কোন শব্দে এতো আকুলতা! এতো আবেগ! এক নিবিড় টান। নাড়িও নারীর টান। শেকড়ের টান।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট শব্দ ‘মা’।
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’—কবির এই ভাবনাটি প্রতিটি মায়েরই মনের কথা। মা শাশ্বত, চিরন্তন।‘মা’ কত কষ্ট, কত না যন্ত্রণা সহ্য করে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে তার সন্তানকে জন্ম দেন। প্রসব বেদনার তীব্র কষ্ট মা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। মা শুধু সন্তানের জন্মই দেন না, সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যে কোনো কিছু ত্যাগ করতে কেবল মা’ই পারেন। কত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে মা তার সন্তানকে নিজের শরীরের রক্তবিন্দু দিয়ে তিল তিল করে বড় করে তোলেন। শুধু তাই নয়, সন্তান জন্মের পর খেয়ে না খেয়ে নিজের বুকের দুধ পান করিয়ে বড় করে তোলেন। ‘মা’ ডাকের মধ্যে কী যে পরিতৃপ্তির সুখ, অনাবিল আনন্দ—তা অন্য কিছুতেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
মায়ের তুলনা মা নিজেই।
একটি আশ্রয়ের নাম ‘মা’,একটি শব্দই মনে করিয়ে দেয় অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসার কথা। মা শাশ্বত, চিরন্তন।
মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথা লিখে কিংবা বলে বোঝানো অসম্ভব, তারপরও আপ্রাণ চেষ্টা যতটুকু বোঝানো যায়। শিশুকালে মা সন্তানের চোখের আড়াল হলেই, কেঁদে বুক ভাসায় শিশু। তখন মা সহজেই বুঝে নেন, ‘মাকে ছাড়া সন্তানের করুণ অবস্থা’, কিন্তু সন্তানরা বড় হলে লেখাপড়া কিংবা কাজের তাগিদে দূরে চলে যায়। মা একলা বাড়িতে থাকেন, আর সন্তানদের আগমনের দিন গুনেন। মা তখন চাইলেও তার বুকের ধনকে কাছে রাখতে পারেন না। মা সে কষ্টের কথা মুখ ফুটে কখনো বলেনও না, সন্তান যদি কষ্ট পায়, সে কথা ভেবে।
সময়ের ব্যবধানে দুরন্ত কৈশোরের মতো মাকে হয়তো আর ক্ষণে ক্ষণে জড়িয়ে ধরা হয় না। মা হয়তো ভাবেন: সন্তান বড় হয়েছে, মায়ের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। মায়ের বুকটা হাহাকার করে- সন্তানকে একটু জড়িয়ে ধরতে। মায়ের সেই আবেগময় প্রত্যাশা আজ একবার পূরণ করুন। মাকে জড়িয়ে ধরে বলুন: মাগো তোমাকে ভালোবাসি সবচেয়ে বেশি।
জীবনের চরম সঙ্কটকালে পরম সান্ত্বনার ছবি হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে মমতাময়ী মায়ের প্রিয় মুখ। আকুতি ঝরে পড়ে কণ্ঠ থেকে, মা আমার মা; আমার ভালোবাসার মা। পৃথিবীতে সবচেয়ে গভীরতম সম্পর্ক ‘মা’, সবচেয়ে মধুর শব্দও মা।
মা’ই প্রথম পৃথিবীর রং-রূপ-শব্দ-গন্ধ চেনান-দেখান-শেখান। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে: ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত।’ যুগে যুগে কবি ও সাহিত্যিকগণ মা বন্দনা করে কত ভালোবাসাই না ঝরিয়েছেন। আব্রাহাম লিংকন মাকে স্মরণে এনে বলেছিলেন: ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, অথবা যা হতে আশা করি তার জন্য আমি আমার মার কাছে ঋণী’,ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন, ‘মাতৃত্বেই সকল মায়া-মমতা ও ভালবাসার শুরু এবং শেষ।’
সব মা’ই তার নিজের সন্তানের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আর সন্তান মাত্রই মায়ের ভালোবাসার কাঙাল। মায়ের স্নেহ-ছায়ায় বেড়ে ওঠার সুখ সব সন্তানের কাছেই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি। মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার বেদনা, মাকে চোখের সামনে দেখতে না পারার কষ্ট সব সন্তানকেই পোড়ায় প্রতিনিয়ত। স্বপ্ন ক্যারিয়ার, জীবনের পথে নিরন্তন ছুটে চলার ব্যস্ততা আমাদের হয়তো মায়ের কাছ থেকে খানিকটা হলেও দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু খুব গোপনে সন্তানের বুকের গভীরে মায়ের যে আসন, সেটি কিছুতেই নষ্ট হওয়ার নয়। নিশ্চিত বলা হয়—সব সন্তানের সাফল্যের পেছনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন যে মানুষটি, তিনি হলেন মা।
মায়ের হাসিমাখা মুখ আমাদের জন্য মহান আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। তাই তোমাকে সালাম, হে মা আমার!
শত কষ্টে যে সন্তানকে আগলে রেখেছেন বুকের মাঝে সে সন্তানের কাছে একসময় বোঝা হয়ে পড়েন কোনো কোনো মা। যাদের জীবনের শেষ ক’টি দিন বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে হয় সন্তানের মুখ না দেখে।
শপথ করুন বুকে হাত দিয়েঃ “আমার মায়ের শেষ স্থান হবে না বৃদ্ধাশ্রম”
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ আমার দেশ, বিডিনিউজ২৪, প্রথমআলো, সামু, ফেসবুক, টুইটার,
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ১:৪০