somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~~ছেলেবেলার গল্প শোনার দিনগুলো~~~ এক রুপকথার যাদুকরের জন্য ভালোবাসা~~~

০১ লা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যার নামটা হঠাৎ শুনলেই বা আচমকা কখনও মনে পড়লেই আজও বুকের মধ্যে হার্টটা একটুখানি লাফ দিয়ে ওঠে, মুখটা হাসি হাসি হয়ে যায় নিজের অজান্তেই, রিন রিন করে বয়ে যায় সারা শরীরে সেই ভালোলাগার নদী, কানে বাজে গুনগুন সূরেলা ছোট্টবেলার মায়ের ঘুমপাড়ানী গানের মত কোনো ভালোলাগার সূর আর এই ভালো লাগার রেশটা ছড়িয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষন।

মনে পড়ে ছোট্ট বেলায় প্রথম চেনা সেই দুঃখী মৎস্যকন্যাকে যার দুঃখ নিজের দুঃখের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো একদিন। :(


মনে পড়ে সেই অনড় অটল এক পায়ের সাহসী টিনের সেপাই এর কথা। মৃত্যুকে চোখের সামনে এগিয়ে আসতে দেখেও যে বিচলিত হয়নি কিছুতেই। মনে পড়ে কুৎসিত সেই হাঁসের ছানা প্যাকারুর কথা। মাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবার দুঃখ। সেই হাঁস মা আর তার অনেক দুরে চলে যাওয়া ছানার কষ্টে একদিন চোখের জলে বুক ভিজিয়েছি এই আমি।


আবার হেসে কুটিকুটি হয়েছি নেংটু বোকা মহারাজার নতুন পোষাক বা উড়ন্ত সিন্দুকের গল্প পড়ে। আমাকে সেই ছোট্ট থেকেই সুখ দুঃখ হাসি-কান্নার ভেলায় ভাসিয়েছিলো যেই মানুষটা আর আজও ভাসায় যিনি, এতক্ষনে যারা পড়েছেন আমার এ লেখা তারা সবাই নিশ্চয় বুঝে গেছেন কি তার নাম হতে পারে। হ্যাঁ তিনি ছেলেবুড়ো সবার প্রিয় হ্যান্স ক্রিশচিয়ান এ্যান্ডারসন।


তার গল্পগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার তেমন কিছুই নেই আসলে। আমার ধারনা এ বিশ্বে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়াই দুস্কর(নিরক্ষর ব্যাক্তি ব্যতীত)হবে যে কিনা তার একটা গল্পও না পড়ে বড় হয়েছেন।

যাইহোক, আমার অনেক অনেক অনেক প্রিয় এ মানুষটির অনেক গল্প ছেলেবুড়ো সকলেই জানলেও সবাই কি জানেন এই রুপকথার যাদুকরের ছেলেবেলাটা মোটেও সুখকর ছিলোনা , সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি তিনি, ছোট থেকে নানা রকম প্রতিকুলতার মাঝ দিয়েই বড় হতে হয়েছে তাকে। এক হত দরিদ্র জুতো কারিগরের বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। তবে তার পারিপার্শ্বিক, সামাজিক সীমাবদ্ধতা আটকে রাখতে পারেনি তার মনের জানালা। কল্পনার পাখায় ভর করে সে জানালা দিয়েই উড়ে গেছেন তিনি দেশ থেকে দেশান্তরে, মেঘেদের রাজ্যে বা স্বর্গের ফুলেল সুবাসিত বনভুমিতে।


ডেনমার্কের অদেন্স শহর ছিলো তার জন্মস্থান। বাবা ছিলেন দরিদ্র জুতা কারিগর। গল্পের এ যাদুকর রুপকথার আদলে লিখেছিলেন প্রায় দেড়শোর বেশী কাহিনী। রুপকথায় রুপ নেওয়া কাহিনীগুলো নামাকরণ করা হয়েছিলো ফেইরী টেলস হিসাবে। তবে এসব নিছকই গল্পগাঁথা নয়, এসব গল্পের নানাবিধ উপকরন রুপকাহিনীকে দিয়েছে এক অনন্য বৈশিষ্ঠ। ঘর বাড়ি, জীবজন্তু, ফুল, পাখি, লতা, লাটিম বা কাঠের বল সবাই প্রান পেয়েছে তার লেখায়। নিস্প্রান জড় বস্তুগুলোও উঠে এসেছে মানবীয় গুনাবলীতে এক অনন্য মধুর সৌন্দর্য্যে। এসব মর্যাদা পেয়েছে সর্বযুগে, সর্বকালে। এ পৃথিবী যতদিন চলমান রইবে, এসব রুপকাহিনীগুলিও বুঝি সৃষ্টির শেষদিন পর্যন্ত রইবে সমান সমাদৃত।


এ্যান্ডারসনের ৪টি গল্প প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৩৫ সালে ডেনমার্কে । ১৮৪৬ সালে ইংরেজীতে হয় তার অনুবাদ। খুব দ্রুত ইউরোপ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। সত্যিকারের ভালোলাগার আবেদন যে দেশ, কাল, ভাষা সকল কিছুর সীমানা অতিক্রম করে যায়, তার প্রমান ১৮৭৫ সালে বাংলা ভাষায় প্রকাশ হওয়া এ্যান্ডারসনের গল্প অনুবাদ গ্রন্থটি।


এ্যান্ডারসনের গল্প মানে শুধুই শিশুমনের কল্পনা বা রুপকথা নয় এর রয়েছে নানা মূল্যবান তাৎপর্য্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "তাসের ঘর" লিখেছিলেন তার কোর্ট কার্ডস লেখাটি পড়ে অনুপ্রানিত হয়ে।


১৮০৫ সালের ২ এপ্রিলের কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষনে জন্ম নিয়েছিলেন এই রুপকথার যাদুকর। তার আরও একটি জন্মক্ষন আসন্ন। এ শুভক্ষনে আমার ও সকলের প্রিয় রুপকথার যাদুকর হ্যান্স ক্রিশচিয়ান এ্যান্ডারসনকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। যুগে যুগে বেচে থাকো তুমি ছেলেবুড়ো নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ে। ভালোলাগা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। ছড়িয়ে দাও সোনালী সুখের রেণু.............


হ্যান্স ক্রিস্চিয়ান এ্যান্ডারসনের জন্মদিনে, পৃথিবীর সকল শিশু ও রুপকথাপ্রেমী মানুষগুলোর পক্ষ থেকে, তাকে জানাই একরাশ বর্নীল শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা!

আর এই দোসরা এপ্রিল আমার আরও একজন প্রিয়বন্ধু
মুকুট বিহীন সম্রাট এর জন্মদিন। তাকেও এই বিশেষ দিনটিতে অন্তরের অন্তস্থল হতে জানাই ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।

বন্ধুত্ব মানে একে অন্যের দোষ গুন মানিয়ে নিয়ে একসাথে চলা।
কিছু পছন্দ, কিছু অপছন্দ থাকবে, তার মানে এই না যে বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে।

কাল সিসিমপুর মেলায় গিয়ে শিখেছি। :P সে গল্প নাহয় আরেকদিন হবে। :)

আপাতত প্রিয় দুজন মানুষের জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা।:)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:১৭
১৫৩টি মন্তব্য ১৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×