জাহিদ আরেকবার আয়নার সামনে দাঁড়ায়। হলুদ-সাদা চেকশার্টের বুকপকেটের বোতামটি নেই। এটা আগে খেয়াল করেনি সে। বিশেষ দিনে পোশাক বিড়ম্বনা যেন বীজগণিতের সূত্রের মতো তার জীবনে সার্বজনীন সূত্রে পরিণত হয়েছে। অবশ্য জাহিদের প্রতিটা বিশেষ দিনের একটাই অর্থ- মা আর দুলাভাইয়ের সাথে মেয়ে দেখতে যাওয়া। ঠিক মেয়ে দেখতে নয়, নিজেকে দেখাতে যাওয়া।
নিরীহ গোছের ভদ্রলোক জাহিদ একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে। মায়ের জেদের কারণেই টানাপোড়েনের সংসারে তৃতীয় মানুষের খোঁজ। এই তৃতীয় মানুষের খোঁজাখোজির মাধ্যমেই জাহিদ মুখোমুখি হয় স্বার্থের পৃথিবীর, যেখানে বুকের ভিতর ধারণ করা আকাশের কোন মূ্ল্য নেই, মূ্ল্য আছে আকাশটাকে মুঠোয় রাখা শক্ত হাতের। জাহিদের হাত শক্ত নয়। উচ্চশিক্ষা, বড়চাকরী, বাপের সম্পদ কোনটাই নেই ওর। তার উপর গায়ের রং কুচকুচে কালো। হয়তো এজন্যেই কালো বুকের সাদা হৃদয়ের খোঁজ কেউ করেনি।
জাহিদ জানে আজও সেরকমই হবে যেমনটা সবসময় হয়। লম্বা হাসি দিয়ে কনেপক্ষ অভ্যর্থনা করবে তাদের, এটা ওটা প্রশ্ন হবে। জাহিদের উত্তর শুনে সেই হাসিটা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে একসময় পুরোপুরি বিলীন হয়ে থুতনী ঝুলে যাবে। তারপর কনের বড়ভাই, মামা বা চাচা ইনিয়ে বিনিয়ে, হাত কচলে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে দাড়ি-কমা জুড়ে দিয়ে, মুছে দিয়ে যা বলবে, সেটা সোজা বাংলায় বলা যায়- কালা ফকিরচানকে নিয়ে তোমরা বিদায় হও।
আয়নার সামনে জাহিদের পাশে উদয় হলেন দুলাভাই। আলতো ভাবে জাহিদের কাঁধে হাত রেখে বলেন- ওরা ফোন করে জানিয়েছে, কী একটা সমস্যার জন্য আজ কনে দেখানোর প্রস্তুতি নিতে পারেনি।
হাসে জাহিদ। ভালোই হলো, এই না কথাটা ও বাড়িতে গিয়ে শুনতে হলোনা। সে তো প্রাণহীন কালো পাথর নয়, সে সজীব প্রাণের কালো মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৪