somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~*~ আমার পাপেট শো ২০২৩ - গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন~*~

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েনকে চেনে না এমন মানুষ মনে হয় একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে না এই বাংলায়। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর লেখা এ গল্পটা যদিও কেউ না পড়েও থাকে তো প্রখ্যাত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ছোটদের জন্য বানানো সিনেমাটি কেউ দেখেনি সে কথাও বিশ্বাস করা কঠিন। ছোট্ট সন্দীপ রায় মানে সত্যজিৎ রায়ের ছেলের অনুরোধেই নাকি তিনি এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন। এই গল্পকার উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন সত্যজিতেরই দাদামশাই। সত্যজিৎ রায় এই সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন। এই ছবির সবকটি গান রচনা ও সুরারোপও তারই করা। এই সব তথ্য আমি উইকিপিডিয়াসহ আরও অনেক প্রবন্ধে জেনেছি।


সে যাইহোক, প্রতিবছর বাংলা নতুন বছর উপলক্ষ্যে আমি এবং আমার পাপেটিয়ারস টিম একটা করে পাপেট শো বা পুতুল নাচ তৈরী করি। এই পুতুল নাচ বা পাপেট শো এর পাপেটিয়ার রুপে আত্মপ্রকাশ আমার সেই ২০১২ থেকে। সেটাই ছিলো আমার জীবনের নিজের হাতে পুতুল নাচের অভিজ্ঞতা। ~~তা না না না নাচো তো দেখি আমার পুতুলসোনা~~~ !!! জীবনের প্রথম পুতুল নাচের ইতিকথা!!!


সেই ছোট্টবেলায় বিটিভিতে দেখা গল্পদাদুর পুতুল দিয়ে বলা গল্পগুলি আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখে কল্পনার রাজ্যে ডানা মেলে দিতাম। বসে বসে ভাবতাম কেমন করে কথা, বলে গান গায় আর নাচে এই নিস্প্রান পুতুলগুলো। আমার জুতোর বাক্সের পুতুলগুলো তো কোনো কথা বলে না, হাঁটতে চলতেও জানে না। এমন সব ভাবনায় ভেসে যেতাম আমি আমার ছেলেবেলায়। ঠিক কিভাবে যে এই পুতুল নাচ বা পাপেট শো বানাতে হয় সেসব জানবার কোনোই সুযোগ ছিলো আমার ছেলেবেলায়।

কিন্তু আমার বড়বেলায় এসে গেলো সেই সুযোগ। তখন ২০১২ সাল। আমার স্কুলে পহেলা বৈশাখের মেলা হবে। মিটিং এ কি কি আইটেম হবে সেই নিয়ে কথা হচ্ছিলো। কে যেনো বললো পাপেট শো আনতে পারি আমরা। সেই সময় পাপেট শো আনা এক ব্যয়বহুল ব্যপার ছিলো। তো ভাবনা চিন্তা করছিলাম আমরা। চিরকালের পন্ডিৎ আমি সকল কাজের কাজী ধরেই নিলাম এটা মনে হয় আমি পারবো। কি ভেবে বলেছিলাম জানিনা। মনে হয় আমার দুঃসাহসের জোরেই। কিন্তু আমাদের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাম আমার উপর ১০০% ভরষায় ইয়েস করে দিলেন। আমিও অকুল পাথারে কোনো কূল কিনারা না জেনেই ঝাঁপ দিলাম।



তবে হ্যাঁ ঝাঁপ দেবার পরই দেখলাম আমি একা নই, সাথে আমার প্রিয় স্কুল এবং এই স্কুলের প্রতিটি মানুষ, ইট কাঁঠ বালুকনারাও আমার সাথে, আমার পাশে। আমি আসলে নিজেও জানতাম না পুতুল নাচের পিছে যে এতকিছু থাকে। ডুব দেবার পরই জেনেছিলাম সাউন্ড মিউজিক একশন হা হা । শেষ মেষ একতাই বলের কারনেই ১০০% সফলতার সাথে শেষ হয়েছিলো সেই পুতুল নাচের আয়োজন। আমরা প্রমান করেছিলাম টিমওয়ার্কের আবশ্যকতা। এরপর এই ১১ বছরে আমরা করেছি-
১। পাপেট শো ইশপের গল্প- রাখাল ছেলে ও বাঘ -২০১২
২।পাপেট শো বাঙ্গালীর হাসির গল্প- জসীম উদ্দীনের জিদ- ২০১৪
৩। পাপেট শো গ্রামবাংলার চিরন্তনী গল্প - পান্তাবুড়ি -২০১৫
৪। পাপেট শো গ্রামবাংলার চিরন্তনী গল্প - পান্তাবুড়ি -২০১৬
৫।পাপেট শো বাঙ্গালীর হাসির গল্প- জসীম উদ্দীনের কুঁজো ও সাত ভূত-২০১৭
৬।পাপেট শো বাঙ্গালীর হাসির গল্প- জসীম উদ্দীনের আয়না ২০১৮
৭।পাপেট শো বাঙ্গালীর হাসির গল্প- জসীম উদ্দীনের বোকা জামাই - ২০১৯
৮। পাপেট শো - শায়মা হক- করোনা ভাইরাস ও হাবু -২০২১
৯। পাপেট শো শায়মা হক যাচ্ছে গাবু স্কুলেতে ২টি বছর পরে - ২০২২
১০। পাপেট শো উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী- গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন- ২০২৩
এই গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন করতে গিয়ে কিন্তু ভালোই হিমশিম খেয়েছি আমরা। এত্ত এত্ত পুতুল, এত রকম ভয়েস মিক্সিং, এত রকম গান, এত্ত রকম ব্যাকগ্রাউন্ড! সে এক এলাহী ব্যপার স্যাপার! কিন্তু হিম খাই আর শিমই খাই আমাদের আছে একতাই বল। আর সেই বলের জোরেই মোটমাট ২০ টা পুতুল সজ্জায় লেগে গেলো আমাদের স্বেচ্ছাসেবী টিচারেরা। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো রাজার পোশাক বানাতে, রাজা, মন্ত্রী সেপাহীর জুতো তলোয়ার এমনকি ভূতের ঝোলা, পোটলা সবই বানিয়ে ফেললো তারা একে একে। সে এক সাজ সাজ রব। মনে হয় যেন ছোট্টবেলার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোই বুঝি ফিরে পেয়েছিলো বড় বেলার টিচারেরা।একটা কথা বলে রাখি আমরা বড়বেলার টিচারেরা কিন্তু আসলে ছোটবেলাতেই থাকি। যেমন স্কুলের ক্লাসরুমগুলোতে আমরাও হয়ে যাই ছোট্ট বাবুদের বন্ধু। ওদের মতই কথা বলি, ওদের মতই হাসি এবং কাঁদিও। কিন্তু যে সব দিনে স্কুল বন্ধ থাকে শুধুই টিচারেরা কোনো কাজে আসে সেসব দিনে স্কুলের মাঠেও আমরা হই হই মেতে উঠি, নিজেদের বয়স ভুলে হয়ে যাই ছোটদের মতই। কানামাছি, ছুয়াছুয়ি ছবি তোলাতুলি হা হা। আসলেই এমন আনন্দময় কর্মজীবন আমাদেরকে ভুলিয়ে দেয় সকল দুঃখ বেদনা জীবনের না পাওয়া বিষাদগুলো।


ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া মনে হয় আমার এক অন্যন্য বৈশিষ্ঠ। এত বক বক করা ছোট থেকেও অভ্যাস হলেও বাচ্চাদের টিচার হবার পর সে অভ্যাস মনে হয় বেড়ে গেছে আমার।বলছিলাম পাপেট শো এর কথা। আমাদের বড় বড় কিন্তু সব ছোট্ট বেলার পুতুল ভালো লাগার টিচারেরা নিজেদের ওড়না কেটে, দুল, মালা, চুড়ি লাগিয়ে বানিয়ে ফেললো রাজা বাদশা সেপাহী গ্রামের লোক হাড়ি কুড়ি সবই। আর রাজকন্যাদের কথা কি বলবো! তাদের রুপে আর পোশাকে আর গহনাগাটি দেখে চোখ জুড়ায় মন ভুলায়। আহা মরি মরি।



এবারের পাপেট শো গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েনের কাজ শুরু করেছিলাম সেই সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় বসে। খুব স্বল্প সময়ে গল্প কোনটা নেবো চুজ করতে করতে কিছু সময় কেটে গেলো। শেষ মেশ সাবাস্ত্য হলো গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন।তড়িঘড়ি স্ক্রিপ্ট লিখে তারপর সেটা পড়ে পড়ে রেকর্ডিং। অন্য সময় এই রেকর্ডিং করতে হলে আমার কান্না পায়। তার কারণ আমার বাসার আশপাশে গাড়ি ঘোড়ার প্যা পো সাউন্ড। কিন্তু এবারে একটা টু শব্দও ছিলো না আশে পাশে। ঠিক যেন সাউন্ড প্রুফ রুমে রেকর্ডিং হলো। যাও বা কিচিমিচি ভেসে এসেছিলো পাখ পাখালীর তাও যেন নৈস্বর্গিক পরিবেশের প্রাকৃতিক শব্দ। যাইহোক সে সব কেটে কুটে বিভিন্ন ভয়েস বানিয়ে জোড়া দেওয়া, সেসব নিয়ে টাইমের ভেতরে নিয়ে ভেগাসপ্রো নিয়ে বসে থাকা। আমার জ্বালায় বাসার সবার মনে হয় মুখস্থ্যই হয়ে গেছে গুপী আর বাঘার ডায়ালগগুলো।

এবার পাপেট শো এর বক্স বা স্টেজটা বানানো। সেটার দায়িত্ব নিয়ে নিলো আর্ট টিচার। আমি চোখ বুজে নিশ্চিন্ত মনে তার উপর ছেড়ে দিলাম সে দায়িত্ব। সেও ঠিক আশার চাইতেও বেশি কিছু সুন্দর এক বক্স হাজির করলো। মেধা বুঝি একেই বলে তাক লাগানো চোখ ধাঁধানো মনের মত পুতুলের বাক্স। তাতে আমার আহলাদ বেড়ে গেলো আহলাদী আমির। বললাম একটু পর্দা দিলে ভালো হত না। সে বললো কোনোই ব্যাপার না হত হত ভালো হত। লাগিয়ে দিচ্ছি দু মিনিটেই। তারপর আমি বললাম এতে একটু লাইট সেট করলে ভালো হত না। সে বললো সেটাও কোনোই ব্যপার না আমার কাছে। সেটাও হলো। আমি তো করিৎকর্মা এই মেয়ের কান্ড দেখে অবাকের উপর অবাক! যাইহোক স্টেজবক্স রেডি, পুতুলগুলো সব আমাদের টিচারদের ভালোবাসার অনুরাগে সুন্দরের উপর সুন্দর হয়ে রেডি, ভয়েস রেডি রেকর্ডিং এর কাজ বাকী তখনও মানে ব্যাকগ্রাউন্ডে ভূতের সাউন্ড, জঙ্গলের সাউন্ড রাজ দরবারের সাউন্ড কত শত রং ঢং আমাদের! সেটা তখনও বাকী। ভাবলাম বাসায় বসে ছুটির একটা দিনে সেরে নেবো। ওমা দুইটা দিন গেলো তবুও বসতে পারি না। আমাদের বাসায় যেন গেস্টের মেলা। তাদের জ্বালায় আমার এই কাজটাই আটকে গেলো। বললাম এই পাপেট টিমের একনিষ্ঠ সদস্য শেহরিনাকে। । সেও বললো নো চিন্তা। ব্যস আমাদের পাপেট টিম যেটাই বলে সেটাই করে ছাড়ে সেতো আমরা সবাই জানি।সব কিছু ঠিকঠাক। তারপর রিহিয়ারসেল শুরু হলো। এটা হয় তো ওটা হয় না আর সাথে হাসতে হাসতে মরি আমরা। এই বক্সে ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জিং প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। আমি নিরাশ! লাগবেনা ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু আমি কষে ধরি হাল তো তারা টেনে তোলে পাল। এগিয়ে এলো একেকজন একেক বুদ্ধি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জও হলো। গাঁয়ের মেঠো পথ। জঙ্গল এবং রাজ দরবার। বাহ বাহ কোনো অংশেই কম নহে!



এরপর পাপেট শো শুরু। সকল মিডিয়া রেডি। দর্শক ক্ষুদে ক্ষুদে মানুষগুলো আর তাদের বাবা মা, দাদু দিদারা। শুরু হলো পাপেট শো। গুপী বলে সা....... তারাও সা....... গুপী বলে রে ....... তারাও রে ....... বাঘার ঢোলকের সাথে সাথে মুখ দিয়েই বাঁজে তাদের ঢোল। এর মাঝে এলো ভূত! ব্যাস আর যায় কোথা! সবগুলা উ উ উ আআআ করে এমনই চিৎকার। কারণ কিছুই না। আমাদের পাপেট ভূতেদের অসাধারণ অভিনয়। আর তার পিছে যে পাপেটিয়ার ছিলো সেই ছিলো এই শো এর সবচেয়ে ভালো অভিনেত্রী। একটা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার তার অবশ্য প্রাপ্য। আর কার কথাই বা না বলবো। গুপী গায়েন যে গানটাই না গাইলো। বাঘা বায়েন ছিলাম আমি তো আমি বাঘা বায়েন হয়ে যে নাচটাই নাচলাম। আরও ছিলো রাজা সান্ত্রী সেপাই গ্রামের মানুষ জন লোক লস্কর এবং অনন্য সুন্দরী রাজকন্যাদ্বয়। এই অসাধারণ প্রতিভাধর পুতুলগুলির পিছের পাপেটিয়ার ও রুপসজ্জাকারীদের জন্য যোগ্য উপহার কি তাই ভাবছি।


যাইহোক এই ছিলো আমার এবারের পুতুল নাচের ইতিকথা। এই গল্পের মোরাল ছিলো- একনিষ্ঠতা এবং সততা যে কোনো কাজেরই সফলতার চাবিকাঁঠি। সত্যজিৎ রায় তার গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন নির্মাণের ১১ বছর পর এর সিকুয়াল হীরক রাজার দেশে ও ৯০-এর দশকের গোড়ায় সন্দীপ তৃতীয় পর্ব গুপী বাঘা ফিরে এলো নির্মাণ করেন। আমি নেক্সট ইয়ারেই হীরক রাজার দেশে পাপেট শো করার ইচ্ছা প্রকাশ করছি আর বেঁচে থাকলে তারপর পুত্রের নির্মিত গল্প নিয়ে তার পরের বছর। :)
মূল গল্প-
গুপি গাইন ও বাঘা বাইন-উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
আমার স্ক্রিপ্ট-
গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েন
লেখক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী
সময়- ৮ মিনিট
১ম দৃশ্য
আনন্দ: আমি আনন্দ
খুশি: আর আমি খুশি। কেমন আছো তোমরা সবাই? নিশ্চয়ই খুব আনন্দ আর খুশিতে আছো।
আনন্দ: আমরা আনন্দে বাঁচতে চাই ও সকলকে আনন্দ ও খুশিতে রাখতে চাই।
খুশি: তাই আমাদের নাম আনন্দ আর খুশি। আজ আমরা তোমাদের সবাইকে একটা মজার গল্প বলতে চাই। মজা মানেই আনন্দ আর আনন্দ মানেই খুশি।
খুশি: আচ্ছা কোন গল্পটা বলোতো?
আনন্দ: বলছি বলছি। একটু সবুর করো। সেই মজার গল্পটা হলো গুপী গায়েন আর বাঘা বায়েনের গল্প।
গুপী গায়েন স্টেজে আসবে।
ন্যারেটর- গুপী গায়েন গান গাইতে খুবই ভালোবাসতো কিন্তু সে একটা মাত্র গানই জানতো কিন্তু গুপী গায়েনের গ্রামের আর কেউ কিছু গাইতে পারত না, তাই তারা তাকে নাম দিয়েছিলো গুপি ‘গাইন’। গুপি যদিও একটা গানই জানতো তবে যখন সে গান গাইতো চারিদিকে যে যেখানে থাকতো সব ছুটে পালাতো। এমনই বিদঘুটে বিকট আর ভয়ংকর ছিলো সেই গান। শোনো তাহলে তার সেই গানটা কেমন ছিলো-
গুপী- সা আ আ আ আ আ আ আ আ আ ( বিকট স্বরে)
ন্যারেটর- তার গানে অসহ্য হয়ে গ্রামের লোকজন সবাই মিলে একদিন তাকে তাড়া করলো। গুপী ভয়ে দৌড়ে বনের মধ্যে পালালো।
গাঁয়ের লোকজন- ধর ধর মার মার বের করে দে গ্রাম থেকে...
গুপী- ওরে বাবারে মারে বাঁচাও... বাঁচাও........

দৃশ্য - ২
গুপিদের গ্রামের কাছেই আরেকটা গ্রামে একজন লোক থাকত, সে ঢোলক বাঁজাতে বড় ভালোবাসতো সকলে তাকে বলত ‘বাঘা বাইন’। শোন তাহলে বাঘা বাইন কেমন করে ঢোলক বাঁজাতো....
(ঢোলকের শব্দ)গুপী চলে যাবে ঢুকবে বাঘা বায়েন ঢোলক হাতে।
কিন্তু দিন রাত অনবরত তার ঢোলকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন গ্রামের সকলে মিলে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে তাকেও তাড়া করলো।
গাঁয়ের লোকজন- ধর ধর মার মার বের করে দে গ্রাম থেকে...

বাঘা বায়েন দৌড়ে বনের মধ্যে ঢুকে প্রাণ বাঁচালো।
(ব্যাকগ্রাউন্ড- জঙ্গল।একদিক থেকে তাড়া খেয়ে আরেক দিক দিয়ে ঢুকবে।)
একদিন দুজনের দেখা হয়ে গেলো। ভারি আশ্চর্য হয়ে গুপি জিজ্ঞাসা কর,

-‘তুমি কে হে?’
- আমি বাঘা বায়েন।
- তুমি কে হে?
- আমি গুপী গায়েন...
বাঘা- তুমি যেমন গায়েন আমিও তেমন বায়েন,
দু'জন মিলে বাঁচবো এবার ফাইন....

সেই আনন্দে দুজনে মিলে খুব ঢোলক বাঁজাতে আর গান গাইতে লাগলো। এক ঘণ্টা দুঘণ্টা ক’রে দুপুর রাত হয়ে গেল, তবু তাদের সে গান থামলোই না। এমন সময়
গুপী- ও বাঘা দাদা চারদিকে একটা কি কাণ্ড হচ্ছে। ঝাপসা ঝাপসা কালো কালো, এই বড় বড় কি যেন সব গাছের উপর থেকে উঁকি মারতে লেগেছে??
বাঘা- ঠিক ঠিক তো। তাদের চোখগুলো জ্বলছে, যেন আগুনের ভাটা, দাঁতগুলো বেরুচ্ছে যেন মুলোর মত।
- মোটা ভূত- ঐ তোরা গান থামালি কেনো হ্যা????
গুপী - ভয়ে ভয়ে- ভূত দাদা আমরা দুঃখিত। আমরা আজই বন ছেড়ে চলে যাবো কোনোদিন আর গানও গাইবো না।
মোটা ভূত ধমক দিয়ে- চুপ!!! কেনো গাইবি না! একশোবার গাইবি! আমাদের এই গান খুব পছন্দ হয়েছে।
তারপর তারা দুজনে ঢোল নিয়ে ভূতেদের বাড়ি চলল। সেখানে গানবাজনা যা হল, সে আর বলে কাজ নেই। তারপর তাদের বিদায় করবার সময়
ভূতের রাজা - ‘তোরা কি চাস?’
গুপি - ‘আমরা এই চাই যে আমরা যেন গেয়ে বাজিয়ে সকলকে খুশি করতে পারি।’
ভূতের রাজা- ‘তাই হবে, তাদের গানবাজনা শুনলে আর সে গান শেষ হওয়াব আগে কেউ সেখান থেকে উঠে যেতে পারবে না। আর কি চাস?’
বাঘা- ‘আর এই চাই যে আমাদের যেন খাওয়া-পরার কষ্ট না হয়।’
ভূতের রাজা- এই ধর এই থলে। ‘তোরা যখন যা খেতে বা পরতে চাস,এই থলের ভিতরে হাত দিলেই তা পাবি। আর কি চাস?’
গুপি - ‘আর কি তা ত বুঝতে পারছি না!’
তখন ভূতেরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।
ভূতের রাজা- এই নে দুই জোড়া জুতো। ‘এই জুতো পায়ে দিয়ে তোরা যেখানে যেতে চাইবি, অমনি সেখানে গিয়ে হাজির হবি।’
গুপী- আর বাঘা- মনের আনন্দে গান গাইতে লাগলো আর ঢোলক বাঁজাতে লাগলো। ভূতের রাজা দিলো বর...
গুপী বললো- চলো জুতো আমাদেরকে রাজার সামনে নিয়ে যাও।



দৃশ্য- ৩
বলতেই অমনি সেই জুতোর গুণে, তারা তৎক্ষণাৎ রাজামশায়ের সামনে উপস্থিত হল। উপস্থিত হয়েই গান গাইতে লাগলো।
মহারাজা তোমারে সেলাম সেলাম সেলাম
আমরা বাংলাদেশের থেকে এলাম।
রাজামশাই বিষম রাগে-এ্যই এ্যই কে রে তোরা? কি চাস এখানে? সেপাহী, মন্ত্রী ধরো এদেরকে। চোর চোর ডাকাত ডাকাত।
সেপাই ধরে ফেললো গুপী আর বাঘাকে। তাদের হাত বেঁধে মারতে মারতে একটা অন্ধকার ঘরে নিয়ে ফেলে রাখল। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যাই নেই-
বাঘা- হে হে হে থলে ভাই ‘আমাদের দুজনের রাজপোশাক চাই।’
গুপী- এবার ভূতের জুতো আমাদেরকে রাজবাড়ির সামনে বেড়াতে নিয়ে যাও।
তাদেরকে দুর থেকে তাদের আসতে দেখেই রাজার লোক ছুটে গিয়ে রাজাকে খবর দিলো।
লোকজন- ‘মহারাজ, মহারাজ দু'জন রাজা আসছেন।
রাজাও তা শুনে তাঁর ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। বাঘা আর গুপিকে সাদর আমন্ত্রনে অতিথিশালায় নিয়ে গেলেন।
এদিকে রাজামশাই সভায় ফিরে এলে পেয়াদা তার কানে কানে বললেন,
পেয়াদা- ‘মহারাজ, একটা কথা আছে, এই দু'জন লোক কোনো রাজা নয়। আমরা যাদেরকে বন্দীশালায় বন্দী করে রেখেছিলাম তারা উধাও। এরা সেই লোক। এরা কোনো মানুষ নয়। এরা ভূত।
রাজা- ভূূু ঊঊঊঊ ত! এখন কি হবে এই দুজনকে পুড়িয়ে মারতে হবে। খাওয়া দাওয়ার পর যখন তারা ঘুমাবে। অতিথিশালায় আগুন লাগিয়ে দিয়ে ভূত দুটোকে মারতে হবে।
এই উদ্দেশ্যে তারা অতিথিশালায় আগুন লাগালো কিন্তু খাওয়া দাওয়ার পর গুপী আর বাঘা না ঘুমিয়ে বারান্দায় এসে ঢোল বাজিয়ে গান জুড়ে দিলো। তখন কারু সেখান থেকে নড়বার জো রইল না, সকলকেই পুড়ে মরতে হল। ততক্ষণে গুপি আর বাঘাও আগুন দেখতে পেয়ে, তাদের জুতোর জোরে, তাদের ঢোল আর থলেটি নিয়ে সেখান থেকে চম্পট দিল। গুপি আর বাঘা সেই আগুনের ভিতর থেকে পালিয়ে বনে এসে প্রাণ খুলে গানবাজনা করতে লাগল।

দৃশ্য- ৪
গান- দেখো রে জগতের বাহার
এক দল ডাকাত আরেক দেশের রাজার ভাণ্ডার লুটে, তার ছোট ছেলে দুটিকে চুরি ক’রে পালিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু গুপী আর বাঘার গান শুনে আর তারা নড়াচড়া করতে পারলো না। রাজা ডাকাতগুলিকে তাই সকাল বেলা গান থামতেই ধরে ফেললো। রাজা গুপি আর বাঘার উপর খুব খুশি হলো কারণ তাদের ভয়ংকর গান আর ঢোলকের বাজনা আর ভূতের দেওয়া বরের কারণে ডাকাতেরা নড়তে পারেনি সারারাত। রাজা খুশি হয়ে বললেন,
রাজা- তোমাদের কারণেই আমি আজ এই ডাকাত ধরতে পেরেছি। আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি।‘তোমরা আমার সঙ্গে চলো!’ আমার রাজ্যের অর্ধেক আর আমার দুটি কন্যা তোমাদের দুজনকে দান করলাম।’
তখন খুবই একটা ধুমধাম হল। গুপি আর বাঘা হাল্লার রাজার জামাই হয়ে পরম আনন্দে সঙ্গীত সাধনা
করতে লাগল।
আনন্দ- দেখলে তো বন্ধুরা তুমি যদি তোমার কাজে একনিষ্ঠ ও সৎ হও তবে তুমি সফল হবেই
খুশি- আর তোমার কাজে মানুষেরাও উপকৃত হবে। আনন্দিত হবে খুশি হবে।
আনন্দ- ভালো থেকো তোমরা সবাই। বিদায় বন্ধুরা।

অপরিসীম ব্যস্ততা ও সময় স্বল্পতার পরেও এই পাপেট শো পরিবেশিত হবার পর বাচ্চাদের উচ্ছাস দেখে আমরা অবাক হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি। আর এটাই আমাদের সফলতা ও সার্থকতা।

রিহিয়ারসেল রেকর্ডিং :)
আমার পাপেট শো২০২৩- গুপী গায়েন ও বাঘা বায়েন

এরপর যখন তা ছোট ছোট পুচ্চিপাচ্চার সামনে পরিবেশিত হলো তখন তাদের উচ্ছাস এই ভিডিওতেই দেখো-
পাপেট শো- গুপী গায়েন ও বাঘা বায়েন

আর আমরা পাপেট শো টিমের পাপেটিয়ারেরা- :)



আর এই যে আমার পাপেট শো এর স্টিক পাপেটেরা- :) :)



সবাইকে বসন্তদিনের শুভেচ্ছা..... :)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:০০
৫৮টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×