শরৎ এলো .... এসেই বলে যাই যাই যাই....... এমনটাই যেন হলো এবারের শরতে। শরতের পর হেমন্ত ছাপিয়ে শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে ভোরের বাতাস আর পড়ন্ত বিকেল ছুঁয়ে সন্ধ্যা রাত্রীর হিম হিম পরশ। তাই শীত এসে যাবার আগেই জলে হুটোপুটি জলকেলীর আবদার ধরলো আমার সকল কাজিনেরা। শেষ মেষ হাজারো ব্যস্ততা এক পাশে ফেলে সবাই মিলে জড়ো হলাম আমরা এই পূজোর ছুটিতে।
মূল পরিকল্পনা ছিলো স্যুইমিং পুলে স্যুইমিং আর সাথে কিছু খানা পিনা নাচা এবং গানাও। এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে একটি বড়সড় দায়িত্ব নিয়েছিলো আমার সেজোচাচার বড় ছেলে আর আমার পিচ্চু ভাইবৌটা। মানে খানাপিনার বারবিকিউ পার্টটার জন্য সে সকল দায়িত্ব তুলে নিলো তার কাঁধে। বললো আমাকে একটুও চিন্তা না করতে।
স্প্রাইট আর মোনিন মিশিয়ে বানিয়েছি পুল ওয়াটার। তাতে ভাসিয়েছিলাম টিউব গামী ক্যান্ডি আর টেডিবিয়ার।
কিন্তু আমার মত সকল কাজের কাজী মানে ইজি কাজে বিজি মানুষ কি চিন্তা না করে থাকতে পারে! কাজেই আমিও মহা পরিকল্পনা শুরু করে দিলাম এই অনুষ্ঠান ঘিরে। পুলসাইডটাকে কেমনে সাজানো যায়! কি কি খানাপিনা দেওয়া যায় স্যুইমিং এর সময়টাতে, কেমন করে সুন্দর করে ছোট্টবেলার পুতুল খেলার মত লাল নীল হলুদ সবুজ প্লেট গ্লাসে সাজানো যায় চারিদিক এসব ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো দুই দিন! তারপর বাসার সব লোকজন হেল্পিং হ্যান্ডসদেরকে নিয়ে সাজিয়ে ফেললাম পুল সাইড যেখানে যত কিছু পাওয়া গেলো সেসব টেনে টুনে। বাগানের গাছ পালা বারান্দার টেবিল চেয়ার সানরুমের সোফা দোলনা আসবাব কিছুই বাদ গেলো না সেই সজ্জা থেকে। তারপর স্ন্যাকসের পালা। দোকানে ছুটলাম গুলশান মার্কেটে। নাহ সব কি পাওয়া যায় মনের মত সাজুগুজুর! কাজেই ঢালী ইউনিমার্ট কিছুই বাকী রইলো না আমার চষে ফেলতে।
অবশেষে মেতে উঠলাম সেই ছেলেবেলার পুতুল খেলার মত এক অন্যরকম খেলায়। ছোট ছোট গোলাকার ট্রান্সপারেন্ট বাটিগুলিতে স্প্রাইট আর মোনিন মিশিয়ে বানিয়ে ফেললাম ছোট ছোট পুল আর নীলপানিগুলি তাতে পুল ওয়াটার। ঢালী থেকে নিয়ে এলাম গামী বিয়ার আর ছোট ছোট টিউব ক্যান্ডি। সেই টিউবে করে ভাসিয়ে দিলাম গামি বিয়ারগুলোকে আমার পুল ওয়াটার ড্রিংকসের ছোট্ট সব পুলে। কিন্তু হায় কিছু সময় পরে আমার গামী বিয়ার তার গামী টিউবসহ অতলে তলিয়ে গেলো! যাইহোক এরপর বসলাম ফ্রুটস বৌল আর ফ্রুটস গ্লাস সাজাতে। রঙ্গিন ফলে কালার কম্বিনেশন করে সাজিয়ে দিলাম ঢাকনাওয়ালা প্লাসটিচ গ্লাসে। বাচ্চাদের জন্য নিয়ে এলাম কয়েক রকম চকলেট আর মার্শমেলো। তার মাথায় বসিয়ে দিলাম এক মারমেইড। এছাড়াও নানা রকম নাটস আর কালারফুল পেস্ট্রীর সাথে সাথে চিপসগুলো সাজিয়ে দিলাম ছোট ছোট বাকেটে করে আর তাতে বসিয়ে দিলাম রঙ্গিন স্যান্ড সো। আমার পুলসাইড স্ন্যাকস টেবিলগুলো হেসে উঠলো ঝলমল সেই উৎসবের আনন্দে।
একে একে হাজির হলো ফুপাতো, চাচাতো ভাইবোনেরা আর তাদের পরিবার পরিজন। সবাই মেতে উঠলো তারা স্যুইমিং পুলে ঝাপাঝাপি হাসাহাসি আর খানাপিনায় কেটে গেলো কিছু ক্ষন।
তারপর বসল নাচ ও গানের আসর। আমার সেজোচাচার ছেলেরা সব শিল্পকলা এক্সপার্ট! তাদের বৌ ছেলেমেয়েরাও কম যায় না! গিটার ড্রাম হারমোনিয়াম সব নিয়ে বসলাম আমরা। শুধুই কি গান। সত্যিকারের ক্লাসিকাল নৃত্যের সাথে চললো পাগলামী নাচ!
ফুপাতোবোনদের ছেলেমেয়রা তো এক একজন এত সুন্দর নাচ গান কবিতা আবৃতি শিখেছে আমি জানতামও না। মুগ্ধ হয়ে যাই! একটা কথা বলি আমার ছেলেবেলায় এই সেজোচাচার কাছেই আমার গান ও ছবি আঁকার হাতে খড়ি। এই চাচা মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরারেশন জ্যাকপটে অংশগ্রহন করেছিলেন । এই নিয়ে উনার স্মৃতিচারণমূকলক বইও আছে। চাচা ছিলেন অনেক অনেক সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ। ছবি আঁকা কবিতা লেখা বাংলাদেশ বেতারের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। সেজোচাচার পরিবারের সকলেই সংস্কৃতিমনা। সব ছেলেরাই গান, গিটার ড্রাম স্পেশালিস্ট। এছাড়াও অন্য ফুপু ও চাচাদের ছেলেমেয়েরাও কম যায়না। আমাকে অনেকেই গুনবতী বলে কেউ কেউ কুটনাবতী শয়তান হিংসুটে শো অফ পাঁজীর পা ঝাড়াও বলে। তবে হ্যাঁ যারা গুনবতী বলে তাদের জন্য বলছি আমার এই চাচার কাছেই আমার অফুরন্ত ইজি কাজে বিজি গুনের মাঝে ভালো ভালো গুনাবলীগুলির হাতেখড়ি। যেমন ছবি আঁকা, গান শেখা, কবিতা লেখা......
সে যাইহোক আমরা সবাই একে এক করে গানই গাইছিলাম কিন্তু তারপর শুরু হলো আবোল তাবোল নাচানাচি। আমরা প্রায় সকলেই তাতে মেতে উঠলাম। হাসি আনন্দ গানে কেটে গেলো কয়েক ঘন্টা। আমরা সময়টা কখন পার করলাম বুঝতেই পারিনি। অবশেষে বারবিকিউ এর পালা। সকলেই বারবিকিউ ভাজতে শুরু করলো আমি অবশ্য একটু ভাজাভাজির একটিং করলাম।
এই সব হাসি আনন্দ গানে কখন যে মধ্যরাত হয়ে গেলো সে খবরই ছিলো না কারো। অবশেষে এলো বিদায়ের পালা। আবারও এইভাবে একত্রিত হবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শেষ হলো আমাদের পুল পার্টি আনন্দ অভিযান.......
কেউ যেন এই পোস্ট দেখে আমাকে লাঠি ঝাঁটা ইট পাটকেল নিয়ে ছুড়তে এসো না। কারণ এই পুল পার্টি এই সব হরতাল মরতাল অবরোধ যন্ত্রনাগুলির আগের কিন্তু কাজেই আমার এবং আমার চৌদ্দগুষ্ঠিরও কোনো দোষ নেই। আমরা এক্কেবারে দুধে ধোয়া তুলসীবতী।
সবাইকে ভালোবাসা.......
আরও কিছু ছবি। পোস্ট মনে হয় লোডই হবে না আজকে!
যতক্ষন বাঁচি ভরে দিবে নাকি এ খেলারই ভেলাটাই
তাই অকারণে গান গাই..........
মনে রবে কিনা রবে আমারে......... ( আমার শুভভাইয়াকে সারাজীবন মিস করবো। )
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪০