ক্রিয়া করে তখন আপনি তাকে অনুভব করেন। কবি অস্তিত্ব টের পান। তার চরিত্রভাবনায় মানদন্ড নিয়ে হাজির হচ্ছেন টেক্সট বুক; কবি-পরিচিতি। কবি তো আরো গোপন স্বভাব। নির্বিষ; নির্লিপ্ত। দেশ ও কাল ছাড়িয়ে যে কোন সংকেত তাকে ছুঁয়ে যেতে পারে অনুভবে। ইন্দ্রিয় কবির সবচে’ বড় পুঁজি, যদিও সে অতীন্দ্রিয় হতে চায়।
যতদূর ভাবা যায়, ততদূর লিখতে না পারার বেদনা চিরন্তন। জীবনকে শব্দ ধরার ফাঁদ ভেবে কবি এগুতে থাকেন। হুইলচেয়ারে আসেন মিডিয়ামুখ্য কবিরা। কবি জীবনের ফাঁদে নিজেই জব্দ হয়ে গেলে তো আর কবি থাকছেন না। শিল্প ও জীবনের দণ্ডে কবিমাত্রই শিল্পের পক্ষে। কবি হতে হলে দেহজ ক্ষয় মেনে নিতে হয়। চিন্তাজটে ক্যান্সার আক্রান্ত উদ্যানে তার জবাব পাওয়া যাবে না। কবিতা দূরগামী। গমনের পথে তারও ছায়া থাকে।
কেরানীভিত্তিক সমাজে শিল্প যখন গ্যালারীবিমুখ, তখন অযোগ্য ও আনাড়ি উচ্ছাসে পুলকিত হবেন না। প্রথমে আপনি কবিতাকে গ্রাস করবেন। অন্তঃকরণে, তারপর কবিতা গ্রাস করবে আপনাকে। সভ্যতার শৃঙ্খল ভেঙে যে শব্দগুলো, যে স্বরগুলো কবিতা হয়ে মহাকালে টিকে থাকে সেগুলোই কবিচরিত্র টিকিয়ে রাখে ইতিহাসে-মিথে। সময়ই চিনে নেবে, আগামী দিনের কোনো বিশেষ চরিত্র কে