somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চল সবাই হারিয়ে যাই ছেলেবেলায়ঃ কুটিকালের চিন্তা-ভাবনা ,বিশ্বাস,ভুল ধারনা হাবিজাবি

১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলা কিংবা শৈশব সবারই সোনালী সময় । তখন ভাবতাম ধুর বড় হই না ক্যান ? বড় হইলে একা একা ঘুরতে পারব , বড় মানে স্বাধীন হওয়া , বড় হওয়া মানে মন যা চায় তাই করা ইত্যাদি ইত্যাদি । এককথায় সে সময় আমার চিন্তা ভাবনা একেবারে শিশুদের মতই ছিল । আজ সে সময়ের কিছু চিন্তা-ভাবনা , বিশ্বাস আর ভুল ধারনা নিয়ে লিখছি । কারো সাথে মিলে গেলে কপিরাইট আইনে মামলা করা হবে ।

আমার কয়দিন পরে পরেই জামা ছোট হয়ে যেত । নতুন জামা কিনতে হত । মনে মনে খুব কষ্ট পাইতাম । ক্যান ক্যান ক্যান আমার জামা এত তাড়াতাড়ি ছোট হয়ে যায় ? আমি কি জামারে কম আদর-যত্ন (ময়লা) করি :| ? আমি যে বড় হইতেছি সেটা বুঝতে আমার অনেকদিন লাগছিল । তবে নতুন নতুন জামা পাইলে তেমন খ্রাফ লাগত না ।

আমার মনে হত বড় হলে আমি একদিন ঠিক পাখির মত হাত মেলে আকাশে ঊড়তে পারব । তাই শোকেস , ওয়ার্ড্রোব এটা সেটার উপর থেকে ঝাপ দিয়ে ট্রেনিং নিতাম । ফলস্বরূপ হয় ব্যাথা পেয়ে কাঁদতাম নয় কোনকিছু ভাঙ্গার দায়ে আম্মুর বকুনি খেতাম :( । পরাজয়ে ডরে না বীর , একবার না পারিলে দেখ শত বার । এখন পর্যন্ত উড়তে পারিনাই । তবে ভবিষ্যতে কোন ফরিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়া করি ফালামু , তাইলেই তো নিশ্চিত :-B

চাঁদ ক্যামনে সবার মামা হয় দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করে বছর বছর ধরে গবেষনা করেও বাহির কর্তে পারিনাই । এখনো নিরলস গবেষনা করে যাইতেছি , দেখি কোন সমাধানে আসা যায় কিনা ।

ছোটবেলায় জানতাম যে চাঁদের দেশে জুজুবুড়ি নামক এক বুড়ি থাকে । সে সবসময় বসে বসে সুতা কাটে । তারে নিয়া আমার খুব চিন্তা হইত । বুড়ি থাকে কই খায় কই , সবচেয়ে বড় কথা সুতাগুলো যায় কই B:-) ?

মানুষ যখন হাঁটে তার সাথে সাথে চাঁদও কিন্তু হাঁটে , মানুষ দৌড়ালে চাঁদও দৌড়ায় । শ্লার চাঁদের সাথে পাল্লা দিয়ে কত যে দৌড়িয়েছি । ক্লান্ত হয়ে যেতাম মাগার চাঁদ ক্লান্ত হইত না । আফসুস বড় আফসুস ।

ছোটবেলাতে দাঁত ফেলার আগে যে ভয় কাজ করত দাঁত ফেলে দেওয়ার পর ব্যপক ব্যাস্ততা লেগে যেত আমাদের কচি-কাচার মহলে । সবাই মিলে ইঁদুরের গর্ত খোঁজ কর । গর্তে দাঁত দিলে তবেই না তার বিনিময়ে নতুন চকচকে দাঁত উঠবে । আর গর্তে দাঁত না দিতে পারলে এবড়ো থেবড়ো মোটা দাঁত উঠবে । অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোন গর্ত না পাওয়া গেলে , ইঁদুরকে খুব অনুনয়-বিনুনয় করে দাঁত নিয়ে যেতে বলে দাঁত ছুড়ে ফেলা হত ।

বড়দের কাছে শুনেছি কোন ফলের বিচি খেয়ে ফেললে পেটের ভিতর গাছ হবে আর এ গাছ মুখ দিয়ে ডালপালাসহ বের হয়ে আসবে । আরো ভয়াবহ শুনেছি যে নিজেই গাছ হয়ে যাব । কুল (বড়ই) , জাম , কলা খাবার সময় ভুল করে বিচি খেয়ে কত যে ভয়ে ভয়ে থেকেছি ! না জানি সকালে ঘুম থেকে উঠে বিরাট বটগাছ টাইপের কিছু একটা হয়ে গেছি :-* !



আম্মু আমাদের জোড়া কলা (ফল) , ডিম খেতে দিত না । জোড়া কিছু খেলে নাকি জোড়া বাচ্চা হবে । এ নিয়ে আমি তত চিন্তিত ছিলাম না , কারন লোডটা আমার উপর দিয়া যাবে না । আমার কাছে একটা যা জোড়াও তা হালিও একই । সব বউয়ের উপর দিয়া যাবে :-0 :-0

বই খোলা রেখে কোথাও চলে গেলে চুপিচুপি শয়তান এসে বই পড়ে ফেলে । অনেক চেষ্টার পরও সে পড়া মনে থাকে না । আগে বুঝিনাই , পড়ালেখা না পারলে এটাও একটা অযুহাত হইতে পারত , “শয়তান পড়ে ফেলছে তাই পড়া মনে নাই” ।

কথা বলার সময় কিংবা খাবার খাওয়ার সময় জিহ্বাতে কামড় লাগলে বুঝতে হবে কেউ মনে করছে । চলাচলের সময় উষ্ঠা খেলে কিংবা খাওয়ার সময় নাকে মুখে ভাত উঠলে বুঝতে হবে যে কেউ আমার কথা বলছে । আহারে আমার কতা কি কেউ মনে করে না :(( :(( ?

পরীক্ষার আগে ডিম খেলে নাকি পরীক্ষাতে ইয়া বড় বড় রসগোল্লা মতান্তরে ডিম পাব বলা হত । এটা খানিকটা বিশ্বাস করতাম । এখন আর করিনা ।

কোন কথা বলার পরে সাথে সাথে যদি টিকটিকি টিক টিক করে ডেকে উঠে ,তারমানে বুঝতে হবে কথাটা সত্য বলেছি । আহা ! এভাবে কত সত্য গোপন করা কথা টাইমিংয়ে মিলে গিয়ে সত্য হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই । থ্যাংকু টিকটিকি B-)

ডান হাত চুলকালে নাকি হাতে অনেক টাকা আসবে আর ডান পা চুলকালে স্কুল বন্ধ কোথাও বেড়াতে যাব । কিন্তু বাম হাত আর বাম পা চুলকালে অসুখ-বিসুখ হবে , তারজন্য ইস্কুল ছুটি ।

স্বপ্নে সাপ দেখলে শত্রু বাড়ে , সাপের দৌড়ানী খেলে আসন্ন বিপদ আর সাপ মেরে ফেললে শত্রু খতম । স্বপ্নে অনেকবার সাপের দৌড়ানী খেয়েছি । এবার আমি তক্কে তক্কে আছি । স্বপ্নে সাপ দেখলেই উলটা দৌড়ানী দিমু । দশদিন চোরের হইলেও একদিন কিন্তু গৃহস্থেরই হয় B:-/

কুকুর কামড়ালে পেটে বেবি কুকুর হবে । নাভিতে ইনজেকশন দিয়া সেটাকে মরতে হয় । তাই ছোট বেলা থেকেই কুকুর ভয় পেতাম । তবে এখন দেশে উল্টোটা হচ্ছে বলে কুকুর সমাজ বড়ই চিন্তিত ।

সকালে স্কুলে যাওয়ার পর টিচারদের স্কুলে দেখতাম । সকালের শিফট ক্লাস করে চলে আসার পরও দেখতাম , কখনো স্কুলে থেকে খেলাধুলা করার সময়ও টিচারদের স্কুলে পড়াতে দেখতাম । আমার ধারনা হয়েছিল যে স্কুলই টিচারদের ঘর-বাড়ি । একবার আব্বুর সাথে বাজারে যাওয়ার পর আমাদের এক স্কুল শিক্ষককে বাজারে দেখে আমি অবাক । আরে স্যার বাজারে আসল ক্যম্নে :|| ?

মনে করতাম বাংলাকে জাস্ট ইংলিশ হরফ দিয়ে পালটিয়ে দিলেই ইংরেজি ভাষা হয়ে যাবে । সব ভাষার হাসি-কান্নার একই রকম নাকি ভিন্ন রকম এ নিয়ে আমি ব্যপক চিন্তিত ছিলাম /:)

সিনেমাতে ঘটে যাওয়া কাহিনী সত্যি মনে করতাম । এবং যেকোন বিচ্ছেদে খুব কষ্ট পেতাম । খুশিতে খুশি হতাম । গানের সময় কে বাজনা বাজাত সেটা ছিল ব্যপক বিস্ময় । নিজের ভাঙ্গা গলায় মাঝে মাঝে গান গাইতাম কিন্তু কোনদিক হতে কোন বাদ্য বাজত না । দুঃখ পাইতাম নিজেরে সান্ত্বনা দিতাম , বড় হও সুন্দরভাবে গাইতে পার, তারপরেই না বাদ্য বাজবে 8-|

খবর দেখার সময় চুপচাপ থাকতাম । ব্যাটা যেভাবে তাকায়া থেকে খবর পড়ত মনে করতাম আমারেও চোখেচোখে রাখতাছে । চোখ গরম করে আছে , দুষ্টামি করলে ধমক দিবে X( । একটানে সামনে রাখা কাগজে না দেখে পড়ে ফেলায় মনে করতাম খবর পড়ুয়ারা বিশাল জিনিয়াস । আমি ক্যান তাগো মত হইতে পারলাম না বা পরীক্ষারদিন তাগো মাথাডা ভাড়া নিতে পারতামনা বলে অনেক দুঃখ পাইতাম ।

মাঝে মাঝে মনে করতাম টেলিভিশনের দেখা সবকিছু নিশ্চই টিভির ভেতর থাকে । কারেন্টের মাধ্যমে তারা আসে আবার কারেন্টের মাধ্যমে যায় । কারেন্ট নিয়া খুব ইন্টারেস্টেড ছিলাম । তবে দুই একবার ছেছা খাইয়া (শক খেয়ে ) সেদিকে আর পা মাড়াই নি :-/


রূপকথার রাজকুমার-রাজকুমারীর গল্প সত্য বলেই মনে করতাম । কার্টুনরাও আমাদের মতই মানুষ মনে করতাম । ভাবতাম রুপকথার দেশে তাদের বাস ।

বড় বড় পুকুরের পানির তলায় সোনার পাতিল আছে , সে পাতিলগুলো সাপ আর দৈত্যরা পাহাড়া দিয়ে রাখে । দৈত্যদের প্রানভোমরা সেখানে থাকে । পুকুরের আশেপাশে একলা পাইলেই শিকল মেরে টাইন্যা পানির নিচে নিয়া যায়গা । তাই বড় পুকুরের আসেপাশে একলা যেতাম না ।

রাত্রিবেলা বাঁশি বাজালে নাকি সাপ আসে । তাই আমরা বাঁশি বাজাতাম না । কিন্তু পহেলা বৈশাখের মেলা থেকে কিনে আনা বাঁশির জন্য কোন মানা কাজ করত না । ছবিতে নাগ নাগিনীর রুমান্স দেইখ্যা আমিও কয়েকদিন ভাবছিলাম আমার একটা নাগিন দরকার :!> ।

অনেকে নাকি ব্যাঙের মুখের মানিক পেয়েছে , আমরা ব্যাঙ শিকারে বের হতাম । কিন্তু কোন ব্যঙ্গের মুখেই মানিক পাই নি । সাপের পা দেখলে সাত রাজার ধন পাওয়া যায় এমন একটা কথাও প্রচলিত ছিল । রিস্কি বলে আমরা সাপ ধরতে যেতাম না । তবে বীন বাজিয়ে সাপ আনার ইচ্ছা বহুদিনের । সাপের ঠ্যাং দেক্তে মঞ্চায় ।

আমরা মনে করতাম আনারস আর দুধ একসাথে খেলে মানুষ মারা যায় । কিন্তু বোকাসোকা দেখে কয়েকজনের উপর পরীক্ষা করে আমরা সিদ্ধান্তে এসেছিলাম যে এ ধারনা ভুল :P :P । তবে নিজেদের উপর কখনো পরীক্ষা করিনি ।

সবচেয়ে বড় যেটা ছিল , আমি বিশ্বাস করতাম যে ছোটবেলায় যা ভাবছি যা দেখছি বড় হলেও তার একটুকুও পরিবর্তন হবে না । সব বিশ্বাস আগের মতই থেকে যাবে ।

কত স্বপ্নময় মজার আর অদ্ভুত ছিল ছোট্ট বেলার জীবনটা । ওফ আবার যদি ছোট্টটি হতে পারতাম !
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৪
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×