somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

!!ওগো বন্ধু পাশে থেকো!!

১৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের অপূর্ব সাহেব গতরাত্রীর মধুর স্মৃতির মাধুরীমা রোমন্থন করিতে করিতে বেলা খানিকটা মাথার উপরে উঠিয়া যাইবার পরেও স্বপনের মাঝে অদ্যপি মগন রহিয়াছেন। তাহার মুদ্রিত আঁখিপল্লবের মাঝে অক্ষিগোলোকের অনবরত দ্রুত নড়াচড়া দেখিয়া তাহাই অনুধাবন হয় যে গতরাত্রীর স্মৃতিবিজড়িত মধুময় পরশ এখনও তাহার হৃদয়ে হরষে রেশ ছড়াইতেছে।
স্বপনের মাঝে মৃদু ভলিউমে গান বাজিতেছিলো,
Click This Link

এমন সময়ে ছোট ভগিনী কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া তাহার স্বপন মাঝে ব্যাঘাত ঘটাইলো। সাথে আরো কিছু সন্মিলিত কলকন্ঠের কলরোল শুনিয়া অপূর্ব চক্ষু রগড়াইয়া উঠিয়া বসিলো। ভগিনি কৌতুক হাস্যে কহিলো" ভ্রাতা, সূর্য্য যে মধ্য গগনে ঢলিয়া পড়িলো। সকলে প্রাতঃরাশ লইয়া আপনার অপেক্ষায় অপেক্ষমান আর আপনি কিনা এখনও দিবাস্বপন নিদ্রা মাঝে বিচরণ করিতেছেন? শিঘ্রী উঠিয়া কুইকলি ফ্রেস হইয়া সকলের সহিত নাস্তার টেবিলে যোগ দিয়া আমাদিগকে কৃতার্থ করুন।"


পূর্বেই বলিয়াছি আমাদের অপূর্ব কিন্চিৎ লাজুক প্রকৃতির। সে লজ্জিত ও তটস্থ হইয়া তড়িঘড়ি উঠিয়া হাত মুখ ধুইয়া খাবার টেবিলে উপস্থিত হইলো ও ততোধিক বিস্মিত হইয়া দেখিলো, বঁধুমাতা মাথায় ঘোমটা টানিয়া কোমরে অন্চল পেঁচাইয়া এক বাড়ি মানুষের তদারকিতে লাগিয়া গিয়াছেন। অপূর্বের চক্ষু আরো গুল্লু গুল্লাকৃতি ধারন করিলো যখন সে দেখিলো বঁধুমাতা তাহার রাশভারী স্বল্পভাষিণী মাতৃদেবীর পার্শ্বে উপবেশন করিয়া ইতিমধ্যেই তাহার ১০০% মনোরন্জন করিয়া ফেলিয়াছেন।

কি আর করা বঁধুমাতা যেমনে তাহার নব্য শ্বসুর শ্বাসুড়ীর মনোরন্জন করিয়া ফেলিয়া অলরেডী তাহাদের মধ্যবর্তী আসন গ্রহন করিয়াছেন অপূর্বের অগত্যা অপর পার্শ্বে আসন গ্রহন ভিন্ন উপায় রহিলোনা। বঁধুমাতা মহোৎসাহে সকলের খানাপিনা পরিবেশন করিয়া ছোট ছোট কথা ও হাসি তামাশায় সকলের স হিত এরি মাঝে যে পরিমান সখ্যতা গড়িয়া তুলিয়াছে তাহা অপূর্ব কেনো তাহার মাতৃদেবীও মনে হয় ইহ জনমে কোনো নববধুর আচরণে ইতিপূর্বে দেখেন নাই। অপূর্ব আরেকবার মুগ্ধ হইয়া পড়িলো এই বিচিত্ররুপিনীর রুপদর্শনে।



যাহা হৌক অপু খুব সন্তর্পনে ঠিক তাহার সামনে উপবিষ্ঠা বঁধুর পদযুগলের স্পর্শ লভিতে একখানি পা সকলের অগোচরে খুব গোপনে সামনে আগাইয়া দিলেন। আর সাথে সাথে সোনাল মল পরিহিত নববঁধুর পায়ের তৎকক্ষনাৎ পদাঘাতে স্প্রিং এর ন্যায় চমকিয়া চেয়ারের উপরে এক হাত লাফাইয়া উঠিলেন।
সকলে হা হা করিয়া উঠিলো, কি হইলো কি হইলো! অপূ ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া আমতা আমতা করিতে করিতে হড়বড়াইয়া কি বলিলো তাহা কাহারোই বোধগম্য হইলোনা। আর নববঁধু নির্বিকার মুখে পাকা অভিনেত্রীর ন্যায় নিরপরাধ মুখ করিয়া খাদ্য চর্বনে ব্যাস্ত রহিলেন।
কিনতু নববধুর স্বর্ণ নুপুর নিক্কনের সাথে সাথে অপুর্বের এই অভুতপূর্ব লম্ফন গোচরীভুত করিয়া ও আসল মর্মার্থ অনুধাবন করিয়া বাকী সকলেরই বুঝিতে কিছু বাকী রহিলোনা ও তাহারা মুখ টিপিয়া হাসিতে লাগিলেন।

সারাদিন বিবাহবাড়ির নানা কলরোলের মাঝে অপুর্ব স্যারের আর বঁধু মুখদর্শনের সুযোগ ঘটিলোনা তবে বঁধুর সুমিষ্ট মুখখানি তাহার অন্তর মাঝে বারে বারে উঁকি দিয়া জলছবির ন্যায় লুকোচুরী খেলিতে লাগিলো।
Click This Link
সারাদিনের হই হট্টগোল স্তিমিত হইয়া যখন রাত্রী নামিলো ততক্ষণে কন্যার সময় হইল। তিনি হাতে একখানি রেকাবীতে কিছু ফলমূল ও পেস্তা কিসমিস সহযোগে সুদৃশ্য একগ্লাস দুগ্ধ শরবৎ লইয়া অপূর্বের সামনে উপস্থিত হইলেন। তাহার আগমনে যেন শতশত হাস্নাহেনা, মধুমালতীর সুঘ্রানে কক্ষের বাতাস ভরিয়া উঠিলো। মুহূর্তে যেন চারিপার্শ্বের পরিবেশ বদলাইয়া গেলো। অপূর্ব তবুও সারাদিনে বধুমুখ অদর্শনের অভিমানে চক্ষুদ্বয় তাহার পাঠ্য খটরমটর এনথ্রোপোলজী বই হইতে তুলিলেন না। যেন তিনি গভীর মনোযোগে অধয়্যনরত।
বালিকা আসিয়া সোজা সেই অধ্যয়নের প্রগাঢ় মনোযোগের তোয়াক্কা না করিয়া বইখানি লইয়া পার্শ্বে টানিয়া ফেলিয়া দিলো। অপুর্ব চক্ষু বড় করিলো যেন খুব বিরক্ত হইয়াছে। তদুপরি কিয়ৎ কৌতুকচ্ছলে
কহিলো "কি ব্যপার আজ আবার আপনার কি মনোবাসনা ? গতকাল্যের জ্যোস্না-স্নানের ন্যায় আজ আবার আকাশ বাতাস কি স্নান করিবার ইচ্ছা জাগিছে মনোমাঝে হে রাজকন্যা?"

শুনিবামাত্র রাজকন্যার মুখবর্ণ পাল্টাইয়া অগ্নিবর্ণ ধারন করিলো। কন্যা রোষান্বিত হইয়া কহিলো" তবেরে আমার এতদিনের সাধ আহ্লাদ জ্যোস্না স্নান লইয়া খোঁটা দেওয়া? আজ আমি তোমাকে জ্যোস্না-স্নান নহে এই দুগ্ধ শরবৎ দেখিতেছো আমার হাতে, ইহা দিয়াই শরবৎ-স্নান করাইবো।

বলিয়া সেই দুগ্ধ শরবৎ ফলমুল শুদ্ধ রেকাবীখানা ঝন্নাৎ করিয়া টিপয়ের উপর ফেলিয়া দিয়া হাতে শরবতের গ্লাস তুলিয়া লইলো। অপুর্ব এই পাগলীর কান্ড-কারখানা দেখিয়া বিষম ভীতসন্তস্ত্র হইয়া তড়াক করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া এক লম্ফে কক্ষের এক কোনায় গিয়া পড়িলো। কন্যাও ছাড়িবার পাত্র নহে। গ্লাস শুদ্ধ শরবৎ লইয়া তাহার মাথায় ঢালিতে কক্ষের সেই প্রান্তেই ছুটিয়া গেলেন । এক প্রান্তে সে যায় তো অপূর্ব আরেক প্রান্তে ছোটে , বহূকষ্টে অনুনয় বিনয়ে আর কখনও তাহার কোনো ইচ্ছা লইয়া বিন্দুমাত্র উচ্চবাচ্য হাসি মস্করা করিবেনা এই প্রতিশ্রুতি দিয়া সেই যাত্রা রক্ষা পাইলেন ।


কখন রাত্রী দ্বিপ্রহর পার হইয়া গিয়াছে তাহা তাহাদের জানা হয় নাই। অপূর্ব তাহার বালিকাবধুর কোলে মাথা রাখিয়া তাহার বাকবাকুম শুনিতে শুনিতে নিদ্রামগন হইতে হইতেও হইতেছেনা।

কন্যা তাহার মাথার চুলে বিলি কাটিয়া দিতেছে ও একসেকেন্ড বিরামহীন ভাবে উদগীরণ করিতেছে তাহার ইহজীবনের মনের যত না বলা কথা। এক মধুর আবেশে চারিদিক যেন স্বর্গভুমীতে পরিনত হইয়াছে।

Click This Link

হঠাৎ মুখরা বালিকা স্তব্ধ হইয়া কি যেন ভাবিতে লাগিলো। তাহার আঁখি হইতে এক ফোঁটা তপ্ত জল টুপ করিয়া অপূর্বের গন্ডদেশে ঝরিয়া পড়িলো। অপূর্ব পরম বিস্ময়ে অবাক হইয়া উঠিয়া বসিলো । বিস্মিত হইয়া বালিকার মুখপানে নির্বোধের ন্যায় চাহিয়া রহিলো।

বালিকা হাসিয়া কহিলো, এ তাহার সুখের কান্না। মোটেও দুখের কিছু নহে। জন্মেই মাকে হারাইয়াছে সে, বাবা থাকিয়াও না থাকার মতন । আজীবন মামার বাড়িতে পরগাছার মত বাড়িয়া উঠিয়াছে। আজ শুধু তাহাকে পাইয়াই সে সূখী নহে। আজ সে পাইয়াছে মা বাবা ও ছোট ভগিনী ও ভ্রাতা। এ জীবনে একটি পুরো পরিবার উপহার দেওয়ায় বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাহার এ আনন্দাশ্রু।

অপূর্ব যেন কখনও শুধু স্বারর্থপরের ন্যায় বধুকে শুধু তাহার ভাবিয়া তাহার মাতৃপিতৃরূপী শ্বশুরশ্বাসুড়ি ননদ দেবরের এই পারিবারিক স্নেহ হইতে বন্চিত না করে এই তার চাওয়া। আজ সারাদিন অপূর্বের মনে বধু অদর্শনে যে ক্ষোভ ও অভিমান জন্মিয়াছিলো তাহা মুহুর্তের মাঝে বিলীন হইয়া গেলো।

অপূর্ব মুগ্ধতার সহিত শুধু নহে শ্রদ্ধায় বালিকার মুখের পানে চাহিয়া রহিলো । তাহা দেখিয়া বালিকা লজ্জিত হইয়া অপূর্বের বক্ষে মুখ লুকাইলো।
Click This Link)

( যাহারা এতক্ষণ কষ্ট করিয়া এ গল্প পড়িয়াছেন তাহারা কেহ কেহ মুখ বাঁকাইবেন জানি । বলিবেন আহা এ যুগে বা সে যুগে এমন বধু কাহারো ভাগ্যে কি জোটে? বিজ্ঞের ন্যায় কেহ কেহ মাথা নাড়াইয়া উত্তর দিবেন, কখনই নহে। কেহ কেহ প্রকাশ্যে না বলিলেও মনে মনে বলিবেন, ঢং দেখিয়া গা জ্বলিয়া যায়। আবার ইহাও বলিতে পারেন,এসব শুধু বাংলা সিনেমায় শাবানার মত অতি ভালোমানুষ বধু চরিত্রের মাঝেই দর্শন সম্ভব।

তাহাদের উদ্দেশ্যে বলি , জগতে আজো সত্যি আমাদের অপূর্বের মত বঁধুর দেখা পাওয়া সম্ভব আর তাহা আজো আছে বলিয়াই পৃথিবী আজো টিকিয়া আছে। ধুকুর ধুকুর করিয়া চলিতেছে।

গল্পের সমাপ্তি এখনও হয়নাই। আরো কাহিনী বাকী আছে। কাজেই

চলিবেক :))

১২২টি মন্তব্য ১২১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×