somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিবিয়া জীবন: ৫ ...

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শৈশবে পুলিশ আর কুকুর খুবই ভয় পেতাম। একটি আদর্শ পুলিশ স্টেটে বড় হচ্ছি, পুলিশ ভয় না পেয়ে কি কোনও উপায় আছে? প্রায়ই দেখতাম, কোনো বাড়িতে কান্নার রোল। বুঝতাম, পুলিশ এসেছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে কাউকে। অপরাধগুলো খুবই হালকা ধাঁচের। হয়তো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এক বন্ধু অপর বন্ধুকে বলল, গাদ্দাফি আইতাসে তোরে ধরতে। আর অমনি, সিভিল ড্রেসে কেউ এসে বলল, আপনাকে এ্যারেস্ট করা হলো।
আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে একটা লিবীয় পরিবার থাকতো। ভদ্রলোককে আমি কখনোই দেখিনি। শুনেছি, তাকে গুম করেছে সরকারি বাহিনী। ভদ্রলোকের স্ত্রী ইতালিয়ান বংশোদ্ভুত হলেও তুখোড় আরবি বলতে পারতেন। তিনিই আমার মাকে আরবি শিখিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় ৫ বছর ধরে কারাগারে তার এক ছেলে। অপর এক ছেলে মোহাম্মদ ছিলেন পুলিশের বড় কর্তা। চাকরি আর জীবন বাঁচাতে পরিবারের বাইরে আলাদা থাকতেন তিনি। মেয়ে মরিয়ম থাকতেন মায়ের সঙ্গে। সারাদিন গাদ্দাফিকে অভিশাপ দিতেন মা-মেয়ে। গভীর রাতে লুকিয়ে মাকে একবার দেখতে আসার অপরাধে তাকে দক্ষিণের প্রত্যন্ত এক মরুভূমিতে বদলি করা হয়েছিল। আমি নিশ্চিত, মোহাম্মদ যদি এখনও বেঁচে থাকেন-- তাহলে সে এখন মুসরাতায় বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পুলিশ বলেই মোহাম্মদকে খুব ভয় পেতাম আমি। একবার বাবা বললেন, সেকি, ওতো তোমার আংকেল। আমি বললাম, পুলিশ আবার আংকেল হয় ক্যামনে। পুলিশ আর সেনাবাহিনীর পার্থক্য আসলে তখনো বুঝিনি। সেনাবাহিনীর চেয়ে পুলিশকেই বেশি হিরো মনে হতো। ওই হিরোইজমে বুদ হয়ে আমিও বলতাম, বড় হয়ে পুলিশ হবো। শুধু আমি না, আমার স্কুলের সব শিক্ষার্থীদেরই স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। সুপারমলগুলোতে পুতুল পাওয়া যেতো না। মেয়েরাও বন্দুক-পিস্তল নিয়েই খেলতো। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। যা আজও চলছে লিবিয়ায়।
পুলিশের পরই সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল কুকুরে। লিবিয়ার কুকুরগুলো না বোঝে আরবি, না বোঝে বাংলা-ইংরেজি। কোনও ভাবেই থামানো যেতো না ওদের। তবে পুলিশ আরো বেশি হিংস্র। প্রকাশ্যেই গুলি করে মারতো কুকুরগুলোকে। রক্ত ছড়িয়ে পড়তো রাস্তায়। জান খতম হওয়ার পর আসতো সিটি করপোরেশনের ক্লিনাররা। আমাদের দেশে যেমন ক্রসফায়ারের পর মিডিয়া আসে।
১৯৮৬ সালে মার্কিন হামলার পর আরো মজার একটা দৃশ্য দেখতাম। আমাদের বারান্দা থেকেই দেখা যেতো, ইনিফর্ম পড়ে সশস্ত্র অবস্থায় গাদ্দাফির পক্ষে মিছিল করছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীও যে স্লোগান দিতে পারে, এটা দেখেছি তখন। সন্ধ্যার পর শুরু হতো ব্ল্যাকআউট পর্ব। ঘরের সব বাতি নিভিয়ে রাখার কঠোর নির্দেশ। রাজপথে সেনাবাহিনী। ট্যাংক পাহাড়া দিচ্ছে পাড়া-মহল্লা। মাথার ওপর দিয়ে সাই সাই করে উড়ে যেতো জঙ্গিবিমান!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×